শিক্ষাঙ্গনে প্রথম সেদিন
শিক্ষাঙ্গনে প্রথম সেদিন
অক্ষর পরিচয় থেকে নামতা - মা-বাবাই প্রথম শিক্ষাগুরু,
বয়স তখন সাড়ে তিন, বাড়ির চৌকাঠ পেরোনোর পালা,
মর্নিং স্কুল, তাই ভোরবেলা উঠে মায়ের সেই প্রস্তুতি পর্ব -
সাদা শার্ট, লাল স্কার্ট পরে বিদ্যালয়ের পোশাকে সজ্জিত,
পিঠেতে লাল ব্যাগ, গলায় ঝোলানো নীল ওয়াটার বটল্;
স্কুলের ব্যাচের 'ক্ত' চিহ্নের নীচে মুদ্রিত 'শ্রদ্ধা, ত্যাগ, সেবা',
কপালে মায়ের চুমু, বাবার হাত ধরে ইস্কুলের পথে হাঁটা -
অপার কৌতূহলে ভরপুর বিদ্যালয়ের সেই প্রথম দিনটা,
শিশুমনে তখন অজানা উত্তেজনাদের প্রবল আলোড়ন!
পাঁচ মিনিট হাঁটার পরেই বিশাল লাল গেটটার মুখোমুখি,
উজ্জ্বল হরফে 'শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা সঙ্ঘ বালিকা বিদ্যালয়',
শিক্ষাঙ্গনে প্রথম পদার্পণ, ক্রমশ ভেতরে করলাম প্রবেশ,
গেটের ভেতর ও বাইরের ব্যবধানে বাবার হাত ছাড়াছাড়ি,
পরম যত্নে হাতটা ধরে ক্লাসেতে নিয়ে গেলেন সুমিতা দি;
ঠাকুর-মা-স্বামীজির আশ্রম পরিবেষ্টিত স্নিগ্ধ পরিমন্ডল,
সেই লোয়ার নার্সারি, সেকশন - সি, ক্রমিক সংখ্যা - এক,
আমার মতোই শিশুদের সমাগমে পরিপূর্ণ ওই শ্রেণীকক্ষ,
মা-বাবার সাথে চিরবিচ্ছেদের আশঙ্কায় সহসা অশ্রুপাত,
ফোঁপাতে ফোঁপাতে একসময় চিৎকার করে সে কী কান্না!
আশেপাশে কারোর ভেজা চোখ, কেউ হয়তো নির্বিকার,
সবাইকে অতিক্রম করে আমার সেই অশ্রুসজল আর্তনাদ,
চারটে ঘণ্টা ঠিক যেন অনতিক্রম্য চারটে বছরের সমান!
বাবার ফেরার প্রতীক্ষায় জানলার বাইরে অপেক্ষারত দৃষ্টি,
অবশেষে ছুটির ঘণ্টা, ব্যাগ কাঁধে একছুটে লাল গেট পার,
বাবাকে জড়িয়ে ধরে স্বস্তি ফিরে পাওয়া, বাড়ির পথে যাত্রা;
বারো বছর পরে স্কুল ছাড়ার যন্ত্রণায় আবারও অশ্রুসিক্ত!