গান্ধারী
গান্ধারী
গান্ধার নরেশ সুবলের কন্যা আমি যশশ্বিনী গান্ধারী,
রূপ গুণের খ্যাতি গিয়েছিল দিকে দিকে প্রসারী।
মহাপরাক্রমশালী ভীষ্ম নিতে চান রাজার দুলারী!
জন্মান্ধ ভ্রাতুস্পুত্র ধৃতরাষ্ট্র লাগি চাহিলেন শিঘ্রই।
পিতা ও ভ্রাতাদিগের অসম্মতিতেও আমি রাজী হই,
নাহলে যে রাজ্য হবে ছারখার,ভবিষ্যৎ দেখি নিজেই।
শুনেছি আমিও ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা এবং ত্যাগের কথা,
শুধু অনুমান করিনি আমাকেও ছুঁতে পারে, অম্বিকা,
অম্বালিকা দেবীদের নিয়ে তাঁর নিষ্ঠুর বীরত্বের গাথা!
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হোক, আমি চাইনি কিছুতেই,
অপমান তো মাথা পেতে আমাদের নিতে হতোই।
পরিস্থিতির শিকার তো পৃথিবীতে মানুষেরা সকলেই,
সাহসে ভর করে অন্যভাবে রুখে দাঁড়াতে দোষ নেই।
চেষ্টা করতে ক্ষতি কি! নারী বটে, তবে অবলা নই!
সাহসে ভর করে ভীষ্মের সামনে নিজের বক্তব্য রাখি,
সংসার ধর্ম পালন করবো, তবে বন্ধ করে আঁখি।
হ্যাঁ এটাই ছিল আমার নীরব প্রতিবাদ।
হয় উনি তলিয়ে ভাবেনি, অথবা বুঝেও বোঝেননি,
কিংবা আপাত স্বার্থ তাকে ভবিষ্যৎ দেখতে দেয়নি।
কে জানে! যুদ্ধ নামক বিষবৃক্ষের হয়তো সেই অঙ্কুর,
তেজী তাতশ্রীর অহঙ্কার একদা হয়েছিলো চুরচুর।
না আমি কখনো তা চাইনি, চোখ দুটো তো বন্ধ,
তাই স্বার্থপরতা কোনোদিন আমাকে ছোঁয়নি।
ধর্ম কখনও আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারেনি!
পতিদেবকে বোঝাবার অনেক চেষ্টাই তো করেছি,
তাঁর পথ থেকে এক চুলও কি নড়াতে পেরেছি !
পুত্র দূর্যোধন চাইলেও বীজয়ী হবার আশীর্বাদ দিইনি,
কোনো কথাতেই ভুলিনি,স্নেহে একটুও নমনীয় হইনি।
যদিও নারী, তবু কিন্তু প্রয়োজনে কঠোর হতে পারি!
একমাত্র পুত্র সন্তান বাঁচাবার তরে শেষে ভেঙে পড়ি,
পোষাক বিহীন স্নাত পুত্রের শরীরে দৃষ্টিপাত করি।
সুরক্ষার তরে এই ছিলো শেষ পথ যা প্রদান করি!
কিন্তু একি দুর্মতি! মায়ের কাছেও ছেলের লজ্জ্বা?
যে শরীর আমাতেই ছিল, আমার তরেই তার সজ্জা!
মায়ের আদেশের চেয়েও বড় লজ্জ্বা ও লোকভয়,
দু চোখে এই দুর্দশা দেখার চেয়ে বড় শোক আর কি!
তাই চোখ বেঁধে রাখাই আমার ভালো বলে মনে হয়।