STORYMIRROR

Arindam Ghosh

Inspirational

3  

Arindam Ghosh

Inspirational

দশভূজার ইচ্ছেউড়ান

দশভূজার ইচ্ছেউড়ান

3 mins
203


আজকের রাতটা অন্য রাতগুলোর মতো নয়। মিশমিশে অমাবস্যার মতো কালো। অদ্য শেষ রজনী। অবলম্বন আঁকড়ে থাকা বোধহয় মনুষ্যত্বের একমাত্র ত্রুটি।


মনুষ্যেতর প্রাণিরা এদিক থেকে ভাগ্যবান। ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে হতে পিদিমের আলোটা একসময় দপ করে নিভে যাওয়ার অপেক্ষায়।


আলো-আঁধারী ছায়াময় জগতের বাসিন্দা বলতে তিনটে মাত্র প্রাণি। মাতৃ-মমতায় কমলা পঞ্চম বর্ষীয় বালককে ঘুম পাড়াবার প্রয়াস করছে।


ঘরের আরেক কোণায় বসে বিড়িতে সুখটান দিচ্ছিল বিশ্বনাথ। অবশ্য মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে বিশাল ব্যাস-বিশিষ্ট পরিত্যক্ত একটি জলের পাইপ।


হঠাৎ করে প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত ঘটল অদূরেই। পবনের বেগ যেন লাগাম-ছাড়া হওয়ার প্রয়াস করছে। বিশ্বনাথ অনেক কষ্টে ভাঙাচোড়া প্যাকিং বাক্সের দরজাটাকে ঠিক করল।


ছেলেটা অনেক কষ্টে আধপেটা খেয়ে ঘুমিয়েছে। কমলা পিদিমের আলো প্রায় নিভিয়ে দিয়েছে। গতিক সুবিধের নয়, প্রচন্ড এক ঝড় আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে পশ্চিমের আকাশ।


অকস্মাৎ প্রচন্ড হাওয়ার বেগে দরজাটা উড়ে গেল। পিদিমের আলোটাও তখনি দপ্ করে নিভে গেল। বাইরের অবস্হা দেখতে গেল বিশ্বনাথ।


অন্ধকারে চারটে ষন্ডামার্কা লোকের আগমন ঘটল। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল, "কিরে বিশুয়া.... তোরা এখনো জায়গা ছাড়িস নি ? ভালোয়-ভালোয় কেটে পড় তো আজকের মধ্যে .... নইলে কিন্তু কালকে সুন্দরীকে তুলে নিয়ে যাবো। ভাবিস না, একবোতল দেশী খাইয়ে কিনে নিয়েছিস! কাল থেকে এখানে বিশাল প্রোমোটার কাজুদার শপিং মলের কাজ শুরু হবে।"


বিশ্বনাথ হাতেপায়ে ধরে অনেক কাকুতি-মিনুতি করে কান্না শুরু করল। কিন্তু লাভ কিছু হলো না। একজন ওকে লাথি মেরে বলল, "কাজুদার স্ত্রী এম.এল.এ. হবে ইলেকশানে জিতলে, এই প্রজেক্টে অনেক বিজনেসম্যান টাকা ঢেলেছে। শালা... তোর মতো বেজন্মা এসব বুঝবে না।"


**********

》 ২《


শেষ-রাতের দিকে প্রচন্ড ঝড় উঠল। অনেক সময় আগাম সতর্ক-বার্তা ছাড়াই কালবৈশাখী আসে।


নেশাভাঙ না করলে হয়তো বিশ্বনাথের ঘুম ভেঙে যেতো! আচমকা হাওয়ার শব্দকে ছাপিয়ে শোনা যায় যান্ত্রিক কর্কশ শব্দ।


পাখিদের কোলাহলে চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠল। এক লাফে উঠেই বিশ্বনাথ কোলে তুলে নেয় তাদের ছেলেকে। তারপর কমলাকে ঘুম থেকে তুলে হাত ধরে টেনে নিয়ে পাইপ থেকে বেড়িয়ে অদূরেই একটা গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়।


তিনখানা বুলডোজার আগমান রাক্ষসের মতো একে একে সব বস্তির ঘরগুলোকে পিষে দিচ্ছে। গাছগুলোকে খেয়ে নিচ্ছে কাটিং মেশিন। পুলিশের দল সমস্ত এলাকাটাকে ঘিরে রেখেছে। ওদের ঘর থুরি পাইপটাকে নিমেষে গুঁড়িয়ে দিল। ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল কমলা।


চোখের সামনে নিজেদের মাথা গোঁজার আস্তানা ধ্বংস হতে দেখল ওরা। বিশ্বনাথ আর দেরী করল না।


ওদের হাত ধরে পার্কের পেছন দিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে পালালো। প্রাণ বাঁচলে মাথা গোঁজার ব্যবস্হা ঠিক করে দেবেন ওপর-ওয়ালা। আপাতত একটা পুরানো শিবমন্দিরের দালানে আশ্রয় নিল ওরা।


কয়েকটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে নিজেদের আস্তানা হাতছাড়া হওয়ার ক্ষোভ জানিয়ে গেল। নতুন এক সকালের আশায় বসে রইল ওরা।


************

》৩《


শেষ রাত। খিদিরপুরের ডকে মাল বুঝে নিয়ে পাওনা-গন্ডা সেরে কালু ওস্তাদের ঠেকে ঢুকল নান্টুদার দলবল।


মদ আর দু’রকমের মাংসের অর্ডার দিয়েই জিগরী দোস্তের ঠেকে এসেছে নান্টু। কালু মদের গেলাস আর কচি পাঁঠার মাংস এগিয়ে দিয়ে বলল, “ গুরু….শুরু করো…বাকি মাল কান-কাটা হরিয়া নিয়ে আসছে।”


হঠাৎ তীব্র এক আলোকউৎস, এক অতি সুন্দরী নারী এগিয়ে আসছে ওদের দিকে।


ঝাঁপিয়ে পড়ল নরখাদকের দল, লুটেপুটে খাবার জন্য মাংস; কিন্তু প্রচণ্ড আর্তনাদে রক্তাক্ত শরীরে ছিটকে পড়ল সবাই- নারীটির হাতে ধরা ধারালো ত্রিশূলের আঘাতে!


মৃন্ময়ী দেবী প্রতিমার শুধু আবাহন হয়, দৈবীসত্ত্বার নয়! আকাশে তখন নতুন ভোরের আলো ফুটছে, দূর থেকে ভেসে আসছে মহালয়ার দেবী দূর্গার আবাহনী মন্ত্রের রেশ...


‘যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।'


ও'দিকে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় বিশ্বনাথের। তাকিয়ে দেখে ছেলেটা অঘোরে ঘুমাচ্ছে, কিন্তু কমলা তার পাশে নেই!


চারিদিকে খুঁজে দেখে সে- কমলা কোথাও নেই! হঠাৎ লাল হতে শুরু হওয়া ভোরের রবির সামনে তাকিয়ে দেখে, কমলা দূর থেকে হাঁটতে হাঁটতে আসছে।


বিশ্বনাথ জিজ্ঞেস করল, "কোথায় গিয়েছিলে এতো ভোরে? সব ঠিক আছে তো?"


কমলা হেসে বলল, "তোমার মত পতি পরমেশ্বর থাকতে আমার ভয় কিসের? উমা যেখানে শিব-ও সেখানে! তুমি তো অন্তর্যামী প্রভু....অবুঝ দুষ্টু ছেলেদের ক্ষমা করে দিও। আমি শুধু একটু ছোট্ট শাস্তি দিয়েছি; যাতে ও'দের সুমতি ফেরে!"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational