মণিমালা, মুক্তামালা ও গেছোদাদা
মণিমালা, মুক্তামালা ও গেছোদাদা
অনেক দিন আগের কথা। রাজকুমারী মণিমালা ও মুক্তামালা একদিন বনে গিয়েছি শিকার করতে। অনেক রাত হয়েছে, দুই রাজকুমারী এত রাতে আর জঙ্গলের মধ্যে থেকে বেরোনোর রাস্তা খুজে পায় না। কি করা যায়? কি করা যায়? ভাবতে ভাবতে দুইজনেই ঘোড়া থামিয়ে দাঁড়ায় এক জায়গায়।
"দিদি কি করা যায় বল্ তো? এইখানে থেকে বাড়ির পথে রাস্তা খুজে পাই কি করে?" মুক্তামালা চিন্তিত স্বরে বলে।
"আমি তো তাই ভাবছি রে বোন, কি করি এইবার?" মণিমালা বলে।
হঠাৎ বনের মাঝে এক কোলা ব্যাঙ ডেকে ওঠে গ্যাঙর গ্যাঙ করে। মণিমালা তো পশু-পাখিদের ভাষা বুঝতে পারত তাই সে ব্যাঙের ডাক শুনে দৌড়ে যায় তার কাছে, আর গিয়ে বলে, "ও ব্যাঙ ভাই, আমরা হলাম শুন্ডি ও হাল্লার রাজকুমারী, মণিমালা ও মুক্তামালা। আমরা যে রাস্তা হারিয়েছি গো! একটু সাহায্য করো!"
ব্যাঙ বলল, "বেশ করব নে। কিন্তু পারিশ্রমিক দিতে হবে।"
মণিমালা বলল, "কি পারিশ্রমিক?"
ব্যাঙ বললে, "শুনেছি তোমাদের স্বামীদের জাদু জুতো আছে, সেইটা পরে তারা যেইখানে খুশি সেইখানে যেতে পারে!"
মণিমালা বলে, "আছে তো! তাতে কি?"
ব্যাঙ বলল, "আমার সেই জুতো চাই। আমারও দেশ-বিদেশ দেখার খুব সখ! বলো দেবে!"
মণিমালা গালে হাত দিয়ে বলে, "সর্বনাশ!"
মুক্তামালা জিজ্ঞেস করে, "কি রে দিদি, কি বলছে কোলা ব্যাঙ?"
মণিমালা সব খুলে বলে। মুক্তামালা বলে, "আরে এতে চিন্তা কি? ব্যাঙ ও তো গান গাইতে পারে। ওকে বল্ গান গেয়ে ভুতের রাজা কে খুশি করে তার থেকে এই বর নিতে!"
মণিমালার কথাটা মনে ধরল। সে বলল, "ব্যাঙ ভাই আমাদের তুমি রাস্তা দেখিয়ে দাও আমরা তোমায় ভুতের রাজার জঙ্গলের খোজ দেব। তাকে গান গেয়ে খুশি করলে তুমি তার থেকেই দেশ-বিদেশ ঘোরার বর পেতে পারো। যেমন আমাদের স্বামীরা পেয়েছিল। এইবার বলো তুমি আমাদের সাহায্য করবে কি না?"
ব্যাঙ অনেক ভেবে বলল, "বেশ, চলো আমি তোমায় জঙ্গল থেকে বেরোনোর রাস্তা দেখিয়ে দি!"
ব্যাঙ রাজকুমারীদের জঙ্গল থেকে বেরোনোর রাস্তা দেখিয়ে দিল। রাজকুমারীরা ব্যাঙ কে ভুতের রাজার জঙ্গলের হদিস দিল। ব্যাঙ তো সেইখানে গিয়ে সারাদিন ধরে গ্যাঙর গ্যাঙর গান গেয়ে গেল। ভুতের রাজা তো সেই গান শুনে খুব খুশি হল। খুশি হয়ে সে ব্যাঙের সামনে নিজ মূর্তি ধরে আর্বিভাব হয়ে বলল, "তোমার গান শুনে আমি খুবই খুশি। বলো কি বর চাই?"
ব্যাঙ বলল, "দেশ-বিদেশ ঘুরে দেখতে চাই আমি। আর কিছু চাই না!"
ভুতের রাজা একটু চিন্তিত হয়ে বলল, "কিন্তু মানুষ ছাড়া তো জাদু জুতো পরা যাবে না। কি করা যায় তাহলে?" ভুতের রাজা ভাবতে বসল। একটু ভেবে বলল, "বেশ আমি তোমার দুটো বর দিচ্ছি। প্রথম বরে তুমি মানুষ হবে," বলতে বলতেই ব্যাঙ এক সুন্দর কিশোরের রূপ ধারন করল। তার নিজের চেহারা দেখে সে নিজেই চমকে গেল।
ভুতের রাজা এইবার দুটো নাগরাই জুতো সামনে এনে বলল, "তোমার তো কোনো সঙ্গী নেই তাই তালি মারা জুতো দিয়ে লাভ নেই বাপু। তুমি এই জুতো নাও। এই জুতো পরে লাফ মারলে যেইখানে যেতে চাও সেইখানে চলে যাবে। তবে হ্যা লাফানোর আগে যেই জায়গায় যেতে চাও তার নাম নিতে ভুলো না কিন্তু। ও হ্যা আর একটা কথা লাফানোর সময় কোন গাছ থেকে বাঁদরের মতন ঝুলে লাফ দিও নাহলে কিন্তু জুতোর জাদু কাজে আসবে না।" ব্যাস এইটুকু বলে ভুতের রাজা গায়েব হয়ে গেল আর ব্যাঙ সেই দিন থেকে গাছে গাছে ঝুলে ঝুলে সব দেশ ঘুরে বেরাত, তাই সবাই তাকে গেছোদাদা বলে ডাকতে শুরু করল। সে প্রতি মূহুর্তে নতুন নতুন জায়গায় চলে যেত। তাই কেউ কখনও তার নাগাল পেত না।
