STORYMIRROR

Sanjana Soma Guha

Drama Romance Inspirational

3  

Sanjana Soma Guha

Drama Romance Inspirational

ভালোবাসা কারে কয়

ভালোবাসা কারে কয়

12 mins
252

অয়নের কথা

আজও মনে পরে ছ'মাস আগের সে সন্ধ্যাটার কথা। অফিস থেকে ফিরে দেখি দাদাভাই আমার আগে বাড়ি পৌছে গিয়েছে। খুবই রেয়ার একটা ব্যাপার, কিন্তু ব্যাপারটা ঘটেছে। দাদাভাই শুধু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফেরেইনি বরং ফিরে ঠাম্মুর সঙ্গে বেশ খোশ মেজাজে গল্প জুড়েছে। এই দৃশ্য এত বছর পর দেখলাম যে মনে হল যেন আগের জন্মের কোন ঘটনার আবার করে দেখছি।

গল্পটা আর একটু আগে নিয়ে যাওয়ার আগে ছোট্ট করে আমাদের একটু ভূমিকা দিয়ে দি।আমি অয়ন গাঙ্গুলী, আর আমার দাদা উজান গাঙ্গুলী। Ganguly Group of Companies –এর নাম যারা শুনেছেন তারা আমাদের সফল ব্যবসায়ী হিসাবে ভালো করেই চেনে। ব্যবসাটা শুরু করে আমাদের ঠাকুরদা অমরনাথ গাঙ্গুলী, সাইকেলের টায়ার বানানো দিয়ে ব্যবসা শুরু হলেও তা এখন কন্সট্রাকস্‌ন থেকে ইভেন্টম্যাঞ্জমেন্ট সব জায়গায় শাখা-প্রশাখা মেলেছে। Credit goes to Ujaan Ganguly, my brother.


না, একটুও বারিয়ে বলছি না। বাবার হাত থেকে যখন ব্যবসা দাদাভাইয়ের হাতে আসে তখন বাবা ও ব্যবসা দুই গলা অব্দি দেনায় ডুবে। আসলে আমার বাবা আমার ঠাকুরদার ঠিক উল্টো ছিল। আমার ঠাকুরদা যতটা সংযমী ছিল বাবা ছিল ততটাই উচ্ছৃঙ্খল। তাই আয়ের চেয়ে ব্যয় হত বেশি, তাছাড়া বাবার অনেক বাজে নেশাও ছিল, সঙ্গে ছিল উল্টোপাল্টা জায়গায় যাতায়াতের অভ্যাস। Scandal-শব্দটা, Mr. Biswajit Ganguly-র নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছিল। তাই ব্যবসা এবং বাবার ডুবতে বেশি সময় লাগল না। সময় এমন এল যে ব্যবসা বেচে দিতে হয়। আমার ঠাকুরদার কষ্ট করে গড়ে তোলা ব্যবসা বেচে দিতে হবে ভেবেই কেমন লাগছিল। ঠিক এমন সময় দাদাভাই, এমবিএ পড়া শেষ করে ব্যবসার হাল ধরে। অনেক বড় বড় কোম্পানির অফার ছিল ওর কাছে, ও যায় নি। দুই বছর পর আমিও যোগ দি। আর আট বছরের চেষ্টায় দাদাভাই একটা ছোট্ট ব্যবসা কে Ganguly Group of Companies-এপরিণত করল।


কিন্তু আমার একটা কথা মাঝে মাঝেই মনে হয় দাদাভাইয়ের personal life-টা ঘাটা বলেই বোধহয় ওর professional life-এ এতটা উন্নতি করতে পেরেছে। কারন কাজটা দাদাভাইয়ের কাছে escape route.

যাই হোক সেইদিন ঠাম্মু আর দাদাকে খোশমেজাজে গল্প করতে দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। মনে কোন প্রশ্ন এলো না।

          *               *                  *

কিন্তু এর কিছুদিন পরে যখন দাদাভাই নিজে আমার কেবিনে এসে বলল, "কি এত কাজ করছিস বলতো সকাল থেকে, চল্‌ আজ একসঙ্গে লাঞ্চ সেরে আসি," তখন আমার বেশ সন্দেহ হল। দাদাভাই আমার সঙ্গে লাঞ্চে যাবে, তাও আবার office hours-এ, এত আমার কল্পনারও বাইরে। যাইহোক আমি আর কিছু বললামনা রাজি হয়ে গেলাম।

*              *          *

লাঞ্চ করতে করতে আর থাকতে পারলাম না, দাদাভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুই ঠিক আছিস তো?" দাদাভাই কিছুটা চিকেন স্যালাড মুখে পুরে একটু হেসে বলল, "কেন আমার কি হবে?" আমি বললাম, "সে জানি না, কিন্তু ক'দিন ধরে তোকে কেমন অন্যরকম লাগছে।" দাদাভাই একটু কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করল, "কিরকম?" আমি একগ্লাস জল খেয়ে একটু থেমে বললাম, "তোকে বেশ খুশিখুশি লাগছে ক'দিন, আবার প্রেমে-টেমে পড়লি নাকি?" দাদাভাই হেসে বলল, "পড়লে ক্ষতি কি?" আমি বললাম, "আসলে তোর পাস্ট দুটো relationship, I mean they were disastrous দাদাভাই। তুই কেমন ভেঙে পড়ে ছিলিস তুই নিজে ভেবে দেখ্‌। আমার খালি ভয় তোকে যদি আবার সেই সবের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়!" দাদাভাই আমার চুলটা ঘেটে দিয়ে বলে, "তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস নারে? কিন্তু চিন্তা করিস না তোর দাদাভাই এইবার কোন গন্ডগোলের মধ্যে পরবে না।"


"মেয়েটার নামও আমায় বলা যাবে না। তুমি আমাকে এতটাই ছোট্ট ভাবো যে আমার সঙ্গে তোমার love life share করতে পারো না," আমি অভিমান করে বললাম। রাগলে আমার "তুই"-টা "তুমি" হয়ে যায়। দাদাভাই সেটা জানে, তাই সেবলে, "আহা! আমি কি একবারও বলেছি আমি তোকে কিছু বলব না। কিন্তু আমার নিজের কিছু doubts আছে, সেগুলো ক্লিয়ার হওয়া দরকার।" এরপর আর আমাদের মধ্যে কথা বারেনি। আমিও ভাবলাম ঠিক আছে দাদাভাই যদি সময় চায় তো তাই সই।

                  *                             *               *

সেইদিনের লাঞ্চের পর কেটে গিয়েছে আরও দুটো সপ্তাহ। দাদাভাইয়ের এখন আর রাত অব্দি অফিসে থাকে না। বাড়িতেও যে খুব একটা থাকে তা নয় কিন্তু থাকলে আমাদের সঙ্গে সময় কাটায় অফিসের কাজ নিয়ে বসে না। আবার করে ও ছবি আঁকা শুরু করেছে। এককালে ছবি আঁকা ছিল দাদাভাইয়ের প্যাশ্‌ন্‌। কিন্তু মা মারা যাওয়ার পর ও সব কিছু ছেড়ে দেয়। আবার ১৬-১৭ বছর পর হাতে তুলি ধরেছে দেখেই তো আমি অবাক! আমার মনের সন্দেহটা বারতে থাকে। নাহ্‌ আর সময় দেওয়া যাবে না এইবার আমাকে সত্যিটা জানতেই হবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।

দাদাভাইয়ের সবচেয়ে যেটা বেশি অপছন্দ তা হল মেলোড্রামা কিন্তু আমাকে সত্যিটা জানতে এই মেলোড্রামাটা করতেই হল। দুই দিন দাদাভাইয়ের সঙ্গে ভালো করে কথা বললাম না, ডিনারও করলাম না। কাজ হল। তৃতীয় দিন যখন ডিনার করতে গেলাম না, দাদাভাই নিজে আমার রুমে খাওয়ার নিয়ে এলো। এসেই স্বভাবসিদ্ধ ভাবে বকা শুরু করল, "ভাই ছেলেমানুষীর একটা সীমা আছে, দুদিন ধরে কি শুরু করেছিস বল তো? শরীর খারাপ হলে বল, ডাক্তার কে কল দেব," বলে দাদাভাই থামে, আমি কিছু উত্তর দিচ্ছি না দেখে বেশ রেগে গিয়ে বলল,"আশ্চর্য, ভারি অসভ্য হয়েছিস তো! এতক্ষন ধরে কথা বলে যাচ্ছি কোন উত্তর দিচ্ছিস না কেন?" আমিও বেশ অভিমান করে বললাম, "তুমি আমার সব কথার উত্তর দাও? আমাকে এখনও সেই ছোট্টটি মনে কর। কিন্তু তুমি ভুলে যাও না আমি মোটে চার বছরের ছোট তোমার থেকে।"

দাদাভাই একটু চুপ করে থেকে খাওয়ারের থালাটা খাটের পাশে রেখা সাইড টেবিলে রেখে আমার পাশে বসে বলল, "তোরা মেনে নিতে পারবি না রে। আমি জানি। আমার এখনও ওতটা প্রগতিশীল হয়ে উঠি নি। মুখে আমরা যাই বলি না কেন?" আমি উঠে সোজা হয়ে উঠে বসলাম, আমার সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল, বললাম, "মানে? কি বলছিস তুই? আমার তো সব গুলিয়ে যাচ্ছে।"

দাদাভাই বলল, "আমার আর ওর পৃথিবীটা সম্পূর্ণ আলাদা রে। কিন্তু তাতে আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু তোদের হবে আমি জানি।"

"কখনও না। তোর সুখে থাকা, তোর ভালো থাকাটা আমাদের কাছে ম্যাটার করে। তুই যদি ওর পৃথিবীটা কে নিজের মেনে নিয়ে সুখে থাকিস তাহলে আমাদের কি বলার থাকতে পারে বল?" আমি বেশ জোরের সঙ্গে কথা গুলো বললাম। দাদাভাই আমার দিকে তাকিয়ে শুধু একটু আলতো করে হাসল। আমি বললাম, "আচ্ছা প্রবলেমটা কি, কাস্ট? দেখ্‌ ঐটা আজকালের দিনে কোন প্রবলেমই নয়।" দাদাভাই মাথা নাড়ে, আমি আবার বলি, "তাহলে কি অবাঙ্গালী?" দাদাভাই আবার মাথা নাড়ে, "তাহলে কি রিলিজ্‌ন? ওয়েল, তাহলে অবশ্য ঠাম্মু কে একটু ম্যানেজ করতে হবে। But you don't worry, আমি আর রুক্মিনী আছি তো! সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।" দাদাভাই এইবার কথা বলল, "নারে সেইসব কিছু নয়রে। ওর নাম নন্দিনী, হিন্দু, বাঙ্গালী। কাস্ট জানিনা তবে মনে হয় কায়স্ত।" আমি বললাম, "তাহলে প্রবলেমটা কোথায়!"

দাদাভাই একটা দীর্ঘ্নিশ্বাস ছেড়ে বলল, "আমাদের দুজনের professional world ভীষন ভাবে আলাদা!" আমি একটু অবাক হয়ে দাদাভায়ের দিকে তাকালাম। ও কি বলছে বুঝতে পারলাম না।

দাদাভাই আমার মনের কথাটা বুঝে নিয়েই বলল"ও একজন Sex worker!"

আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়! কান ভোঁভোঁ করতে থাকে। সব চিন্তা-ভাবনা লোপ পেয়ে যায়! একি বলছে দাদাভাই! ওর মাথার ঠিক আছে তো? এ কার পাল্লায় পড়লও! দাদাভাই আমার মনের কথাগুলো বুঝে ফেলে বলে, "কিরে এখনও বলবি তো, তোরা শুধু আমায় সুখি দেখতে চাস্‌? আমাদের দুজনের পৃথিবী যদি আলাদাও হয় তোদের কাছে সেইটা ম্যাটার করেনা? কিরে চুপ করে আছিস কেন? বল? খুব তো বড় হয়েছিস, আমায় সাপোর্ট করবি তো তুই?" আমি ততক্ষনে নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছি, আমি বললাম, "দাদাভাই, you are trapped! I mean it! শোন এখন ও দেরি হয়নি বেরিয়ে আয়। মেয়েটা কিন্তু তোকে ভালোবাসে না। এরা টাকা ছাড়া কাউকে ভালোবাসে না। তুই সবদিক দিয়ে খুব বাজে ভাবে ফেসে যাবি দাদাভাই!" দাদাভাই এইবার খুব দৃঢ়তার সঙ্গেবলল, "ওর নাম নন্দিনী। ওকে নন্দিনী বললে আমি খুশি হব।"

"ও তোর কাছে নন্দিনী অন্য কারোর কাছে হয়ত রাজনন্দিনী! আচ্ছা তুই এর দেখা পেলি কি করে বলতো?" আমি বেশ রাগ করে বললাম। দাদাভাই বলল, "সোহিনীর সঙ্গে বিশ্রী ভাবে ব্রেক-আপ, দু-দুটো বড় ডীল হাতছাড়া হওয়া, বাবার সঙ্গে ঝামেলা, সব নিয়ে বেশ ঘেটেছিলাম। কাজেও মন বসছিল না। ঘুমের ঔষুধ খেয়েও কিছু হচ্ছিল না। তখন কলেজের এক পুরনো ক্লাসমেটের সঙ্গে দেখা। ছেলেটা আমাদের কলেজে বাজে ছেলে হিসাবেই পরিচিত ছিল। সেই আমাকে নিয়ে গেল একটা বারে। আমি ভেবেছিলাম চিরজীবন ভালো ছেলে হয়েও তো মনে সেই শান্তিটা এলোনা যেটা খুজছিলাম, সারা জীবন অশান্তিতেই কাটালাম! তাই আজ আমি বাজে হব! খুব বাজে! কিন্তু পারলাম কই!" এই বলে দাদাভাই থামল! একটা দীর্ঘনিশ্বাস দিয়ে আবার বলতে শুরু করল, "মেয়েটার সঙ্গে রাত কাটিয়ে ভেবেছিলাম সব দুখ-কষ্ট ভুলে যাব, তাই হল কিন্তু ঠিক যেইভাবে ভেবেছিলাম সেইভাবে নয়।

*                    *                   *

উজানের কথা

এইরকম ভাবে কখনও আগে রাত কাটায়নি! খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। সঙ্গে রাগও। মনে হচ্ছিল বাবাকে তো চিরজীবন এইকারনেই ঘৃনা করে এসেছি। তিনিও তো কত রাত এমন সব বারে, হোটেলে কাটিয়েছেন। যতদিন মা বেচে ছিল, মাকে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে একমাত্র এইসব কারনের জন্য আর আজ কিনা আমিও সেই সেম ফুটস্টেপ্‌স্‌ ফলো করছি! ছিঃ উজান! ছিঃ! ধিকার তোকে! মার সম্মান খুব বারালি তুই! কিন্তু এখন ঢুকে পরেছি আর কিছু করার নেই।

মনের মধ্যে যখন এইসব প্রশ্ন ঘোরা-ফেরা করছে তখন একটা মিঠে কিন্তু বেশ বিষন্ন স্বরে কে যেন বলে উঠল, "প্রথমবার?" আমি চাইলাম মেয়েটার দিকে, তখনও ওর নাম জানি না। মুম্বাই শহরে বাঙালী অনেক আছে কিন্তু তাই বলে এইখানে একজন বাঙালীর দেখা পাব ভাবি নি। তাই চাইলাম আরো তার দিকে। দেখলাম অন্য মেয়েদের মতন এর বেশি মেক-আপ নেই, শুধু যত্ন করে কাজল পরেছে সে। চোখ দুটো বেশ মায়ায় ভরা, বিষন্ন। কেমন যেন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল, হারিয়েও যাচ্ছিলাম আসতে আসতে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা খাটের উপর রাখাছিল, স্ক্রিনে ফুটেউঠেছিল, "ভাই কলিং।" আমি ফোনটা তুলে কেটে সুইচঅফ্‌ করে দি। তার চোখ এরায় না ব্যাপারটা, সে বলে, "বাড়িতে কেউ অপেক্ষা করছে বুঝি!"

"ভাই," একটু বিরক্তির স্বরে বললাম, "মাঝে মাঝে একটু বেশিই কেয়ার করে, অসহ্য লাগে তখন!।" সে যেন একটা কান্না চেপে বলল, "আমার জন্য কতদিন কেউ অপেক্ষা করে না গো বাবু!" তার কথায় গলার কাছটায় কেমন দলা পাকিয়ে গেল, আসতে আসতে বললাম, "আমার নাম উজান, আমায় উজান বলো!"

সে একটু হেসে বলল, "তুমি তো আলোর জগতের মানুষ, অন্ধকারে কি করছ?" আমি একটু হেসে বললাম, "কেন এর আগে আলোর মানুষেরা বুঝি তোমার কাছে আসে নি?" সে বলল, "তোমার মতন কেউ? নাহ্‌! অন্তত আমার কাছে না।"

"আমায় তুমি চেনোই বা কতটুকু?" সে আমার প্রশ্ন শুনে শুধু হাসে কিছু বলে না। আমি জিজ্ঞেস করি, "কে অপেক্ষা করত তোমার জন্য?" সে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল আমার কথা শুনে হকচকিয়ে গিয়ে বলল, "অ্যা?" আমি আবার বললাম," ঐ যে তখন বললে অনেকদিন নাকি কেউ অপেক্ষা করে না। আগে কে করত?"

"দাদা। বৌদি। ভাইপো। সব্বাই! খুব ভালোবাসত আমায়!" সে এবার আমার কাছে একটা চেয়ারে এসে বলল। আমি চুপ করে তার কথা শুনছিলাম, সে বলে গেল, "পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলাম আমি। উচ্চমাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করি। ইচ্ছে ছিল সাংবাদিক হয়ে দাদা-বৌদির সব কষ্ট দূর করব।" সে থামল, "আমার মাও খুব বড় গাইয়ে হতে চেয়েছিল, আকাশবানীতে দু-একবার পারর্ফম ও করেছিল, তারপরই তো বিয়ে হয়ে গেল। আর সব শেষ!" বলে আমি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লাম।"

"আমারও বিয়ে হয়ে গেল!শিবেনের সঙ্গে।দাদা-বৌদি কত মানা করেছিল। কিন্তু শিবেন আমায় স্বপ্ন দেখাল। কলকাতায় নিয়ে গিয়ে আমায় কলেজে পড়াবে, আমি সাংবাদিক হব। কত নাম করব।দাদা-বৌদির কথা কানেই তুললাম না। গ্রামের শিব মন্দিরে গিয়ে শিবেন কপালে সিঁদুর পড়িয়ে দিল। আমি ভাবলাম আমার বিয়ে হল। এবার স্বপ্নপূরণ হবে। সফল হয়ে দাদার কাছে যখন ফিরব ও আমায় তখন ফেরাতে পারবে না। কোথায় কি?" বলে সে থামল তারপর হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল, "এক সপ্তাহ পরে বেচে দিল আমায়! শালা কুত্তার বাচ্চা একটা!" এই প্রথম সে খারাপ কথা বলল আর বেশ চেঁচিয়ে বলল শেষ কথাগুলো। ওর প্রত্যেকটা কথা আমার বুকে এসে বিধছিল, আমার চোখের কোন ভিজে গিয়েছিল। সে বলল, "দশবছর আগের নন্দিনী বোকা ছিল, সে ভেবেছিল রূপকথার গল্পের মতন ভালোবাসাও বোধহয় সত্যি হয়। সেটাও যে একটা মিথ্যে সেটা সে তখন বোঝে নি!"

সেইদিন এইভাবেই আমাদের মধ্য গল্প এগোয়! সে তার জীবনের অনেক কথা আমাকে বলে আমিও আমার জীবনের অনেক কথা তাকে বলি!

                                 *           *               *

                                              অয়নের কথা

দাদাভাই নিজের কথা শেষ করে থামল। আমি মন দিয়ে শুনলাম সব কথা। সত্যি বলতে কি আমার মনের ভিতরটা কেঁদে ওঠেনি এমনটা নয়। কিন্তু তাও মনে হল, "এই সব মেয়েরা সব পারে! চোখের জল দিয়ে আমার দাদাভাইকে ফাসাচ্ছে!" মুখে বললাম, "ব্যাস, আর কি তার দুখের কাহিনী শুনে তুইও তার প্রেমে পড়ে গেলি।" দাদাভাই রেগে গিয়ে বলল, "You know what? You are free to feel whatever you like! তোকে যতটুকু explanation দেওয়ার আমি দিয়ে দিয়েছি। এরপর তোর যা বোঝার তুই বোঝ! Okay?" বলে ও রাগ করে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আমি ঠিক করি ব্যাপারটা নিয়ে রুক্মীনির সঙ্গে আলোচনা করব।

*               *                  *

রুক্মীনি আর আমি ক্লাস থ্রী থেকে বন্ধু। ইংরেজীতে একটা phrase আছে, Fire and Ice. রুক্মীনি আর আমি ঠিক তাই।আমি আইস, রুক্মীনি ফায়ার। যদিও ও পেশায় উকিল কিন্তু আমার মনে হয় পুলিশ হলে বেটার হত। যাই হোক আমি দাদাভাইয়ের সম্পর্কের কথা ওকে বলতে ও কিন্তু একটুও রাগল না, উল্টে নিজের লম্বা নখগুলো ফাইল করতে করতে বলল, "যাক বাবা অবশেষে বলল তোকে সব কিছু! I was really pissed off yaar! একটা সময় তো জানাতেই হবে তাহলে ইতনা টাইম কিঁউ লেনা?"

"তুই জানতিস!"

"আমি না জানলে তোর ক্যাবলাকান্ত দাদাএখনও to love or not to love zone-এ পরে থাকত!"

আমি বেশ রেগে গিয়ে বললাম, "আমার দাদাভাইয়ের জীবনটা তুই এইভাবে নষ্ট করতে পারলি?" এইবার সে তার ফায়ার রূপ ধারন করল, উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে নেল ফাইলারটা তাক করে বলল, "নষ্ট? আমি নষ্ট করেছি? নন্দিনী নষ্ট করেছে? নন্দিনী আসার আগে দাদাভাইয়ের জীবন খুব বাড়িয়া ছিল নাকি? দাদাভাই এখন তোদের সঙ্গে টাইম স্পেন্ড করছে, আঁকছে, ঘুমের ঔষুধ ছাড়া ঘুমাচ্ছে আর এইসব কার জন্য হচ্ছে? নন্দিনীর জন্য! সে তোর দাদাভাইয়ের জীবনটাকে গুছিয়ে তুলছে আর তুই শুধু সমাজ ওকে যে ট্যাগটা দিয়েছে সেইটুকু দেখছিস!" আমি বললাম, "হ্যা খুব গুছিয়ে তুলেছে। তুই জানিস না বাবার কানে কথাটা গেলে কি সাংঘাতিক কান্ড হবে?" রুক্মীনি আরো রেগে গিয়ে বলল, "You are still scared of that man! I just hate him! শুধু তোর কথায় সেইদিন ঐ নোংরা মানুষটার কেস আমি লড়েছিলাম! ভুল করেছিলাম! আজও তাই রাতে ঘুমাতে পারি না" বলে সে হঠাৎ করে আমার শার্টের কলারটা চেপে ধরে, "আমি আজও জানি পায়েলের sexual harassment-এর অভিযোগটা সত্যি ছিল। নাহলে সে সুইসাইড করত না। ঠিক যেভাবে আন্টি করেছিল।" শেষ কথাটায় আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল, বললাম, "You are going too far—" রুক্মীনি আমাকে মাঝপথে থামিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, "Just Shut Up! Hypocrite শালা। তোকে আলাদা ভেবেছিলাম আমি! কিন্তু তুইও বাকিদের মতন। Hypocrite! আমাদের এই সমাজে সব অ্যালোউড না! শুধু নন্দিনীর মতন মেয়েরা, যারা পরিস্থিতির স্বীকার, তারা নষ্ট, তারা খারাপ, তাই না?" আর দাড়ায়নি বেরিয়ে এসেছিলাম! শুধু বারবার মনে হচ্ছিল আমি আলাদা নাহওয়ায় রুক্মীনির চোখে জল এল কেন? আমি কেন এত ম্যাটার করি ওর জন্য? শুধু আমার কথায় বাবার কেস ও লড়েছিল? কেন? নাহ্‌ ট্র্যাক চেঞ্চ হয়ে যাচ্ছে! ফোকাস্‌ অয়ন, ফোকাস! আমাকে নন্দিনীর সঙ্গে দেখা করতে হবে! ASAP!

*                     *                *

"এক ঘন্টা! রুক্মিনী এক ঘন্টা লাগে একটা লিপস্টিক কিনতে?" বেশ রাগের সঙ্গে কথাগুলো বলল উজান। যাকে বলা তার অবশ্য কোন হেলদোল নেই সে নিরুত্তাপ ভাবে বলল, "Chill bro! I have to look dashing! After all, কাল তোমার gf-এর first day in college!"

"কাল নন্দিনীর কলেজের ফার্স্ট ডে, তোর নয়!"

"আহা, বুঝছ না কেন, আমি শুনেছি কলকাতার কলেজে নাকি বেশ হ্যান্ডু সব প্রফেসররা পড়ায়। তাই একটু রেডি হয়ে নন্দিনীকে কলেজে ছাড়তে যাবো! বলা তো যায় না তোমার গাধা ভাইটা কে ডাম্প করার সুযোগ পেলেও পেতে পারি!"

"বেচে যাই তাহলে," কথাটা এলো রুক্মিনীর পিছন থেকে, পিছনে এসে দাড়িয়েছে অয়ন ও নন্দিনী। রুক্মিন্নী একটু রেগে গিয়ে বলল, "কি বললি?"

অয়ন কিছু বলতে যাচ্ছিল, উজান থামিয়ে দিয়ে বলল, "অ্যাই তোরা এইখানে কি করছিস?"

"আরে ঘরে বসে বোর হচ্ছিলাম তাই নন্দিনীদি কে নিয়ে তোদের জয়েন করতে চলে এলাম। তখন জানতাম না তুই এত বড় বিট্রেয়ার!"

"আমি? আমি আবার কি করলাম?"

"কি করলি? নন্দিনীদি তুমি সাক্ষী এই মেয়ে যখন আমায় গাধা বলল আমার নিজের দাদা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল কি না তুমি বল?"

নন্দিনী এতক্ষন পর একটু হেসে বলল, "তোমরা কেউ কম যাও না। সবকটা এক একটা বড় বাচ্চা। কিন্তু এই বেলা তাড়াতাড়ি বাড়ি না গেলে, কাল তোমার দাদার আর আমার, দুজনেরই কলেজের দেরি হয়ে যাবে যে।"

"ও হ্যা তাই তো কাল তো দাদাভাইয়েরও আর্ট কলেজের ফার্স্ট ডে!" অয়ন বলে ওঠে, "চল চল তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে যে।কাল থেকে শুরু এক নতুন পথ চলা!"


विषय का मूल्यांकन करें
लॉग इन

Similar bengali story from Drama