Swati Atarthi

Others

3  

Swati Atarthi

Others

"উপায়"

"উপায়"

2 mins
275


মালতী পাঁচ বাড়ি কাজ সেরে ঘরে ফেরার সময় রোজ দুটি রোগের নাম মুখস্থ করে।এক–আ্যলঝাইমার্স.....যে রোগে মানুষ সব ভুলে ভুলে যায় আর দ্বিতীয়–পার্কিনসন.....যেখানে মানুষের হাত কাঁপে।ও বাড়ির বৌদিকে একদিন মালতী জিজ্ঞাসা করে জেনেছিল ,মাসিমার যে এরকম অসুবিধা গুলো হচ্ছে সেগুলো কেন হয় আর এই রোগ গুলির নাম কী । বৌদি মালতী কে বুঝিয়ে বলেছিলো কোন রোগের কী অসুবিধা। কিন্তু মালতী রোজ গুলিয়ে ফেলে। গুলিয়ে ফেলবে নাই বা কেন? মালতী এর আগে অন‍্যত্র কাজ করার সুবাদে অনেক ইংরেজি রোগের নাম শুনেছে কিন্তু এই এত্তো বড়ো বড়ো ইংরেজি রোগের নাম এই প্রথম শুনলো। তাই মনে রাখতে খুব অসুবিধা হচ্ছে তার।কিন্তু মালতী একবার যেটা শিখবে ভাবে, সেটা সে এক্কেবারে নিঁখুত ভাবে শেখে।আজ তাই বৌদিকে আবার জিজ্ঞেস করায় ,বৌদি বেজায় রেগে যায়.........বৌদি বলে― কীরে মালতী , রোজ রোজ মায়ের সামনে এই একই রোগ নিয়ে জানতে চাস....দেখতে পাসনা মা দুঃখ পায়। 

– কীযে বলো বৌদি, তুমি তো এইমাত্র বললে যে মাসিমার কিছু মনে থাকবে না....সে তো একটু পরেই সব ভুলে যাবে।


–আরে বাবা, ভুলে যাবে ঠিকই..... কিন্তু তুই এই যে বারবার জিজ্ঞেস করছিস...তা মা তো শুনতে পারছেন........যে আমরা তার সম্বন্ধে বলছি।তুই এই যে বারংবার আমাকে প্রশ্ন করছিস মাসিমার এই হাত কাঁপার রোগের নাম কী? ভুলে যায় কেন? কতক্ষন ভুলে থাকে? আবার মনে পড়ে কিনা? এসব কী হ‍্যা? এতো ডিটেলে জানতে চাইছিস কেন?

 –ও তুমি বুঝবে না...আমার জানার খুব প্রয়োজন। কার কিসে, কিভাবে উপকারে লাগে তুমি কী করে জানবে?এতো বড়ো বড়ো ইংরেজি রোগের নাম আমাদের মতো গরীবের সংসারে আর একটু পেটভরে খাবার খাওয়ারও যে উপায় বের করে দেয়, তা তুমি বুঝবে কী করে বৌদি?

–কী বলছিস? রোগের নাম জেনে তোর কাজে লাগবে.... আবার বলছিস উপকার....কীযে বলিস তুই ।


মালতী আজ ভালোভাবে মুখস্থ করে ঘরে ঢুকেই শ্বশুর কে ঐসব রোগের নাম আর তার গুনাবলী বুঝিয়ে দিলো। সামনের সপ্তাহে যেখানে যেখানে ত্রাণ দেবে সেখানে লাইনে দুবার করে দাঁড়াতে গিয়ে ধরা পড়লে অসুবিধা নেই , ঐ আ্যৃলঝাইমার্স রোগটির নাম বলে ঠিক নিস্তার পেয়ে যাবে। এই অভাবের সংসারে বাড়িতে বাড়তি অকেজো দুটি প্রাণী.....পঙ্গু স্বামী আর শয্যাশায়ী শাশুড়ীর জন্য এই উপায় অবলম্বন করতেই হলো।ওরা তো আর বাড়ির থেকে বেরোতে পারবেনা।মালতীর বয়স অল্প , নির্ঘাত ধরা পড়ে যাবে..... তার থেকে এই ভালো শ্বশুর গিয়ে ডবল করে ত্রাণ পেলে ভালো, নইলে ঐ মাসিমার দুটি রোগের উপায় তো আছেই। মালতীর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সামনের সপ্তাহে, ঠিক তার শ্বশুর ডবল চাল ডালের ভর্তি ব‍্যাগ দুহাতে বয়ে নিয়ে এসে মালতীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে হসিহাসি মুখে বললো.... বৌমা, তোমার উপায় কাজে লেগে গেছে।মালতী ব‍্যাগ দুটি থেকে টিনের কৌটোয় চাল ডাল ঢালতে ঢালতে ঠাকুরকে মনে মনে প্রনাম জানালো আর তার সাথে প্রনাম জানালো ঐ বাড়ির মাসিমাকে আবার নিজেকেও খানিকটা বাহবা দিয়ে আয়নার সামনে মুচকি হেসে বললো–"ভাগ‍্যিস ঐ ইংরেজি ভারী ভারী নাম দুটি ও বাড়ির বৌদির কাছ থেকে বানান করে নিখুঁত ভাবে শিখে এসেছিলাম।"


Rate this content
Log in