Partha Pratim Guha Neogy

Inspirational

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Inspirational

মধুসূদন গুপ্ত

মধুসূদন গুপ্ত

7 mins
428


১৮৩৬ সাল। এতো বড় ভারতবর্ষে চিকিৎসা হয় আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি পদ্ধতিতে। আধুনিক এলোপ্যাথি চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই এখানে। তাই এখানে একটি এলোপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠান গড়লেই তো হবেনা। পড়ানোর মতো অধ্যাপক কোথায় পাবেন। বিশেষ করে ভারতীয় ভাষায় পড়ানোর তো কেউ নেই। সেদিন প্রথম ডাক পরেছিল মধুসূদন গুপ্তর।


১৮৩৬ সালের ২৮শে অক্টোবর। আগের বছর প্রতিষ্ঠিত কলিকাতা মেডিকেল কলেজের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।


সারা কলকাতায় সে এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবর, এমনকি সারা এশিয়ার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথম সংস্কার ভাঙার খবর। এবার সমস্যা গুরুতর। ডাক্তারি শিখতে গেলে অ্যানাটমি বা শব ব্যবচ্ছেদ জরুরী। কিন্তু ভারতীয় ছাত্রগন সংস্কারের কারনে এই কাজে রাজি নয়। তার সঙ্গে আছে রক্ষণশীল সমাজের হুমকি ও রক্তচক্ষু। কিছুতেই কলকাতার বুকে এই অনাচার তাঁরা হতে দেবেন না। এদিকে শব ব্যবচ্ছেদ ছাড়া শিক্ষাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে আবার ডাক পড়লো মধুসূদনের।


সব শুনলেন তিনি। তারপর বললেন আমি করবো শব ব্যবচ্ছেদ। অধ্যক্ষ বললেন রক্ষনশীল সমাজ যদি বাধা দেয়। মধু বললেন বুঝিয়ে দেবো তাদের যুক্তি দিয়ে। প্রত্যয়ী তিনি। নতুন কাজের দায়িত্ব পেয়ে উদ্দীপ্ত। মুখে মুখে ছড়িয়ে গেলো সেই খবর। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেলো রক্ষণশীল সমাজের কানে। বিক্ষোভে উত্তাল হোল অন্ধবিশ্বাসী সমাজ।


পরদিন তাঁর বাড়িতে দলবেঁধে এলো গোঁড়া পণ্ডিতদল। শব ব্যবচ্ছেদ না বন্ধ করলে সমাজচ্যুত করা হবে তাঁকে। তাঁর পিতা ডেকে পাঠালেন তাঁকে। তিনি ধীর অথচ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গীতে বোঝাতে শুরু করলেন অ্যানাটমির প্রয়োজনীয়তা। সবের পরেও গোঁড়া পণ্ডিতেরা আবার ধর্মীয় যুক্তি দিলো। তিনি তখন তুলে ধরলেন প্রাচীন ভারতের চিকিৎসক সুশ্রুতের শব ব্যবচ্ছেদের উদাহরন। আর যুক্তি খুঁজে পেল না রক্ষণশীলরা। পিতা তাঁকে আশীর্বাদ করে বললেন, আমরা জাতে বৈদ্য। চিকিৎসা আমাদের ধর্ম। আশীর্বাদ করি চিকিৎসার নব দিগন্ত খুলে যাক তোমার হাতে।


মেডিকেল কলেজের সব ফটকগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, পাছে এই বিধর্মী কাজ বন্ধ করার জন্য প্রাচীনপন্থীরা কলেজে আক্রমণ চালায়! মেডিকেল কলেজের শব রাখার ঘরে ভিড়, উপস্থিত রয়েছেন মেডিকেল কলেজের সব ইংরেজ অধ্যাপক ডাক্তাররা, সঙ্গী ছাত্রবন্ধুরা ভিড় করে দাঁড়িয়েছে ঘরের বাইরের দরজায়, ঘরের ঝিলমিলের ফাঁকে ফাঁকে চোখ রেখে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে অনেকে। সারা ক্যাম্পাস ফাঁকা, সবাই শবঘরের কাছে ভিড় করে এসেছে। নির্দিষ্ট সময়ে ডাক্তার গুডিভের সঙ্গে দৃপ্তপদে ঘরে ঢুকলেন একদা সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগের ছাত্র পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত। বর্তমানে পণ্ডিত গুপ্ত একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্র । ডাক্তারী শাস্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ সার্জারি, যা ভারতে এখনও করানো সম্ভব হয়নি, শব ব্যবচ্ছেদ নিয়ে বর্ণহিন্দুদের গোঁড়া কুসংস্কারের জন্য, সেই কাজটিই আজ করতে এসেছেন পন্ডিত মধুসূদন, হাতে তাঁর একটি শব ব্যবচ্ছেদ করার তীক্ষ্ণ ছুরি। তাঁর সঙ্গে যোগ দেবার জন্য দলে নাম ছিল উমাচরণ শেঠ, রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত ও নবীন চন্দ্র মিত্রের। কিন্তু তাঁরা দরজার বাইরেই ভিড় করে দাঁড়িয়ে রইলেন।


ঘরে ঢুকে মধুসূদন বিনাদ্বিধায় এগিয়ে গেলেন শবের দিকে। শবদেহের নির্ভুল জায়গায় ছুরিটি প্রবেশ করালেন তিনি। মুখে কোনও আড়ষ্টতা বা অস্থিরতার চিহ্ন নেই। খুব নিখুঁতভাবে আর সুন্দরভাবে বিনাদ্বিধায় সম্পন্ন করলেন ব্যবচ্ছেদের কাজ। ভারতবর্ষের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিজ্ঞানী শুশ্রূতের পরে এই প্রথম হল শবব্যবচ্ছেদ। দীর্ঘকালের কুসংস্কারের আর গোঁড়া পণ্ডিতদের বাধানিষেধের বেড়া ভেঙে দিলেন তিনি এই একটি কাজের মাধ্যমে। নিষেধের জগদ্দল ভার সরিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভারত এক নতুন যুগে প্রবেশ করল।  


কে এই মধুসূদন?


মধুসূদন গুপ্ত (জন্মঃ- ১৮০০ - মৃত্যুঃ- ১৫ নভেম্বর, ১৮৫৬) ছিলেন হুগলী জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামের এক বৈদ্য পরিবারের সন্তান। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক এই পরিবারের সমাজে খুব নামডাক ও প্রতিপত্তি ছিল। তাঁর প্রপিতামহ ‘বকশি’ উপাধি পেয়েছিলেন আর পিতামহ ছিলেন হুগলীর নবাব পরিবারের গৃহচিকিৎসক। তাঁর জন্ম সম্ভবত ১৮০০ সালে, যে বছর ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রতিষ্ঠা হয় কলিকাতায়। ছেলেবেলায় খুব দুরন্ত মধুসূদনের প্রথা বিরোধী কাজকর্মেই উৎসাহ ছিল বেশি। প্রথাগত লেখাপড়ায় তাঁর ছিল একান্ত অনীহা। কোনও উচ্চাশা ছিলনা। শোনা যায় লেখাপড়ায় অমনোযোগী কিশোর মধুসূদনকে তাঁর পিতা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন।


এর পরবর্তী কিছুদিনের কথা বিশেষ জানা যায়না। তাঁকে আবার দেখা গেল ১৮২৬ সালে ডিসেম্বরে সংস্কৃত কলেজের সদ্যস্থাপিত বৈদ্যক(আয়ুর্বেদ) বিভাগের ছাত্র হিসাবে। সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণ, ন্যায়, কাব্য , অলঙ্কার, সাহিত্য পাঠের সঙ্গে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও অসামান্য ব্যুৎপত্তি দেখান তিনি। অসামান্য মেধার অধিকারী মধুসূদন গুপ্ত নিজের পারদর্শিতায় অল্পদিনের মধ্যেই ক্লাসের একজন নামকরা ছাত্র হয়ে উঠলেন। সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদিক ক্লাসের প্রশিক্ষণের সময় তিনি (কাঠ বা মোমের তৈরি) মানুষের হাড়গোড় খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন, কখনও নিজেই ছোট ছোট জীবজন্তু ব্যবচ্ছেদ করে অভিজ্ঞতা ও সাহস সঞ্চয় করেছিলেন। এইসময় কলেজে ইংরেজিতে লেখা ডাক্তারি বই আরবি ও সংস্কৃতে অনুবাদ করে ছাত্রদের বোধগম্য করানো হত। এসব বইই তিনি নিজে থেকে পড়ে ফেলেছিলেন।

তাঁর অভিজ্ঞতার বহর ও পারদর্শিতা কলেজ কর্তৃপক্ষের নজর এড়ায়নি। তাঁর পারদর্শিতার জন্য সংস্কৃত কলেজের এই বিভাগের অধ্যাপক খুদিরাম বিশারদ অসুস্থ হয়ে পড়াতে বৈদ্যক শ্রেণীর কৃতি ছাত্র মধুসূদন গুপ্তকে ১৮৩০ সালের মে মাস থেকে সেই পদে নিয়োগ করা হয়, ও অধ্যাপকের কাজের জন্য মাসিক ৩০ টাকা বেতন নির্ধারিত হয়। সহপাঠী ছাত্র মধুসূদনের অধ্যাপক পদ প্রাপ্তিতে ছাত্রদের মধ্যে বিশেষ অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর পাঠদানের দক্ষতায় সেই অসন্তোষ অচিরেই দূর হয়ে যায়। কারণ তাঁর দক্ষতা।


১৮৩২ সালের প্রথমেই সংস্কৃত কলেজের লাগোয়া একতলা একটি বাড়িতে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়, স্থানীয়দের চিকিৎসা আর ওষুধপত্র দানের জন্য। সংস্কৃত কলেজের মেডিক্যাল লেকচারার জ়ে গ্রান্ট সাহেব, ও ডাঃ টাইটলার এই নতুন কলেজবাড়িতে এসে ক্লাস নিতেন ও চিকিৎসা বিষয়ে বিশেষতঃ অ্যানাটমি আর মেডিসিনের তত্ত্ব এবং প্রয়োগ বিষয়ে সারগর্ভ বক্তৃতা দিতেন। মধুসূদন নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে সেই বক্তৃতা শুনতেন। ফলে পান্ডিত্যে তিনি সহপাঠীদের থেকে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। কলিকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ১৮৩৫ সালে স্ংস্কৃত কলেজের বৈদ্যক বিভাগ বন্ধ হয়ে যায় আর ছাত্ররা সব মেডিক্যাল কলেজের ক্লাসে যোগ দেয়। আর ছাত্র মধুসূদনও ১৮৩৫ সালের ১৭ই মার্চ থেকে মেডিকেল কলেজের ডিমনস্ট্রেটরের কাজে নিযুক্ত হন ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কাজ করতে থাকেন। কিন্তু একজন সহপাঠীর কাছে পাঠ নিতে ছাত্ররা আপত্তি করে। তাদের আপত্তির কারণ ছিল মধুসূদন তখনও ডাক্তারী পাশ করেননি, তিনি সামান্য কবিরাজ মাত্র। এই আপত্তি জোরালো হলে কলেজের কাজে অসুবিধা দেখা দেবে, কেননা কবিরাজ হলেও তিনি ডাক্তারি বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষ। তাই ছাত্রদের অসন্তোষ প্রশমনের জন্য কলেজের কর্তৃপক্ষ পাশ করা ডাক্তারের ডিগ্রি নেবার জন্য তাঁকে ডাক্তারী পরীক্ষার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে বলেন। তিনি রাজি হয়ে যান ও ডাক্তারী পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে কবিরাজ থেকে ডাক্তারে পরিণত হন।


আসলে ছয় বৎসর সংস্কৃত কলেজে ও ইংরাজির ক্লাস করার আগে থেকেই তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে রোগনির্ণয়, নিদান দিতে শিখেছিলেন ‘কেবলরাম কবিরাজ’ নামে একজন অভিজ্ঞ দেশীয় কবিরাজের কাছে। সে সময়ে তিনি কবিরাজ গুরুর নির্দেশে গ্রামে গ্রামে রুগী দেখতেও যেতেন। তাছাড়া ইংরেজ শিক্ষকদের বক্তৃতাগুলি নিষ্ঠার সঙ্গে শুনেছেন পাঁচবছর ধরে, সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শেষের দুটি বছর তাঁকে সাহেব ডাক্তাররা সহকারী করে নিয়েছিলেন। তখন তাঁর কাজ ছিল নিজে বক্তৃতা শোনার সাথে সাথে, দেশীয় ছাত্রদের ইংরেজি শব্দগুলিকে সংস্কৃতে ও বাংলায় তর্জমা করে দিতেন। কেবলরাম কবিরাজের সহযোগী হিসাবে কাজ করার সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরেছেন, আর সেখানকার মানুষের অসুবিধা রোগের কারণ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। কলকাতায় বিখ্যাত সার্জন জেমস রেনাল্ড মার্টিন যখন দেশের মানুষদের স্বাস্থ্য আর ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রকোপ বন্ধ করতে তৎপর হয়েছিলেন এবং কলিকাতার সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯৩৫ সালে এক সাধারণ মিটিং ডাকেন, আর ‘জেনারেল কমিটি অফ দি ফিভার হসপিটাল এন্ড মিউনিসিপ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট”-এর প্রতিষ্ঠা করেন, তখন প্রথমেই যোগ্য ব্যক্তি হিসাবে মধুসূদন গুপ্তকে তলব করেন ও তাঁর পরামর্শে কমিটির কাজকর্ম শুরু হয়। এই মিটিঙেই তাঁর সকল অভিজ্ঞতার কথা জানা যায় ও তাঁর মূল্যবান পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক গড়ে ওঠে ‘হিন্দু ধাত্রী’ কর্মচারীদল গঠনের পরিকল্পনা যাতে বহু হিন্দু মেয়ের কর্মসংস্থান হয়, রাস্তাঘাট পরিষ্কারের নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, নিকাশী ব্যবস্থার সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। (তিনি বিভিন্ন বাজার এলাকার আবর্জনা ভর্তি অবস্থা, ঘনবসতি এলাকার মানুষের নানা অসুবিধার কথা প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ব্যক্ত করেছিলেন কমিটির সদস্যদের সামনে)।     

তাঁর সকল কার্যকলাপ, জ্ঞান আর পরীক্ষায় চূড়ান্ত সফলতার অভিজ্ঞান হিসাবে ১৮৪০ সালের ২৬শে নভেম্বর মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর ডাক্তারীর চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্রটির ব্যাপারে এই মর্মে একটি সংশাপত্র দেন যে, “বৈদ্যবাটীর মধুসূদন গুপ্তর উত্তরপত্রটি যত্ন করে পরীক্ষা করে বুঝেছি যে শারীরসংস্থান, শারীরবৃত্ত, রসায়ন , মেটিরিয়া মেডিকা ইত্যাদিতে তাঁর অসামান্য জ্ঞান আর ঔষধ, শল্যচিকিৎসা ও তার ব্যবহারিক প্রয়োগক্ষমতা বিষয়ে তাঁর দক্ষতা সংশয়াতীত।”


মেডিকেল কলেজে একটি হিন্দুস্থানী বিভাগ ছিল। ১৮৪৩-৪৪ সালে এই বিভাগটি ঢেলে সাজানো হয়, ও সেটির সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিযুক্ত করা হয় মধুসূদন গুপ্তকে। এরপরে ১৮৫২ সালে বাংলা বিভাগ খোলা হলে তার দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়। ১৮৫৬ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি (২২ বছর)মেডিকেল কলেজের এই পদে বহাল ছিলেন।

শুধুমাত্র শিক্ষাদানের কাজ ছাড়াও তাঁর দুটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল ‘লন্ডন ফার্মাকোপিয়া’ (১৮৪৯ সালে) আর ‘অ্যানাটমি’(১৮৫৩ সালে) নামে বই দুটির ইংরাজি থেকে বাংলা অনুবাদ করা। এই সময়েই ১৮৪৯ সালের ২৭শে জুন তিনি ‘ফার্স্ট ক্লাস সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন’ পদে উন্নীত হন। সংস্কৃত কলেজে পড়ার সময়ই তিনি হুপারের লেখা “Anatomist’s Vade Mecum” নামে বইটির সংস্কৃত অনুবাদ করে ১০০০ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন।


কলিকাতার জনস্বাস্থ্য, পানীয় জলের স্বচ্ছতা, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা, টিকাকরণের ব্যবস্থা প্রভৃতি জনসমস্যা বিষয়ে তাঁর বিশেষ নজর ছিল। কমিটিতে সে বিষয়ে তিনি মূল্যবান পরামর্শও দিয়েছিলেন। 


নিজে ছিলেন ডায়াবেটিক রোগী। কিন্তু বারণ না শুনে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও অনবরত শবব্যবচ্ছেদ করতেন অন্যদের একাজে সাহস যোগাতে। জীবাণু সংক্রমণে ডায়াবেটিক সেপ্টিসিমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে এই মহাপ্রাণের মৃত্যু হয়।

আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মনে রাখি,স্মরণ করি। কিন্তু মনে রাখিনা এইরকম দেশসেবকদের। যারা সমৃদ্ধ করেছেন দেশকে। এনেছেন আধুনিকতার আলো, কিন্তু নিজেরা চলে গেছেন বিস্মৃতির অন্ধকারে। প্রণাম জানাই ভারতীয় চিকিৎসাবিদ্যার এই কাণ্ডারি মধুসূদন গুপ্তকে।

তথ্য : আন্তর্জাল, বিভিন্ন পত্রিকা এবং সমাজ মাধ্যম।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational