আশীর্বাদ
আশীর্বাদ


'বাণীশিল্প'। এভাবে আর কেউ প্রকাশনার নাম সার্থক করছে কি না আমার জানা নেই। বিস্তারিত বলছি....
যে বইটি আমি খুঁজছিলাম ধুলো ঝেরে অবণীবাবু বাবু হাতে তুলে দিলেন। অস্থায়ী তখন সে কুটির। নীচে রাস্তায় কাজ চলছে। পুজো পুজো ভাব। টেমার লেনের গলি ধরে বুকে একহাত রেখে আনমনেই হেঁটে যেতে যেতে কত সব সাইনবোর্ড পড়ছিলাম। কোনোটায় শ্যাওলা, কোনোটা আবার চকচকে। পেছন থেকে হাঁক দিয়ে হঠাৎ একজন ডাকলেন। বৃত্তান্ত শুনে নিয়ে গেলেন এক কুঠুরীতে। কলকাতার প্রাচীনত্ব সেই প্রথম চোখে দেখা। কতসব কথা শোনালেন। মৃত্যুশয্যায় বনফুল, নামজাদাদের কত গল্প। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম সব। আমার কাছে বনফুল যা ব্যাদব্যাসও তাই ছিলো এতদিন। শুধুই বইয়ে পড়া। লেখকদের যে এক অনালোকিত সাধারণ জীবন আমার জ্ঞানের বাইরে ছিলো কোনোদিন কল্পনাতেও আসেনি। আসে নি বলেই হয়তো জ্ঞানেই বাইরে ছিলো। পাতলা মাটির ভাঁড়ে চা আর সাথে একটি মেনথল সিগারেট দিলেন। সদ্য নেট উত্তীর্ণ তরুণ গবেষকের পিলে চমকাবারই কথা। ষাটোর্ধ ভদ্রলোক যিনি কি না প্রকাশক- আমায় এত আতিথেয়তা, সম্মান জানাচ্ছেন দেখে কিছুটা গর্ব সহিত বুক উঁচু হলো বৈকি। আমার সকল ইতিহাস, ভূগোল শুনে বেশ কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ করে বললেন-
'শোনো বাছা! যে বই তুমি খুঁজতে এসেছো তাকে তো সচরাচর এত লোকে খোঁজে না- তাই এভাবে তোমায় দেখে বেশ ভালোই লাগল বলেই বললেন- 'নাও! নিয়ে যাও। আরো অন্যান্য কিছু আছে।' আমি শুনেছি কল্কাতায় নাকি বই বেচার নানাসব ফন্দি হয়। তবুও আমি গোটা কয়েক তুলে নিলাম। সন্ধ্যার ট্রেন ধরব বিকেলেই লাইন দিতে হবে। শিলিগুড়ির পথ, অনেকটাই ধকল। উঠবার মুহূর্তে যে কথাটি বললেন, তাতে আমার জীবনের পথ অবশ্য অনেকটা বদলে যায়-
'তুমি আজ অশোক। বীতশোক হয়ে এসো। বেঁচে থাকলে কথা হবে।'
সেদিন নয় অনেক কয়েক বছর পর এখন অনুভব করছি- 'কী কঠিন আশীর্বাদের বোঝা তিনি চাপিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন।'