ওমের পরশ
ওমের পরশ
কলিং বেলটা বেশ কয়েকবার বাজার পর দরজা খুলেছিল যে, তাকে দেখে কয়েক পা পিছিয়ে আসে রহমত। কোনমতে নিজের আবেগকে সামলে হাতজোড় করে হাসিমুখে বলে--"নমস্তে ম্যাডামজী, কাশ্মীরি শল, সোয়েটার ওয়াগেরা হ্যায়, কুছ চাহিয়ে? দেখ সকতে হ্যায়।"
মেয়েটার চোখেমুখে তখন খেলা করছে আতঙ্ক, চোখের নিচের কালশিটে বলছে অন্য কথা। মেয়েটি বলে--"না না কিছু চাই না, আপনি আসুন।" রহমত বলে ওঠে--" কুছ নেহি চাহিয়ে? একবার দেখ লেতে তো.." মুখের কথা মুখেই রয়ে যায় তার। ঘর থেকে একজন পুরুষ বেরিয়ে এসে রুক্ষস্বরে বলে--" বোলা না কুছ নেহি চাহিয়ে, অব যাও ইয়াহাসে।" দ্বিতীয় কথার সুযোগ না দিয়ে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয় পুরুষটি। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে রহমত শুনতে পায় মেয়েটির আর্তনাদ। কি মনে করে দাঁড়িয়ে পড়ে সে, আবার একটা আর্তনাদ--দাঁতে দাঁত চিপে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠে সে, দরজার বাইরে দিয়ে শুনতে পায় পুরুষটির বলা কথাগুলো, কেউ যেন কানে গরম সিসে ঢেলে দেয় তার। --"এই শোন ,তোর বাপের ঘর থেকে যদি টাকা না নিয়ে আসিস, তোকে বেচে আমি আমার পাওনা উসুল করবো বলে দিলাম।"
মেয়েটি কাঁদোকাঁদো গলায় বলে--"আপনি তো জানেন আমার বাড়ির অবস্থা, তারপরেও কেন বারেবারে টাকা চাইছেন, এত অত্যাচার আমি আর সহ্য করতে পারছি না।"
কিছু একটা ভারী জিনিস পতনের শব্দের সাথে মেয়েটির চিৎকার শোনা যায়। আর সহ্য করতে পারে না রহমত। ক্রমাগত বেল বাজিয়ে চলে, একসময় লোকটি দরজা খুললে রহমত বলে-"মেরা মোবাইল কহী গির গয়া স্যারজি, ওহী ঢুন্ড রাহা হু, এহি সে জানে কে বাদ নেহি মিল রাহা।" কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকে আসে সে, দেখতে পায়, ঘরের এক কোণে নির্জীব পড়ে আছে সে, মাথা ফেটে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। মেয়েটির দিকে এগোতেই লোকটি বলে-" তুমহারা মোবাইল ইয়াহা নেহি হ্যায়, নিকলো মেরে ঘরসে।"
রহমত হাতের মুঠো পাকিয়ে সজোরে এক ঘুষি চালিয়ে দেয় লিকটির মুখে। আচমকা আঘাতে হকচকিত লোকটির মুখে এবারে এলোপাথাড়ি ঘুষি পড়তে থাকে। একসময় লোকটি বসে পড়ে নির্জীব হয়ে। মেয়েটির ততক্ষণে জ্ঞান ফিরে এসেছে। ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে মেয়েটিকে জল এগিয়ে দেয় রহমত। বলে--"আপ ঠিক হ্যায় ম্যাডামজী?" মেয়েটা মাথা নাড়তেই রহমত ওর হাত ধরে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। বেল বাজাতে থাকে পাগলের মত মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ফ্ল্যাটে। দরজা খুলে মেয়েটির অবস্থা দেখে বাকিরা প্রথমেই চমকে ওঠে।
এখন ওরা বসে আছে পুলিশস্টেশনে, ছেলেটি ধরা পড়েছে রহমতের তৎপরতায়। রহমত বলে--"আপকো আপকি মাইকে ছোড় আতা হু , চলিয়ে।" মেয়েটি হাতজোড় করে বলে--" আপনি না থাকলে আমি হয়তো বাঁচতাম না, থ্যাংক ইউ দাদা।" রহমত ভাঙা বাংলায় বলে-" দাদা ভি বলছেন, ঔর থ্যাংক ইউ ভি। জানেন, আমার একটা সিস্টার ছিল ,ঠিক আপনার মত। তিন সাল আগে কাশ্মীরে পুলিশের গোলিতে তার ইন্তেকাল হয়ে গেছে। মাসুম কলির কি গুনাহ ছিল ম্যাডামজী? আজ আপকো দেখকে ও মুঝে ইয়াদ আ গয়ি।" রহমতের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে মেয়েটা বলে--" শুধু ইয়াদে নয়, সামনেও এসে গেছে তোমার সিস্টার, তোমার সাথেই থাকবে।"
নতুন সম্পর্কের উষ্ণতায় মুড়িয়ে সিস্টারকে লাল রঙের শাল উপহার দেয় রহমত।
