অভিনেত্রী পর্ব 2

সৎ মা বনলতা সেন এর মৃত্যুর পর কিছু দিন সব ভালো চললেও... আস্তে আস্তে পরিবর্তন আরম্ভ হল আমার আর আমার সৎ বোন দুজনের মধ্যে.... আমি জীবন সেন সন অফ বিকাশ সেন.... আজ আমি বিখ্যাত হয়তো কিছুটা কুখ্যাত ও বটে কেন সে কথা পরে হবে..... বনলতা সেন এর মৃত্যু আমাকে শান্তি দিলেও আমার মনের ঘা সরিয়ে তুলতে পারে নি পুরোপুরি..... আসলে বনলতা মরে ও মরে নি তার স্বভাবের বীজ বপন করে গেছে আমাদের মধ্যে.... বাবা কাকা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও আমি আর সোনিয়া পারলাম না পাক থেকে উঠে আসতে.... সোনিয়া কে আজ আর জোর করতে হয় না কোনো ফিল্ম এর ডিরেক্টর বা প্রোডাউসর এর সাথে শারীরিক হওয়ার জন্য.. সোনিয়া আজ আর

দ্বিধা বোধ করে না... ফিল্মে চান্স পাওয়া টাই আজ ওর কাছে আসল.... আমার মা এর ঘর ভেঙে যাওয়া মা এর মৃত্যু সব সব আমার মনে আছে আমি কিছু ভুলি নি কিন্তু বনলতা সেনের সর্বনাসা খেলা মনে হয় আমি ও খেলতে শিখে গেছি..



.. না হলে যে কষ্ট টা আমি ছোট থেকে পেয়ে এসেছি আজ তা আমি অন্য একটা বাচ্চা কে কেমন করে দি...

নিমিলাসা আমার বর্তমান বান্ধবী.... আজকের দিনে বান্ধবী থাকা টা কোনো অন্যায় নয় কিন্তু কারোর বারো বছরের সংসার ভেঙে তার সাথে নিজেকে জড়ানো টা তো পরকীয়া.... যে পরকীয়া আমাদের পরিবার কে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে সেই একই কাজ আজকাল আমিও শুরু করে ছি..

নিমিলাসা সত্যজিত প্রকাশের স্ত্রী... বিখ্যাত অভিনেতা সত্যজিত এর এক স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে পরিবার... ইউরোপিয়ান মেয়ে নিমিলাসা কে দেখে যেকোনো পুরুষের মাথা ঘুরে যাবে এ কথা সত্যি কিন্তু তা বলে তার সাথে পরকীয়া তে জড়িয়ে পড়া অন্যায় তা আমি খুব ভালো ভাবেই জানি..... তবু অন্যায় টা করেই ফেললাম আমি...



. প্রাথমিক আলাপ এ খুব একটা পরিবর্তন আসেনি কিন্তু কাজের সূত্রে সত্য র বাড়ি যাওয়া আসা টা আমার বেড়ে যাওয়ায় নিমিলাসা র সাথে ও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে..... হয়তো নিমিলাসা ও আমাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল.... মানসিক শারীরিক সব দিক থেকে আমি আজ ওর হয়ে গেছি.... ও বলতেই তো ভুলে গেছি নিমিলাসা আমার থেকে কম করে হলেও সতেরো বছরের বড়.... আমি বছর আঠাশের আর নিমি মানে নিমিলাসা এখন

পঁয়তালিশ.... বারো বছরের ছেলে ট্রিদেল কে নিমি চিন্তিত কারণ আমাদের সম্পর্কে সত্য সব কিছু জেনে গেছে আর ও এখন ডিভোর্স চায়...

সত্য র সাথে ডিভোর্স টা নিমি চায় কিন্তু ট্রিদেল কে ও নিজের কাছে রেখে দিতে চায়.... সত্য শুধু এক শর্তে ডিভোর্স টা দেবে ওকে ট্রিদেল দিতে হবে.... আর নিমি ত্ত নিজের জেদ ধরে আছে এই নিয়ে এখন আমার জিনা হারাম হয়ে গেছে....

নিজে যে কষ্টের সাদ পেয়েছি আজ সেই কষ্ট আমি ট্রিদেল কে দিলাম.... কষ্ট টা মনে দলা পাকিয়ে উঠেছে কিন্তু ওই যে বললাম বনলতা সেন এর চরিত্রহীনতা আমি আর আমার বোনের মধ্যে ঘুন পোকার মত ধরে গেছে... আমাদের মুক্তি নেই

মুক্তি হয়তো চাই না আমি তাই ফিল্ম দুনিয়ার ঘোষণা টা করেই ফেললাম যে আমি নিমি ঘর বাঁধ ছি.... লোকে মুখে হাসি রাখলে ও খুব একটা ভালো ভাবে নিল না বিষয় টা.....

সেই রাত যে দিন অনেক দিনের চেনা বনলতা আন্টি হঠাৎ করে আমার সৎ মা হয়ে উঠে ছিল... আমার অনেক প্রিয় একটা মানুষ আমার বাবা আমার শত্রু হয়ে গিয়েছিল... আমার ভালো মানুষ মা নিজের ঘর ছেড়ে ছিল এক কাপড়ে.... সেই রাত আবার ফিরে আসছে তবে এবার ট্রিদেল

এর জীবনে....

গা টা গুলিয়ে উঠেছে আমার আর কিছু ভাবতে পারছি না এ আমি কি করলাম....

নিমিলাসা কে সব খুলে বললাম কিন্তু ও আর এই বিয়ে থেকে পিছিয়ে আসতে চায় না.... আর ইতিমধ্যে সত্যজিত প্রকাশ ও তার নতুন জীবন শুরু করে ফেলেছে.... আর তার সেই নতুন গার্ল ফ্রেন্ড কে? আমার বোন সোনিয়া সেন.... ভাগ্য র কি পরিহাস তাই না! নিমিলাসা খুব ভাল করেই জানে যে এই বয়সে তার আর নতুন করে শুরু করা সম্ভব নয়... আর সত্য তাকে আর কিছু তে ফিরিয়ে নেবে না.... আর সত্যি তো সোনিয়া র মত একটা অল্প বয়সে র মেয়ে কে ছেড়ে আর নিমি কে আপন করে নেবে কেন?

সোনিয়া কে বোঝাতে চেয়েছি পারিনি.... ওর অকাট্য যুক্তি আমি ওকে কোন মুখে বোঝাতে চাইছি..... আমার সাথে আমাদের কলঙ্কবতি মা র পার্থক্য টা কি আছে..... আসলে আমার করা দোষ এর শাস্তি টা ও নিয়েছে.... আমি সত্য র ঘর ভেঙ্গে ছি আর ও আমার দেওয়া ঘা র ওষুধ হয়ে সত্য র জীবনে এসেছে..... যাতে সত্য র জীবন টা ও আমার মা র মতো শেষ না হয়ে যায়....

সোনিয়া সত্যি ভালো অভিনেত্রী.... সুন্দর ওর অভিনয়... আর ওকে মুক্তি দিতে আমি বেছে নিলাম আমার জীবনের সমাপ্তি...