Twisha Ray

Classics

2  

Twisha Ray

Classics

খ্রিস্টমাস

খ্রিস্টমাস

3 mins
929


বড়দিনের কয়েকটা দিন আগে হঠাৎ করে ইচ্ছে জাগলো মুকুটমণিপুর যাব আর সাথে বাঁকুড়া , বিষ্ণুপুর। আমাদের দলের সবাই একবাক্যে রাজি। কিন্তু যাওয়া বললেই তো আর যাওয়া হয়না তার জন্য গাড়ি ঠিক করতে হবে, থাকার ঘর ঠিক করতে হবে।একজন বলল-- গাড়ি আমি ঠিক করে দেব, তোমরা হোটেলের ঘর পাও কিনা দেখো ? এরপরে চারিদিকে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হল । নেট ঘেটে ঘেটে সরকারি-বেসরকারি কোনো লজ বাদ গেল না কিন্তু মুকুটমণিপুরে কোন ঘর পাওয়া গেল না। আসলে বড়দিনের মাত্র চার-পাঁচ দিন আগে ঘর পাওয়া সত্যি খুব কঠিন কাজ। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত একজন সদস্যের অত্যন্ত জানাশোনার মাধ্যমে বাঁকুড়ার একটি হোটেলে ঘর পাওয়া গেল। একটি ইনোভা গাড়ি ও ঠিক করা হয়ে গেলো।

      ।। কামারপুকুর-জয়রামবাটি।।

  নির্দিষ্ট দিনে আমরা মোট আট জন (এক জন শিশু সহ) ভদ্রেশ্বর থেকে সকাল সকাল যাত্রা করলাম। আরামবাগ রোড দিয়ে আমরা প্রথমে কামারপুকুর পৌঁছে গেলাম।কামারপুকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জন্মস্থান । এই জন্মস্থানে তার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা একটি মন্দির রয়েছে। সেখানে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের শ্বেতমর্মর মূর্তি রয়েছে। এখানে মূল মন্দির খোলা রাখার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।

 শীতে মন্দির খোলার সময়: ৬.৩০থেকে১১.৩০

                      ১৫.৩০থেকে২০.৩০

গ্রীষ্মে মন্দির খোলার সময়: ৬.০০থেকে১১.০০

                     ১৬.০০থেকে২১.০০

  এখানে অনুমতি সাপেক্ষে অতিথি নিবাসে থাকতে পারা যায়। যোগাযোগ করার টেলিফোন নম্বর : 

১. ০৩২১১-২৪৪২২১। ২. ৭৮৭২৮০০৮৪৪

বুকিংয়ের সময় : বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা।

   আমরা নির্ধারিত সময়ের একটু পড়ে যাওয়ায় মূল মন্দির খোলা পাইনি। তবে আমরা আগে একবার কামারপুকুর ও জয়রামবাটি ঘুরে গিয়েছি, তাই মন্দিরের চাতালে বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। চাতালে বসে থাকতে থাকতে মনে পড়ে গেল বিবেকানন্দ গ্রন্থাবলীতে পড়েছিলাম নরেন (বিবেকানন্দ) যখনই দক্ষিণেশ্বরে আসতেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব তখনই আবদার ধরতেন তার প্রিয় গান শোনাবার জন্য। আর তখনই নরেন গান ধরতেন : 

    মন চলো নিজ নিকেতনে

    সংসার বিদেশে বিদেশীর বেশে

    ভ্রম কেন অকারণে.......

   আমরা এর পরে জয়রামবাটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

   জয়রামবাটি শ্রী শ্রী মা সারদা মনির জন্মস্থান। এখানেও মায়ের মর্মর মূর্তি রয়েছে।এখানেও মূল মন্দির খোলা রাখার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।

মন্দির খোলার সময় :

অক্টোবর থেকে মার্চ: ৪.৩০থেকে১১.০০

                ১৫.৩০থেকে২০.০০

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর: ৪.০০থেকে১১.০০

                  ১৬.০০থেকে২০.৩০

তবে অবশ্য মূল মন্দির বন্ধ থাকলেও মন্দিরের পাশে অবস্থিত মায়ের পুরনো জন্মভিটা, লাগোয়া মায়ের ব্যবহৃত পুন্যি পুকুর ইত্যাদি দেখা যেতে পারে।

যাই হোক, আমরা সেখানে পৌঁছে ভোগ খাবারের কুপন সংগ্রহ করলাম। কুপন এর জন্য কোন মূল্য দিতে হয় না। তবে যে যার ইচ্ছে মতো দান দিয়ে থাকে। আমরা পুরনো ভিটে , পুণ্যিপুকুর ইত্যাদি দেখে ভোগ খেয়ে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গাড়িতে বসেই হিসাব করে দেখলাম যে বাঁকুড়া পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের বিকেল হয়ে যাবে। তাই হোটেলে না গিয়ে আমরা শুশুনিয়া পাহাড়ের দিকে গাড়ি চালালাম।

        ।। বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় ।।

  শুশুনিয়া পাহাড়ের তলায় বিকেল বিকেল গাড়ি গিয়ে দাঁড়ালো । আমাদের দলের দু'জন যুবক সদস্য দৌড়লো শুশুনিয়া পাহাড়ের চূড়ায় উঠবে বলে ।আমিও পিছন পিছন চললাম । শুশুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে একটা ঝরনা রয়েছে , যার উৎসস্থল অজানা । এই ঝরনার জল নাকি ওষুধের কাজ করে। অনেককে ঝর্ণার জলে স্নান করতে দেখলাম।

  ইতিমধ্যে আমাদের ওই দু'জন যুবক সদস্য পাহাড়ে উঠতে শুরু করেছে। বারণ করা সত্ত্বেও আমি ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করলাম। এখানকার অনেকেই আমায় বলল-- যাবেন না , আপনি পারবেন না।

  ওদের বারণ সত্ত্বেও উপরের দিকে ওঠা আমি থামাইনি। অবশেষে একটা সময় দেখলাম চূড়ায় পৌঁছে গেছি । আমাকে দেখে যারা যারা ওখানে ছিল সবাই অবাক । ওরা সবাই যুবক-যুবতী। আনন্দে আমরা সবাই হাত ধরাধরি করে খানিকটা নেচে নিলাম। একজন আবার সৌরভ গাঙ্গুলীর স্টাইলে গায়ের শার্টটা খুলে ওড়াতে লাগলো । একজন টাইটানিক সিনেমার স্টাইলে হাত দুটো পাখির মত মেলে ধরে দাঁড়িয়ে রইল।

  খানিকক্ষণ সেখানে কাটানোর পর নিচে নেমে এলাম। পাহাড় থেকে নেমে দেখলাম আমাদের অন্য সদস্যরা পাশেই সদ্য গড়ে ওঠা একটা পার্কে বসে রয়েছে। এরপরে ওদের ডেকে নিয়ে আমরা বাকুড়ায় আমাদের হোটেলের দিকে রওনা দিলাম । হোটেলে যখন পৌঁছলাম তখন রাত্রি হয়ে গেছে। হোটেলে যাওয়ার পর আমাদের চা ও গরম গরম হিংয়ের কচুরি দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো। রাতের খাবার একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

Journey of Gurudongmar lake

অপূর্ব একটি জায়গা

17000ft উচ্চতা

এখানে যাওয়ার আগে অনেকে বলেছিলেন খুব সতর্কতা অবলম্বন করে যাবেন কারণ ওখানে গিয়ে নাকি অনেকেই অসুস্থ হয়ে পরেন.. অনেকে তো আবার বললেন বেশি সময় থাকতে পারবেন না,5-6 mins maximum.. উচ্চতার জন্যে ওখানে অক্সিজেন এর প্রচুর অভাব.. একটাও গাছ পালা নেই.. তাই বলা হয়েছিল ওখানে গিয়ে বেশি জোরে কথা বলা যাবে না, দৌড়াদৌড়ি করা যাবে না..খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে..আমাদের সবারই মনে একটু ভঁয় ছিল.. কিন্তু যেতে তো হবেই...


Rate this content
Log in

More bengali story from Twisha Ray

Similar bengali story from Classics