STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Inspirational

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Inspirational

ভালোবাসার জন

ভালোবাসার জন

6 mins
532

কয়েকদিন পরে পুজো, সবাই পূজার কেনাকাটায় ব্যস্ত - কে কিরকম ড্রেস পরবে তার গবেষণায় ব্যস্ত প্রায় সবাই। হাজার একটা কষ্ট তো আছেই বছর ভর - কিন্তু পুজোর এই চারটে দিন একদম অন্য রকম, সর্বস্বান্ত মানুষও চেষ্টা করে তার মত করে পুজোর ৪টি দিনকে উপভোগ করে, আশা করে আগামী বছরটা ভালো কাটুক। স্বজন হারানোর ব্যথা ভুলেও মানুষ এই চারটে দিন আশায় বুক বাঁধে এবং আনন্দে সামিল হয়।

-- আঃ মা বৌদির জন্য ওটা নয় | ওই যে হালকা আকাশীটা - পাশেই , দেখো ! কি যে করো না , লালটা আমার | দশমীতে পরবো |

কি ? কেমন ?

তন্দ্রার কোনো কথাই তাপসীর কান অবধি পৌঁছোয়না |

এক বছর হলো ছেলেটা আর নেই | এতো দূরে চলে গেলো , যেখান থেকে কোনো ফেরার রাস্তা হয়না | কেন যে সেদিন সোনাইকে যেতে দিলো | আজও ভাবলে বুকের ভেতরটা খান খান হয়ে যায় |

চোখের সামনে এখনও ও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ওই তো বাইকটা স্টার্ট দিলো সোনাই |

--সাবধানে ..|-- হ্যাঁ হ্যাঁ মা | অত চিন্তা করোনা |  

দীপাবলীর দিকে কি যেন ইশারা করলো আড়চোখে | তাপসী আর বারান্দায় দাঁড়ায় না ভেতরে চলে আসে |

ঘামে ভিজে যায় তাপসী সমাদ্দার | ঝাপসা চোখে হাতটা বাড়িয়ে দেন ফাঁকা হাওয়ায় | হঠাৎ শরীরটা কেমন খারাপ লাগে ওর | তন্দ্রা পাশ থেকে বকেই যাচ্ছে তখনও |

মা , জলটা খাও | অভিব্যক্তিহীন দুটো চোখ | দীপা ঠান্ডা জলটা ওর শাশুড়ির দিকে বাড়িয়ে দেয় | থতমত খায় তন্দ্রা | কি জানি শাড়ীগুলোর কথা শুনে ফেললো নাকি | আর ফেললেই বা কি ! ভুল তো কিছু বলেনি | মা বোঝে কম বলেই ওভাবে বলতে হলো | 


রাস্তাজুড়ে কত আলোর খেলা | কোনটা নিভছে কোনটা জ্বলছে | ওদিকে সানাই , পুরোনো দিনের গানে যেন উপচে পরা সুখ | দীপাবলী বাইরের বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে | লাল হলুদ নীল সবুজ শাড়ী জামাকাপড় পরা উজ্বল হাসি মুখগুলো ওর সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে আসছে | হাত ধরে এগিয়ে চলেছে কত স্বপ্ন | মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি , দেবী বন্দনা চলছে চারদিকে | বারান্দার গ্রিলে মাথা রাখে দীপাবলী | 


*******

-- এই তুমি কাঁদছো ? পাগলী একটা | আরে বোকা ফোনটায় একটুও চার্জ ছিল না , এই দেখো |

কাছে টেনে নেয় অরুনাভ ওকে |নিজের ঠোঁটে ডুবিয়ে নেয় অভিমানী ঠোঁট | দীপা আষ্টেপিষ্ঠে বেঁধে নেয় অরুনাভকে | হঠাৎ চমকে ওঠে দীপা | স্পষ্ট উপলব্ধি করে ওর ঠোঁটদুটোয় এখনো অরুনাভর স্পর্শ বর্তমান | চারিদিকে এলোমেলোভাবে খোঁজে অরুনাভকে | কোথাও নেই , কোত্থাও তো নেই | দু হাত দিয়ে নিজের মুখটা চেপে ধরে | দলা দলা বেয়ে ওঠা কান্নাগুলো আপ্রাণ গিলতে চেষ্টা করে |

******* 

তন্দ্রারা পঞ্চমী থেকে বাপের বাড়ি | স্বামী ছেলেকে নিয়ে কলকাতার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঠাকুর দেখতে বেরোচ্ছে প্রতিদিন | দীপাবলী হাতের কাছে সবসময়ই এটা সেটা যোগান দেওয়ার চেষ্টা করছে আপ্রাণ | --- মা , আজ নবমী | চলোনা আশেপাশে একটু ঠাকুর দেখে আসবে | তোমার ছেলের বৌকে বলা না বলা তো সমান | সে তো অর্ধেক কথার উত্তরই দেয় না | তুমি তো চলো | 


তাপসী মেয়ের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দেয় |

-- তোরা যা , আমার শরীরটা ঠিক নেই , আমি ঘরেই ঠিক আছি |

******দশমীর সকালেই তাপসী কোথায় যেন বেরিয়ে গেলো | হাজার অহেতুক প্রশ্ন শোনা , করা দীপার স্বভাবে নেই | শুধু জিজ্ঞাসা করে ..--- তুমি কি পারবে ? না আমি সঙ্গে যাবো ?--- আমি পারবো | কাউকে যেতে হবে না |*******

গলির সামনে দিয়ে পাশের বাড়ির বৌদি , মুখার্জি গিন্নি , স্যান্নাল কাকিমা সবাই কেমন মুখ রাঙিয়ে বাড়ি ফিরছে | দীপা হাঁ করে ওদের আড়াল থেকে দেখে |-- আঃ , ছাড়ো তো |-- আবার ! আবার বিরক্ত হচ্ছো ? ওরে যেদিন থাকবো না সেদিন বুঝবে স্বামী সোহাগ কাকে বলে | -- থামো | খালি ন্যাকা ন্যাকা ফুটেজ খাওয়ার চেষ্টা |

-- ম ম ম ম .. না , থামবোনা | এমন আদুরে সিঁদুরে মাখা মুখটা করে রেখেছো কিছুতেই থামা যাবে না | শাড়ীর পাশ কাটিয়ে অরুনাভ দীপাবলীকে ছুঁয়ে দেয় গভীরে |চোখ ভরে ওঠে মেয়েটার |-- দীপা আসবো রে ?-- হ্যাঁ মা | জিজ্ঞাসা কেন করছো !কাগজের ব্যাগ থেকে লাল একটা শাড়ী বার করে উষসী |-- দেখ তো , শাড়ীটা তোর পছন্দ হয়েছে ?-- হ্যাঁ মা | তন্দ্রাকে খুব মানাবে |-- এটা তন্দ্রার নয় , তোর | তাড়াতাড়ি পরে নিচে আয় | ওদিকে ভিড় বাড়বে যত দেরি হবে | আমি বেশিক্ষন দাঁড়াতে পারিনা তো | দীপাবলী অবাক দৃষ্টিতে ওর শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে |

-- ওরে বোকা তুই কি আমার মেয়ে না ? তন্দ্রা কি আমার একটা মেয়ে ? কেন বুঝিস না তুই ভালো না থাকলে আমি বাঁচি কি নিয়ে ? ছেলেটা তো চলে গেলো , কিছুতেই আটকাতে পারলাম না | তুই তো একটু বাঁচ | চল শিগগির | আমি বরণের থালা গুছিয়ে রেখেছি | লাল শাড়ীটা পরেই মা কে বরণ করতে যাবি | -- না মা | এসব কি বলছো ? তাছাড়া পাঁচজন লোক দেখলে তাঁরা কি বলবে ?-- পাঁচজন লোক আমায় দেখে না দীপা | তাদের মুখ চেয়ে আমার বাকি জীবন আমি বেঁচে থাকবো না | শুধু তোর জন্য মা রে | আর কোনো কথা নয় |তুমি তৈরী হয়ে নিচে নামো | আমি , তন্দ্রা তোমার সাথে যাবো | দেখি আমার ছেলেমেয়েকে কে কি বলে |অরুনাভ চলে যাওয়ার পর দীপাবলীকে ওর মা , বাবা , দাদা নিতে আসেন | ও যায়নি | সন্তানহারা মা কে ফেলে কোথায় গিয়ে ও সুখে থাকতো ! সে ও যে অর্ধেক মরেই বেঁচে আছে | দীপার এতবড়ো আত্মত্যাগ তাপসী ভাবতেও পারেনি | নিজের মেয়েরই এতো বড়ো মন সে তৈরী করতে পারেনি | অথচ তার ছেলের বৌ তাকে উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটা দিন | ঈশ্বর সবটা তো কেড়ে নেয়নি যতটা সে পেয়েছে ততটা রঙিন করে রাখতেই হবে |

মিনিট পনেরো পরে বাড়ি থেকে ওরা তিনজনে বেরোয় | সামনে তন্দ্রা , দীপাবলী আর তার ঠিক পেছনেই তাপসীদেবী | ওদিকে বরণ শুরু হয় |

দীপা যখন ফিরে আসে ওর দু গালে লালের ছোঁয়া | অরুনাভর ছবিটার সামনে মেয়েটা এসে দাঁড়ায় | -- কোথায় তুমি ? ছুঁয়ে দাও একবার আমায় |

চোখ বুজে আছে দীপাবলী |

বাইরে ঢাক বাজছে , মায়ের বরণ বুঝি শেষ হলো ||


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational