"ভার্চুয়াল"
"ভার্চুয়াল"


অবসর সময়ে ফেসবুকে থাকাটা সুমনার অভ্যাস।কলেজে লেকচার দিয়ে,মেয়ের পড়াশুনো দেখে,বরের খিদমত,সংসারে সময় দিয়ে ভার্চুয়াল জগত তার এন্টারটেইনমেন্ট।তা বলে চ্যাটিং এ নয়,নিজের লেখা কবিতা শেয়ার করে,সবার মতামত তাকে সমৃদ্ধ করে।অনেকে বলে পত্রপত্রিকায় দিতে,দেয় টুকটাক,তবে ফেবু কবিতেই স্বাচ্ছন্দ বেশি।বেশ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়,,দেখতে বেশ সুন্দরী হওয়ায় ইনবক্স প্রেমের ঝামেলা তো আছেই।তবু জুকুদাদার কাছে এই অ্যাপের জন্য কৃতজ্ঞ!হাজারো ফলোয়ার আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট তো আছেই।আজ বেশ চেনা চেনা একজন সুপ্রতীক রায় এর রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেছে।ঝকঝকে প্রোফাইলের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার!খুব একটা প্রথমে পাত্তা না দিলেও তারপর কেমন যেন চ্যাটিং এ জড়িয়ে পড়ে,,না চাইতেও।কথায় কথায় জানে দুজনে একশহরেই থাকে।আর সুমনার বাবাকেও চেনে,আগে তাদের বাড়ীতেও গেছে,সুমনার মনে পড়ে না। সুপ্রতীক এর সুখদুখের কথা শোনে।বন্ধুর মত উপদেশ দেয়।সুপ্রতীক এর স্ত্রীর সাথে বনিবনা নেই,মেয়ের স্বার্থে এক ছাদের তলায় থাকে,সুমনা মেয়ে বর নিয়ে সুখী সংসারী।স্বামী স্ত্রীর বন্ডিং বেশ ভাল।তাই সুপ্রতীককে সে বন্ধুই ভাবে।ওদিকে সুপ্রতীক এর শূন্য জীবনে সুমনাকে ভালবাসার জায়গা দিয়ে ফেলে।সুমনাই যেন তার একমাত্র অবলম্বন।পাগলের অবস্থা তার।বোঝায় অনেক তাকে সুমনা।তবে যাকিছু সবই ভার্চুয়াল।সুপ্রতীক কোনদিনই সুমনাকে বিপদে ফেলে তার ভালবাসাকে এক্সপ্লয়েড করে নি।দুএকবার দেখা করতে চাইলেও সুমনার আপত্তিতে জোর করে নি।কেমন মায়ায় জড়িয়ে যায় ক্রমশ সুমনা।সেইদিন সকাল থেকে কোন চ্যাট নেই সুপ্রতীকের।এমন কোন কান্ড ঘটবে তা সুমনা স্বপ্নেও ভাবেনি।একটা এস এম এস এল সুপ্রতীকের।সন্ধ্যা পৌনে সাতটা,তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে,দশমিনিটের মধ্যে!পাগল নাকি?এখন অসম্ভব,সুপ্রতীক বলে আসবে না তো?শুধু আমার বাড়ীর গলিটাতে একবার তোমায় দেখব!প্লিজ,সুমনা !",নেট অফ করে দেয় সুমনা,,আধঘন্টা পর অন করে,না অনেকক্ষন নেট অফ করেছে,,কি এক আকর্ষনে
সুমনা স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে,মেয়েকে বলে যায় একটা নোট জেরক্স করতে যাচ্ছে।সোজা সুপ্রতীকের বাড়ীর গলি,অনেক লোকের জটলা,একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে,একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই বলল,সুপ্রতীক হাতে ব্লেড চালিয়েছে,হতবম্ব সুমনা,দূরে দাঁড়িয়ে থাকে,অচৈতন্য সুপ্রতীককে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হসপিটালে নিয়ে যায়।সুমনাও পিছনে যায়,দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখতে থাকে,তার কি দোষ?বুঝতে পারে না।ডাক্তার দেখে,বলে বিপদ কেটে গেছে!আস্তে আস্তে জ্ঞান ফেরে
ওর চোখ চারদিকে কাউকে খোঁজে,,ইতিমধ্যে ওর স্ত্রী আর মেয়ে এসে গেছে,স্ত্রী সুপ্রতীকের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দীর্ঘ পাঁচ বছরের ইগো ছেড়ে!মেয়েও জড়িয়ে ধরে বাবাকে।এতক্ষণ ঘোরে ছিল সুমনা ফোনের রিংটোনে ঘোর কাটে,,কতগুলো মিসকল মেয়ে,আর মেয়ের বাবার,মেয়ের ফোন ধরে বলে,আসছি সোনা,সোমা আন্টির বাড়ীতে ছিলাম,দেখা হল রাস্তায়,,টেনে নিয়ে গেল!মিথ্যে বলে,ফোন কেটে আবার দেখে ওদের তিনজনকে,চোখ ছাপিয়ে জল,আনন্দে না কষ্টে বুঝতে পারে না!মন থেকে বলে,"ভাল থেকো সুপ্রতীক!" স্কুটিতে স্টার্ট দেয় সুমনা!