রোজ ডে
রোজ ডে


মাআআআআ !ও মাআআআআ! চেচামেচি করতে করতে জুই ঘরে ঢুকলো ।
কি হয়েছে সোনাই ,এতো চিৎকার কিসের??রান্নাঘরে থেকে বেরিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললেন নীলীমা দেবী।
আজ নাকি রোজ ডে জানো? এখানে বসো বলে নীলিমা দেবীকে সোফায় বসালো জুই।
তো কি হয়েছে??আর আমি তো বুড়ি এইসব আমায় বলছিস কেন শুনি??বলে মুচকি হাসলেন নীলিমা দেবী।
আরে,শোনো আজকের দিনে সবাই তাদের ভালোবাসার মানুষকে গোলাপ দেয় আর আমার সবকিছু তুমি, তাই ভাবলুম তোমাকেই দিই " রেড রোজ" বলে নিজের ব্যাগ হাতড়ে একটা লাল গোলাপ বের করে নীলীমা দেবীকে দিলো জুই।
সেটা দেখে নীলীমা দেবী খিলখিল করে হেসে উঠলেন।
হাসার কিছুই হয়নি,,সত্যি কথা তো বললাম বলেই কপট রাগ দেখালো জুই।
তবে এইসব দেখে মনে মনে বেশ খুশিই হলেন নীলীমা দেবী ।এইজন্য মেয়েটাকে এতো ভালোবাসেন ,কে বলে?পেটের মেয়ে না হলে মা হওয়া যায় না।তিনি তো হয়েছেন জুইয়ের মা হোকনা দত্তক নেওয়া।মা তো মাই হয়।ভারী ভালো মেয়ে জুই। নীলীমা দেবী সিঙ্গেল মাদার তবে অবিবাহিত ,বিয়ে থা করেননি। খুব করে চেয়েছিলেন একটা সংসার হোক ,ফুটফুটে মিষ্টি মেয়ে থাকবে,
প্রথম ইচ্ছা না পূরণ হলেও দ্বিতীয় টা হয়েছে তা নিয়েই সারাটা জীবন কাটিয়ে দেবেন।
আজ জুইকে দেখে আরেকটি মানুষের কথা মনে পড়ে গেলো নীলীমা দেবীর ।সে অনেক আগের কথা ,তখন নীলীমা দেবী পনেরো বছরের কিশোরী আর সে বছর কুড়ির যুবক।
ছোট থেকেই দুটিতে একসাথেই কাটিয়েছেন, বাবারা বন্ধু ছিল ।কবে যে মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল তা হয়তো বলতে পারবেন না নীলীমা দেবী ।শুধু এটুকু জানতেন উভয়েই একে ওপরকে ছাড়া চলবে না।
ছোট থেকেই নীলীমা দেবী একটু বেশিই অভিমানী ছিলেন, এখনো থাকতেন যদি অভিমান করার মানুষটা বেচে থাকতো।কিন্তু জানতেন না এই অভিমান তার জীবনের প্রিয় মানুষ টাকে কেড়ে নেবে।তাহলে হয়তো অভিমানটা প্রকাশ করতেন না।
বরাবরই নীলীমা দেবীর গোলাপি গোলাপ পছন্দের, একবার সেই মানুষের পক্ষে তা আনা সম্ভব হয়নি, যার পরিবর্তে মানুষটা লাল গোলাপ এনেছিল,বয়স কম হওয়ায় নীলীমা দেবী জেদ করেছিলেন গোলাপি গোলাপ ই চাই, অনেক কষ্টে তা খুজেছিল মানুষ টা ।
দুর্ভাগ্য বশত মানুষটা ফেরেনি, এসেছিল তার লাশ, শেষ মুহুর্তে ও হাতে গোলাপ ফুল টা ধরা ছিল কিন্তু সেটা তার রক্তে রাঙা ছিল।এখনো মানুষটাকে ভালোবাসেন, বোঝেন অভিমানের চেয়েও মানুষটা বেশী দামী ছিল তার কাছে।আজীবন ভালোবেসে যাবেন,ভুলের খেসারত এইভাবেই দেবেন কষ্ট পেয়ে ,যাকে হারিয়েছেন নিজের ভুলে
চাইলেও গোলাপ কে ঘৃনা করতে পারেন না, মানুষটার পছন্দ লাল রঙের গোলাপ আর ভালোবাসার মানুষের পছন্দ গুলো একান্ত আপন এবং সুন্দর হয়।আজকের দিনে ই তো মানুষটা চলে গেছিল না ফেরার দেশে।
মেয়েটারো ও পছন্দ লাল গোলাপ, কি মিল দুজনের।বিভিন্নভাবে ভালোবাসার মানুষের সব পছন্দের জিনিসগুলো ফিরে আসে হয়তোবা মানুষটা আলাদা হয় তাই মেয়েটা শখ করে কিনে এনেছে সেটাই দিলেন মানুষটার ছবির কাছে। এভাবেই না হয় পালন করবেন দু:খের দিনটা ।
'ভালোবাসার সম্পর্কে অভিমান বড়ই মধুর অঙ্গ কিন্তু প্রিয় মানুষের থেকে বেশি দামী দামী নয় এই অনুভুতির থেকেও।একবার হারিয়ে গেলে মানুষটিকে পুনরায় ফিরে পাওয়া অসম্ভব।সবই চলুক খুনসুটি, মান-অভিমান অল্প অল্প সম্পর্কের মাঝে।অতিরিক্ত কোনো জিনিস কাম্য নয়"।
সমাপ্ত।