জনবন্ধু
জনবন্ধু
সেদিনটা ছিল রবিবার। অমর বাবু বাজার থেকে ফিরে চায়ের সঙ্গে রবিবারের ম্যাগাজিনটার পাতা ওল্টাছিলেন।“আরে এসো এসো।” পরেশকে ঘরে ঢুকতে দেখেই হাতের ম্যাগাজিনটাকে রেখে বলে উঠলেন অমরবাবু। পরেশ ওনাদের পাড়ার খুব উপকারী ছেলে, পাড়ার লোকের বিপদে আপদে ছুটে যায়। আরো অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করে। সকলের সঙ্গেই তার খুব ভালো সম্পর্ক।
“ ম্যাগাজিন পড়ছিলেন কাকু! ”
“ হ্যাঁ একটা গল্প পড়ছিলাম বুঝলে, জনবন্ধু পাত্র নামে কেউ লিখেছেন। কি বলবো তোমায়, সেই একই গরীবের দুঃখ কষ্ট নিয়ে গল্প। শুধুমাত্র গল্প হিট করতে এরা এইসব লেখে। গরীবের জন্য এদের সত্যি সত্যি কোনো দুঃখ টুঃখ হয় না।”
“ না মানে কাকু ”
পরেশ ইতস্তত করে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই অমরবাবু হাত তুলে তাকে থামালেন, “ আমি জানি পরেশ তুমি কি বলতে চাইছো, তুমি এটাই বলবে তো, যে হতেও পারে লেখকটি সত্যিই গরীব দুঃখীদের নিয়ে ভাবে, কিছু না জেনেশুনে এরকম বলা উচিত নয়। শোনো পরেশ,সে যুগ পেরিয়ে গেছে। তুমি খুব সরল বলে বিশ্বাস করতে পারছো না। এসব সেন্টিমেন্টাল লেখা আজকাল শুধু গল্প হিট করার জন্য লেখা হয়। সবাইকে আমার চেনা আছে।” এমনসময় হঠাৎ অমরবাবুর স্ত্রী ঘরে ঢুকে পরেশকে বসে থাকতে দেখেই বলে উঠলেন, “ আরে পরেশ, কেমন আছো? তোমার মায়ের কাছে শুনলাম তুমি নাকি আজকের ‘সাহিত্য ' ম্যাগাজিনে জনবন্ধু পাত্র নামে একটা গল্প লিখেছো। বাঃ আমাদেরকেও দেখাও একটু। ”
তারপর অমরবাবুর দিকে ফিরে বললেন, “ ওর মধ্যে এত প্রতিভা,অথচ দেখো ছেলেটা গল্প লিখেছে কিন্তু ছদ্মনামে। আসল নামে লিখলে, বন্ধুবান্ধবরা জেনে যাবে, ওকে নিয়ে মাতামাতি করবে, সেটা নাকি ওর পছন্দ নয়। বোঝো তাহলে ! পরেশের মা না বললে বোধহয় আমরাও জানতে পারতাম না। তবে হ্যাঁ ছদ্মনামটা খুব ভালো হয়েছে কিন্তু, জনবন্ধু অর্থাৎ জনগনের বন্ধু । খাসা!” এই বলে তিনি জোরে হেসে উঠলেও, সামনে বসে থাকা দুজন সে হাসিতে যোগ দিতে পারলেন না।
