লড়াই
লড়াই
রাতের অন্ধকারে একটা অনুজ্জ্বল পিদিম জ্বলছে। অন্ধকার সবটা না কাটলেও মেয়েটির মুখটা অদ্ভুতভাবে দীপ্ত। টিনের ছাউনি দেওয়া অভাবের সংসারের নিত্যদিনের পেটের লড়াই তার সঙ্কল্পকে অচিরেই আরো দৃঢ়তা দিয়েছে। মাধ্যমিক সামনেই। রাত জেগে পড়ে চলেছে মিতা।
সকালের ছাত্রীকে পড়ানোটা শেষ করেই দৌড়ে বাসে উঠে পড়ল মিতা, আজকেই তো আবার বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হবে। ধূপকাঠিগুলো ব্যাগ থেকে বের করে বিক্রি করতে লাগল সে; এতে বাসের ভাড়াও যেমন বাঁচবে তেমনি কিছু টাকা উপার্জনও হবে। মাধ্যমিকে পাশ করলে আরো পড়াশুনা করার ইচ্ছা তার; বাবা'র কাছে হাত পাততে কেমন একটা লাগে। বাড়িতে ছোট বোন রয়েছে, আর তাছাড়া ক'টাকাই বা পায় বাবা মুদির দোকানে সাধারণ কর্মচারীর কাজ করে?
রেজাল্টটা নিয়েই পূর্ণিমাদিকে প্রণাম করে বলল মিতা, দিদিমনি, আপনি না থাকলে আমার যে কি হত! আপনি বিনা পারিশ্রমিকে আমায় না পড়ালে- চোখের জল আর বাঁধ মানে না মিতার। পূর্ণিমাদি চোখের জল মুছিয়ে বললেন, তুই স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছিস। যে পরিস্হিতিতে পড়াশুনা করে স্কুলে এবং জেলার সর্বোচ্চ নম্বর ৯২% পেয়েছিস, তা শুধু আমরাই জানি- টিভির বা সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা প্রথমকে নিয়ে নাচুক, আমার চোখে তুইই প্রথম।
মিতা শুধু বলল, আপনার এই অনুদান আমি জীবনের শেষদিন অবধি ভুলব না। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে আর্টস নিয়ে পড়ে প্রকৃত শিক্ষিকা হওয়া; যাতে আমার মত আর কাউকে অভাবের জন্য পড়াশুনা ছাড়ার কথা ভাবতেও না হয়। পূর্ণিমাদি অশ্রুভরা চোখে বুকভরা আশীর্বাদ করলেন মিতাকে আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলেন যেন এই লড়াকু মেয়েটির সঙ্কল্প সফল হয়।
*********
