Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Snigdha Chakravarty

Classics

2  

Snigdha Chakravarty

Classics

হঠাৎ দেখা

হঠাৎ দেখা

8 mins
1.8K


ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতাগামী প্লেনে দেখা অভ্র আর মেঘের, ওরা কলেজজীবনের বন্ধু। আজ দু'জনেই প্রতিষ্ঠিত দু'জনের মতো করে। মেঘের সঙ্গে এভাবে হঠাৎ দেখা হওয়ায় অভ্র খানিকটা স্তম্ভিত, যদিও বাইরে তার কোনো প্রকাশ নেই। অভ্র আর মেঘের সিট কাকতালীয় ভাবে পাশাপাশি।


অভ্র : কেমন আছিস,মেঘ? কতদিন পর দেখা...


মেঘ : ( প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে,গম্ভীরভাবে ) আরে অভ্র,এখানে,হঠাৎ? ভালোই আছি... তুই কেমন আছিস? 


অভ্র : আমিও ভালোই। আয়,তুই আমার উইন্ডো সিটে বস। তোর তো ওটাই পছন্দ।


মেঘ : না থাক, আমি এখানেই ঠিক আছি। তুই বস। পছন্দ জিনিসটা সময়ের সাপেক্ষে পরিবর্তনশীল, না?


অভ্র : উফফ, মেঘ, তুই এখনো সেই আগের মতোই আছিস, বদলাসনি। এখনো কবিতা পড়িস আগের মতো মাঝরাতে?


মেঘ : হ্যাঁ পড়ি, আমার তো ক্রনিক ইনসোমনিয়া আছে, তাই গভীর রাত অবধি পড়ি স্টাডিতে বসে।


অভ্র : ( আচমকা) ভালোবাসিস এখনো?


মেঘ : ( অবাক হয়ে) কাকে?


অভ্র : কেন? তোর সেই প্রথম প্রেম শক্তি চ্যাটার্জী, যার কবিতার বই এক মুহুর্তের জন্যেও কাছছাড়া করতিস না?


মেঘ : না, ওটা ওই বয়সের অবসেশন ছিল, এখন কী আর...


অভ্র : তুই কী বলতে চাস আমাদের গেছে যে দিন, তা একেবারেই গেছে?


মেঘ : হঠাৎ দেখা, রবীন্দ্রনাথ।


অভ্র : মা-মা-মানে?


মেঘ : মানে ওটা রবীন্দ্রনাথের লেখা একটা লাইন....


অভ্র : উফফফ, মেঘ.... কথায় কথায় কবিতা টেনে আনার অভ্যেসটা গেল না, বল? আমি ওসব পড়িনি, এমনিই বললাম...


মেঘ : তবে তোরও তো লোকজনকে শব্দের ফাঁদে জড়ানোর অভ্যাসটা গেলনা... ( খানিকটা হেসে)


অভ্র : ( খুব জোরে হাসতে গিয়ে একটু শ্বাসের সমস্যা হয়)


মেঘ : ( ব্যস্ত হয়ে ওঠে) অভ্র, তোর আগের মতো বুকের সমস্যাটা এখনো যায়নি? ( অভ্র ইনহেলার বার করলে মেঘ নিজের হাতে সেটা নিয়ে ওকে দেয়) এবার একটু সুস্থ বোধ করছিস কী?


অভ্র : ( মেঘের হাতটা হঠাৎ ধরে ফেলে, আজ অনেক বছর পর) আমাকে নিয়ে এত ব্যস্ত হোস না মেঘ, আমি ঠিক আছি। তাছাড়া তোকে তো একদিন বলেছিলাম, হঠাৎ করে যদি মরে যেতে হয়, তাহলে তোকে আগে মেরে ফেলবো!


মেঘ : সারাজীবন শুধু ইয়ার্কি মেরেই গেলি। এবার তো একটু সিরিয়াস হতে পারিস....


অভ্র : এখনো এতটা কেয়ার করিস?


মেঘ : ( হাতটা ছাড়িয়ে নেয়, খানিকক্ষণ মাথা নীচু করে বসে থাকে জানলার দিকে তাকিয়ে)


অভ্র : আমার আর লেখার বিয়েতে এলিনা কেন?


মেঘ : যাওয়ার ইচ্ছে ছিল রে। কিন্তু কাজের চাপে আর যাওয়া হলনা।


অভ্র : থাক, কাজ দেখাস না। ইচ্ছে করেই আসিসনি। হয়তো আমার উপর ঘৃণা থেকেই... তবু লেখা তো তোর কত প্রিয় বন্ধু ছিল রে কলেজে। ওর কথা ভেবে তো আসতেই পারতিস। আজকাল ওকে তো আর ফোনও করিস না। লেখা তোকে সেই কলেজ থেকেই বড্ড ভালোবাসে রে। ওর কথাটুকু ভেবে মাঝেমাঝে খবরও তো নিতে পারিস।


মেঘ : থাক না পুরোনো কথা। বল, তারপর, লেখার সাথে নিশ্চয়ই খুব ভালো আছিস?? তোকে তো বলেছিলাম সেই কলেজেই, লেখা তোকে বড্ড ভালোবাসে....


অভ্র : হ্যাঁ বলেছিলি। মেঘ, মনে পড়ে, আমাদের প্রথম এলিয়ট পার্ক যাওয়ার দিনটা? তুই একটা মেরুন রঙের চুড়িদার পড়েছিলিস।


মেঘ : গেছিলাম বুঝি? কই, মনে পড়ে না তো। হয়তো কখনো গেছিলাম...


অভ্র : আমার সব স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলতে চাস, বল? ভালোই... কিন্তু পেরেছিস কি? হয়তো পেরেছিস তুই, আমি পারিনি....


মেঘ : (হাসতে হাসতে) লাভ নেই অভ্র। এখন নতুন করে আর কোনো বিবাহিত পুরুষের পরকীয়া হবনা।


অভ্র : জানিস মেঘ, প্রতিদিন আমি আর লেখা যখন এলিয়ট পার্কের পাশ দিয়ে মর্নিং ওয়াকে যাই, আর মাঝেমাঝে লেখা যখন আমার হাত ধরে, আমার তখন আরেকটা হাতের কথা মনে পড়ে যায়। তারপরেও কতবার ট্যাক্সিতে উঠেছি, কিন্তু বিশ্বাস কর আজ পর্যন্ত লেখার হাতে ঠোঁট ছোঁয়াতে পারিনি।


মেঘ : ( চোখ বন্ধ করে) প্লিজ চুপ কর, প্লিজ... কেন এসব কথা? তুই তো ভালো আছিস, সুখে আছিস লেখার সাথে। এরথেকে আনন্দের আর কিই বা হতে পারে? এটাই তো আমিও চাইতাম। কলেজে লেখা যখন তোর সাথে করা সারারাতের গল্পগুলো শোনাতো আমায়, আমার ভিতরে ভিতরে খুব খারাপ লাগত জানিস! লেখাকে কখনো কখনো খুব অসহ্য মনে হত। কিন্তু আজ বুঝি, আসলে লেখাই তোর সবথেকে কাছে যেতে পেরেছিল। হয়তো ও-ই ছিল তোর একমাত্র আশ্রয়। আজ তোদের কারোর প্রতি আর আমার কোনো রাগ,অভিমান নেই রে...


অভ্র : হয়তো তুই ঠিক। হ্যাঁ, লেখা আমাকে খুব ভালো রেখেছে, সুখেও রেখেছে। কিন্তু তবু একটা কোথাও যেন কিসের অভাব রয়ে গেছে, জানিস! আফটার অল, লেখা তো আর মধ্যরাতে জোর করে ঘুম থেকে উঠিয়ে হঠাৎ করে বলতে পারেনা, "ভালোবাসা পেলে সব লণ্ডভণ্ড করে চলে যাব"....আর প্রচন্ড রাগ হলে আমার জামার কলার চেপে ধরেও বলতে পারেনা, "you know something? you are a spineless coward....you are cheap...."


মেঘ : ( প্রসঙ্গ পাল্টাতে চায়) অভ্র, লেখা কি এখনো আগের মতোই আছে রে? জানিস, মাঝেমাঝে ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। তারপর মনে হয়, now things have changed a lot....


অভ্র : না। লেখা অনেক পালটে গেছে। এখন আর আমাকে ছাড়া কোথাও যায়না, কিচ্ছু বোঝেনা। ও এখন সিগারেটের গন্ধও সহ্য করতে পারেনা,জানিস! ভাব, সেই লেখা, যার সিগারেট ছাড়া চলতনা! এখন তো ও পাকা গিন্নি হয়ে গেছে। সারাদিন সংসার সামলায়। ওর এই পরিবর্তনটা আমাকেও কম অবাক করেনি, তারপর বুঝলাম, লেখার ভিতর আরেকটা লেখা ছিল। তাকে একমাত্র আমিই আবিষ্কার করেছি....


মেঘ : বাব্বা....ভাবাই যায়না...'এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ'....(হাসি)


অভ্র : (মৃদু হাসি) তারপর, তোর খবর বল। বিয়ে করলিনা কেন এখনো? 


মেঘ : ( হঠাৎ গম্ভীর হয়ে) তোকে পেলাম না যে....(তারপর হাসিতে ফেটে পড়ে)....


অভ্র : তোর এই হাসির আওয়াজটা অনেক দিন পর শুনলাম। জানিস, মেঘ, একটা কথা জানতে আজও খুব ইচ্ছে করে। তুই আর আমি কি একসাথে থাকতে পারতাম না?


মেঘ : হয়তো পারতাম, হয়তো সুখীও হতাম। কিন্তু আমাদের মধ্যে বিশ্বাসের দরকার ছিল। তোর জন্যই বিশ্বাস করতে শিখেছি, তোর জন্যই হাতে হাত রাখতে শিখেছি, জীবনে প্রথমবার তুইই আমাকে তোর কাছে টেনে নিয়েছিস, তোকেই প্রথম জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম। কিন্তু, আবার তোর জন্যই যে ভালোবাসা ভাঙতে শিখেছি। তোর কাছ থেকেই শিখেছি কি করে অবিশ্বাস করতে হয়। নিজেকে প্রতিমুহূর্তে ভেঙেছি, আবার গড়েছি। আর এখন...(দীর্ঘশ্বাস) "তোমার আমার মধ্যে দু'মহাদেশের নীরবতা"...( মেঘের চোখ চিকচিক করে ওঠে)


অভ্র : প্লিজ মেঘ, আর বলিস না...( অভ্রর চোখ থেকেও দু'ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে আজ অনেকদিন পর) তোকে পাইনি, কিন্তু আজকের এই ৪৫টা মিনিট তো পেলাম। এইটুকু সময়কে বুকের গভীরে লুকিয়ে রাখব সযত্নে। তোকে কথা দিলাম, আজ থেকে লেখাকে আরো বেশী করে ভালোবাসব। লেখার মধ্যে যে আমার চেনা সেই মেঘ আজো বেঁচে আছে।


এরমধ্যেই ঘোষণা করা হয়, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্লাইট কলকাতা বিমানবন্দরে নামবে।


মেঘ : (হাতের ব্যাগটা সিটে রেখে) আমি একটু টয়লেট থেকে আসছি অভ্র...


কিছুক্ষণ পর মেঘ ফিরে আসে। ফ্লাইট ল্যান্ড করে। চেকিং শেষ করে ওরা বেরিয়ে আসে। কলকাতার আকাশে তখন কালো মেঘ ছেয়ে গেছে। বাইরে দারুণ বৃষ্টি। অভ্রকে দূর থেকে দেখে লেখা এগিয়ে আসে। লেখাকে দেখে মেঘ বোঝে, ও প্রেগন্যান্ট। মেঘ এগিয়ে যায় লেখার দিকে।


মেঘ : কিরে লেখা, কেমন আছিস? কতো মোটা হয়ে গেছিস তুই...


লেখা : ( খুব আশ্চর্য হয়ে) মেঘ,তুই? আরে,কত পালটে গেছিস তুই...


অভ্র : দেখো না লেখা,আমরা একই ফ্লাইটে এলাম।


লেখা : চল মেঘ, আজ আমাদের বাড়িতে এবেলাটা থেকে যা। তোর সাথে কতদিন কথা হয়না, ফোন নাম্বারগুলো পর্যন্ত পাল্টে ফেলেছিস। আমি তো ভেবেছিলাম তোর সাথে আর এ জীবনে কখনো দেখাই হবেনা...


মেঘ : আজ তো হবেনা রে। পরে সময় করে একদিন যাবো নিশ্চয়ই...


এরমধ্যেই মেঘ দূর থেকে বিহানকে দেখে হাত নাড়ে। বিহান এগিয়ে আসে।


বিহান: কখন থেকে অপেক্ষা করছি,মেঘ, শুধু তোমার জন্য... যদিও তোমার জন্য অপেক্ষা করতে বড্ড ভালোলাগে আমার...( লেখা আর অভ্রর দিকে তাকিয়ে) তোমরা অভ্র আর লেখা, না?


অভ্র : আপনি চেনেন আমাদের? কিন্তু, আপনাকে তো ঠিক....


মেঘ : ও হল বিহান, বিহান চ্যাটার্জী, আমার ফ্রেন্ড, ফিলোসোফার,গাইড সবকিছু বলতে পারিস। আমাদের কলেজ ফোটোগুলো ওকে দেখিয়েছিলাম, তাই তোদের চিনে ফেলেছে। হাউএভার,সামনের মাসে আমাদের বিয়ে...


অভ্র : (মৃদু হাসে) বাঃ, এতক্ষণ বলিসনি তো? যদিও এখনো বিয়ে হয়নি... তবু,স্টিল.. উইস ইউ আ হ্যাপি ম্যারেড লাইফ...( হঠাৎ অভ্র খুব তাড়াহুড়ো করতে থাকে) আমাদের এবার আস্তে আস্তে এগোতে হবে, চলো লেখা। তোমার শরীরটাও তো ভালো না, এতক্ষণ দাঁড়ানো তোমার পক্ষে ভালো নয়...


মেঘ : হ্যাঁ, আমরাও এগোবো... চলো, বিহান...


মালপত্র নিয়ে ওরা বাইরে আসে। বিহান ওর গাড়িতে মেঘের ট্রলি তুলে দেয়।


মেঘ : (লেখাকে জড়িয়ে ধরে) খুব ভালো থাকিস,লেখা। এখন তোর সাবধানে থাকা উচিৎ, মনে রাখিস...


লেখা : মাঝেমাঝে ফোন করিস...আর একবার পারলে আমার বাড়িতে আসিস...(বাড়ির ঠিকানা বলে লেখা ট্যাক্সিতে ওঠে) 


বিহান : (অভ্রকে) বেশ, চলি তাহলে...বিয়েতে আসতে হবে কিন্তু মিসেসকে নিয়ে...( মেঘকে)..মেঘ, আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি, তুমি এসো ওদের সি অফ করে...(গাড়িতে চলে যায়)


অভ্র : (এগিয়ে এসে মেঘের হাত ধরে) খুব ভালো থাকিস মেঘ। আর হয়তো এভাবে কখনো দেখাই হবেনা তোর আর আমার একার। বিহান আর তুই খুব সুখী হবি,দেখিস! যাই এবার তাহলে...


মেঘ : যাই বলতে নেই, আসি বল। সত্যি এখনো শিখলি না। ভালো থাকিস অভ্র, লেখার খেয়াল রাখিস...


মেঘ আর অভ্র- ওরা দু'জনেই দু'জনের হাত ছেড়ে দেয়। মেঘ বিহানের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়, অভ্র এগোয় ট্যাক্সির দিকে। বারবার পিছনে তাকায় ওরা। বড়ো বড়ো বৃষ্টির ফোঁটা মিশে যেতে থাকে ওদের চোখের জলের সাথে। ওদের সব না বলা কথা আজ দৃষ্টি হয়ে গেছে। তখন হয়তো আশেপাশে কারোর মোবাইলে গান বাজছে -"কেন ভাঙছে আকাশ, আমি ভাঙছিনা / হয়তো তোর ভেতরেও একই অবস্থা..."


মেঘ বিহানের গাড়ির পিছনের সিটে একটু গা এলিয়েই বসেছিল। বিহান সামনে বসে গাড়ি চালাচ্ছে। হঠাৎমেঘ তার ব্যাগ থেকে টিস্যু পেপার বার করতে গিয়ে দেখে, তার ব্যাগে একটা "শক্তি চ্যাটার্জীর শ্রেষ্ঠ কবিতা"। ভিতরের পাতায় লেখা- এতদিন এটা আমার কাছে রাখতাম...আজ থেকে এটা তোর কাছেই থাক...আর একটা কথা..."কিন্তু তুমি নেই বাহিরে, অন্তরে মেঘ করে... ভারী ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে..."।

মেঘ হঠাৎ বুঝলো, অনেক দিনের জমাটবাধা মেঘটা আজ বৃষ্টি হয়ে ঝরে গেল দুটো আকাশ থেকেই।


Rate this content
Log in

More bengali story from Snigdha Chakravarty

Similar bengali story from Classics