কদম পাশা
কদম পাশা
মেলার ভিড় ছেড়ে বিপরীতে গঙ্গার ধারে গিয়ে বসল সংকল্প। পকেট থেকে বের করে নামহীন প্রেমপত্রটিতে পুনরায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল সে। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে তার মৃদু হাসির জ্যোৎস্না।
বিগত তিন বছর ধরে বৈশালীকে লক্ষ্য করছে সংকল্প। সে'বার রথের মেলায় প্রথম দেখাতেই বৈশালীকে পছন্দ হয়েছিল তার। সংকল্পের কখনো সাহস হয়নি, বৈশালীর চোখে চোখ রেখে মনের কথাগুলো বলার। প্রতিবার বলতে চেয়েও পিছপা হয়েছে সে কিছু একটা ভেবে। দু'জনেই পরস্পরের নিকট ছিল নামহীন, পরিচয়হীন একটি অজ্ঞাত আলোর ঝলক। তবে এইবার সংকল্প মনস্থির করে, বৈশালীকে মনের কথাগুলো সে জানাবেই। গতবার মেলা থেকে নীল টিপের পাতা, একহাত কাঁচের চুড়ি আর একটা জুঁই ফুলের মালা কিনেছিল সংকল্প। নিজের হাতে বৈশালীকে সাজানোর অগাধ ইচ্ছে ছিল তার মনে। কিন্তু সে সাহস করে বৈশালীর সামনে যেতেই পারেনি। পলকের জন্য দু'জনের চোখে চোখ পড়েছিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু চাপা স্বভাবের হৃদয়দুটো কখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। শুকনো জুঁই মালাটি ছাড়া বাকি অঙ্গরাগগুলো সাথে এনেছে সংকল্প, বৈশালীকে সাজানোর বাসনা নিয়ে।
কয়েক ফোঁটা চোখের জল পত্রটিকে ধূসর রূপ দিয়েছিল। কাগজটি থেকে মুখ তুলতেই সাদা থান পরিহিত বৈশালীকে দেখে থমকে গেল সংকল্প। গঙ্গার জলে জীবনের সমস্ত রঙিন চিহ্নগুলোকে ভাসিয়ে দিচ্ছিল সে। হাসিখুশি মেয়েটির মুখের রামধনু যেন ঢেকে গিয়েছে বর্ষার মেঘে। মনের অগোচরেই সংকল্পের হাত থেকে জলে পড়ে গেল নীল টিপের পাতাটি, কাঁচের চুড়িগুলো আর সেই বেনামী পত্রটিও।