দৌড়
দৌড়
"দৌড়"
অন ইয়োর মার্ক, সেট—
(সেট বলার পরেই একটা গুলির আওয়াজ)
রেস ট্র্যাকে দৌড়োচ্ছে রতনপুরের চন্দ্রা। এই দৌড়ে ওকে প্রথম হতেই হবে, তবেই না সামনে আরও সুযোগ আসবে, তবেই না ওদের গরিব ঘরে দু'মুঠো খাওয়া-পরার অভাব হবে না, তবেই না গ্রামের মহাজনের ঋণ শোধ করতে পারবে, তবেই না...
অনেক যুদ্ধ, লড়াই করে ও এখানে এসে পৌঁছেছে। আশেপাশের লোকের বিদ্রুপ, ট্রেনারের শ্লীলতাহানি সমস্ত কিছু পেরিয়ে চন্দ্রা আজ আন্তর্জাতিক দৌড় প্রতিযোগিতার ময়দানে। অবশ্য প্রথমে এই দৌড় ওর ভালো লাগতো না, খালি পেটে দৌড়াতে কার ভালো লাগে! কিন্তু ভালো না লেগে যে উপায় নেই; জিততে পারলেই টাকা, সংসারে সচ্ছলতা, দেশ-বিদেশ থেকে সম্বর্ধনা, খবরের কাগজে ছবি, ইন্টারভিউ, আরও কত কী! শেষে এটাই হয়ে উঠলো চন্দ্রার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান, ভালোবাসা, কঠিন জেদ। পেটে খিদে নিয়ে হলেও দৌড়াতো, থামতো না, ভোরে উঠে বাড়ির কাজ-কাম সেরে চলে যেত গ্রামের খেলার মাঠে, তারপর ওখানেই খালি পায়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র্যাক্টিস। এরপর জাতীয় স্তরে যোগ্যতা অর্জন, শহরে গিয়ে কোচের কাছে ট্রেনিং, নতুন স্পোর্টস শু, ট্র্যাকস্যুট ইত্যাদি।
ফিনিশিং লাইন ছোঁয়ার সাথে সাথেই উত্তেজিত গ্রামবাসীর কোলাহল, আনন্দ, চারিদিকে জয়জয়কার…পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে তাদের গ্রামের গর্ব চন্দ্রা বিশ্বাস। ফার্স্ট প্রাইজ় সোনার মেডেল জিতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওর চোখের কোণে জল। উড়ছে তিরঙ্গা, বাজছে "জন গণ মন অধিনায়ক…"