স্বয়ং সংযুক্তা
স্বয়ং সংযুক্তা
রাজকুমারী অন্তঃপুরে স্বপ্ন আঁকে বসি।
সয়ম্বরে উপস্থিত হইবে রাজপুত নৃপতি।
পিতৃ শত্রুর প্রেমে মত্ত কি তার পরিণাম।
রাজকুমারী তবুও সে প্রেমেতে সন্দিহান।
পত্র লেখে ভালোবেসে দিবস রত্রি জাগি।
সম্রাট ব্যস্ত রাজ্য জয়ে সে দেয় না ফাঁকি।
খবর পাঠায় রাজকুমারী পত্র মারফতে।
রাজকুমারী সংযুক্তা কাটছে না যে সুখে।
কালকে পিতা জয়চন্দ্র করিছে এক সভা।
আমার সয়ম্বর নাকি নিকটে হইবে লেখা।
সম্রাট খবর পাঠাইল কবুতর এর ঠোঁটে।
ভালো থেকো সঙ্গিনী আসিব আমি দুঃখে।
জয়চন্দ্র গড়িছে মূর্তি শত্রুর তোপে লাগি।
সয়ম্বর-এ থাকিবে না যে রাজপুত নৃপতি।
জ্যোতিষি বিচার করে দেখি স্বস্তিক রেখা।
রাজকন্যা হইবে খুশি মিলিবে প্রানের সখা।
রাজকন্যার গুপ্তপ্রেম পিতার চোখে ফাঁকি।
অন্তঃপুরে দিবস যাপন মনে স্বপ্ন আঁকি।
দূর দূরান্তে নিমন্ত্রিত কতই সম্রাট যুবরাজ।
কেবল রাজপুত নৃপতি রইল পড়িয়া বাদ।
একদা উপস্থিত হইল ঐতিহাসিক সে দিন।
রাজকুমারী সাজিতে ব্যস্ত সুন্দর শৌখিন।
শ্বেত কমল পুষ্প সুশোভিত শান্ত সরোবর।
রাজকুমারীর পরশ লাগি কাঁপিছে থরথর।
উজ্জ্বল কাজল রাঙিল উঠে অক্ষি পল্লবে।
রঙিন আল্পনা উঠছে ফুটে সুন্দর সম্ভবে।
অলংকার ভরিল গলে সহিত রঙিন চুড়ি।
সম্মুখে দর্পণ রূপে মুগ্ধ যাইল প্রেমে পড়ি।
নুতন শাড়ির পরশ লাগি হৃদয় স্পন্দিত।
অতঃপরে রাজকুমারী হইয়াছে সু-সজ্জিত।
সংযুক্তা অপেক্ষা করে আসিবে শুভ সময়।
সূর্য-সাক্ষী রহিবে থাকি হইবে শুভ পরিণয়।
কাজল-সম আঁখি দুটি অপেক্ষার ধৈর্য্য সয়।
সম্রাট যে অ-নিমন্ত্রিত নাহি জানে এ হৃদয়।
সম্রাট যুবরাজ কেমন আসিছে দলে দলে।
কেউ অশ্বতে চাপি কেউ বা দ্রুমারি তালে।
রাজমহল সাজিল উঠি নন্দনকানন সম।
বিরামহীন পুষ্পবৃষ্টি যেন চলিছে ঘন ঘন।
ধীরে ধীরে যুবরাজ গন পূর্ণ করিল কক্ষ।
রাজপুত নৃপতি মূর্তি! সবার পড়িল লক্ষ্য।
জয়চন্দ্র মূর্তি সম্মুখে থাকি উপহাস্য করে।
যুবরাজ গনও সায় দিয়া রইল নিরুত্তরে।
অতঃপরে সখী সবে বলিল কাছে আসি।
অধিক আগ্রহে বসি আছে কত যে নৃপতি।
মহারাজা সুধায় তোমায় যাইতে সয়ম্বরে।
লজ্জাবতী সংযুক্তা সম্মতিতে মাথা নাড়ে।
রাজকুমারী সয়ম্বরে আসিল ধীরে ধীরে।
পদ্ম সুলভ নিতম্ব তাঁহার ছন্দ রক্ষা করে।
ঘুঙুর ধ্বনিত আওয়াজে শান্ত হইল সভা।
সম্রাটগন দেখিল যে আসিয়াছে সংযুক্তা।
কূল পুরোহিত সঁপিল হস্তে সয়ম্বরের মালা।
মাল্য হস্তে রাজকুমারী আরও যে উতলা।
সংযুক্তা অগ্রসর হইল মাল্য খানা হাতে।
সম্রাট গনের মুখ দেখি পালায় সাথে সাথে।
ইতস্তত রাজকুমারী এখন সঙ্গী খুঁজে যায়।
তবু সে রাজপুত নৃপতি'র নাহি দেখা পায়।
অপেক্ষিত হৃদয় তাহার ব্যাকুল হইয়া ওঠে।
অবশেষে রাজকুমারী যাইল মূর্তির নিকটে।
নিজ হস্তে মাল্য খানা সঁপিল মূর্তির গলে।
সয়ম্বরে কোলাহল উৎপন্ন করিছে সকলে।
সহসা আসিল সম্মুখে মূর্তির পশ্চাৎ হইতে।
পৃথ্বীরাজ চৌহান যে সবাই পাইল দেখিতে।
রাজপুত নৃপতি সে অদ্বিতীয় পরাক্রম বীর।
ধর্মস্থাপনে ব্যস্ত যিনি অধিশ্বর আজমীর।
ললাটে বিজয় চক্র আঁকা কেশর সম কেশ।
কোমর বন্ধ তরবারি আঁখিতে দ্যুতির রেশ।
হঠাৎ গরজে উঠিল পৃথ্বী বজ্রনিনাদ যেমনে।
প্রিয় অশ্ব দাঁড়াইল আসি তারই সম্মুখপানে।
স্বয়ং সংযুক্তা বাহু ধরি যাইল ঘোটকে বসি।
রাজকুমারী পৃথ্বীর ক্রোড়ে হইল নিরুদ্দেশি।

