ভাগ্য বদল
ভাগ্য বদল
( ১)
গুপ্তধন অন্বেষণ এ আজ ক্লান্ত সুবিমল। পূর্বে স্রোতস্বিনী মৃদঙ্গ ভাঙা নদী। কয়েক পুরুষ আগের কথা-
একসময় খুবই অবস্হাপন্ন জমিদার পরিবার ছিল তারা। কিন্তু জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়াতে ধীরে ধীরে তার পরিবার দারিদ্র্যতার চরম সীমানা স্পর্শ করে। এখন যদিও সে দারিদ্র্যতা আর নেই।
সুবিমল রায় বছর সতেরোর যুবক। মাধ্যমিক পাশ করে আর পড়াশোনা করে নি। তার বাবা জগৎবন্ধু রায়।পেশায় কৃষক, চাষবাস করেন এখন একটা নতুন কামারের দোকানও খুলেছেন। সেটাতেই নাকি এন্ট্রি হবে আমার।আমি বারবার বাবাকে বলি-
এসব কাজ বাজ আমার দ্বারা হবে না।
-তা কি করে হবে রায় জমিদার বাড়ির রক্ত বইছে শরীরে।
আমি মাথা নিচু করে চুপ থাকি।
অগত্যা বাধ্য ছেলের মতো মাঝে মাঝে কাজের চাপ থাকলে দোকানে যেতে হয়।
না হলে সারা সকাল বিকেল বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ক্রিকেট ফুটবলে মজে থাকা। তাদের পাড়ার ক্লাব পর পর তিন বার চ্যাম্পিয়ন। প্রতি বৎসর দূর্গা পূজোর সময় প্রতিযোগিতা চলে। আশেপাশের অনেক গ্রাম যোগ দেয়। আর ক্লাবের টিমে সুবিমলের নাম সবার প্রথমে থাকে।
বটুকেশ্বর- শুনেছিস সুবিমল একটা তান্ত্রিক এসছে এখানে। কপাল দেখে ভুত-ভবিষ্যৎ বলে দিচ্ছে। ত্রিকাল ব্রহ্মভৈরব শাস্ত্রী।
বটুকেশ্বর তার সবথেকে ভালো বন্ধু। একই পাড়ায় তো দুর একদম বাড়ির পাশেই বটুকেশ্বর এর বাড়ি।
তাহলে চল দুজনে যাই।
বটু -হ্যাঁ এখুনি যাই চল।
তাদের গ্রামের শেষ প্রান্তে এক কালী মন্দির এর মাঠে শান্ত বটের ছায়ায় আস্তানা বেঁধেছে ত্রিকাল ব্রহ্মভৈরব শাস্ত্রী।
তারা যখন এলো সূর্যাস্ত হতে কিছুকাল বাকি। মন্দির হতে কিছু লোক বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। কেউ আবার মন্দিরে এখনও রয়েছে সন্ধ্যা প্রসাদের অপেক্ষায়।কত অনাথ এসে মন্দির প্রাঙ্গনে আশ্রয় নিয়েছে- অভুক্ত পেট তো আর ভাগ্য খোঁজে না।
মন্দির প্রাঙ্গনের পাশে বড়ো জলাশয়, তার পাশে মস্ত এক বট গাছ। এখন তার তলেই উপস্থিত তারা। তান্ত্রিক এর কাছে কেউ নেই। এ কেমন তান্ত্রিক! কোনো লোকজন সমাগম নেই - তার মনে প্রশ্ন জাগে।
তান্ত্রিক কে এমন রুদ্র রূপে দেখে চমকে ওঠে দুজন-
হাতে রুদ্রাক্ষ ও কবজ জড়ানো, গলায়-ও রুদ্রাক্ষের মালা। প্রশস্ত কপালে সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা। চোখ আগুনের থেকেও যেন লাল। পরনে খাদি কাপড়ের গামছার মতোই লাল বস্ত্র। তান্ত্রিক যে স্থানে বসে আছে তার সম্মুখে মা কালীর ছোটো মূর্তি এবং কয়েকটি রক্তজবা ছড়ানো। একটা বড়ো সিঁদুরে মাখা ত্রিশূল দাঁড়িয়ে আছে সোজা ভাবে। যেন ত্রিশূলের তিনটে ফলা স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল বিদ্ধ করেছে।
তাদের দেখে তান্ত্রিক বললো- ভয় পাইয়ো না যুবক। আজ নয়, কাল প্রভাতে স্নান করিয়া পবিত্র মনে আসিও তোমরা। আমি এখন তপস্যায় বসিবো, বৎস। আমি জানি তোমাদিগের আগমনের কারণ।
🔱🔱🔱ক্রমশ প্রকাশ্য..............