ছায়া ছায়া সত্যি সংকলন
ছায়া ছায়া সত্যি সংকলন
১
ছায়া ছায়া সত্যি
জলের মতই জীবনকে ভেবে একে একে মায়ার ছবি আঁকছি সব ভুলগুলো ভালবাসা প্রেম ভেবে নাচুনি কাঁদুনি ডাকছি
হাঁটছি চলছি ফিরছি ঘুরছি আর পান্তায় এ্যালকোহল খুঁজছি
চোখ চেয়ে চেয়ে ঠিকঠাক লড়াই এ এসে সেই তো চোখ বুঁজছি
ভালবাসা খুঁড়ে খুঁড়ে শেষে কিনা হায়, ঘোড়ার ঘাস কাটছি!
ভোর থেকে ভোরবেলা অবাক হয়েছি চামড়ায় ফুটি ফাটছি
পোড়ো বাড়ির বট আর অশথের বন জাঁকিয়ে বসেছে এ মনে
সময়কে খোঁচা মেরে খসে পড়া একে একে ঘায়েরা টনটনে
কত কত ঘোরাস্রোতে পাড় চৌপাট করে ঘিলু বাজিয়েছি
কাউকে জমকালো আয়োজনে মিছেমিছি শ্রী সাজিয়েছি
ঢেউ সরে গেলে চোখে পড়ে ছায়া ছায়া সত্যি কথাগুলি
সেসব সরিয়ে এস্পারওস্পার করে বোঁজা চোখপাতা খুলি
------------
২
দম্ভ মিছিল
পোক্ত জীবন বলে বাজানো বুকে রোজ ছোঁ মারে আড়কাঠি পাখিঘেঁটেঘুঁটে পিচফাটা করে তবে ছাড়ে
ছেড়েও ওৎ পেতে থাকে
তবুও শিশির মাখার স্বপ্ন ঘিলুতে নড়েচড়ে
এবং ভালবাসা লেপানো হাতগুলো আগুন বাড়ায়
আগুনকে বড় ভয় খায় আড়কাঠি!
হাইকমান্ড নিশ্চুপ বলে হাল ছোঁড়ে কেউ কেউ
তারপর কোন এক কুহু রাতে কমিটি উচ্ছ্বসিত
মেল উপচে মধুরস নামে
ভীমরুল উড়ে এসেও কাজ ভুলে যায়
কান ভারি করে বিপক্ষ নিন্দায়
সব শুনে চোখের পাতারা কাঠিন্য রূপ খায়
স্বঘোষিত সেরাদের ভাবেহাবে ঝরে পড়ে হতাশা
নার্ভগুলো ঝটিতি সংঘর্ষে কেঁপে কেঁপে ওঠে
আর সবান্ধবে খাড়িয়ে যায় জ্ঞাতি শত্রুতে
চারদিকে ছায়ামানুষ উঠছে কাঁদছে পাগলও হচ্ছে
সংজ্ঞায়িত প্রকৃত মানুষ কোথায়ও কি আসছেন?
এত দম্ভ মিছিল এবার কি শেষ? মিছিলে দম্ভ?
---------------------
৩
জানবাজি
চাপের তোড়ে মশলাপেষা হাত পা মাথামাংসল ক্ষমতারা তাই ইচ্ছে নদী
রাত নামে জীবিকার শিরায় পাতায়
আমি আর আমি প্রত্যেক তর্জনী
লাল চোখ আর ফুলে ওঠা শিরা
আমিই খরিদ করি আমার জীবিকা
এত স্বপ্ন ভেসে ছুটে ঘিরে রাখে
তবুও পিঁপড়ের মত ছোট লাগে
আগাপাশতলায় ভাইরাস উল্লাস
সময় পছন্দ করে কি অসময়?
না-পাখি পাখি হয় কার সাহসে?
পাঁক পাঁক গন্ধ ঘোরায় পক্ষ বিপক্ষ
নদী চুপ, চুপকথা আকাশে টাঙানোও
বোমে কথা, কথা হাসে গুলির ফোয়ারায়
সূচাগ্র মেদিনীর জন্যে জানবাজি চলে
----------------------------------
৪
ব্যারিকেড
ব্যারিকেড টপকাতে টপকাতে হাঁটু লঝঝরেকোমর আর শিরদাঁড়াও
উচ্চ আসনে বসে হি হি হাসো তোমরা
ক্রমশঃ বাড়িয়ে চলো সশব্দ নির্যাতন
রোজ জল খায় কিছু কিছু পোষ্য গাছপালা
আদুরে পাতাগুলো আমাদের ঘায়ের ওষুধি
ফুলগুলো ধরা দেয়
ঠাকুরের কানে তোলে আমাদের কাতরানি
তবুও কোথাও আসল সুখবর নেই আমাদের
যা কিছু শিঁকে ছেঁড়ে সবই প্রবল শর্ত সাপেক্ষ
আশ্রিত দস্যুও দুঃখ দুঃখ করে বলে, হায়!
আমরা চামড়া চাপড়াই
এক কোণে ধ্বনিহীন
স্বরথলি কেটে চেটে খেলো তর্জনীওয়ালারা
তবুও অদম্য নিঃশ্বাসে আরেকটা ব্যারিকেডের সামনে
আজও ভাবি ওপারেই আছে আমাদের কাঙ্খিত মোক্ষ
------------------------------------------------------
৫
মোচ্ছব বিস্ফোরণ
ভৌচ্যাঁচানো মাঠের কথারা চমকে দিয়ে খানিক দম নেয়তা'বলে এতটুকুও কমে নি তার তেজ, বল
খাবলে খাবলে খেয়ে নেয় গোয়াল পোষ্য আমাকে
একলা একলা কান্না বাঁশি কঁকায়
এক ইঞ্চি মাটিও হয় নি কেনা নিজের মুরোদে
জন্ম ভিখারীর ছাপ নিয়ে এদিক ওদিক নড়াচড়া
এত ইচ্ছেখুশির যোগান?
এই তো বাড়ানো মুন্ডু কাটো কাটো কাটো
আমার থাকা না থাকায় বড়জোর একটা ভোট কমা
চলছে শাসন ব্যবস্থা চলছেই
তার ছোঁয়ায় আলে গলিতে মোচ্ছব বিস্ফোরণ
চুঁইয়ে পড়া রসে কেউ কেউ চরম উন্নয়নশীল
----------------------------------------------
৬
কাঁচের আবাদ
এত তাপ, শরীর পুড়ছে, পুড়ছে মনওএই মনে, শরীরী পাতালে, আগ্নেয়গিরি
ফুল দিলো, চন্দনী টিপ, এত সাজ দিলো!
জল নেই, গলার ভেতর, দলা দলা শুধু
অপ্রাপ্তি, হাহাকারী গান, তবু অবিবাগী
শিরদাঁড়া, বাঁকাতে বাঁকাতে, হাঁটু ধরি প্রায়
এসময়ে, চারটে আশ্রম, নেই নেই নেই
গোটাটাই, ঘরে ঘুরিফিরি, ঘুরিফিরি ঘরে
বিশ্বাস? খাবার জোটাতে, রঙচঙে হাত
থরথর, একে একে ভাঙি, ভেঙে গেল সব
কাঁচ কাঁচ, কাঁচের আবাদ, আনাচে কানাচে
ফুটে ফুটে, কালচে হয়েছি, তাপিত হয়েছি শুধু
৭
গন্ধর্ব
একটা স্বপ্ন ভেঙে গেলে আরেকটাকে কামড়ে ধরিহোক নড়বড়ে দাঁত, কপাটি লাগুক, তবুও
তাল তাল মাটি ডলি, লতাপাতা আঁকি ফের
হত্যাকারীর সুর মোলায়েম হোক, মাখন মাখন
ভালবেসে আমিও কিছু চিহ্ন রাখি বাইরে, শরীরে
আমাকে আমার মতই জড়িয়ে ধরি, প্রত্যেকটা কান্নায়
নিজেকে চাবকে চাবকে সত্যিগুলোর ছায়া ছুঁড়ি
ভূত্বক এত ছোট, মুখ ঘুরিয়ে কোথায় লুকাবো বল
পানশালার ওপাশেই আমার ভালবাসার ঘর
কিছুটা সময় জিরিয়ে নিতে বসি, নিজের সঙ্গে থাকি
সব হিংসা, সব ঘৃণা, সব অবদমন আমার ভিতর থাক
অন্ধকার ঠেলে ঠেলে একটা পথে একদিন ভেসে ঠিক উঠবোই
পেটের ভেতর বসে বসে বেচিন্তার যতই লাফালাফি হোক
যতই থাক সাজগোজ আমাদের সামাজিকতায়, স্মৃতি উৎপাদক
আমি তো গন্ধর্বকে ঘিলুর আসনপিঁড়িতে ডাকি বারবার
৮
সুস্বাদু ফুলশয্যা
অনেকটা দূরের থেকে ল্যাজ মুন্ডু ধড় সব বরাবর
অঙ্কে পাওয়া বেখাপ্পা একটা গোল্লা
এতো পেন-রাগ, এতো দুঁদে দুরছাই!
হৃদয়, না-হৃদয় মুচড়ে ফেলে দুদ্দাড় ছুটন্ত মানুষ
এতো প্রিয় এতো সুড়সুড়ি এতো সুস্বাদু ফুলশয্যা!
কেউ কেউ অনেকগুলো রাত ঠকে
কোনো এক ভোরে কেউ দেখে সঙ্গী বে-বাড়ি
রাগে ঘেন্নায় প্রতিটা কাজে ছায়া ছায়া সত্যিগুলোর উঁকিঝুঁকি
সংশয় সন্দেহ জেগে বসে খায় আস্ত সন্তানে!
মন শরীর কালো গোলাপ, অকারণ বিশ্বাসে একঠেঙে
ঘর ঘর গান্ধর্ব প্রতিষ্ঠায় যা কিছু বলা, সে সব না-মন্ত্র
ছাপোষার দুধ কাটার রহস্যের মতো সব কিছুই ধাঁধালো
কোথাও কোথাও যদিও যথার্থ মনস্তাপ বস্তুতঃ খাড়া
৯
ভালথাকা
খালের জলে শালুকের পাতারা
একটা দু'টো এভাবে গোণা যায়
কোন সকালে জলপিপি পাখিরা
উঠে হাসছে পাতার বসবাসে
এসব দেখে তরতাজা কিশোর
ঘাস ছিঁড়ছে নিখাদ অভিমানে
ঘুম ভাঙিয়ে গতকালের ভোরে
আদর-ঘাসে ডেকেছিল কিশোরী
নিমের ডালে কাকেরা আড়চোখে
ও কি কিশোর! আনমনে থেকো না
আবার দেখো শালুক পাতাদের
চোখের জল ওকেই দিয়ে রাখো
বয়েস হলে জীবরা নিজেই জানে
ভালথাকারা কঠিন হয় ধীরে, ক্রমশঃ
১০
অনিবার্য
তারপর.......
তারপর রক্তের গরম তরল রঙ কঠিন কঠিন
তারপর.........
তারপর বাঁশ উদ্যানে আমারই নিশ্চয় ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা চোখ
আমাকে কেউ কোথাও কোনখানে কোনদিনও ডাকে নি পাতাল প্রবেশে
তারপর........
তারপর জোনাকিরা আলোর মালা সাজিয়ে সাজিয়ে চিকিচিকি
হায়! আমি না-ডাকা অদ্ভূত জীব, আঁকাবাঁকা শরীরী শব
তারপর........
তারপর কোনো এক নাভির গভীর থেকে চাঁচাছোলা প্রত্যাখান
সেই সেকেন্ড থেকেই আমার রজনীগন্ধা মালা শুকনো ঝরঝরে
তারপর...........
তারপর ছায়া ছায়া সত্যিগুলো উৎপাতে কাকের মত
আমার না-জাগা আমির সচরাচর মৃত্যু অনিবার্য
১১
হাতড়ানো
অন্ধকার হাতড়িয়ে হাঁফ খাই
আলোকে সপাটে নামাই তাই
এ শরীরে, এ জ্বলন্ত মনেও
তুমি রোজ রোজ কান্না করো না আর
এবার ফসল উঠবেই লকলকিয়ে
ঘাসের সঙ্গে অনেকটা মিনিট সেকেন্ড
কুত্তা ট্রেনে অনেকটা পাখনা উঁচানো
অবদমন খামচে খামচে ডোবাতে চায়
মুখের ভাষাটাও আজকাল আর ঠিকঠাক নয়
সূর্য্য ডুবলে শ্মশান স্মৃতি ঘিলু কামড়ায়
নিজেকে অন্ধকারে রেখে রোজ ভালবাসি
নিজেকে অবরুদ্ধ রেখেও ঠেলাঠেলি ভালো
নিজেকে বিলিয়ে বিলিয়ে নাক উঁচু
নিজেকে নিঃসঙ্গ করে এপথ ওপথে আলো খুঁজি
নিজেকে নমনীয় করে আলো খাই আলো
১২
আছাড়িপিছাড়ি
হাহাকার ঘিরে থাকা মানুষের পিঠে হো হো হাসিতথাপি বাইরে নোনা ঝড় এবং কপাট বন্ধ, বন্ধ কথাও
নিজে এবং নিজে আজও ভকভক ভকভক গন্ধে
পথটায় এত মন-কঙ্কালের কোঁ কোঁ, ধেঁধে গেল মণি!
কত কথা বেমালুম ভুল জায়গায় মারলো ঝাপটা
পাখিরা শিস ভুলে ওড়া ভুলে মাটিতে মাখায় মায়া
সত্যি পয়লা বৈশাখের লালাফুলের সুবাতাস আর নেই
ছায়া ছায়া সত্যিগুলো দৈনন্দিন, একমাত্র কাঁপায় স্মৃতি
স্মৃতি কি? ছাই ভস্ম, সম্মীলিত ধূপ পোড়া আবর্জনা
কিংবা ধাপার পাশে শুয়ে থাকা জঞ্জাল পোড়া কুবাতাস
অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ নিজেরাই মোলায়েম কোস্তাকুস্তি
নাচো নাচো আর চলো ঝুপঝাপ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে
কারও কারও জন্যে থাক নদী, কমনীয় সকালিক ফুল!
কারও কারও চোখ থাক ঘুমহীন, পাথরের মতো শুধুই চুপচাপ!
বালখিল্য ভালবাসা নয়, নয় খোদাই করাও সোনার জলে
জ্যোৎস্নায় জ্যোৎস্নায় মন কেমনেরা হুমড়ি খায় আছাড়িপিছাড়ি
১৩
ব-দ্বীপ
ছায়া ছায়া সত্যিগুলোর অবাধ কাটাছেঁড়া
আমাদের ভাঙা ঘরের সরকারি সাহায্যে তোমাদের বাবুয়ানা
বিনিময় প্রথায় অনেকটাই তো খেলে মান্যিগোণ্যিরা!
সমাজ দেখতে পাও, সমাজ? খামচাখামচি?
কাটাছেঁড়া ডাক্তারের লোভ?
শুধু লোক চরিয়ে এত নামা বেনামা রথ আর অট্টালিকা!
হাফ মেধারা তোমাদের গায়ে আর পায়ে
ফুল মেধারা বড়ই অসময়ে, চুপ চুপ চুপ তর্জনী ঠোঁটে
কেউ কেউ অসমসাহসী কাটাকাটি ঘরে লাশের পাহাড়ে
দুধ আর ভাতের ফাঁকটায় রক্ত টুপটাপ রক্ত টুপটাপ
ক্ষমতা ক্ষমতা করে মানুষের লড়াই সেই অসভ্য কাল ফুঁড়ে একালে
পকেটে পকেটে তথাপি লাল গোলাপ! ভালবাসা ব-দ্বীপ!
১৪
বিষলতা
জীবন লাফাচ্ছে, হাঁফাচ্ছে, চুপচাপ দাঁড়িয়েও
মেঝে, করিডোর, বেড এবং অপারেশন থিয়েটারে হাসি বা কান্না
বাইরে সাজানো বাগানে রোদের মায়া বা শোক চুঁইয়ে পড়া
অথবা ঠোঁটের রন্ধ্রে মামুলি টাকার হিসেব চর্চা
কিংবা লজ্জা লজ্জা রোশনাই লাল সাদা বেগুনি ফুলে
আসলে তোমাকে এভাবে এখানে..... আনতেই হল
কান্না জলকে ধাক্কাধাক্কি
শুভাকাঙ্ক্ষীরা ট্রায়ালে
এইসব আসা যাওয়া, চিন্তার লতাপাতা....
একটাই মানে এর, তোমার বাড়ি ফেরার তাগাদা
প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কগুলো এই ফাঁকে বেশ তড়বড়ায়.....
জানো, সেই যে বিষলতাগুলো, খাঁটি বিষলতা
তুমি এখনও পুষ্প করে তুলতে চাও নিখাদ আবেগে
কি বলব, ভ্যাবাচাকা হয়ে তারাও আসছে ছুটে....
১৫
মুমূর্ষু চোখে
জ্বলন্ত বুকে শত্রু হয়ে মৌতাতে মেতো না আর
আগুন পাখি কোনদিনই আর তোমাকে ডাকবে না
ডাকবে না ডাকবেই না
ভূত্বক বয়ে গেল
ভালবাসা জলে গেল
এবেলা ওবেলা রামছাগল খাও, খাও, খাও
একটা লাভ-ওঠানো সম্পর্ক চৌচির
রাস্তা মজানো হাসির কালবৈশাখী
ধেই ধেই নাচো, নাচো আর নেচেই ফাটাও
পয়লা বৈশাখ কাঁদতে কাঁদতে কান্না ভুলেছে
আর কোনো পথ নেই ওর মুমূর্ষু চোখে
মুমূর্ষু চোখে মুমূর্ষু চোখে........
ছায়া ছায়া সত্যিগুলো প্রগাঢ় পাশ ফেরে শুধু
১৬
জয়ধ্বনি
যাবতীয় আগডুম বাগডুম সপাৎ সপাৎ সাক্ষীদের
প্রত্যেকটা দিন কানে ঢুকছে বাজ-শব্দ
এর চেয়ে মুঠোর মধ্যে অশক্ত হাত ভাল
ঘাসবনে লাফায়, ওড়ে ফড়িং
মাটি ফুঁড়ে পতঙ্গ তিড়িং বিড়িং
কিছুই না পাল্টে পতঙ্গ জীবনে ঢুকি
সেই ভাল, এত এত কেরামতি, মদ্দানি ছুমন্তর
পতঙ্গবাদ ডালপালায় জীবন যাপনে
জোট করে ঘোঁট করে তড়াং বড়াং টাকার খনিতে
যাকে মানায় যাক সে জাহান্নামে
পতাকা পৎপৎ শক্তপোক্ত ডান্ডায়
আকাশ জুড়ে বাতাস ফুঁড়ে শুধু আমারই জয়ধ্বনি
১৭
তুমি আমি
এই পথে কুয়াশা মাখামাখি
ওরাও প্রতিদিন এসে ডাকে.....
তোমাকেই চাই
আহা, আমার জন্ম জন্মান্তর!
ভোরের পাখিরাও গরম পালকে সাজেগোজে........
তোমার বাঁকানো ঠোঁটে এই পথ রাখি......
তোমার তেরচা কথার ঝড় বুকের বাঁদিকে আকুলাকু.........
কতটা সেকেন্ড কাটার পর আমার জন্মান্তরে.......
তোমাকে পাশে নিয়ে শিশির মাখি উলুঝুলু মুখে......
তবুও এই ভূত্বকে বারবার বিভেদের রক্ত ফিনকি ....
ভালবাসা বলে কিছু নেই প্রচারও.......
এই পথ এই কুয়াশা এই পাখি এই গাছের সারি
বারবার বারংবার আমি তুমি.....
তারও পর তুমি আমি আমি তুমি.......
আমরা দু'জন শেষহীন আদি পাগল.........
ছায়া ছায়া সত্যি মাখাই তারায় তারায়
পুরু ঠোঁটে হেসে বহুহিসেবীরাও গান ভোলে তাই .....
-------------------------------------
১৮
হা হুতাশ
কাছে এসো আমার আমি আরও কাছে
এই তো পর্যাপ্ত হাহাকারের সময়
সবকিছু নিঙড়ে দিয়েছি তোমার ও হাতে
দেখো এই নিষ্ঠুর হাতে নিজেরই রক্তদাগ
সাধের ঘরে সারি সারি উই নাচ্ছে
এইতো আসনে বসছি বানাও ঢিপি
এতটা বছর জলে তো নামি নি ভয়ে
আজ সব ভয় খাই মুঠো মুঠো জল চাই
কেউ কোথাও থাকবে না ভেবেই বসেছি
উল্টো উচ্চারণের দোষ নিও না দেখ....
সব পাখি উড়ে যায়, সব ফুল নিয়ে যাও
শুধু বংশ বাড়াক চারধারে উইপোকারা
১৯
ভালবাসা বলে
--------------------
ঠিক কতদিন দরজা খোল নি খেয়ালে ছিল নাএত অবস্থান্তর চলছিল!
এত দিক থেকে ছোঁড়া হল পাঁক তাতো তুমি জানো
বায়বীয় হয়েছি বারবার!
নাটকীয় কিম্বা কুশলী ডাকে হাত তো ছোটে নি
অবসাদ খেয়েছি চোখে মুখে!
শব্দ মজ্জায় আঁচড় কেটেছে কেউ তা দেখে নি
পাতাগুলো আজকে ডাক ছাড়ে!
আলো ধরে তবু চুল উড়ে গেল মাটি সড়সড়ে
এখানে আমি শিকড়ে থাকুক!
ঝোড়ো বাতাসেও একটু আড়ালে আমি তো দাঁড়িয়ে
দু'হাতে থুতনি ধরেছি তোর!
ভালবাসা বলে কাছাকাছি থাকি শ্বাস খাই শ্বাস
অমৃত খাই তুমি আমি মিলে!
২০
দায়--------
মনে করি -কোনো গাছ আর আমাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না
মনে করি -
সব সাগর, নদী আমাদের খচ্চর, মহাখচ্চর ভেবে নিল
মনে করি -
সব পাহাড়-পর্বত হুড়মুড়িয়ে পড়ছে প্রতিটা জনপদে
তাহলে -
আমাদের সব হুড়ুমদুড়ুম আর একটা চন্দ্রকেতুগড় হবেই?
নিশ্চয়ই, নিশ্চিত............
একে সান্ত্বনার ভঙ্গিতে ভাগ্য বলি, বলি বিধি, বলি নিয়তি
আর হতাশার ভঙ্গীতে বলি, এরজন্যে আমিও দায়ী.......
-----------------
২১
বুকে না জড়িয়েও কত কথা ফরফর করে বলি!
চুমু না এঁকেও কেমন করে যেন তার স্বাদ পাই!
সুখের কান্নায় ভাসবো বলে ভালবাসা হৃদয়ে রাখি
চারদিকে করোনা করোনা তবুও হৃদয় হয় নি শুকনো
প্রতিটি মিনিট ফুলশয্যা, ফুলশয্যা হয় তাই
সেকেন্ডে সেকেন্ডে লাফায় ঝাঁপায় রক্তনালি
ভাল থাকা ভাল রাখা গান হয়ে ঘোরে
ফুলে ফুলে লতায় পাতায় ফুটে উঠি রোজ সকালে
ছায়া ছায়া সত্যিগুলো নামাবলি হল হৃদপিন্ডে
২২
অসময়
আমি আর আমার ভিতরে নেইশুধু আছি খোপের ভিতরে....
চেনা অজানা কত ফুল উড়ে গেল
উৎসব তবু থেমে নেই
আজ কারা এলাকায় এলাকায়
গাধাদের ছবি আঁকতে এলো!
প্লাস্টিক মোড়ানো শরীরগুলো নামে
ও ডোম, গলা ভেজাও কেন তরলে!
গান্ধর্ব স্বামীটি বউয়ের বিয়ের কাজে
হায়, এই মহামারি কান্নার জল চোঁ চোঁ টানে!
একটা একটা ফুল দু'হাতে জড়িয়ে রাখি
এত ঠান্ডা হচ্ছে কেন স্নায়ু আর শিরা উপশিরা!
আমিও খোপ ছেড়ে, রাস্তা ছেড়ে বারবার
ঘুমন্ত আলোর দিকে নিঃস্তেজে তাকাই
২৩
ভেতরে ভেতরে তৈরি হচ্ছে জলজলের পোকারা
ছায়া ছায়া সত্যিগুলো আলোর ভেতর
এত মায়া ঝিকমিক এই জলের সংসার
তোমার কি খবর বলো
গরমে গলে গলে হিমবাহ ভাসছে
কাল রাতে কি স্বপ্ন এলো?
প্রজাপতি ফুল ভালবেসে না পারে?
কতদিন ঘাসে রাখো নি হাত
বন্ধ দরজা বন্ধ জানালাকে ভয় পায় বিষ!
চুপি চুপি কথা বলে ফুল
সশব্দ সুর তোলে দিক থেকে দিকে পাখিরা
চলে এসো নীতি মেনে আকাশের তীরে
সভ্যতা কখনও কি ভয় খায়, ভয়?
কে কার নিয়ন্ত্রক, এই ভূপৃষ্ঠেরও
গবেষণা চালু আছে, ওসব থাক, তুমি এসো শুধু
২৪
কোথাও কারও কাছে অবসর নিই নি
কোনো কোনো কিছু কিছু নিস্ফলা হতেই পারে
তবুও প্রতিটা সেকেন্ড কাজ
এই পলিমাটি, এই নদীর কাছাকাছি
সুন্দরী নোনা দ্বীপে দ্বীপে
আমি আছি আমি আছি
বেছে বেছে নয়, বেঁচে বেঁচে আছি
কাজেই অবসর অবসরে কাজ
আমাদের মায়ের মতই.....
বিছানার বোধ জাগে
ছিপছিপে জলেরও
ছায়া ছায়া সত্যিগুলো মেঘ হয়ে নামে
২৫
শাড়ির কালো পাড়ের মতো মেঘ আসে মনেজানি, স্বচ্ছ বর্ষায় ভেসে যাচ্ছে তোমার ভুটভুটি
পাশবাগানে তোমার গাছগুলো বিস্ময়ে একগুঁয়ে
মুখোশিরা মঙ্গলকথা দলবদ্ধ হয়ে তোমাকে শোনাচ্ছে
এতদিন শাঁখ বাজিয়েছি, ধূপও দিয়েছি, আপনকথা বলেছি বকবক
তুমি আমি আমি তুমি, মাথার ওপর উৎসুক আকাশ শুধু
কি কি পাবে তার লিখিত অলিখিত ইস্তাহার দিল
ঝাপসা চোখেই না হয় পড়ে ফেলো অবিশ্বাসে
বর্ষার জলে খুব টান? মুন্ডু ঝাঁ ঝাঁ করছে? করুক করুক
তবুও তো তুমি আছো, মন্ত্রবিদ সংসারিও ওৎ পেতে আছে
তোমার ঘুম আসবে অনেক অনেক অনেক দিন পর
তোমার লোমকূপে হুটোপাটি খাবে সামাজিক ঘাম
চৌচির হয়ে ভাসন্ত ভূপৃষ্ঠ, ভাঙা হাড় সম্বল
যৌবন আছে এখনও আমার ইস্পাতি হৃদপিন্ডে
পাথর আখ্যা দিয়ে কতশতবার হৃদয় মুচড়ে
একা একা রাত খেলে
প্যাঁচাদের প্রতিবাদ গায়ে তোলো নি, মানো নি হুক্কাহুয়া ইশারা, সেই তুমি
সেই তুমি ভেসে যাচ্ছো ইস্তাহারে লেখা ঠিকানায়
সেখানে মাটিরা আঁকড়ে পুকুর, গাছ আর কচি লাউগাছ?
মন খারাপি কিছু নেই মন্দির মসজিদে? সব খুশি খুশি?
চূড়ান্ত সাহসে রাজহাঁস ঠোঁট গোঁজে রাজহংসির গলায় আর ঘাড়ে?
ইস্তাহার না হয় এবার তুমিই লেখ, হোক কাটাকুটি, ছেঁড়া পৃষ্ঠা উড়ুক
তবুও তোমার শর্তগুলো ইস্তাহারে ঢোকাটা অনিবার্য হোক, অনিবার্য হোক
ছায়া ছায়া সত্যিগুলো কালো পেড়ে মেঘ থেকে নামুক ভূপৃষ্ঠে
তরতর করে ভেসে যাক, পোড়া কাঠ হোক পরের ইস্তাহার
আগুনগুলো করুক শলাপরামর্শ, কাকে রেখে কাকে খাবে
আমি ততক্ষণ চিৎ সাঁতারে একটু বিশ্রাম খুঁজি পুরনো খোলসে
২৬
আজকাল বুকের ভেতরে বাইরে পাহাড়েরাকখনও সখনও পাহাড়িয়া শব্দ, ফুলশয্যার ধ্বনি
মানুষ আত্মহত্যার পথেও খিদেয় কঁকিয়ে ওঠে
তার জন্যে এ সভ্য সমাজ চ্যানেলে তর্কাতর্কিতে
হঠাৎ হঠাৎ কারও মায়া, ভাল ব্যবহার, গলন্ত আইসক্রিম
পাগল হতে হতে মরসুমি উৎসব শেষ!
আমাকে অনেকে ভালবাসে এ চিন্তা ঠিক নয়
আমার কাজকে অনেকে ভালবাসে এটাও নয়
আমাকে গভীর অসুখে উত্তপ্ত কপালে কারা ছোঁয়?
আমাকে পাথর সন্দেহে কার বেঁচে থাকা কেরোসিন!
আমাকে শূন্য করে শূন্যে ছোঁড়ে হিস হিস
স্যাডিস্টিক কোলাহল যেন অপরাজিতা লতা!
২৭
দেখ, তোমাকে আমার কতগুলো কথা না বললেই নয়
কতদিন বলবো বলবো করেও বলে উঠতে পারি নি
আজ চানঘরে এক বালতি মতো সাহস ঢুকলো বুকে
তাই.........
ভোররাতে, দুপুরে, সকালে কিম্বা যখন তখন শরীরে গরম খেলছে
তোমাকেই বলছি শোনো, সাপ ধরতে গেলাম
বাঘ ধরতে গেলাম, এমন কি একটা বুলবলিও
কিছুই আর ঠিকঠাক ধরা হয়ে ওঠে না
জানো, শেষকালে কিনা হাঁপিয়ে উঠে জ্বর ধরি
সেই জ্বর, অজানা কিন্তু চিরসখা হয়ে আমাকে আঁকড়ে
আমি তোমার সামনে যাচ্ছি, পাশেও
অথচ তুমি আর আমাকে কাছেও ডাকছো না
বলছো না একবারও --
বড্ড ঘেমে যাচ্ছো, একটু ঠান্ডা জল দি'.....
হায়!!!
২৮
জানি জানি, মানুষকে মানুষ এখন খুব ভয় খাচ্ছেজানি জানি, জানালা দরজা বন্ধ করেও ভয় মারতে পারি নি
জানি জানি জানি
গান সব শক্ত বাতাস কামড়ায়
নিজের বুকে হাঁটু পিষি
এর চেয়ে কোন জন্ম ভালো!
ঝিলের পাশ দিয়ে হাঁটি
পাখি ওড়ে, ছায়া ছায়া জলে পানকৌড়ি
কচি ঘাসে ডুবে থাকে বকের হলুদ ঠ্যাং
জার্সি গাই চুপিসাড়ে খায়, ল্যাজ নাড়ে
ফুল সংগ্রাহকরা লুপ্তপ্রায়
প্রজাপতি, মৌটুসী তাই ইলিবিলি খেলে
তবুও বাতাস ভারী
শূন্য নামের সমনে হয়তো কাল আমি আছি
হয়তো আছি হয়তো নেই
ওত পেতে বসে থাকে হাসপাতালে ফড়েরা
২৯
স্মৃতি গান বললে মন কাদা কাদাভিজে ভিজে দূরদৃষ্টি
সহজ হারানো এখানে ওখানে
ঝিলপাড়ে এত গাছ, পাখি
জলমাকড়সাদের তীরবেগে ছোটা!
শিক্ষানবিশি কিশোরীরা নেই শুধু
এত ভয়াবহ ভয়, হায়!
ভাসে ডোবে পানকৌড়ি
হাতে গোনা শিশু চ্যাং খেলে জলে
ফোন ক্যামেরায় শুধুই নির্জনতা
কিংবা নামানুষী কল্লোল
হঠাৎ বেরিয়ে আসে সে এক মানুষী
এত মায়া, সংসারী বাঁধন নীতিতে স্মার্ট
আদরে ভেসে যায় আমার ছোট্ট অনুলিপি!
৩০
আমার অভ্যন্তরে একটা নদী সেই নদীর পাড়ে একটি নৌকো
নদীতে কখনও ঢেউ
নদী কখনও তিরতিরে
বাইরে কত মানুষী
আমাকে কেউ নদীর কথা বলে নি
বলে নি আগ বাড়িয়ে কোনদিন
চলো নদী মাখি জ্যোৎস্নায়
নদী কত রাত জাগলো
নৌকোও হতাশ
নদীর বিশ্বস্ত সঙ্গী মাছেরা বললো
তুমি একটা জলকপ্টার বানাও
মাছেরা আরও জানালো ফিসফিসিয়ে
মানুষীরা সব রেডিমেড চায়
আমি পাল্টা বললাম, সেটা তোমরা চাও না?
মাছেরা বললো, না; নদী ও নৌকাও তাই বললো
কেন কেন? তোমাদের এসব চাওয়া পাওয়া নেই?
তারা হো হো করে হাসল, আমরা তো প্রকৃতিকে পাল্টাই না.....
৩১
চোখ থেকে মুগ্ধতা ভেঙে শূন্যে ছুঁড়িশরীর থেকেও
শূন্যের গভীরে উড়ছে তীব্র শূন্য
শূন্যের মধ্যে শাঁখ বেজে ওঠে
শাঁখা সিঁদুরও
না পাওয়ার ক্ষীপ্ত শব্দ শূন্যে ঝুলছে
মৃত্যুকে ডাকে শূন্য থেকেই মানুষ
খিদেয় কঁকায়
তবুও মৃত্যু তাকে শূন্যেই টানে
শূন্য কাউকে ভিক্ষে দেয় না
শূন্য সঞ্চায়ক নয়
শূন্য কখনও খন্ডে খন্ডে আসে না
শূন্য থেকে আসতে আসতে হোঁচট
এক দুই তিন চার
আর শূন্যের কাতরানি শূন্যে মিলায়
৩২
একটা ট্রেন যতটা পারলো উগরেই দিলোমোটা বেঁটে রোগা লম্বা শ্যামলা ফর্সা কালো
আমি প্রতিটা মুখে চোখে চোখ ফেলছি পটাপট
তোমাকে গড়ছি হারাচ্ছি খুঁজছি শক্ত চোয়ালে
স্টেশনের অশ্বত্থের ডালে তখন উল্লাসি সন্ধ্যা
এত পাখি কাজে গিয়েছিল? পেয়েছিল কাজ?
শান্ত মেয়েটিকে ঘিরে স্টেশনি কয়েকটি ছোকরা
পরম প্রস্তাবনা ছুঁড়ে ভিড়ে ঢোকে বোঁ বোঁ করে
আমি তখনও খুঁজছি দুলতে দুলতে তোমাকেই
দু'হাতে ওড়াচ্ছি আমারই চিতার ছাই শেষহীন
পরের তারপরের ট্রেনটাও এভাবে আসবেই
তোমাকে আমি চিনলেও আমাকে তুমি চিনবে না
৩৩
অস্থিরতার বিস্ফোরণে পাল্টি মেরেছি
এই গলি ঐ গলি পাড়া বেপাড়া
খোঁচা খোঁচা অযত্ন চুলে দাড়িতে
মাঝরাতের পরে, সকালে বিকালে
পাতা ভারী চোখ, খসখসে মুখ
তেজপাতা গাছের আড়ালে তোমাকে দেখি
তুমিও চাও নি, অন্য কেউও নয়
সেকেন্ডগুলোর মেঘলা মুখ
শুধু সূর্য্য বলল, হাঁট; আসিস বলল চাঁদ
আমি শুধু জেনে গেছি অপূর্ব মুদ্রা কিছু
সময়ে অসময়ে জানালায় আড়মোড়া ভাঙা
সোচ্চারে নকল করা কোকিলের ডাকাডাকি, ঘনঘন
ভিখিরি আর কি পেতে পারে বল? বল?
এই গলি ঐ গলি এ পাড়া ও পাড়া
সানাইয়ের সুরের দিনে তোমার কনে সাজা মুখ!
৩৪
নিষিদ্ধের কুবাস সুবাস হলে প্রজাপতি আর হাসে নাসব ফিসফাস ঘরবন্দী
পোকা বসে ফুলে
কারসিনোমা ওগরাচ্ছে কাতরানি, এতটাই যে কি বলবো বলো
হাত কালো, পায়ের পাতা
জিভেও ছোপ
ও ডাক্তার, কি শোনালেন আবার? হাড় স্ক্যান দরকার!
এতটাই আগ্রাসন?
গোটা দেহটাই চাই?
এ জগৎ মিথ্যে হয়ে যাবে? এ শরীরের আঁজভাঁজ ছৌনৃত্য?
নাড়িকাটা মায়া?
দেবশিশু হাসি?
কালও সোচ্চারে হেসে বিপথিকথাকে উড়িয়েছি শব যাত্রার খইয়ের মতো
হায়, আজ আলকাতরা?
আজ নদী জোড়া জাল?
৩৫
কিভাবে বাতাসে হাসে সব পাখি, ফুলশয্যায়?কতদূরে উড়লে মন শান্ত হয়ে আসে শালুকফুলে?
আকচাআকচি কতই, হামড়াহুমড়িও
তবুও এক পাখি ভালবাসে বহু, আলো কিংবা অবাস্তবে
তোমাদের খিদে পেলে, ঘুম পায় আড়ালে
মনে আছে বৈধ বিয়ের দিন শেষ হলে অগুনতি চোখজল?
সভ্যতা, আমাদের আরও আরও দমবন্ধ কাপড়ে ঢাকো
লাশস্বর্গ হয়ে পড়ুক একে একে দেশ আর দেশ!
এত অস্ত্র জাগে আনাচকানাচে, বিভ্রান্ত স্রোত!
সব মহাপুরুষ পরাজিত শক্তি, বিদ্রুপ খায় আফগানিস্তানে!
৩৬
এত বৃষ্টি হচ্ছে, চলাচল পথ শ্যাওলায় মুখ আঁটেতোমাকে দেওয়া পুরুষালি কথাগুলো এখন অবাস্তব
এত মেঘ হুঙ্কার, সব পাখি নিরাপদ গুহায় গুহায়
তোমাকে বিলানো স্বপ্নের ডালপালা স্থিতিশীল এখন
নদীর বাঁধ ভেঙেছে, হাহাকার শব্দ তোলে এখানে ওখানে
কারসিনোমা মহাতান্ডবে এলোমেলো করছে আমাদের বাঁচা
এত প্রকল্প নেমেছে, সব ফেলে চোঁ চাঁ দৌড়ে লাইনে
ডারউইনসাহেব, তোমার তত্ত্ব এখানে পোঁতা যায় নি
করোনার ভয় বেড়েছে, প্রতি মূহুর্তে একলা হচ্ছি
আবার কবে যে বীজতলার সুর বাজবে এ মনে সে মনে
----------------------------------------------------------------------
৩৭
অস্থিরতা গটমট করে মনে এসে বসে
তখন কেমন হয় জানো?
আমাশায় ভোগো নি তুমি কোনকালে
লোকভর্তি বাস থেকে নেমেছি কতদিন
ছুটতে ছুটতে ঘামতে ঘামতে একদিন বাথরুমে ঢুকি
সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা তুমি এখানেও, হায়!!
রাত কলেজে অনার্সে ক্লাস করছে একজন
সপাটে বন্ধ দরজা তাই
আমি তোমার কোন বাবার ভাই?
স্যার বলাতেই ব্যস্ত বড়বাবু
স্টুডেন্টের ভাই বলে টিবির ওষুধ দিতেই হবে?
এম ও সাহেবেরও ক্ষমতা প্রয়োগ হয়
অস্থিরতা আমাকে কান ধরে ওঠায় বসায়
সঙ্ঘবদ্ধতাই শক্তি এটাও শেখায়
শিখি আর কই?
ছিন্নভিন্ন হই, অতি অবাস্তব হিরো হিরো ভাবি
৩৮
কতদিন মুখ চাপড়ে হাহাকার কেটেছি দাঁতে
দাঁত বলল, ভয় নেই, ভয় নেই তোর আর
তোমার মুখ থেকে, মন থেকে হিমবাহ নামল
আমি অবাক হই নি আর, ঝাঁঝালো রামধনু
ভালবাসা সত্যিই একটা তেজস্ক্রিয় মৌল
গিলেছে হাত পা মাথা মেরুদন্ড এবং নখ
আষ্ঠেপৃষ্ঠে বুঝিয়েছি তোমাকে মিনিট সেকেন্ড
ঘুমবড়ি, কেরোসিন, অন্যমন কোন সমাধান নয়
এখন ফয়সালা খাই, ভয় আর নেই সত্যি
হাতে ঊনত্রিশ আর তোমার ঊনপঞ্চাশ সাল
সব ক্ষত মাথা নীচু, কিচকিচ নেই কিছু আর
সময় ঘুলিয়ে ওঠে, উড়ে যায় সীমানার পা
৩৯
সে এক গরগরে রাতে তুমি নিম্নচাপগাঢ় ঘূর্ণাবর্ত
বঙ্গোপসাগর তোমার পাশে সত্যিই ন্যালাক্ষ্যাপা
আমি নামতা পড়ছি, বলছিও স্বরথলি থেকে
এক এক্কে এক
তুমি গান শোনালে ঘূর্ণিঝড়ের প্যাঁচপয়জারে
আসল প্রস্তাবে বলা যায়, আসল গর্জনেও
তোমার মাংস পছন্দ
তোমার এত তান্ডব তাই লীলার শিরোপাজয়ী
চিলতে মাটিতে ক্রমশঃ সংক্ষিপ্ত জীবন কিংবা মরা
তুমি হতাশ
তাই অন্য কোথায়ও টর্নেডো হবার প্রস্তুতিতে সারেগামায়
৪০
উড়ুক্কু মাছের সচল ডানার মতো আমার এ মনতুমি বাসা বাঁধো
এলো থাক টলটলে তোমার ও চোখ, ছোট চুল
ঘামের সঙ্গে দু'চার চামচ রক্তও হাসুক হালকা
মনমতো হোক বাসা
ক্রমশ শিশুরা নাচুক স্রোত থেকে স্রোতের হৃদয়ে
আকাশে ভাসুক গল্পের ফিসফাস আচমকা রোদ্দুরে
বৃষ্টি বসুক নড়েচড়ে
চোদ্দপুরুষ তর্পণে, নানা কাজে দাও উঁকিঝুঁকি তুমি
নাচুনে শীতকে বস্তায় ঠেসে একচুমুক চুমো আঁকো
সন্তান শান্ত হয়
ছায়া ছায়া সত্যিরা আরো হয় ছায়া, আবছায়া....
৪১
চিরকেলে বস্তু তোমার পায়ে, পায়ের পাতায়
লোমহর্ষক ফলিতবিদ্যা
আমি তো এখনও বেঁচে আছি, বেঁচেই আছি
রোজ সকালে, অসময়েও আত্মবিশ্বাসে শশাফুল দেখি
কিংবা দোপাটি
আলতো স্পন্দনে প্রজাপতি বাতাসে কিছু কথা রাখে
তোমার না-পাওয়া চাওয়াগুলো রাগের মতো গলছে
সেলফি তোল
সোস্যালমিডিয়ায় তোলপাড় এলোপাতাড়ি বন্যা নামুক
আমি ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুঝি রং
এত তাড়াতাড়ি
দেখনদারির তপ্ত রোদ্দূরে গড়াগড়ি খাও গীতা ছেড়ে?
৪২
এত যে কাটুমকুটুম গান তুলসীপাতায় খেয়ে নিল সব
হ্যাটাংহটাং বাক্যছুরি ভোঁতা
জেল্লা তোমার বাসি ফুলের চোখ
হিসেব করে ঘর তুললে তুমি
কি দেখলে? হাঁটছে আরশোলা?
যখন তখন চমকে জেগে দেখি
বাতাস কত ভারী এলো গায়ে ছোটে
জানলার গ্রিল ভেঙে তুমি এলে
হাতে দুঃখী রাম দা
বাড়িয়ে আছি গলা
ছায়া ছায়া সত্যি এসব মায়া
ছায়ায় জাগে আনাচকানাচ
হদ্দমুদ্দ ছুটছি আরো জোরে
৪৩
তোমার উৎখাত হওয়া চোখে আবারও ঝিলিকনতুন বক্স জানলা বরাবর
তোমার ঠোঁট আবার হাসছে
ফুলকচি শশা আর ঝিঙের সবুজ আঁকাবাঁকায়
না-চাওয়া বস্তুসামগ্রী ক্রমশঃ ক্রমশঃ আড়ালিত
সুগার প্রেসার নামছে
এবার ওরাল কেমো শেষ হলেই গন্তব্য বৃন্দাবন
আমি তো খুঁটিবিশেষ
সন্তান শান্তিতে নেই জেনে
শ্বাসের ওঠাপড়া বিলকুল এলানো এলোপাতাড়ি
যেটুকু ঘুমাও রাতে, দিনে
সন্তানোত্তরের মহা সঙ্গীতে, নাকানিচোবানি বায়নায়
৪৪
ভরভরন্ত হাত দেখোনি তোমার!
শূন্য ভেবে বাড়িয়ে দিলে ?
অপ্রয়োজনীয়
আর না-দেখাটাও দুর্ভাগ্যজনক
ছায়া ছায়া মতিভ্রম
ঠিক সকালের লম্বা ছায়া যত
ঠিক দুপুরে মিলিয়ে গেল পায়
তোমার নামের সরকারি খয়রাতি
বুদ্ধিমানে চাটুমচুটুম চাটে
৪৫
শুধুই ঝলক, কলকলানি নেই আরসময়ও আস্তে চলে
বাঘের গন্ধ আর নেই চামড়ায়, ঠোঁটে
গাছেরও যত্নআত্তি চাই
পলেস্তারারও
নদী, খাল, বিলেরও
ভূত্বক নিঃস্তব্ধ হলে
যদিও হয় কম
খালি খালি মন নিয়ে খেলি
শরীর পেঁচিয়ে ওঠে সশব্দে
তোমাকে নিয়ে যাই বরফের দেশে
হৃদপিন্ডে নেমে আসে ঝুলন্ত ঘুম
৪৬
হোঁদলখোঁদলে কত তো ছড়ালে দানাকত তো ঢাললে মেহনত
ফুল শোঁকে হাঁকাবাঁকা
হেঁটমুন্ডু করে পথ কাটো দড়ির তল্লাশে
ভারা বাঁধাবাঁধি সোল্লাসে
তবুও বিড়াল-কুকুর
কোন এক সকালে গোড়া ছেঁড়া দেখো
করোনার ধাক্কাধাক্কি
হৃদয় গিয়েছে বেঁকে
সার সার এবড়োখেবড়ো পিঁপড়েটোলা
হঠাৎ হঠাৎ আকাট কামড়
থমকে গিয়েছে জীবন
৪৭
এত যে সটান চেয়ে থাকো মনের আঁচকাঁচ দেখ বুঝি?
করোনার ভয়ে খিল দাও
কারসিনোমা সিঁদ কাটে
এত যে দম্ভ, কোথায় পচালে?
মধুসূদন ডাক পাড় খালি
রূপ ভাসে, টানা টানা হাসিও
তুমি তো এখন সমকালকর্মী
যাদুকর ভুনোবাবু এদিক ওদিকে
হতচকিতে তুমিও তাদের পাল্লায়
কত শখ ছিল, হাতে হাত রাখো
বোঁবোঁ-ঘোরে খাও স্বপ্নের থালি
৪৮
হৃদপিন্ডের কোন কোন খাঁজে কি কি গোঁজা মনে করোমনে করার চেষ্টাটা করো
রাতে দিনে যা কিছু চোখে বেঁধে সবকিছুই আমার রক্তে খেলে
সটান ভাব কেটে গেলে উইপোকার হাঁটাহাঁটি দাঁত শক্ত করে
দাঁতই শক্ত করে
সমস্ত শখ কেটেকুরে ভোঁকাট নষ্ট করে ছায়া ছায়া সত্যি
তাড়া পেতে পেতে কুনোব্যাঙ ছোটে থপথপিয়ে পিছনে উল্লাস কাঁপে
উল্লাসই কাঁপে
রাত ঘোরে কাটলে মানুষ ক্রমশঃ ক্রমশঃ দূরদূরান্তের তারার মিটিমিটি
ভালবাসা মন্দবাসা খেলা করে মন কেমনের ঘন্টা মিনিটের ওলোটপালোটে
ওলোটপালোটেই
আমার আমি ধীরগতির ইন্টারনেট যখনই প্রকাশ্যে ঘুরিফিরি........
৪৯
নিশ্চিত অবদমন রুখে নিজেকে ওড়াই ছাই এর মতোআমাদের চারধারে চোখ-সুখী আঁকিবুঁকি
দেখে দেখে শরীর গুঁড়ো করি
কত তো সশব্দে, কত তো নিস্তব্ধতায় ডেকেছি
অন্ধকার চেপে টানে অবদমনে শুধু
চিতায় শোবার মত চুপচাপ শুয়ে
আজকাল এত অকাল শীত চামড়ার কোষেকাষে
মুখবন্ধ করার সময় আসছে তেড়ে
মনে শরীরে বিচ্ছিন্নতার কামড়
ভূপৃষ্ঠের মায়াবী আনাগোনা সবার জন্যে নয়
অনেক শিশুজীবনে মোলায়েম মালুম সে কথা
কোণে কোষে নির্লজ্জতার ডাঁট
এতটা পরেও নিজেকে পাপী কিংবা অপরাধী ভাবি না
বরং ছায়া ছায়া সত্যিগুলো মানি
আর দাঁত চেপে মনকাঁদাও থামাই
এতদিনে জেনে গেছি ভূপৃষ্ঠ আদবে বেঁজির মুখ
৫০
সিস্টার, সিস্টার, এত ঠান্ডা হয় কারও হাত!তাই তো হল, কেন হল?
আরেকটু জ্বোরো কপালে রাখতে বলি?
না, তা আর হয় না
ফিরেফিরতে জীবন শুরু হতে পারে না
আমার গ্রিনিস ব্রাউন চোখ নেচে ওঠে
নাচুক, তা নাচো নাচো ধ্যামধাড়াক্কা
নতুন করে আর কিছুই হবে না, কিছুই হবে না
এই তো সবে বিস্ফোরণ
ভূপৃষ্ঠের সব ব্যথার বিস্ফোরণ পেটে
সূঁচ বেয়ে শরীরে ঢুকছে জীবনফেরতি রস
একটু একটু করে ঘাসের গন্ধ পাচ্ছি
সিস্টার, আপনার সূঁচফোটানো হাতে কত আছে আরও জাদু
বাবা, এবার ঘুমোন, আবার ভাল হয়ে উঠবেন
আমার তন্দ্রা চটকে যায়, চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে
৫১
নদীর কথা সবিস্তার বলোগাছের কথা সবিস্তার বলো
পাখির কথা সবিস্তার বলো
আর প্রথম ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ার কথা সবিস্তার বলো
দেখো গোটা পৃথিবীর শিহরণ দেখো
গাছেও ফুল ফল ভরে যায়
পাখিও উড়ে উড়ে আসে
নদী আবার ছলাৎছলাৎ ছুটে চলে
দেখো ছায়া ছায়া সত্যিগুলোর মায়া
ভোরের সূর্য্যের প্রথম আলো দু'হাতে মাখো
ছোটো-ছোটো পায়ে চলো আবারও হাঁটি
স্মৃতির পাতা মোড়ো, স্মৃতির পাতা বাড়াও
৫২
সকাল সকালসকাল বুড়ো হয় ঝোপে আর জঙ্গলে
এখানে প্রেমের জমি চেবায় ভরভরাট আগাছা
অনির্দিষ্ট কালকে বলেছে কত আষ্ঠেপৃষ্ঠে জন্মজন্মান্তর
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসে অকালে বন্ধ হল চোখ
প্রেম আছে খোবলাখুবলিতে নিরেট বুনুনি
কাড়াকাড়ি হলে ছিঁড়ে গেলে সুতো আবার শুরু
ধর্ণায় বসে, চকিতে অস্ত্র চালায় বোকচন্দর লাট
হিসেব হিসেব যথাযথ মর্যাদায় এক ঠ্যাঙে খাড়া
বোতলে প্রেম ভরে, টাকাকে প্রেম ভেবে খায় খাবি
আত্মপক্ষের সন্মান খুবই সামাজিক, ফলিত সে শিক্ষা
বহুপ্রেমে মজে গিয়ে অবদমনের ফূর্তিবাজির মহড়া
প্রেম নেই প্রেম আছে কিছু ঘটিত বোঝাপড়ায়
ছায়া ছায়া সত্যিগুলো মাকড়সার বাসার মতো
প্রেম নেই এর ব্যথায় চিকচিকানির গান
প্রেম আছে এর উদ্ধত উল্লাসে ওঠে কেঁপে কেঁপে
এই ভূপৃষ্ঠ এত ছোট ভুলে মারা যায় কিংবা মারি কচলে বিগড়ে
পথ শুধু পড়ে থাকে চেয়ে থাকে সময় নিরপেক্ষ
বাতাস শুধু চায় চারধারে ব্যক্তি স্বাধীনতা
প্রেম নয় সফলতা দাঁত রাখে নিখাদ কাজে
জীবনের আলো ঝিকিমিকি, অমৃত স্বাদ
অনেকটা বয়েস পেরলে হয়তো আসে সে আলো
আলোর কাছে বসে কাঁদামুখ সহজ সুন্দর
আলোর কাছে বসে কাঁদারূপ সহজ সুন্দর
আলোর কাছে বসে কাঁদাপাখি সহজ সুন্দর
আলোর কাছে বসে কাঁদাআঁধার সহজ সুন্দর
এক দুই গুণতে গুণতে ঘুম বাঁধা চোখে
নিজেকে গোণে তীব্র তীরন্দাজীর চোখ
আজ কাল পরশু ঝুড়ে রস পড়ে খেজুরগাছে
প্রেম নয় ভালবাসা ভেজা কাজ জেগে থাকে
************শেষ**********************