Partha Pratim Guha Neogy

Inspirational

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Inspirational

অনুপ্রিয়া মধুমিতা লাকরা

অনুপ্রিয়া মধুমিতা লাকরা

3 mins
272


জীবনে সফল হবার ইচ্ছা থাকলে তো এরকমই হয়,তাঁর নিকটাত্মীয়দের সকলে হয়তো এখনও প্লেনে চড়ারও সুযোগ পাননি। কিন্তু তিনি সুযোগ পেলেন প্লেন ওড়ানোর! ওড়িশার মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকা মালকানগিরির এক আদিবাসী তরুণীর সাফল্য যেন আকাশ ছুঁয়েছে আক্ষরিক অর্থেই। ২৭ বছরের অনুপ্রিয়া মধুমিতা লাকরা যে কেবল বাণিজ্যিক প্লেনের পাইলট হলেন না তা-ই নয়, এই প্রথম গোটা সম্প্রদায়ের জন্য এক ইতিহাস লিখলেন যেন। যে প্রত্যন্তের সর্বত্র এখনও পৌঁছয়নি রেল লাইন, সেই প্রান্ত থেকেই এবার আকাশে পাড়ি দেবেন তিনি।


অনুপ্রিয়ার এই সাফল্যে আনন্দ যেন বাঁধ মানছে না লাকরা পরিবারে। পুলিশ কনস্টেবল মারিনিয়াস লাকরার মেয়ে অনুপ্রিয়া ছোট থেকেই চেয়েছিলেন পাইলট হতে। কিন্তু তাঁর পরিবারের সকলেই জানতেন, এটা তাঁদের মেয়ের স্বপ্ন। এমন একটা স্বপ্ন, যেটা তাঁদের মতো বাড়ি থেকে পূরণ করা অসম্ভব। তাঁরা কল্পনা করতে পারেননি, এই স্বপ্নকেই লক্ষ্য বানিয়ে, তা পূরণ করেই ছাড়বেন অনুপ্রিয়া।


প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ হিসাবে নিজের জীবনে আকাশ ছুঁতে তাঁকে এক দীর্ঘ লড়াই লড়তে হয়েছিল এবং আর্থিক - সামাজিক সব বাধা 

দুহাতে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে নিজের স্বপ্নকে তিনি সার্থক করেছেন। ওনার ইস্পাতসম মনোবল আর লড়াকু সংগ্রামী মানসিকতা তাঁকে আজ শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। কারণ লড়াইটা কিন্তু খুব সহজ ছিল না - কিন্তু তিনি পেরেছেন। এই বার্তা তাঁর আশেপাশের অন্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করবে। তাঁর এই কাজ তাঁকে নারী ক্ষমতায়ন এবং পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক সমাজের এগিয়ে যাবার মনোবল বৃদ্ধি করবে।

বাবা মারিনিয়াস বলছিলেন, “পাইলট হওয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণ নিতে হয়, তার খরচ জোগানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি ধার করেছিলাম,আত্মীয়দের থেকেও সাহায্য নিয়েছিলাম। মেয়েকে বলেছিলাম, যতটা পড়াশোনা করতে হয়, তা-ই যেনও করে।”


মালকানগিরির ভিতরের দিকে, একটি ভাঙাচোরা পুরনো বাড়িতে থাকে লাকরা পরিবার। সংসারে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। অনুপ্রিয়ার মা জিমাজ লাকরা জানালেন, শত কষ্টেও মেয়েকে কখনও বাধা দেননি তাঁরা। বললেন, “আমাদের মেয়ে যা হতে চেয়েছিল, তা-ই হতে পেরেছে। আমরা এতেই খুব খুশি। ওর এত বড় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তার সামনে আমাদের সব দুঃখ কষ্ট ফিকে হয়ে গেছে। আমি চাই,আমাদের মেয়ে সকলের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক। আমি চাই সব বাবা-মায়েরা তাঁদের মেয়ের পাশে থাকুন।”


অনুপ্রিয়ার এই সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। লিখেছেন, “আমি ওর সাফল্যে খুব খুশি। ও বহু মেয়ের আদর্শ হয়ে উঠতে পারে।” 


ওড়িশা আদিবাসী কল্যাণ মহাসঙ্ঘের সভাপতি এবং আদিবাসী নেতা নিরঞ্জন বিসি জানিয়েছেন, ওঁরাও গোষ্ঠীর মেয়ে অনুপ্রিয়া এই প্রথম প্লেন ওড়ানোর অনুমতি পেয়েছেন। শুধু মালকানগিরি নয়, গোটা ওড়িশার কোনও আদিবাসী মেয়ে এই সাফল্য পায়নি এখনও। তিনি বলেন, “যে রাজ্যের সর্বত্র এখনও রেললাইন পরিষেবা পৌঁছয়নি, সে রাজ্যের আদি জনজাতির প্রতিনিধি হিসেবে এই সুযোগ পাওয়া বিরল বৈ কী!”


মালকানগিরির অনুপ্রিয়া স্থানীয় একটি মিশনারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তার পরে পড়াশোনা শেষ করতে চলে যান কোরাপুট। ২০১২ সালে ভুবনেশ্বরের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু কয়েক মাস ক্লাস করার পরেই ঠিক করেন, পাইলট হওয়ার জন্যই প্রস্তুত করবেন নিজেকে। কলেজ ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হন সরকারি অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। ধার করে প্রশিক্ষণের টাকা জোগাড় করেন অনুপ্রিয়ার বাবা।


সাত বছরের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও একাধিক পরীক্ষার পরে, বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরে, অবশেষে অনুমোদন পান প্লেন ওড়ানোর। এই দীর্ঘ লড়াইয়ে বারবার হতাশা এলেও, কখনও ভেঙে পড়েননি অনুপ্রিয়া। কোনও বাধাকেই বাধা বলে মনে করেননি। তাই তো আজ উজ্জ্বল করেছেন সারা রাজ্যের মুখ।

এজন্য ওড়িশার আজ অনুপ্রেরনার আরেক নাম অনুপ্রিয়া। তাঁর এই আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের জন্য তাঁকে জানাই আমাদের হৃদয়ের অন্তস্থলের উষ্ণ অভিনন্দন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational