Satya Sundar

Romance Tragedy

3.7  

Satya Sundar

Romance Tragedy

একটি অসমাপ্ত বন্ধুত্বের গল্প

একটি অসমাপ্ত বন্ধুত্বের গল্প

4 mins
560


শ্রাবনের মন খারাপ করা সন্ধ্যা। সারা দিনের অঝোর ধারা সবে একটু ধরে এসেছে। একলা বাতায়ন পাশে বসে আছি আর মনটা গুনগুন করছে...'স্বঘন গহন রাত্রি...'।

হঠাৎ ইচ্ছে হল গীতবিতান টা নিয়ে একটু বসি। 

এ আমার অনেক কালের অভ্যেস, মনের কোনে মেঘ জমা হলেই ওটা নিয়ে বসি। অবশ্য গানের 'গ' ও পারিনা। তবুও এ আজব ভালোলাগা তৈরি হয়েছে, তাই বইটা পড়ার টেবিল থেকে আনতে গিয়ে মেজাজ গেল বিগড়ে। ওটার তো টেবিলের বাঁদিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। আজ হঠাৎ কোথায় চড়তে বেরোলো! 

অগত্যা টেবিলের তাক, আলমারি, বিছানা, কার্নিশ সব আতিপাতি করে খুঁজতে থাকি। বিছানা বলছি কারন বিছানার চারপাশে বই রাখার বদভ্যাস অনেক দিনের। হষ্টেলে মশারি গুঁজতে খুব সাহায্য করতো এখন অলসতা পুষতে। কার্নিশে খুঁজতে খুঁজতে একটা পুরনো ডাইরি নিচে পড়ল ঝপ করে। তুলে রাখতে গিয়ে কি মনে করে ওটা নিয়েই বসে পড়লাম। ডাইরিটা তপনের। চলে যাবার সময় আমকে দিয়ে গেছিলো। অনুরোধ করেছিলো ওর অসমাপ্ত কাহিনী আমি সমাপ্ত করি! কি কঠিন অনুরোধ, উনার জীবনের না ঘটা অধ্যায়টা আমার কল্পনা দিয়ে সমাপ্ত করতে হবে! পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন ওটা নিয়ে তুলে রেখে ছিলাম। খোলা হয়নি মোটে। তপনের সাথে যোগাযোগ নেই বহুদিন। সব রকম খোঁজখবরের চেষ্টা করেছি, সবরকম সামাজিক যোগাযোগের বাইরে কোন বনবাসে যে আছে! 

প্রান চঞ্চল, সদাহাস্যময় তপনের সাথে আমার আলাপ কলেজ জীবনের এমনি এক শ্রাবন সন্ধ্যায়। বৃষ্টি মাথায় করেই ছুটেছিলাম রাজশ্রীতে কয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। কেনাকাটার পর পকেটে হাত দিয়েই দেখি সর্বনাশ! মানিব্যাগ কোথায়? আমাকে ইতস্তত করতে দেখে পাশে দাঁড়িয়ে পাটকাঠি চেহারার শ্যামলা ছেলে, সহজ সুরে সমস্যার কথা জানাতে চাইলো এবং তৎক্ষণাৎ সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো। পরবর্তীতে বহু ঘটনায় তার এই অনেকের ত্রাতা হয়ে ওঠার স্বভাবটি তাকে আমার হৃদয়ের খুব কাছে এনেছিলো তা বলা বাহুল্য। 

পড়াশুনায় তুখোড় মেধা থাকা সত্বেও উদাসীন প্রকৃতি ও আড্ডাবাজ স্বভাবের জন্য রসায়ন বিভাগে তেমন সুনাম অর্জন করতে না পারার জন্য কোনো দিন আপসোস করতে দেখিনি। বিষয় বিভাগীয় দূরত্ব ও ভিন্ন হষ্টেলে অবস্থান সত্বেও ঘনিষ্টতা ও অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠেছিল বেশ। 

আমাদের মধ্যে একমাত্র ঝামেলা কারন ঘটতো আমার লেখার ভুলভাল সমালোচনা নিয়ে।

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো হঠাৎ একদিন পদ্মভবন থেকে ক্লাস করে সাইকেলে ফিরছি শিক্ষা ভবনের একটি ভাই পার্থ আমাকে তাড়াতাড়ি পিয়ারসন হাসপাতালে যেতে বলল। আমি বেশি কিছু জানতে চাইলে বলল তপনদা অসুস্থ। নাওয়া খাওয়া ভুলে দৌড়ালাম । পৌঁছে দেখলাম গেটের সামনে এক ভ্যান পুলিশ আর ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ারের গাড়ি, ওদের অফিসার তরুনদার কাছে তত্ত্বতল্লাস করে বুঝলাম আ্যটেম টু সুইসাইড কেস মনে হচ্ছে। দেখা করার অনুমতি পাওয়া গেল না। হতভম্ব হয়ে বসে পড়লাম। কাল ই তো বিকালে দেখা হল তপনের সাথে। কিছুতো বলল না, মনমেজাজ ও বেশ ফুরফুরে ছিলো। কাকু, কাকিমাকে খবর দেওয়া হয়েছিল। এসে পৌঁছলেন তারা। তপনের মায়ের ছবি ওর অ্যালবামে দেখেছিলাম। দেখেই চিনতে পারলাম। গাড়ি থেকে নেমেই কাঁদতে শুরু করলেন। কাকু এগিয়ে গিয়ে পুলিশ ও পরে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললেন।

উনি বেড়িয়ে এলে বললাম,"কাকু তপন এখন কেমন আছে?"

তিনি জানালেন ভালো না, সিয়ান অথবা বর্ধমান রেফার করবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওকে নিয়ে চলে গেল।

আমি বিষন্ন মনে হাজার কথা ভাবতে ভাবতে হষ্টেলের দিকে রওনা দিলাম। আশে পাশে ভীড় করা ছেলে মেয়েদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। হয়ত গভীর অভিমানে। বন্ধুত্ব কি একটুও কষ্ট শেয়ার করার মাধ্যম নয়! পরে অবশ্য নানারকম প্রেম গন্ধমাখা কাহিনী আমার কানে এসেছে। সেসব তেমন পাত্তা দিইনি কারন সত্যিটা কখনো এতো বিভিন্নতা যুক্ত হতে পারে না। 

দিন পনেরো পরের কথা। বুধবার, ছুটির দিন সকালে দেরি করে উঠে ময়লা জামা কাপড় সব বালতিতে ভিজিয়ে রাখছি, এমন সময় তপন এলো ওর বাবা মাকে নিয়ে। তখনও বিশ্ববিদ্যালয় এমন অচলায়তন হয়ে ওঠেনি। 

আমি তাড়াতাড়ি তাদের বসতে দিয়ে পিছনে ঘোষদার দোকানে চা আনতে পাঠালাম বিশুকে।

তপনের বাবা ব্যাস্ত হয়ে উঠলেন। বললেন তপনের মুখে আমার কথা অনেক শুনেছেন কিন্তু সেদিন উনি আমাকে চিনতে পারেননি। 

আমি উনাকে সমর্থন করে বললাম, "সেটাই স্বাভাবিক, আপনি আমাকে আগে দেখেননি। তাছাড়া আপনার মনের অবস্থাটাও তখন তেমন ছিলো না, তাই না?"

আমার কথা শুনে তপনের মা খুব খুশি হলেন। বললেন,"আমরা তপনকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছি। প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা হয়েছে, ইন্টারন্যাল পরীক্ষা প্রায় সব দিয়েছে। ও কেবল ফাইনাল পরীক্ষা গুলো দিতে আসবে। আর যাবার আগে ও তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলো, হয়তো তোমাকে কিছু বলতে চায়। তোমরা কথা বলো, আমরা একটু বাইরে থেকে আসছি।"

একটানা এতগুলো কথা বলে উনারা বেরিয়ে গেলেন। আমি মনে মনে একটু বিরক্তই হলাম। সেদিনের পর থেকে তপনের কথা ভাবলেই আমার মনটা খিঁচড়ে ওঠে। এতবড় একটা সিদ্ধান্ত....!

তপন এসে আমার হাত দুটো ধরতে আমার চমক ভাঙ্গল। ও একটা ডাইরি আমার হাতে দিয়ে বলল পড়িস, আর পারলে আমার অসমাপ্ত কাহিনী শেষ করে আমাকে জানাস। আমি কোন কথা বললাম না। দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম দুজনে।

ওর বাবা মা এসে ওকে নিয়ে গেল। আমি বেশি কিছু বললাম না কেবল বললাম ভালো থাকবেন।

এরপর দীর্ঘ ১০ বছর কেটে গেছে। সময় পাল্টেছে। সোস্যাল মিডিয়ায় দৌলতে সব বন্ধুদের খুঁজে পেয়েছি। তপনকেও খুঁজেছি অনেক। কিন্তু পাইনি।

ভেবেছি তপনও তো আমাকে খুঁজতে পারতো...।


খাবার ডাক পেয়ে চমক ভাঙল । ডাইরি রেখে খেতে গেলাম।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance