গল্পে আমি ,,,,
গল্পে আমি ,,,,
" কৃতি ,কৃতি কোথায় গেলি তুই ? কে জানে আবার কোথায় চলে গেলো,বাজারে আসার পর থেকে তো খালি এটা কি ,ওটা কি করেই যাচ্ছে ! " - কুশলবাবু কথাটা বলে ,সারা সবজি বাজারে কৃতিকে খুজে চলেছে তার নিজের ছোটো মেয়ে কৃতিকে,এই প্রথমবার বাজারে এনেছে তাকে সঙ্গে করে ,এরই মধ্যে যে এরকম কান্ড হবে সেটা ভাবেননি তিনি।
হঠাৎ ভিড়ের মাঝে একটা ফুলের দোকানের কাছে খুঁজে পেলেন তিনি সাত ,আট বছরের ফ্রক পরিহিতা একটি মেয়েকে ,যে হলো কৃতি । সে তাকিয়ে আছে সেই দিকে ,যেখানে একজন ফুলওয়ালা ,ফুল আর ফুলের ছোটো ছোটো চারা বিক্রি করছে ,
মেয়েকে দেখতে পেয়ে কুশলবাবু হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে গেলেন তার দিকে ,
" কৃতি তুই কিন্তু খুব দুষ্টু হয়েছিস ,আমি ব্যস্ত আছি সবজি কিনতে দেখে ,তুমি চলে এসেছো সরে ! যদি হারিয়ে যেতে কি হতো ! " কুশলবাবুর চিন্তার স্বরে বলা কথার উত্তরে কৃতি মিষ্টি হেসে বললো ,
" কোথায় হারালাম ? এই তো পেয়ে গেলে খুঁজে ! "
" চল এখন বাড়ি চল । " কুশল বাবু ওকে নিয়ে চলে যেতে গেলে কৃতি আবদারের সুরে বলল,
" বাবা আমি ওই একটা গোলাপের চারা নেবো ,আমি নিজে লাগাবো । "
" মোটেই না,তুই নিজের যত্ন করতে পারিস না ,আবার গাছ লাগাবি কীকরে ? তার তো যত্ন নিতে হবে নাকি ! " কুশল বাবু বিরোধিতা করে ওকে নিয়ে বেরিয়ে এলো বাজার থেকে, কিন্তু কৃতির মুখ কাঁদো কাঁদ হয়ে গেছে ,পথে যেতে যেতে দেখা হলো কুশল বাবুর বড়ো মেয়ের সাথে ,নাম কুহেলী ,ও বোধহয় এখন টিউশন যাচ্ছে ,
কৃতির শুকনো মুখ দেখে বললো ,
" কীরে বনু তোর আবার কি হলো ? মুখটা পেত্নির মতো কেন ? "
কৃতি সুযোগ পেয়ে তাড়াতাড়ি বললো ," দেখ না দিদি আমি বললাম আমাকে একটা গোলাপ গাছের চারা কিনে দিতে আমি লাগাবো , কিন্তু কিনে দিলো না ! "
" কেন বাপি কিনে দাওনি কেন ? এটা তুমি ঠিক করোনি ,গাছ লাগানো তো ভালো ,তারওপর বনু করবে বলছে তো ! " কুহেলী সায় দিতে কুশল বাবু বললেন ," না না দরকার নেই,আমি আর তোর মা কাজের জন্য বাইরে থাকি ,গাছের পরিচর্যা করবে কে শুনি ? কৃতি পারবে না। "
" বাপি তুমি আমার কথা শোনো ,কিনে দাও ওকে গাছ ,কিরে বনু পারবি তো পরিচর্যা করতে ? "
কুহেলীর কথায় আশা পেয়ে কৃতি আনন্দের সাথে বললো ," ঠিক পারবো । আমি পাশের বাড়িতে গাছ লাগাতে দেখেছি । "
" শুনলে বাপি ,এবার ওকে একটা গাছ কিনে দাও ,আমি বাড়িতে গিয়ে একটা সুন্দর ব্যখ্যা দিয়ে দেবো ।"
কুহেলী চলে গেলো , কুশল বাবু বাধ্য হয়ে কৃতিকে একটা গোলাপ গাছ কিনে দিলেন । তিনি বুঝতে পারছিলেন ,আবার বাড়িতে একটা সভা বসবে ,যার সভাপতি কুহেলী । কারণ তিনি জানতেন ,তার মেয়ে যুক্তিবাদী ,এই গাছ কিনে দেবার জন্য একটা লম্বা যুক্তি দেবে ,যদিও সেটা যথোপযুক্ত,ফেলে দেবার মতো নয় ।
বাড়ি ফিরে তিনি এবং তার স্ত্রী অফিস চলে গেলেন ,কৃতি ও স্কুল চলে গেলো । এখন এসবে কেউ মাথা ঘামানো না,কৃতি শুধু গাছটা জলের মধ্যে সংরক্ষিত করে রেখেছে ,যাতে গাছটা না মারা যায়।
সন্ধ্যাবেলা সবাই একসাথে জড়ো হলে কুহিলী বললো ," বাপি তোমাকে বলেছিলাম ব্যাখ্যা দেবো ,তাই তো ? তো বলছি এখনই ,একটু পরে অনলাইন ক্লাস আছে ।একটা কথা যেটা আমরা সবাই জানি ,একটা কাজের শুরু একটা কাজের নতুন একটা জন্ম । বনু বাইরের চারপাশে দেখেছে সবাইকে গাছ লাগাতে ,তাই সেটা ওর মনের মধ্যে ইচ্ছে জুগিয়েছে ওই কাজটা করার জন্য। এখন তুমি ওকে কাজটা না করতে দাও তাহলে ওর মনে এই ভাবনা হতে পারে যে ওর ওপর কেউ ভরসা করে না ,ও সত্যিই পারবে না,যেটা ওকে মানসিকভাবে পিছিয়ে দেবে । আর গাছ লাগানো একটা বিরাট বড়ো জিনিস । আমরা যখন মনপ্রাণ দিয়ে কোনো ভালো কাজ করবো তখন শেষে সেটাই আমাদের আশ্বাস দেবে যে আমরা সার্থক । "
কুহিলীর প্রথম কথা শেষ হতেই কুশল বাবু বললেন," এবার বাস্তব উদাহরটা শুনি , যেট তুই প্রতিবারে বলিস ।"
" সেটাই আসল ,কারণ বাস্তব চিত্রই সবথেকে বড়ো বোঝানোর উপায়। আর সেটা আমি আমার মাধ্যে বোঝাতে চাই ,যেটা হলো " গল্পে আমি । আমি অন্যদের গল্প লিখতে দেখেছি ,তাদের গল্প পড়েওছি । তাই যখন লেখার মতো একটা দারুণ জায়গা পেয়েছি তখন নিজের সুপ্ত ইচ্ছাকে জাগিয়ে কল্পনার জগতে উড়তে চেয়েছি । আমি গল্পেতে এখন অতি শিশু,বড়ো হবার স্বপ্ন নিয়ে সেটাকে পরিচর্যা করে চলেছি । একদিন গাছটা যেমন ঠিকভাবে বড়ো হলে ফুল ফল দেবে ,যা গাছ এবং যে গাছ লাগালো তার ঐশ্বর্য বৃদ্ধি করবে ,তেমনই আমার ক্ষেত্রেও তেমনি হবে ।কী মিললো তো বাস্তব উদাহরণ? "
কুশল বাবু মেয়ের কথা হাসলেন ,এর অর্থ হলো যে মিলেছে । তবু তিনি প্রশ্ন করলেন ," তুই সত্যি লিখছিস? তাহলে একদিন কিন্তু তা দুমলাটের মাঝখানে আমি হাতে নিতে চাই ।"
" চেষ্টা করবো বাপি ,তোমরা আশিবার্দ করলে সব হবে ।আজ যাই বাপি ঘরে , অনলাইন ক্লাস আছে ।
"
সবাই যে যার কাজে ঘরে চলে গেলো , কিন্তু যখন এই কথাগুলো বলা হলো , নিশ্চয় কোনো বাস্তবিক ব্যাখ্যাকে তুলে ধরলো ।
