ডঃ হরেন্দ্র কুমার মুখোপাধ্যায়
ডঃ হরেন্দ্র কুমার মুখোপাধ্যায়
প্রচণ্ড শীতে কুঁকড়ে যাচ্ছে ঘুমন্ত লিফটম্যানের শরীর,তিনি রাজ্যপাল দেখলেন সেই দৃশ্য৷ নিঃশব্দে চলে গেলেন স্যুইটে,তাঁর নিজের গরম শাল নিজের হাতে নিদ্রিত লিফটম্যানের গায়ে চাপিয়ে দিলেন৷ সঠিক অনুধাবন করেছেন,আমরা বলছি রাজ্যপাল হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায়ের কথা যিনি একমাত্র বাঙালি আমাদের রাজ্যে পূর্ণ সময় রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করেছেন৷
এই হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কিন্তু অভিযোগ উঠেছিল৷ কি সেই অভিযোগ? নিশ্চয়ই শোনাবো আপনাদের৷ রাজভবনে সব রকমের আরাম পাওয়া যাচ্ছে না,রাজ্যপাল হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায় সরকারের অর্থ বাঁচিয়ে সাধাসিধে ভাবে চলেন,আর দিল্লি থেকে আগত অতিথিদের আরাম-আয়েশে বেশ বিঘ্ন ঘটে,অভিযোগ গেল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কাছে,তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন হরেন্দ্রকুমারকে অন্য রাজ্যের রাজ্যপাল করে পাঠাবেন৷
হরেন্দ্রকুমার একটুও না ঘাবড়ে বলেছিলেন রাজ্যপাল হয়েও তাঁর নিজের যদি এই পরিবেশে থাকতে অসুবিধা না হয় তবে তাঁর অতিথিরা যত বড় মাপের ভি.আই.পি হোক তাদের এখানে থাকতে হবে, তিনি নিশ্চয়ই রাজভবনের ধুলো-মাটিতে থাকেন না,তবে রাজভবন ফাইভ স্টার হোটেল হবে না৷
রাজ্যপালের কড়া নির্দেশ ছিল গরিব দেশের টাকায় রাজভবনের দামী-দামী পর্দা,ফার্নিচার এসব দু'দিন অন্তর বাতিল করা চলবে না,তাতে কারও রাগ হলে দরকারে তিনি রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দেবেন৷
পাঠক হয়ত শুনলে অবাক হবেন সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ করে তিনি সেইসময় রাজ্যপালের ফাণ্ডে আট লক্ষ টাকা জমিয়েছিলেন (১লা নভেম্বর ১৯৫১থেকে ৮আগস্ট ১৯৫৬ ) আজকের দিনে পাটিগণিতের হিসেবে ওই টাকার মূল্য খুব বোধহয় কম নয়! হয়ত তাঁর জন্য গর্বিত সেদিনের মানুষরা,যারা তাকে দেখেছেন,অথবা তাঁর গল্প শুনেছেন বাড়ির বড়দের কাছে৷ খুব সত্যি বলতে সাদাসিদে,অমায়িক মানুষ বললে একটু কম বলা হয় রাজ্যপাল হরেন্দ্রকুমার সম্পর্কে৷
কলকাতায় সেদিন প্রচণ্ড শীত,লাটবাড়ির লিফটম্যান ক্ষীনজীবী উড়িষ্যাবাসী অলোক রাউত পড়েছেন বেশ বড় একটা বিপদে,তাঁর চিন্তা হাড়কাপানো শীতে তিনি কিভাবে সারারাত ডিউটি করবেন! সমস্যা হল রাজ্যপাল যে সকাল পাঁচটার সময় লাঠি হাতে এ-ডি-সি ছাড়া প্রাঃতভ্রমণে বের হবেন, অথচ অলোক রাউত কে যে সারারাত লিফটে ডিউটি করতে হবে৷
লিফটম্যানের উর্দি পরে তিনতলায় রাজ্যপালের স্যুইটের সামনে ভোরের জন্য লিফট আটকে রেখে লিফটের পাশের শ্বেত পাথরের কনকনে ঠাণ্ডা বারান্দায় কখন অলোক রাউত কুঁকড়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন,মাঝে-মাঝে অবশ্য শীতের অস্বস্তিতে সমস্ত শরীরটা টানটান হয়ে যাচ্ছে,কুঁকড়ে যাচ্ছে৷ এই দৃশ্য চোখে পড়ল খোদ রাজ্যপালের,তিনি নিঃশব্দে নিজের স্যুইটে আস্তে-আস্তে চলে গেলেন,নিয়ে এলেন নিজের একটা গরম শাল,নিদ্রিত লিফটম্যানের গায়ের ওপর চাপিয়ে দিলেন৷ নিজে লিফটের সুইচ অন করে নীচে প্রাতঃভ্রমণে চলে গেলেন৷
রাজভবনের বারান্দায় রোদ্দুর এসেছে,ঘুম ভাঙল অলোক রাউতের,দেখেন তাঁর গায়ে দামী শাল,অথচ সামনে লিফটের খাঁচা নেই৷ কিছুটা হতভম্ব ভদ্রলোক,এরপর আরও অবাক হওয়ার পালা দেখলেন রাজ্যপাল স্বয়ং নিজে লিফট চালিয়ে ওপরে উঠে গেলেন,সঙ্গে এ.ডি.সি বা অন্য কেউ নেই৷ নিজের ভুল বুঝতে পেরে লাট সাহেবের পা জড়িয়ে ধরতে সৌম্যমূর্তি হরেন্দ্রকুমার তার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলেছিলেন তুমি আমি একই ভাই ৷ মনে কর বড় ভাই ছোট ভাই কে এই শাল উপহার দিয়েছে,তুমি ওটা পরো,ওটা তোমাকে দিলাম৷
৮ নভেম্বর ১৯৫৩,ব্যারাকপুরের লাটবাগানে শীতের পরশ,আগের দিন লাটবাগানের ফ্লাগস্টাফ হাউসে উঠেছেন রাজ্যপাল, সঙ্গে এ.ডি.সি.ক্যাপ্টেন এস ব্যানার্জি ও সিকিউরিটি ইনসপেক্টর তিনকড়ি মুখার্জি৷ অতি প্রত্যূষে কাউকে না জানিয়ে গায়ে চাদর চাপিয়ে সঙ্গের লাঠি নিয়ে বাংলোর সংলগ্ন টি.বি.হাসপাতালে হরেন্দ্রকুমার হাজির৷ হাসপাতালে প্রায় কেউ তাকে চেনেন না,আর তাঁর সঙ্গেও কেউ নেই৷ সোজা ঢুকে গেলেন রোগীদের ঘরে,দেখেন জলের কুঁজো গড়াগড়ি খাচ্ছে মাটিতে,নার্স-ডাক্তার কেউ নেই৷ কয়েকজন রোগীর সাথে তিনি কথা বলে সোজা গেলেন স্টাফ নার্সের ঘরে,নিজের পরিচয় দিলেন৷ রাগে তিনি কাঁপছেন৷
পুলিশের আই.জি.তখন হরিসাধন ঘোষ চৌধুরী৷ হরেন্দ্রকুমার ফোনে তাকে ডেকে নিলেন ব্যারাকপুরে৷ রাগতভাবে বললেন আমি টিবি ফাণ্ডের জন্য ব্যবসায়ী সাহেব-সুবোর কাছে টাকা ভিক্ষে করে আনছি আর নবাব ডাক্তার,নার্সরা রোগীদের একটু খাবার জলের ব্যবস্থা করে না! এরা ভেবেছে কী! বলা বাহুল্য টি.বি.তখন মারণ রোগ হিসেবে যতেষ্ট খ্যাত,এমন কি টি.বি. রোগীদের থেকে সাত হাত দূরে থাকা শ্রেয় মনে করতেন সাধারণ মানুষ৷
একবার হল কি স্বয়ং রাজ্যপাল রাজভবনের সব কর্মীকে ডাকলেন কার্ড দিয়ে চায়ের নিমন্ত্রন করলেন রাজভবনের ব্যানকোয়েট হলে৷ কর্মীরা জানে এই রাজ্যপাল ডেকে চা খাইয়ে টি.বি. ফাণ্ডের টাকা তোলেন,এবার কি তাদের পালা! চায়ের পর্ব শেষ হল,নিজের চেয়ার ছেড়ে প্রতি জনের কাছে অনুনয়ের সুরে বললেন আপনারা রাজভবনের কর্মচারী,আমি আপনাদের দরিদ্র রাজ্যপাল আপনারা যদি অফিসের ছুটির পরে টি.বি. ফাণ্ডের খাতা-পত্তরগুলি দেখে দেন তাহলে এগুলি মেনটেন করার জন্য তাঁর আলাদা লোক ও অর্থের দরকার হবে না,সেই টাকা দিয়ে রোগীদের কিছু ফল,ওষুধ কিনে দেওয়া যাবে৷ সবার মাথা নীচু হল শ্রদ্ধায়,কারণ রাজ্যপাল হিসেবে তখন তিনি নিজে পাঁচ হাজার বেতন পেলেও নিতেন মাত্র পাঁচশো টাকা,বাকি টাকাটা দুঃস্থ বিধবাদের অথবা শিক্ষাখাতে কিংবা টি.বি ফাণ্ডে দিয়ে দিতেন৷
কেবলমাত্র পূর্ণ সময়ের একমাত্র বাঙালি রাজ্যপাল হিসেবে নয়, মেধাবী বঙ্গসন্তান হরেন মুখার্জি ইংরেজিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ডক্টরেট,বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পদে ছিলেন৷ দাদাঠাকুরের সাথে তাঁর সখ্য সর্বজনবিদিত৷ দয়ালু মানুষ হরেন্দ্র মুখার্জি নিজের সব সঞ্চয় দান করে দিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে।
হরেন্দ্র কুমার মুখার্জি বা হরেন্দ্র কুমার মুখোপাধ্যায় (৩ অক্টোবর, ১৮৮৭- ৭ আগস্ট, ১৯৫৬) যিনি এইচ সি মুখার্জি নামেও পরিচিত, ছিলেন ভারত ভাগ হওয়ার পূর্বে ভারতীয় সংবিধান-এর খসড়া রচনার জন্যে ভারতীয় সংবিধান রচনা পর্ষদ-এর তিনি ছিলেন সহ-সভাপতি; এবং ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হয়ে ভারত প্রজাতন্ত্র হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের প্রথম রাজ্যপাল।
হরেন্দ্র কুমার মুখার্জি একজন শিক্ষাসংস্কারক ছিলেন, বাংলার বিশিষ্ট খ্রিস্টান নেতা, এবং সংখ্যালঘু অধিকার কমিটির সভাপতি এবং সংবিধান রচনা পর্ষদের রাজ্য সংবিধান কমিটি--ভারতীয় সংবিধানের খসড়া রচনার জন্যে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত, সেই সঙ্গে বর্তমান পাকিস্তান-এর অঙ্গরাজ্য এবং বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান)--সংবিধান শুধুমাত্র মুসলমান এবং শিখদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে মান্যতা দেয়—ভারত প্রজাতন্ত্র হওয়ার পর, ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে এই একই সংবিধান রচনা পর্ষদ প্রথম ভারতের সংসদ হিসেবে পরিগণিত হয়।
হরেন্দ্র কুমার মুখার্জি বঙ্গদেশের কলকাতায় সম্ভ্রান্ত বাঙালি ক্রিশ্চিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম লালচাঁদ মুখোপাধ্যায়। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রিপন কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে রিপন কলেজ থেকে এফ.এ এবং ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ইংরাজীতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এ পাশ করেন। এরপর সিটি কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা ও বরিশাল রাজচন্দ্র কলেজ ও কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংরাজীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় হিসাবে পিএইচডি লাভ করেন। তিনি একজন মানবহিতৈষী এবং শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বহু পদ অলংকৃত করেছেন--অধ্যাপক হিসেবে, সম্পাদক, স্নাতকোত্তর শিক্ষক সংসদ, কলাবিভাগ, কলেজ পরিদর্শক, ১৯৩৬ থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত ইংরেজি প্রফেসর, এবং ইংরেজি বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে 'বঙ্গীয় বিধান পরিষদ'-এ মনোনীত হন এবং 'বঙ্গীয় বিধানসভা'য় নির্বাচিত হন।
যখন তিনি সংবিধান রচনা পর্ষদের সহ-সভাপতি ছিলেন এবং সংখ্যালঘু সাব-কমিটি ও প্রাদেশিক সংবিধান কমিটির সভাপতি ছিলেন, তিনি সংখ্যালঘুদের উন্নতিসাধনে রাজনীতি সমেত সব ক্ষেত্রে সংরক্ষণের পরামর্শ দিতে শুরু করেন। ভারত বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার মনোভাব বদল করেন এবং এটা সংখ্যালঘুদের ভাষা ও সংস্কৃতির রক্ষণের সংস্থানের দিকে সীমাবদ্ধ রাখেন--এই পর্যায়ে, এই অবস্থান মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশদায়িত করেন।[
সংবিধান রচনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর, ড. মুখার্জি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন, ১ নভেম্বর ১৯৫১ থেকে ৭ অগস্ট ১৯৫৬ পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। বঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন সময়ে, ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি 'দেশবন্ধু মেমোরিয়াল সোসাইটি'র সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন। শিক্ষকসুলভ অনাড়ম্বর জীবনযাত্রার জন্য রাজ্যপাল থাকাকালে জনসাধারণের শ্রদ্ধাভাজন হন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অগস্ট কলকাতা কার্যালয়ে তার দেহাবসান হয়।
হরেন্দ্র কুমার মুখার্জি বঙ্গে খ্রিস্টানদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এবং জাতীয় রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণের পর, তিনি 'সর্ব ভারতীয় খ্রিস্টান পর্ষদে'র সভাপতি নির্বাচিত হন, তিনি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ছাড়াও সর্বভারতীয় খ্রিস্টানদের প্রতিনিধি ছিলেন।
তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর সদস্যও ছিলেন এবং বঙ্গ খ্রিস্টান গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন।He confessed to his community as:
We have to demonstrate by every word we utter and by every act we perform that the professing of a different religious faith has not tended in the least to make us less Indian in our outlook than our non-Christian brethren, that we are prepared to play our part and to shoulder our share of the responsibility in every kind of work undertaken for the benefit of our country as a whole.
তার গোষ্ঠীর কাছে তার স্বীকারোক্তি:
আমাদের প্রত্যেকটা শব্দ উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে প্রদর্শন করতে হবে এবং প্রত্যেকটা কাজের দ্বারা আমরা সম্পাদন করি, বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসে চালিত হওয়া, যেন আমাদের ধারণা না-হয় যে আমাদের অ-খ্রিস্টান ভাইদের চেয়ে আমরা কম ভারতীয়, সাকুল্যে দেশের কল্যাণে যেকোনো রকমের কাজের ভার নিয়ে আমাদের জন্যে বরাদ্দ কাজের দায়িত্ব কাঁধে নিতে আমরা প্রস্তুত।
সবশেষে আর একটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করলে রাজপাল ডঃহরেন্দ্র কুমার মুখার্জীর জীবনের একটি মহান দিক আমাদের অজানা থেকে যাবে! জানতে পারব না আমাদের দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির সেই ঐতিহাসিক দিনটার কথা!
প্রথম রাষ্ট্রপতি বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ একবার কলকাতা সফরে আসেন! তখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন ডঃ হরেন্দ্র কুমার মুখার্জী! রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর জন্য নিয়ম অনুয়াযী দমদম বিমানবন্দরে সেদিন হাজির রাজ্যপাল, হরেন্দ্র কুমার মুখার্জি! বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষার পর রাষ্ট্রপতির বিমান দমদমের মাটি ছুঁলো! অবতরণের পর প্রটোকল মেনে রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের দিকে এগিযে গেলেন রাজ্যপাল হরেন্দ্রকুমার মুখার্জী! দেখা গেল রাজ্যপাল করমর্দনের জন্য রাষ্ট্রপতির দিকে হাত বাড়িযে দিলেন! কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাষ্ট্রপতি করমর্দনের পরিবর্তে নত হয়ে রাজ্যপালের পা ছুঁযে প্রণাম করলেন! রাজ্যপাল হরেন্দ্র কুমার মুখার্জি আপ্লুত হয়ে তাঁর প্রিয় ছাত্র রাজেন্দ্র প্রসাদকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন! বিমানবন্দরে তখন উপস্থিত মন্ত্রী, আধিকারিক, সাংবাদিকরা সেই প্রটোকল ভাঙার দৃশ্য দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে হতচকিত হয়ে যান! দেশের রাষ্ট্রপতি মাথা নত করছেন একটি রাজ্যের রাজ্যপালের পায়ে! এ দৃশ্য তারা কোনওদিনও দেখেননি! পরে জানা গিয়েছিল হরেন্দ্র কুমার মুখার্জী যখন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন, তখন বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ ছিলেন তাঁর অন্যতম প্রিয় ছাত্র! তাই গুরু হরেন্দ্র কুমার মুখার্জীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু জানাতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠা করেননি রাষ্ট্রপতি বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ!!
ভাবলে গর্বে বুক ফুলে ওঠে এইভেবে যে, কলকাতার এই রাজভবনে রাজ্যপাল হিসাবে ডঃ হরেন্দ্র কুমার মুখার্জীর মত একজন মহান, উচ্চ শিক্ষিত, সৎ, মহৎপ্রাণ মানুষের অধিষ্ঠান ঘটেছিল!!
আত্মবিস্মৃত বাঙালি যেন ভুলে না যায় পরম শ্রদ্ধেয় এই মানুষকে৷
তথ্য : আন্তর্জাল,কলকাতা রাজভবনের অন্দরমহল,অমিয় রায়, উইকিপেডিয়া ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকা।
