ফিরে দেখা
ফিরে দেখা
স্টেশনের ব্যস্ততম জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্ষণিকের জন্যে হলেও, নিজেকে, নিজের প্রিয় কবির কোন কবিতার চরিত্র মনে হওয়ার মধ্যে এক অদ্ভুত মনকেমনের ভাব কাজ করে। মনে পড়ছে কবির লেখা সেই কথা, "রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।"
সবে কালীপুজো গেছে, কিন্তু এই ভোরের কলকাতায় বেশ ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা আছে। সেই হাওয়ার ঝাপটায় এক লহমায় মনে পড়ে গেলো, বিগত কয়েকঘন্টায় আমার এই ট্রেনযাত্রার কথা।
পুজোর পরে গিয়েছিলাম উত্তরবঙ্গের এক প্রকাশনী সংস্থার নতুন বিপণীর উদ্বোধনে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে। বাংলার বেশ কিছু খ্যাতনামা কবি, লেখক-লেখিকারা এসেছিলেন। বাকীদের মতো খ্যাতনামা না হলেও, দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছরের জীবনে লেখক হিসাবে সামান্য কিছু পরিচিতি অর্জন করার সুবাদে আমিও গেছিলাম। অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকরা আমাকে NJP তে এসে ট্রেনে তুলে দিয়ে গেলো। ট্রেনের এসি কামরায়, নিজের বার্থে বসেছি, এমন সময় এক বছর কুড়ির তরুণী, বার্থ খুঁজতে খুঁজতে আমার বার্থের সামনে হাজির। তার মুখের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলাম। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। না না, আমি এতোটাও পাভার্ট নই যে নিজের হাঁটুর বয়সী কোন মেয়েকে দেখলে মন গেয়ে উঠবে, 'গুলাবি আঁখে যো তেরি দেখি...!' কিন্তু সত্যিই ওই চোখ দুটো যে..
ট্রেন হুইশল বাজিয়ে কেঁপে উঠলো, তারপর ধীর গতিতে স্টেশন ছাড়লো। আমি অস্থির মনে মেয়েটার কথা ভাবছি। মেয়েটাও একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিলো। সেটা কি আমাকে চেনে বলে? কিন্তু আমাকে চেনা মেয়েটার পক্ষে একটু হলেও অদ্ভুত। কারণ, আমার লেখা জনপ্রিয় হলেও, আমার মুখ নয়। আমাদের দেশে প্রায়ই যা হয়, সিনেমার নায়ক-নায়িকা, বা গায়ক-গায়িকাদের নিয়ে মানুষের যে উন্মাদনা থাকে, গীতিকার বা সিনেমার গল্পটির লেখক, স্ক্রিপ্ট-রাইটারদের নিয়ে তার এক শতাংশও থাকেনা। তাহলে কি হলো? ট্রেনের গতি বাড়লো; সাথে আমার মন ব্যাকগিয়ার মেরে ফিরে গেলো ২৩ বছর আগে....
পূর্বকথা ১
"ভাই,ক্লাসের দেরী হচ্ছে। দেরী করলে টি.জি স্যার ঢুকতে দেবেনা!"- সুমন আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো। সত্যিই আজ বড়বাজারে এমন একটা মিছিল বেরিয়েছে যে, ইউনিভার্সিটি আসতে দেরী হলো। সবে এক সপ্তাহ ক্লাস শুরু হয়েছে। আমাদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ এম.এ -র সবচেয়ে কড়া স্যার উনি। এসব ভাবতে ভাবতেই বইপাড়ার ভিড় ঠেলে এগোচ্ছিলাম। বলা ভালো দৌড়োচ্ছিলাম; ক্যাম্পাসে ঢুকে করিডর ধরে ক্লাসের দিকে যাচ্ছি এমন সময়েই ঝটকা! চমক কাটলো যখন, আমি আর একটা মেয়ে ভুপতিত। মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থাতেই দেখলাম, মেয়েটা এমন এক চাহনি দিলো যে, সত্য যুগ হলে হয়তো ভস্মই হয়ে যেতাম।
-"ইয়ে মানে খুব দুঃখিত। দেখতে পাইনি।"
- "এবার থেকে দেখতে শেখো। ইংলিশ এম.এ র ফার্স্ট ইয়ারের রুম কোনটা?" উঠে দাঁড়িয়ে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ঠান্ডা চোখে প্রশ্নটা করলো।
পাশে সুমন ছিলো। এতক্ষণে মুখ খুললো,- 'ওই তো ডানদিকের লাস্ট ঘরটা।'
মেয়েটা পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমিও উঠে ক্লাসরুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বুঝলাম, আমি পড়ে গেছি। - ওই ঠান্ডা চাহনির প্রেমে!
পূর্বকথা ২
সেদিনের পর আরো এক মাস কেটেছে। আর আমি গঁদের আঠার মতো আটকে পড়েছি ঠান্ডা চোখের চক্রবূহ্যে। আজকাল সত্যিই অণুকে ছাড়া আমার আর চলছেনা। অণু মানে অণুরিমা মুখার্জী। সেই ঠান্ডা চোখের অধিকারিণী। প্রথম দিনের ধাক্কার পর থেকে ওকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছি। ওর কপাল বেয়ে নামা ঢেউখেলানো চুল, কাজলটানা চোখ- এসবের জালে আমি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ছি। কিন্তু কেসটা হলো, ওদিক থেকে কোন সিগন্যাল নেই। সেই প্রথমদিন ভস্ম করতে না পারার ক্ষোভ যায়নি হয়তো। তাই ঠান্ডা চাহনিটা এখনো পাল্টায়নি।
এই বিষয়টা সুমনকে বলতেই, যেন হিটলারের সামনে ইহুদীদের প্রশংসা করছি, এরকম মুখ করে বললো, "ভাই এসব অণু-পরমাণুর কেসে নাক গলাস না। এক পরমাণুতে হিরোসিমার কি হাল দেখছিস তো। আর এই অণু ফাটলে তোর সব হিরোগিরি সীমাহীন ভাবে বিলুপ্ত হবে।" - সুমনের মুখে ভয়ঙ্কর বাংলা ভাষায় ডায়ালগ শুনে চিন্তায় তলিয়ে গেলাম। জীবনের এই স্টেজে নিজের কাছের বন্ধুরাই হয় আসল জোর; যারা পাশে থাকলে নিজেকে আলেকজান্ডারের মতো দিগ্বিজয়ী মনে হয়। কিন্তু এরাই যখন সাহস দেওয়ার বদলে ব্রুটাসের মতো আচরণ করে....
পূর্বকথা ৩
দেখতে দেখতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান এসে গেলো। সব ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবি আর মেয়েরা শাড়ী পড়বে। আমিও মনে মনে ঠিক করেছি ওইদিনই অণুরিমাকে সবকিছু বলে দেবো। যে যাই বলুক এর একটা পরিণতি হওয়া দরকার। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! নবীনবরণের দুইদিন আগে থেকে ভীষণ জ্বরে পড়লাম। জ্বরের চোটে মাথা তুলতে পারছিনা। নবীনবরণের দিনটাও বিছানায় কাটছে। মন খারাপ থাকলে শরীর খারাপের প্রকোপ আরো বেড়ে যায়। বিছানায় শুয়ে সাত-পাঁচ ভাবছি, এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। সবে ভাবছি কে আবার এলো! ভাবতে ভাবেই ঘরের মধ্যে ঢুকলো সুমন, পিছনে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে - অণুরিমা!
নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিলোনা। চমকে উঠেছিলাম। শুনলাম ও বলছে,'কিরে? ভেতরে আসতে বলবিনা?' ঘোর লাগা গলায় বললাম,'হ্যাঁ আয়।' সুমন বললো, ' আরে পরশুদিন রাতে এসে দেখলাম তোর এই হাল। পরদিন ওকে বলেছিলাম। আজও তুই এলিনা। তাই ও তোকে দেখতে আসতে চাইলো।' - এসব কি শুনছি? আমার জ্বর তখন এক নিমেষে উধাও হতে বসেছে! ওর দিকে তাকালাম। ও এসে বিছানাতেই আমার পাশে বসেছে। পরনে একটা সুন্দর নীল রঙের শাড়ী। সুমন বললো,' এই আমি কাকীমাকে চা করে আনতে বলি!আমার খুব চা তেষ্টা পেয়েছে।' বলেই রান্নাঘরের দিকে গেলো। ঘরে শুধু আমি আর ও।
ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ও আমার দিকেই দেখছে। সেই চাহনিতে অতলান্তিকের গভীরতা।-'ক্লাসে তো আসছিসনা। নোটস লাগলে বলিস! দিয়ে দেবো। কতদিন লাগবে আর?'
পেটের মধ্যে একশোটা প্রজাপতি উড়তে লাগলো। তার মানে ও আমার খেয়াল রাখে। সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করেনা। বললাম,' দেখি! অ্যান্টিবায়োটিকস চলছে।'
-'দাঁড়া আমার ওষুধে আরো তাড়াতাড়ি কমবে!'
বলার সাথে সাথেই বুঝলাম, আমার জ্বরে শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটে,ভিজে কিছুর ছোঁয়া। পলকের মধ্যে ওর মুখ, আমার মুখের উপরে নেমে
এলো, ওর ওই কপাল বেয়ে নেমে আসা চুল, আমার কপালে জলপট্টির কাজ করলো। এতদিনের শোনা আণবিক বোমার আজ বিস্ফোরণ হলো আমার শরীরের মধ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সোজা হয়ে গুছিয়ে বসে বললো," একটা কথা তো বলার সাহস নেই। তাই আমিই কাজটা এগিয়ে দিলাম। আর অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর চেষ্টা নয়। আজ থেকে তুই শুধু আমার।আমি অস্ফুটে বললাম,'অণুরিমা..'
আমার ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো,'অণু। শুধু অণু। আমার কাছের মানুষরা ওই নামেই ডাকে!'
আমি এই হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এমন সময় সুমন ঘরে এলো। কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে ওরা চলে গেলো।
পূর্বকথা ৪
এরপরের দিনগুলো একধাক্কায় সাদা-কালো টিভি থেকে রঙীন টিভিতে চলে এলো। ধীরে ধীরে সময়ের স্রোতে ভেসে গেলাম আমরা। ইউনিভার্সিটি শেষ হলো। অণু অধ্যাপনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলো। আর আমার মধ্যে ততদিনে লেখক হওয়ার ভূত চেপে বসেছে। দু-তিনটে বই প্রকাশিত হয়ে গেছে। এরকম একদিন অণু হঠাৎ আমাকে বললো, 'আজ তুমি আমার বাড়ী চল। বাবার সাথে কথা বলবি!'
মনে হলো কলেজ স্ট্রীটের মাটি কেঁপে উঠলো। কোনমতে ধাক্কাটা সামলে নিয়ে বললাম,'মানে? বাড়ীতে আমার মানে আমাদের কথা মানে..'
-'আরে ধুর! কি মানে মানে করছিস! তোর দ্বারা যে হবেনা জানি, আমাকেই করতে হবে। চল!'
অগত্যা আর কি! হাঁড়িকাঠের দিকে এগোলাম।
ওর বাড়ীতে ঢুকে ফিউজ উড়ে গেলো। ভবানীপুর অঞ্চলে বিশাল তিনতলা বাড়ী। ব্যবসায়ী অভিজাত পরিবার। কোথায় আমার বাবা এক সরকারী স্কুলের শিক্ষক, আর কোথায় এরা! আমাকে অণু নিয়ে গিয়ে বৈঠকখানায় বসালো। কিছুক্ষণ পর ওর বাবা ঘরে ঢুকলো। বাবা তো নয় যেন, অমরেশ পুরী! নাম ঠিকানা বাড়ীর বাকিদের সম্পর্কে জানলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, কি করতে চাই এরপরে? জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ দিচ্ছিলাম, তায় আবার বিনা প্রস্তুতিতে। ভয় ভয় মুখে বললাম, "সরকারী চাকরীর চেষ্টা করছিআর সাথে লেখক হতে চাই!"
কথাটা শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, "অণুমা তোমার কিছু লেখা আমাকে পড়িয়েছে; ভালোই লেখো। কিন্তু আমি চাইনা আমার একমাত্র মেয়ের সাথে কোন সাধারণ সরকারি চাকুরে বা লেখকের বিয়ে দিতে! আমি ওর জন্য আরো বেটার কিছু চাই! তুমি প্লিজ ওর সাথে আর যোগাযোগ রেখোনা। আমি এই সম্পর্ক মানিনা!"
- মনে হলো আমি ওই বৈঠকখানার সোফার গভীরে তলিয়ে যাচ্ছি! চারপাশ অন্ধকার হতে লাগলো। কি অবলীলায় এত নিষ্ঠুরভাবে কথা বললেন 'ভদ্রলোক'! আমি একবার অণুর দিকে তাকালাম। ও নির্লিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারপর বেরিয়ে এলাম রাস্তায়।
এরপরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। ও আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেনি। একবার অনেক কষ্টে সুমনের সাহায্যে ওকে দিয়ে অণুর বাড়ীর ফোনে ফোন করে ওর সাথে কথা বলি,"অণু প্লিজ! একবার আমাদের কথা ভাবো.."
- "অণুরিমা! আমার নাম অণুরিমা! আর প্লিজ ডিস্টার্ব করোনা।"
মনে পড়ে গেলো সেই নবীনবরণের দিন আমার বাড়ীতে বলা কথা গুলো। কিছুদিন আগে আমার এক লেখকবন্ধু বলেছিল, বেশীরভাগ প্রতিশ্রুতি একদিন শুধু শ্রুতি হয়ে যায়। কারুর প্রতি আর থাকেনা! কথাটা কতটা সত্যি এখন বুঝলাম।
কলকাতা ২০১৬
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ট্রেনের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙতে দেখলাম ভোরের আলো ফুটছে। উঠে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে, কুপের দিকে আসছি, দেখলাম কালরাতের মেয়েটা তার মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে প্যাসেজে। বুঝলাম কাল রাতে ভুল করিনি। কিশোরী মেয়েটি পুরো ওর মায়ের চোখটাই পেয়েছে।
- আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে মেয়েটি বললো, "মা ওই দেখো তোমার প্রিয় লেখক। বলেছিলাম না, উনিও এই ট্রেনেই যাচ্ছেন।দেখো আমার সাথে ঘুরতে গিয়ে তোমার কেমন প্রাপ্তি হলো।"
তারপরেই আমাকে বললো, "জানেন কাকু মা আপনার লেখার খুব ভক্ত। আপনার সব লেখা মা পড়ে। মায়ের অ্যালবামে তো আপনার ছবিও আছে!'- অদ্ভুত ভালোলাগায় মন ভরে গেল। ভালোকরে তাকালাম অণুর দিকে। প্রৌঢ়ত্বের ছোঁয়া লাগলেও আগের মতোই উজ্জ্বল। আমাকে দেখে হাসলো। ট্রেন স্টেশনে ঢুকছে। তাই ওর মেয়ে কুপের দিকে এগোলো। এখন শুধু আমি আর অণু।
- "কেমন আছো অণুরিমা?"
-" অণুরিমা ভট্টাচার্য্য। চ্যাটার্জী হতে চেয়েও পারিনি।"
- 'উঁহু। বলো হতে চাওনি।'
- জানতাম রেগে থাকবে!কিন্তু সত্যি এটাই যে বাড়ীর চাপে সব করেছি। যেদিন তুমি ফোন করেছিলে সামনে বাবা দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি নিরুপায় ছিলাম। পারলে ক্ষমা করে দিও।'
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। চোখ বেয়ে জলের ধারা নামলো। সামলে নিয়ে বললাম, 'তোর কার সাথে বিয়ে হলো?'
একটু হেসে বললো,"শহরের এক নামকরা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের ছেলের সাথে! কিন্তু রিনি হওয়ার কয়েক বছর পর থেকেই ও পালটে যেতে লাগলো। তারপর একদিন সব ছেড়ে চলে গেলো। আমি দক্ষিণ কলকাতার এক কলেজে অধ্যাপনার সু্যোগ পেয়েগেছিলাম। আমি রিনিকে নিয়ে তারপর থেকে একাই আছি। তা তুমি বিয়ে করেছো?'
- 'নাহ! এই বেশ ভালো আছি। প্রায় ২৪ বছর আগে একজন আমার অধিকার নিয়েছিলো। আজও তারই আছি।'
- 'আচ্ছা! সীমন্তিনী কি সেই? তাহলে কিন্তু আমার আরও কিছু সীমন্তিনীকে নিয়ে লেখা চাই। তোমার সব লেখার মধ্যে সীমন্তিনীকে নিয়ে লেখাগুলো আমার সবচেয়ে প্রিয়।" বুঝলাম ও কথার মোড় ঘোরাচ্ছে।
ট্রেন ততক্ষনে স্টেশনে ঢুকে গেছে। আমরা নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে নামলাম। ব্যাগ খুলে আমার একটা লেখা বই ওকে দিলাম। বইয়ের কভারে লিখতে যাচ্ছিলাম 'শুভেচ্ছাসহ অণুরিমা।" আমাকে থামালো। বললো ওটা কিন্তু শুধু 'অণু' হবে। আমার কাছের মানুষরা আজও আমাকে অণু বলেই ডাকে। আমি শুধু হাসলাম। ততক্ষণে ওর মেয়েও এসে গেছে। কথার ফাঁকে সুযোগ বুঝে ফোন নাম্বারটা নিয়ে রাখলো আর একদিন ওদের বাড়ি যাওয়ার জন্য বলে গেলো। তারপর ওরা এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। আর আমি বিগত কয়েকঘন্টার রেশ মেখে নিয়ে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে রইলাম একা!
মনের ইয়ারফোনে অনুপম রায় গেয়ে চলেছে,
'এই স্টেশনের চত্বরে হারিয়ে গেছি,
শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবোনা না না.."
( কলেজ স্ট্রীট চত্বর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর, আর সীমন্তিনীর চোখের আণবিক বোমা বাদ দিয়ে বাকী সব কিছু কাল্পনিক)