নিশীতার সংসার
নিশীতার সংসার
নিশীতা আর সৌম্য বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিল। নিশীতা নীচু জাতের আর গরীব ঘরের মেয়ে বলে ওর শাশুড়ি বীনা দেবী ওকে মেনে নেয়নি। কিন্তু ওকে মেনে না নিলে ছেলে ও বাড়ির বাইরে গিয়ে থাকবে তাই কিছুটা নিমরাজি হয়েই নিশীতা কে বরণ করে ঘরে তোলে।
নিশীতা শিক্ষিতা, সুন্দরী তবু তার কদর করেন না শাশুড়ি মা! বীনা দেবীর দুই ছেলে এক মেয়ে। নিশীতা সকলেরই খেয়াল রাখে। কিন্তু শাশুড়ির কাছে ছোট ছেলের বৌ বেশি প্রিয় তার বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো বলে! নিশীতার শ্বশুর মশাই কিন্তু কোনো পক্ষপাতিত্ব করেন না তিনি কিছু আনলে দুই বৌমার জন্যই আনে! দুজনকেই সমান চোখে দেখে তার কাছে দুই বৌমাই নিজের মেয়ের মতো।
সময় এগিয়ে চলে, নিশীতার আর ওর জায়ের দুজনেরই ছেলে হয়! নিশীতার জায়ের সন্তান আগে হয়েছিল ওর ছেলের ছয়মাসে অন্নপ্রাশন ঘটা করে উদযাপন করে। কিন্তু নিশীতার ছেলের বেলায় শাশুড়ি অনুষ্ঠান করতে দিতে আপত্তি জানায়! সৌম্য মায়ের মুখের উপর কথা বলে না!সে বোঝে নিশীতার কষ্ট হয় নিশীতা হাসি মুখে সব মেনে নেয়।
এভাবেই চলছিল। হঠাৎ এক করালগ্ৰাসী মহামারীর কবলে পড়ে গোটা বিশ্ব। লকডাউনে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে মানুষের জীবনযাত্রা!তার আঁচ এসে পড়ে নিশীতার পরিবারেও।সৌম্যর কোম্পানি সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।ওর শ্বশুর মশাইয়ের ও কাজ চলে যায়।সৌম্যর ভাই বড় কোম্পানি তে চাকরি করতো, ওদের ওয়ার্ক ফর্ম হোম চালু হয়।তাই ওর কাজ টা যায়নি। কিন্তু সে আর তার স্ত্রী জানিয়ে দেয় সংসারে বাড়তি খরচ দিতে পারবেনা!
তার মধ্যেই বীনা দেবীর জ্বর হতে হতে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ছোট ছেলে, তার বৌ কে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যায়! ছেলে ছোট সেই দোহাই দিয়ে! বীনা দেবী ও তাতে সন্মতি দেয়। এদিকে বাড়িতে যে তার আরেকটা নাতি ও আছে সেদিকে তার হুঁশ নেই!
সৌম্য নিশীতার সাথে পরামর্শ করে কাঁচা আনাজের ব্যবসা শুরু করে যা সঞ্চিত অর্থ ছিল তাই দিয়ে। কিন্তু এরকম ব্যবসা লকডাউনে অনেকেই শুরু করেছে কত টাকাই বা আয় হবে!পুরো সংসারের খরচ তো সৌম্য কে চালাতে হবে! নিশীতা শাশুড়ি একটু সুস্থ হয়ে ওঠার পর পাড়ার কয়েক জন কে সঙ্গে নিয়ে একটা হোম ডেলিভারি ব্যবসা চালু করে। আশেপাশে অনেক কারখানা তে কিছু মানুষজন আটকে পড়েছে, অনেক বয়স্ক মানুষ যারা টাকা থাকলেও খাবার জোগাড় করতে পারছেনা সেই সব মানুষের সাথে যোগাযোগ করে ওরা সুলভমূল্যে সমস্ত কোভিড বিধি মেনে খাবার পৌঁছে দিতে শুরু করলো।
একদিকে শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদের দেখভাল করা, সন্তান সামলানো সব সেরে হোম ডেলিভারির রান্না করতে শুরু করলো নিশীতা!আর সৌম্য বাইকে করে সেই খাবার পৌঁছে দিয়ে আসতো।
লকডাউন উঠে গেলেও নিশীতা মানুষের কাছ থেকে ভালো রেসপন্স পাওয়ায় ব্যবসা টা বন্ধ করেনি।লকডাউন উঠে গেলে সৌম্যর কোম্পানি আবার খুলে যায়। নিশীতা শ্বশুর মশাইয়ের বয়স হয়েছে বলে আর কাজে বেরোতে দেয়নি! সংসারের স্বচ্ছলতা ও ফিরে আসে। বীনা দেবী নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিশীতার কাছে ক্ষমা চায়! নিশীতা শাশুড়ি মাকে ক্ষমা চাইতে বারণ করে! নিশীতা বলে,তিনি তো নিশীতার আর এক মা!মা কেন মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবে? শুধু ওকে বৌমা হিসেবে মন থেকে মেনে নিলেই হবে! বীনা দেবী ও এবার নিশীতা কে বৌমা হিসেবে খুশি মনেই গ্ৰহণ করে।
সমাপ্ত।
