Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sukumar Roy

Classics

0  

Sukumar Roy

Classics

রাগের ওষুধ

রাগের ওষুধ

2 mins
2.7K


কেদারবাবু বড় বদরাগী লোক। যখন রেগে বসেন, কাণ্ডাকাণ্ড জ্ঞান থাকে না।

একদিন তিনি মুখখানা বিষণ্ণ ক'রে বসে আছেন, এমন সময় আমাদের মাস্টারবাবু এসে বললেন, 'কি হে কেদারকেষ্ট, মুখখানা হাঁড়ি কেন?"

কেদারবাবু বললেন, "আর মশাই, বলবেন না। আমার সেই রূপোবাঁধানো হুঁকোটা ভেঙে সাত টুকরো হয়ে গেল— মুখ হাঁড়ির মত হবে না তো কি বদনার মত হবে?"

মাস্টারমশাই বললেন, 'বল কি হে? এ তো কাচের বাসন নয় কি মাটির পুতুল নয়— অমনি খামখা ভেঙে গেল, এর মানে কি?'

কেদারবাবু বললেন, 'খামখা ভাঙতে যাবে কেন— কথাটা শুনুন না। হল কী,— কাল রাত্রে আমার ভালো ঘুম হয় নি। সকালবেলা উঠেছি, মুখ হাত ধুয়ে তামাক খেতে বসব, এমন সময় কল্‌কেটা কাত হয়ে আমার ফরাসের উপর টিকের আগুন প'ড়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি যেই আগুনটা সরাতে গেছি অমনি কিনা আঙ্গুলে ছ্যাঁক্‌ করে ফোস্কা প'ড়ে গেল। আছা, আপনিই বলুন— এতে কার না রাগ হয়? আরে, আমার হুঁকো, আমার কল্‌কে, আমার আগুন, আরাম ফরাস, আবার আমার উপরেই জুলুম! তাই আমি রাগ ক'রে— বেশি কিছু নয়— ঐ মুগুরখানা দিয়ে পাঁচ দশ ঘা মারতেই কিনা হতভাগা হুঁকোটা ভেঙে খান্‌ খান্‌!'

মাস্টারমশাই বললেন, 'তা যাই বল বাপু, এ রাগ বড় চণ্ডাল— রাগের মাথায় এমন কাণ্ড ক'রে বস, রাগটা একটু কমাও।' 'কমাও তো বললেন— রাগ যে মুখের কথায় বাগ মানবে— এ রাগ আমার তেমন নয়।'

'দেখো, আমি এক উপায় বলি। শুনেছি, খুব ধীরে ধীরে এক দুই তিন ক'রে দশ গুনলে— রাগটা নাকি শান্ত হয়ে আসে। কিন্তু তোমার যেমন রাগ, তাতে দশ-বারোতে কূলোবে না— তুমি একেবারে একশো পর্যন্ত গুনে দেখো।'

তারপর একদিন কেদারবাবু ইস্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছেন। তখন ছুটির সময়, ছেলেরা খেলা করছে। হঠাৎ একটা মার্বেল ছুটে এসে কেদারবাবুর পায়ের হাড়ে ঠাঁই করে লাগল। আর যায় কোথা! কেদারবাবু ছাতের সমান এক লাফ দিয়ে লাঠি উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ছেলের দল যে যেখানে পারে একেবারে সটান চম্পট্‌। তখন কেদারবাবুর মনে হল মাস্টারবাবুর কথাটা একবার পরীক্ষা ক'রে দেখি। তিনি আরম্ভ করলেন, এক-দুই-তিন-চার-পাঁচ-

ইস্কুলের মাঝখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে বিড়্‌বিড়্‌ করে অঙ্ক বলছে, তাই দেখে ইস্কুলের দারোয়ান ব্যস্ত হয়ে কয়েকজন লোক ডেকে আনল। একজন বলল, 'কী হয়েছে মশাই?' কেদারবাবু বললেন, 'ষোল-সতেরো-আঠারো-উনিশ-কুড়ি-'

সকলে বলল, 'এ কী? লোকটা পাগল হল নাকি?— আরে, ও মশাই, বলি অমনধারা কচ্ছেন কেন?' কেদারবাবু মনে মনে ভয়ানক চটলেও— তিনি গুনেই চলেছেন, 'ত্রিশ-একত্রিশ-বত্রিশ-তেত্রিশ-' আবার খানিক বাদে আর একজন জিজ্ঞাসা করল, 'মশাই, আপনার কি অসুখ করেছে? কবরেজ মশাইকে ডাকতে হবে?' কেদারবাবু রেগে আগুন হয়ে বললেন, 'উনষাট-ষাট-একষট্টি-বাষট্টি-তেষট্টি-' দেখতে দেখতে লোকের ভিড় জমে গেল— চারিদিকে গোলমাল, হৈ চৈ। তাই শুনে মাস্টারবাবু দেখতে এলেন, ব্যাপারখানা কি! ততক্ষণে কেদারবাবুর গোনা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি দুই চোখ লাল করে লাঠি ঘোরাচ্ছেন আর বলছেন, 'ছিয়ানব্বুই-সাতানব্বুই-আটানব্বুই-নিরেনব্বুই-একশো— কোন্‌ হতভাগা লক্ষ্মীছাড়া মিথ্যাবাদী বলেছিল একশো গুনলে রাগ থামে?' বলেই ডাইনে বাঁয়ে দুম্‌দাম্‌ লাঠির ঘা।

লোকজন আব ছুটে পালাল। আর মাস্টারমশাই এক দৌড়ে সে যে ঘরের মধ্যে ঢুকলেন, আর সারাদিন বেরোলেন না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics