অনুগল্প--"ইচ্ছেপূরণ"
অনুগল্প--"ইচ্ছেপূরণ"
পিকলুদের স্কুলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নাচ,গান,কবিতা,প্রবন্ধপাঠের অনুষ্ঠানে সব ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ করা এবার বাধ্যতামূলক। ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে বসে মনের বিকাশ প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই যাতে হারিয়ে না যায়,তার জন্যই স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
বছর বারোর পিকলু মায়ের কথা মতো স্বাধীনতা দিবসের ওপর একটা প্রবন্ধ মুখস্থ করছে।গুগল থেকে সব ডিটেইলস নিয়ে বিষয়টির ওপর একটা প্রবন্ধ লিখেছে সোনালী।ছেলেকে রাতদিন মুখস্থ করিয়ে যাচ্ছে।পিকলু নানা ছুতোয় পালাবার চেষ্টা করলেও ধরে বেঁঁধে ওকে বোঝায় সোনালী,----'ভালো করে পনেরোই আগষ্টের দিন তোকে এটা বলতে হবে স্কুলের অনলাইন অনুষ্ঠানে।সবাইকে দেখিয়ে দিবি, এই বয়সে স্বাধীনতা দিবস সম্বন্ধে তুই কতকিছু জানিস।আমি এমন এমন তথ্য দিয়ে সাজিয়ে লিখেছিনা!......তারপর তোর এই ভিডিওটা ফেসবুকে দেবো,দেখবি অভিনন্দনে কমেন্ট বক্স ভরে গেছে।কতো আনন্দ হবে বলতো তোর!তখন সবাই দেখবে আর জ্বলবে।'
---'না,মা আমার প্রবন্ধ বলাতে কোনো আনন্দ বা আগ্ৰহ নেই।তার থেকে দিদুনের কাছে আমি যে নাচ শিখেছি,মনের আনন্দে সেইটা আমি ঐদিন করবো।'
---'নাচ শিখেছিস! মেয়েদের মতো সেইদিন নাচ করবি স্কুলের অনলাইন অনুষ্ঠানে?তোর বন্ধুর মায়েরা হাসাহাসি করবে,ভালো লাগবে তোর?'
---'বাঃ, তুমি যে রোজ বাবাকে আর দিদুনকে বলো,তোমাকে কেউ এবাড়িতে পছন্দের ডিজাইনার ড্রেস পরার,চাকরী করার স্বাধীনতা দেয়নি। তোমার মন খারাপ থেকেই তো কথাগুলো বলো! তুমিও তো আমাকে আমার পছন্দের কাজ করার স্বাধীনতা দিচ্ছোনা।
আমি যেটা ভালোবেসে,মনের আনন্দে করতে পারি স্বাধীনতা আমার তো সেখানে, তাইনা মা!
আমাকেও তোমার মনের ইচ্ছেটা চাপিয়ে দিচ্ছো জোর করে,ফেসবুকে কতোগুলো লাইক,কমেন্টসের আশায়।আমি যতোটা স্বাধীনভাবে নৃত্য পরিবেশন করতে পারবো,অতোটা ভালো প্রবন্ধপাঠ করতে পারবোনা মা।
এই দেখো মা,দিদুন কি সুন্দরভাবে আমাকে 'কারার ঐ লৌহ কপাট' গানের নাচটা শিখিয়ে দিয়েছে।অবাক হয়ে ছেলের নাচ দেখে,সোনালী সত্যিই সেদিন স্বাধীনতার অর্থ বোঝে।
