গুরুভক্তি
গুরুভক্তি


ভাগচাষী মধুর ছেলে যদুর পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছে। এত দৈন্য থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ। দুবেলা ভালো করে খাবার না পেলেও ওর বই পড়াশোনা চাই।
- স্যার, এই অঙ্কটা পারছি না ।
- কাল আসিস । আজকে খুব ব্যস্ত ।
সত্যিই স্যার খুব ব্যস্ত মানুষ।এককালের গৃহশিক্ষক। এখন শিক্ষা ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসা করেন এখন । দু পয়সা এলেই হল । অঙ্কের জটিলতাটা আর ক্যালকুলেশনটা ব্যবসায় বড় কাজে লেগে যায় । অঙ্ক ভীতির কারনে স্যারের কাছে মাঝে মাঝেই যায় যদু , যদি কিছু শিখিয়ে দেন । যদিও বাকি সাবজেক্ট গুলোতে কিন্তু সে প্রথম হয়।
তবে যদুর ভাগচাষী বাবা এ বছরও যদুকে পুরোনো বইয়ের সাথে সেলোটেপ আর ফেভিকল আঠা কিনে দিয়েছে ।ছেঁড়া পাতাগুলো মেরামত করে অচেনা অক্ষরগুলির সাথে সে স্বপ্নের জগতে হারিয়ে যায়। বাকী বিষয়গুলো আয়ত্তে এলেও অঙ্ক ভীতি তার দুঃস্বপ্ন। ভয়ে এলোমেলো হয়ে যায় তার মন, সন্ধ্যায় আবার স্যারের কাছে ছোটে সে। স্যার এসময় ফাঁকাই থাকেন ।
- স্যার, পরশু এসেছিলাম ।
সন্ধ্যার অবসরে স্যার তখন তার ছেলেকে সুদকষার অঙ্ক শেখাচ্ছেন । যদুর আগমনে মুখে তার বিরক্তির ভাব।
- নাহ রে । আজ পারবো না । পরে আসিস । এখন ব্যস্ত,দেখছিস ছেলেকে শেখাচ্ছি ।
এই ধারাবাহিক প্রত্যাখ্যানের গূঢ় অর্থ বুঝে যায় নেহাত ছেলেমানুষ সন্তুও । স্যার তাকে শেখাবেন না ব্যস । তাই সন্ধ্যেবেলা ও স্যারের বাড়ীর বাইরে বেড়ার ধারে বসে বাবা - ছেলের অংক করা শুনতো। আর স্বপ্ন দেখতো একদিন তার এই কষ্ট দূর হবে - সে লেখাপড়া করে প্রকৃত শিক্ষিত হবে। তখন ওর মত ছাত্রদের ও এমনিই পড়াবে। কারণ শিক্ষা তো মানুষের মৌলিক অধিকার।
এরপর সব গাছ থেকে ঝরে গেছে বহু পাতা - কতশত পূর্ণিমার চাঁদের উঁকিঝুঁকি পাতার আড়াল থেকে দেখেছে সে । ও দূর থেকে দেখেছে, স্যারও এতদিন শিখিয়ে গেছেন তার ছেলেকে ।
অথচ সকলকে অবাক করে দিয়ে গতবছর স্কুল সার্ভিসে ম্যাথসে কোয়ালিফাই করেছে যদু । পাস করে স্যারকে প্রণাম করতে গিয়েছিলো সে । স্যার তখন থানার দিকে ছুটছেন । এই ব্যস্ততার কারণ যদিও জানেনা যদু । প্রণাম করে সে বললো
- স্যার আমি এবার স্কুল সার্ভিসে ম্যাথসে কোয়ালিফাই করেছি । পরশু জয়েনিং । আপনি না থাকলে আমার অঙ্ক শেখা হত না । তবে আপনার সাক্ষাৎ সান্নিধ্য পাওয়ার বড় আশা ছিলো ।
গম্ভীর হয়ে রইলেন তিনি কয়েক সেকেন্ড । হাতে সময় নেই, ছেলেকে ছাড়াতে থানায় ছুটছেন তিনি । সাট্টা - জুয়ার বোর্ড থেকে ধরা পড়েছে সে ।
সত্যি বলতে কী, ওরা দুজনেই অঙ্ক যার যার মত করে ভালোভাবে রপ্ত করেছে !