অন্য কাহিনী
অন্য কাহিনী


সকাল দশটা, অফিসে আজ দেরি হয়েছে ভারী।
বালিগঞ্জ ফাঁড়ির মোড়ে লাল সিগন্যালে থমকে গেল গাড়ি।
ভরা গ্রীষ্মেও লাউডস্পিকারে বীরেনবাবু মহালয়া বন্দিতা,
'যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।'
গাড়ির সারির অলিগলিতে কাচ ঠুকে পয়সা চাইছে ওরা,
রঙ্গিন শাড়ি, সুঠাম দেহ, চামড়াটা শুধু তপ্ত রৌদ্রে পোড়া।
না না, শুধু চামড়া নয়, ভাগ্যটাও ওদের পুড়েছে বহুদিন,
পৃথিবীতে ওরা বাস করে ঠিকই, তবু সমাজের মাঝে ওরা সমাজহীন।
ভাগ্যদেবী আপন মনের কোন খেয়ালে বিষম বিহ্বলে,
পুরুষ নারী গোল বাঁধিয়ে ওদের ফেলল মধ্যবর্তী দলে।
নাকি দেবতা নয়, জীবনই ওদের গড়েছে অমন আধাখেঁচড়া করে?
জীবন জীবিকা অট্টহাস্য হেসে ওঠে হাততালির জোরে!
স্কুলের ফর্মে, ক
লেজ খাতায় ওদের নামটা অন্য বলে লেখা।
সীমা রেখার মিথ্যে স্বপ্নে বাধ সেধেছে ওদের সীমারেখা।
তবুও ওদের মাঞ্জা ছিঁড়ে কোনো ঘুড়ি হয়ে ওঠে মানবী।
দু হাত বাড়িয়ে চোখ রাঙিয়ে সমাজ থেকে লুটে নেয় তার দাবি।
কোনো হাততালি ওদের হয়না, ওদের জন্যে লাখো হাত দেয় তালি।
পরোজনমকে দেখিয়ে দুয়ো, রাধা হয়ে ওঠে এ জন্মে বনমালী।
শিক্ষার আলোয় দীপ্ত হয়ে আলোকিত করে গহীন অন্ধকার।
সূর্যের মতো ঝলসে, করে পোড়া ভাগ্যটা পুড়িয়ে ছারখার।
সমাজ যখন লজ্জা চোখে মুখ নামিয়ে জানলায় তোলে কাচ,
জীবন পিঠ চাপড়ে বলে,"ওরে অন্য, তুই অন্যভাবে বাঁচ।"
লাল সিগন্যাল সবুজ হয়েছে, মহালয়া যেন ক্রমে হয়ে আসে ফিকে,
"কন্যারূপেন সংস্থিতা" স্যালুট জানায় অন্য এক দেবী কে।