প্রেমের ফাঁদে
প্রেমের ফাঁদে
আকাশ ভোর পাঁচটায় বোর্ডিং পাসের লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাই তুলতে থাকে আর একবার ঘড়ির দিকে দেখতে থাকে আর একবার লম্বা লাইনের দিকে। অবশ্য পি.এ মিস সাহানি ওকে বার বার বলে দিয়েছিলো অনলাইন পাস করিয়ে নিতে। মেয়েটা আজকাল তার একটু বেশিই যত্ন নিচ্ছে!
গতকাল অফিসের লাস্ট আওয়ারে মেইলটা আসে গুয়াহাটি অফিস থেকে। জরুরী তলব, ইমারজেন্সি মিটিং। ফ্লাইট বুকিং করতে হিমসিম অবস্থা। অফিসের এজেন্ট মিষ্টার মেহেতা তো না করেই দিয়েছিলেন, মাথুর স্যার কে ফোন করে ম্যানেজ করা গেছে তাও ইকনমি ক্লাসে। কলকাাতা অফিসের কাগজ পত্রের থেকে কয়েকটা নোট নিতে নিতে রাত একটা। সকাল ছটার ফ্লাইট, চারটেয় অ্যালার্ম দেওয়া সত্বেও কুক কাম অভিভাবক দেবু কাকুকে বলে দিলো চারটে নাগাদ তুলে দিতে। পৌনে চারটে নাগাদ ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে দেখে মিস সাহানির কল।এই মেয়েটা ওর পিছনে যেন হাত ধুয়ে পড়েছে।
বত্রিশটি বসন্ত পেরিয়েও আকাশের মতো হ্যান্ডসাম ও যোগ্য ছেলে যে এখনও নারী স্পর্শহীন, নিজের কৌমার্য বজায় রেখেছে একথা সত্য হলেও অফিসে অধিকাংশই বিশ্বাস করে না। তাতে অবশ্য আকাশের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আসলে তার অধিকাংশ বন্ধু বান্ধবের সাপ্তাহিক প্রেম দেখে দেখে ঘেন্না ধরে গেছে। এই তো গত সপ্তাহেই ওর প্রিয় বান্ধবী রীতি সপ্তকের সঙ্গে লিভইন এ থাকা অবস্থায় মৈনাকের সাথে নৈনিতাল ঘুরতে চলে গেলো। বাবা মায়ের হঠাৎ অ্যক্সিডেন্টে মৃত্যুই হয়তো ওকে অন্য বন্ধুদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।
"আপনার টার্ন স্যার ইউ" একটি সুন্দরী তরুণী পিছন থেকে বলে ওঠে। চমকে আকাশ দেখে তাকে চেকিংয়ের জন্য ডাকা হচ্ছে।
প্লেনে উঠে নিজের সিটে বসতে গিয়ে বিষম খেলো আকাশ। তার পাশে উইন্ডো সিটে সেই সুন্দরী। তাকে হঠাৎ করে কাশতে দেখে জিজ্ঞেস করল, "কোনো সমস্যা?"
" না না আ..আমি ঠিক আছি।"আকাশ আরো জোরে কাশতে কাশতে বলে।
"আপনার কি উইন্ডো সিটে বসলে সুবিধা হবে?" মেয়েটি তার সিট অফার করে।
আকাশ হঠাৎ খেয়াল করে মেয়েটির গলার স্বর কেমন যেন সুরেলা।মনের মধ্যে যেন জলতরঙ্গ বেজে ওঠে । সে মোহাবিষ্টের মতো তাকিয়ে থাকে।
মেয়েটির চোখেও কি মুগ্ধতা!
আকাশ নিজের জায়গাতেই গিয়ে বসে। আকাশের খুব ইচ্ছে হয় মেয়েটির সাথে আলাপ করতে। মনে মনে ভাবে একেই এত সুন্দরী তার উপর বেশ প্রগল্ভ এর কি কোন বয় ফ্রেন্ড না আছে! কথা বলার জন্য উসখুস করছে এমন সময় মেয়েটি বলল,"আপনি সিট বেল্টটা বেঁধে নিন।"
"ও হ্যাঁ হ্যাঁ, ধন্যবাদ।" সিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে নিজের আচরনে নিজেই অবাক হয়। প্লেনে যাতায়াত তার নতুন নয়। ঘন্টা দেড়েকের জার্নি। নিজের দৃঢ়তা ও ব্যক্তিত্বের জোরে এই কয়েক বছরেই উন্নতির অনেক গুলো ধাপ সে পেরিয়ে আসতে পেরেছে। এই ছেলেমানুষী তাকে মানায় না! নিজেকে জোর করে সংয়ত করে গম্ভীর হবার ভান করে।
হায়রে মানুষের মন, জোর করে সরিয়ে রাখলেই সেই দিকেই ধাবিত হয়! আকাশ আড়চোখে দেখে মেয়েটি একটা বই খুলে পড়ছে। ইন্জিনিয়ারিং এর ম্যাগাজিন। সে আন্দাজ করে মেয়েটি সম্ভবত ইন্জিনিয়ারিং এর ছাত্রী।
নিজের কলেজ জীবনের কথা মনে পড়ে আকাশের। কত বন্ধু বান্ধবি। আড্ডা, হৈ হৈ করে ঘুরতে যাওয়া। শ্বেতা অগরওলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রনা। গভীর পড়াশুনায় ডুবে যাওয়া, এম.টেক টপার হবার পর সাকসেনা স্যার বারবার গবেষণার জন্য বলেছিলেন। তখনই বাবা-মায়ের অ্যক্সিডেন্টের খবর পেয়ে ছুটে যেতে হয় কোলকাতায়। সেই অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে উঠতে কখন মনটা পাথর হয়ে গেছিলো বুঝতে পারে নি। আজ আবার সহসা সেই আগের আকাশকে খুঁজে পায় সে।
ভাবতে ভাবতেই কখন গন্তব্যে পৌঁছে যায়। নামার সময় শুধু একটা কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগ পায়, " ইন্জিনিয়ারিং ছাত্রী?"
" হ্যাঁ" বলে একটা হালকা হাসির রেশ ছড়িয়ে দিয়ে চলে যায় মেয়েটি।
অফিসের গাড়ি আকাশকে নিয়ে যায়। মিটিং ও কিছু কাজকর্ম শেষ করতে দুপুর গড়িয়ে যায়। সমস্ত কাজে আজ তার অন্যমনস্কতার ছাপ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেয়েটির হাসি মনে পড়ে যাচ্ছিল। আজ এম.ডি সাহেবের একটা কথা ওকে খুব নাড়া দেয়:"সমস্যাকে যত এড়িয়ে যাবে তত জটিলতা বাড়বে, সমস্যার মুখোমুখি হও সমাধান তোমাকে ঠিক ধরা দেবে।"
মনের অস্থিরতা দূর করার মন্ত্রটি যেন ঐ কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে। সে এতক্ষন মেয়েটির নাম জানতে না চেয়ে আফসোস করছিলো। নিজের তুখোড় বুদ্ধিতে সান দিতে দিতেই তার মনে পড়ে প্লেনের প্যাসেঞ্জার লিষ্ট থেকে তো নাম কালেক্ট করা সম্ভব।
কলকাতা অফিসে মিস সাহানিকে ফোন করে প্লেনের প্যাসেঞ্জার লিষ্ট টা সংগ্ৰহ করার জন্য বলে। ফোন পেয়ে আপ্লুত হয়ে সে অতিদ্রুত তার ব্যবস্থা করে।
মোট বারো জন মহিলা যাত্রী ছিলো, বিভিন্ন বয়সের। উনিশ থেকে তেইসের মধ্যেই ছয় জন। প্রত্যেকটি নাম আলাদা আলাদা করে ফেসবুকে চেক করে সে। তিন জনের কেউ ওই মেয়েটি নয়। বাকি দুজনের মধ্যে এক একজনের নামে অনেক গুলো প্রোফাইল আলাদা আলাদা মহিলার। প্রায় সবগুলো দেখেও বোঝা গেলো না। বাকি একজন, বিদিশা মৈত্র তার আবার প্রোফাইল লক। ছবিটা একজন বাবা মা ও একটা বাচ্চা মেয়ের। সামান্য হলেও মুখের সঙ্গে যেন মেয়েটির মিল পেলো আকাশ। তার মনে যুগপৎ খুশি ও চিন্তার ঢেউ খেলে গেল। অতঃ কিম্ ??
গুয়াহাটির সরকারি বেসরকারি সমস্ত কলেজের ওয়েব সাইট চেকিং ছাড়াও অনেক রকম ভাবে চেষ্টা করেও ব্যার্থতাই ধরা দিলো। এমন মনের অবস্থা তার আগে কখনো হয় নি। বাবা মায়ের আকল প্রয়ান কেবল শূন্যতার সৃষ্টি করেছিলো। আর তনুশ্বেতার প্রত্যাখ্যান কম বয়েসী আকাশের বাড়িয়ে দিয়েছিলো পড়াশুনার জেদ। এই বয়েসে এমন ছেলেমানুষী হাস্যকর বোধ হলেও মনকে সে কিছুতেই প্রবোধ দিতে পারে না। নিজের অপূর্ণতার অনুভব মাথার মধ্যে বোঝার মত চেপে ধরে।
সন্ধ্যার অন্ধকারে কোম্পানির গেষ্ট হাউসে বসে এই প্রথম সে চাওয়া পাওয়ার হিসেব কষতে বসে।
জীবনের সমস্ত প্রলোভন ও বদনাম সে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে। আজ হঠাৎ......
ফোনের আওয়াজে আবেশ কেটে যায়। মিস সাহানির কল। ব্যক্তিগত প্রশ্ন যে আকাশ রায়ের অপছন্দের এটা ভালো ভাবে অবগত হয়েও ভালো মন্দ খোঁজখবর নিতে থাকে। অলস বিরক্তিযুক্ত উত্তরে হয়তো মেয়েটি কিছু একটা আঁচ করতে পারে। সে আকাশকে ফেরার কথা জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে ফেরার জন্য পিড়াপিড়ি করতে থাকে।
অন্য সময় হলে আকাশে মেঘের গর্জন শুরু হতো।
আজ অভাবনীয় ভাবে সে জানায়, " মিস সাহানি আমি একটা বিশেষ কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি, আপনি প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আমি কাগজপত্র আর কিছু ইন্সট্রাকশন মেল করছি দয়াকরে দেখে নিয়ে সার্ভ করে দেবেন।"
মিস নীতি সাহানি তার বসের ব্যবহারে অবাক হয়ে যায়। তার মনে লাড্ডু ফুটতে থাকে।
ফোন রেখে রাতের খাবার খেয়ে আকাশ তার পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করার কথা ভাবতে থাকে। মনে পড়ে দেবু কাকুর অনুরোধ: "মায়ের মন্দির একবার ঘুরে এসো বাবা"।
শেষ বার সে কামাক্ষা মায়ের মন্দিরে গিয়েছিল বাবা মায়ের অক্সিডেন্টের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। তার পর থেকে আর কোনো দিন কোনো মন্দিরেই সে যায় না। গুয়াহাটি আই.আই.টি তেও সেই শেষ যাওয়া। আর একবার কি যাবে সে!!
কাল একবার দুটো জায়গায় ঢু মেরে পরশু ফিরে যাবার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন সকালে উঠে স্নান সেরে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় প্রকাশ। মন্দিরের বাইরে একজন সাধুকে দেখে চমকে ওঠে আকাশ। এই সেই সাধুবাবা না যাকে সে শেষবার মন্দিরের বাইরে দেখেছিলো! সে তাকে বার বার হিন্দিতে মন্দিরে না ঢুকে বাড়ি ফিরে যাবার কথা বলেছিলো!
এবার দেখা হতে যেন মনে হল কেমন রহস্যময় মৃদু হাসলেন।
বললেন,"যাও বেটা মা কে পাস যাও, তুমহারা মন কামনা জরুর পুরা হোগা।"
ভীড়ের সঙ্গে গর্ভগৃহে প্রবেশ করে পুজো সম্পন্ন করে বেড়িয়ে এলো। বাইরে এসে খোঁজ করে সেই সাধুবাবার। কোথায় কি! যেখানে বসেছিলেন সেখানে লোক জনদের জিজ্ঞাসা করেতে সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে। "এখান তো কোন সাধুবাবা বসেন না, এখানে এক ফুল বিক্রেতা বসে। ঐ দেখুন আসছে।" বলে জনৈক একজন ভক্ত একজন ফুল বিক্রেতাকে নির্দেশ করে।
আকাশ হতবাক হয়ে দেখে সাধুবাবা নয় একজন অচেনা ফুল বিক্রেতা।
ধীরে ধীরে সে মন্দির চত্তর থেকে বেরিয়ে এসে দোকান থেকে ছাত্রাবস্থার মতো পুরি সবজি আর জিলিপি খেয়ে তৃপ্তি লাভ করে। এরপর আই.আই.টি যাবার জন্য বেরিয়ে পড়ে। প্রথমে ভাবে ট্যাক্সি নেবে। পরে মনে হয় মাত্র ত্রিশ, চল্লিশ মিনিটের রাস্তা আগের মতো অটো ও বাসে যেতে পারলে বেশ হয়।
বাসে যেতে যেতে ক্যাম্পাসের দিন গুলো মনে পড়ে। আগের স্যারেরা কেউ কি আছেন? প্রফেসর ভগবতী কি এখনো আছেন!
পৌঁছে প্রথমেই নিজের ডিপার্টমেন্টে চলে যায়। এই ক বছরে কত পরিবর্তন ঘটেছে। একজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে হয় নতুন অফিসের ঠিকানা। তখনও আকাশ জানে না কি অপেক্ষা করছে।
অফিসে ঢুকে নিজের চেনা প্রায় কোন স্যারকেই খুঁজে পায় না। কেবল দারোয়ান দয়াল সিংকে চিনতে পারে। দয়াল সিংকে নিজের পরিচয় দিলে উনি আকাশ কে একটা চেয়ারে বসতে বলেন। সে চেয়ারে বসেছে কি বসেনি একজন ম্যাডাম প্রবেশ করেন। আকাশ দেখেই চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে। এ কাকে দেখছে সে! শ্বেতাই তো! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না।
সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে,"মর্নিং ম্যাম, হাও আর ইউ?"
ম্যাডাম সামনে চোখ তুলে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে।
"ইজ ইট ইট ইউ স্কাই?"
এখানে তখন সবাই আকাশকে স্কাই বলে ডাকতো।
আকাশ কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলে,"ইটস মাই প্লেজার দ্যাট ইউ ক্যান স্টিল রিমেমবার মি। হোয়েন ডিড ইউ জয়েন হিয়ার?"
দুই পুরাতন প্রতিদ্বন্দ্বী বন্ধুর মিলনে অফিস গমগম করে ওঠে। শ্বেতা অন্যান্য স্যারদের সাথে আকাশের পরিচয় করিয়ে দেয়।
" দ্যা বেষ্ট স্টুডেন্ট অফ আওয়ার ব্যাচ অ্যান্ড হিজ রের্কড অফ মার্কস ইজ স্টিল আন ব্রোকেন ইন আওয়ার ডিপার্টমেন্ট।"
আকাশ নিজের কর্মক্ষেত্রের পরিচয়ও দেয়।
কেউ কেউ মন্তব্য করেন তার মতো ছাত্র ডিপার্টমেন্টে পেলে ভালো হতো।
তনুশ্বেতা তার আগের আচরনের জন্য আকাশের কাছে ক্ষমা চায়। এবং তার কোয়াটারে যাবার আমন্ত্রণ জানায়। আকাশ নিমরাজি হয়েও শ্বেতার সঙ্গে যায়।
কোয়াটারে বসার ঘরে বসে তার বিস্ময়ের অন্ত থাকে না ওদের চার মুর্তির বড়ো করে বাঁধানো ছবি বিরাজ করছে বসার ঘরের দেওয়ালে। বিরাট ভার্গব, কমলা নায়ার, তনুশ্বেতা দীক্ষিত ও সে অর্থাৎ আকাশ রায়।
"হ্যাড ইট নট বিন ক্যাপচারড বাই মেনন স্যার?" আকাশ ছবিটা দেখিয়ে বলে।
শ্বেতা সহমত হয়ে পুরনো দিনের গল্প শুরু করে।
আকাশ শ্বেতাকে তার বেটার হাফের সাথে মিট করাতে বললে সে জানায়
" আ্যম স্টিল আনম্যারেড, হোয়াই ডোন্ট ইউ ব্রিং ইয়োর ওয়াইফ।"
আকাশ কোনো উত্তর দেয় না কেবল হাঁসে।
শ্বেতার বাড়িতে লাঞ্চ করে বেরিয়ে যাবে এমন সময় ঘটল সেই ঐতিহাসিক ঘটনা।
ডোর বেল বাজতে শ্বেতা বলল, " প্লিজ স্কাই ওয়েট আ মিনিট।"
আর সঙ্গে যাকে নিয়ে ঢুকলো তাকে দেখে আকাশের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
এ কিভাবে সম্ভব!
"মিট মাই ফেভারিট স্টুডেন্ট মিস বিদিশা অ্যান্ড হ্যাজ দ্যা পোটেনশিয়াল টু ব্রেক ইয়োর রেকর্ড, বিদিশা দিস ইজ মিষ্টার স্কাই অফ হুম আই অফেন টেল ইউ।"
শ্বেতা পরিচয় করিয়ে দিলেও দুজনের মুখের অবস্থা দেখে কিছু একটা আঁচ কোরে জিজ্ঞাসা করে, "এনি ওয়ে ডু ইউ নো ইচ আদার?"
আকাশ বলে,"লাষ্ট মর্নিং সি ওয়াজ আ কো প্যাসেঞ্জার।"
শ্বেতা বলে, "সি ইজ ভেরি সাই অ্যান্ড ইন্ট্রোভার্ট।"
আকাশ মনে মনে ভাবে এ তো সম্পূর্ণ উল্টো বক্তব্য। এ বিষয়ে সে কিছু বলে না।
আরো কিছুক্ষন তিনজনে ডিপার্টমেন্টের গল্প করার পর আকাশ বিদায় নিতে চায়। শ্বেতা তাকে অনেক বার থেকে যাবার অনুরোধ করলে আকাশ জানায় যে সে কয়েক দিন কোম্পানির গেষ্ট হাউসে থাকবে এবং তার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
এই সময় বিদিশা ও চলে যেতে চাইলে শ্বেতা তাকে আকাশকে এগিয়ে দেবার জন্য বলে।
ফেরার সময় আকাশ বলে, "আমরা কি কোথাও একটু বসতে পারি?"
বিদিশা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
তারা একটা সাধারণ চায়ের দোকানে বসে।
আকাশ বলে, "একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবেন না।"
বি: "না না, বলুন কি জানতে চান?"
আ:"আপনার ম্যাম তো আপনার খুব প্রশংসা করছিলেন, কিন্তু আপনার আচরনে তো আমার তা মনে হয় না।"
বি:" তাই বুঝি! কি মনে হয় আপনার?"
আ: "না মানে, আপনি যেভাবে অপরিচিত জনের সাথে কথা বলেন তাতে তো আপনাকে লাজুক প্রকৃতির বলে মনে হয় না।"
বি: "বুঝলাম না, কে অপরিচিত?"
আ:"গতকাল আপনি যেভাবে কথা বলছিলেন, তাতে তো মনে হচ্ছিল যে আমি আপনার কত দিনের পরিচিত!"
বি:"হ্যাঁ, অনেক দিনের পরিচিতই তো, আপনার কত গল্প শুনেছি ম্যামের মুখে। ছবিতে তো দেখছিলাম, কাল দেখেই চিনেছিলাম।"
আ:"বলেন নি তো গতকাল।"
বি:" এতেই তো গায়ে পড়ে ভাবতে শুরু করে ছিলেন।"
আ: "আমি তো কিছুই জানতাম না, তাই ভাবনাটা কি দোষের!"
বি:"আহা হা আমি কি তাই বলেছি।"
আ: "জানেন কাল আপনার পরিচয় জানার জন্য কি না করেছি।"
বি: "তাই বুঝি। তা হঠাৎ আমার এতো সৌভাগ্য! অবশ্য কাল আপনি যেভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলেন, ভাবছিলাম আপনি বোধহয় আমাকে চেনেন।"
আ: "চিনতেই চেষ্টা করছিলাম!"
বি: "একটা কথা বলব?"
আ:"নিঃসংকোচে"
বি:"ম্যাম আপনাকে খুব পছন্দ করে।"
আ:"ম্যাম বুঝি আপনাকে বলেছেন!"
বি: "না না, আসলে মেয়েরা ঠিক বুঝতে পারে!"
আ: "তাই, তাহলে আমাকে দেখে বলুন তো কি বুঝছেন।"
বি:"শুনলে বৌদি রাগ করবেন।"
আ:"কে বৌদি!"
বি: "আপনার স্ত্রী, অফ কোর্স।"
আ:" ধুর সে সবের বালাই নেই।"
বি: "তাহলে আমার ধারনাই ঠিক বলুন!"
আ:"কি?"
বি: " আপনি এখনো ম্যমকে মানে..."
আ:"শ্বেতা কি তোমাদের মানে আপনাদের এই সব বলেছে বলেছ?"
বি: " না না, ডিপার্টমেন্টের স্যার, ম্যামদের নিয়ে গবেষণা চলে যে, সেখান থেকেই শুনছি। ,আর আপনি আমাকে তুমি করেই বলুন, বয়সে বেশ ছোট আমি।"
আ: "হ্যাঁ, তোমার অনেক সময় নষ্ট করলাম। বন্ধু নিশ্চয়ই রাগারাগি করবে!"
বি:"কে বন্ধু?"
আ: " যাকে বলে রুপে লক্ষী গুনে সরস্বতী, আর তার কোনো বিশেষ বন্ধু নেই বলতে চাও!"
বি:"আপনার গার্লফ্রেন্ড বুঝি এ খবরটা আপনাকে দিয়েছে?"
আ:"খবর দিতে হয় না, ছেলেদেরও মেয়ে দেখে বোঝার ক্ষমতা আছে!"
বি:"আপনি বুঝি অনেক মেয়ে দেখেছেন?"
আ:"এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না বি"
বি:"কেন 'এ' মশাই, আমার কি ভুল? আপনিই তো বয়ফ্রেন্ডের কথা তুললেন।"
আ:"সোজা কথায় বললেই হতো নেই!"
বি:" আমি বুঝি আপনাকে বাঁকা কথা শোনাচ্ছি?"
আ:"শোনাচ্ছেনই তো।"
বি:"সোজা করে নিলেই হল!"
আ: "কিভাবে?"
বি: "আমি কি জানি, আপনি কিভাবে...."
আ:"সোজা বাবার কাছে.... নাকি অন্য কোন শর্টকার্ট?"
বিদিশা লজ্জায় লাল হয়ে বলে, "জানি না যান"