স্বামী বিবেকানন্দ
স্বামী বিবেকানন্দ


ইংরেজ শাসিত ভারতে অনাচারের প্রকোপে যখন সকলে সামাজিক অবক্ষয়ে মত্ত
ঠিক তখনই ঈশ্বরের আশীর্বাদে জন্ম নিল হিন্দুধর্মের নব পথপ্রদর্শক নরেন্দ্রনাথ দত্ত
বিশ্বনাথ দত্ত ও ভুবনেশ্বরী দেবীর সন্তান হিসাবে উত্তর কলকাতার সিমলার দত্ত পরিবারে জন্ম তার
বাল্যকাল থেকেই ঈশ্বরের সামনে ধ্যান বা সন্ন্যাসীর প্রতি টান পরিচয় দেয় তার আধ্যাত্মিকতার
শৈশব থেকেই অধ্যয়নের ক্ষেত্রে প্রকাশ পায় মেধাবী নরেন্দ্রনাথের জীবনে পরম মনোযোগ ও নিষ্ঠা
প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি তাকে আকৃষ্ট করে খেলাধুলা,ধর্মগ্রন্থ পাঠ,সমাজসেবা ও সঙ্গীতচর্চা
মেধা ও প্রতিভার কারণে মুহূর্তের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন সমস্ত শিক্ষকদের প্রিয়পাত্র
প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনিই ছিলেন সেই বৎসরে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ একমাত্র ছাত্র
পিতৃমৃত্যুর পর অবশেষে তীব্র অর্থকষ্টে পরে পরিত্যাগ করেন নিজ বাসস্থান
যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মন্ত্রদীক্ষায় ঘটে তার অধ্যাত্মজগতে উত্তরণ
রামকৃষ্ণদেবের দেহত্যাগের পর বরাহনগরে তার শিষ্যদের নিয়ে গড়ে তোলেন মিশনের প্রথম ভবন
আটজন গুরুভ্রাতাদের সঙ্গে নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দে রুপান্তরের মাধ্যমে করেন সন্ন্যাস গ্রহণ
এরপর শুরু হয় তার জীবনের এক নতুন অধ্যায় - পরিব্রাজকরূপে শুরু করেন সমগ্র ভারত ভ্রমণ
হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী,জয়পুর থেকে মহীশুর -সর্বত্র ভ্রমণের মাধ্যমে করেন ভারত পর্যবেক্ষণ
শিকাগো ধর্মমহাসভায় যাবার পূর্বে জাপান ভ্রমণের সময় তিনি লক্ষ্য করেন তাদের দ্রুত অগ্রগতি
সেই তুলনায় ভারতীয়দের দেখে তিনি আখ্যা দেন “কুসংস্কার ও নিপীড়নের শতাব্দীর সন্তান-সন্ততি”
পত্র মারফত জামশেদজী টাটাকে গড়ে তুলতে বলেন এক গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
তার অনুরোধেই ভারতের বুকে বিজ্ঞানচর্চার উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয় “বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান”
এরপর চীন ও কানাডা ভ্রমণ সম্পন্ন করে তিনি এসে উপস্থিত হন শিকাগোর বিখ্যাত ধর্মমহাসভায়
সভায় উপস্থিত সকলে তার বক্তৃতায় হয় চরম মোহিত ও আপ্লুত - সম্পন্ন হয় হিন্দুধর্মের বিশ্বজয়
পাশ্চাত্যে থেকেও অর্থপ্রেরণের মাধ্যমে গুরুভ্রাতাদের উদ্বুদ্ধ করেন দরিদ্রদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের
তার নির্দেশেই বেদান্তশিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রকাশনা শুরু হয় ব্রহ্মাবদীন নামক এক সাময়িক পত্রিকার
আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে তার ভাষণ বিদেশীদের কাছে বৃদ্ধি করে তার জনপ্রিয়তা
তার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে বহু মানুষ গ্রহণ করে তার শিষ্যত্ব,তার সঙ্গে ভারতে আসেন ভগিনী নিবেদিতা
কলকাতায় পদার্পণ করে ধর্মপ্রচার ও সামাজিক কাজের জন্য গড়ে তোলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন
শিক্ষা,সংস্কৃতি,চিকিৎসা ও দাতব্য কাজের মাধ্যমে যা সূচনা করে এক সামাজিক-ধর্মীয় আন্দোলন
ভগ্নস্বাস্থ্য সত্ত্বেও দ্বিতীয়বারের জন্য তিনি যাত্রা করেন পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্যে
স্বল্পসময় ইংল্যান্ডে অতিবাহিত করে পুনরায় গমন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
এইসময় সানফ্রানসিসকো ও নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠা করেন বেদান্ত সোসাইটি
আমেরিকান ভক্তের জমিতে ক্যালিফোর্নিয়ায় গড়ে তোলেন এক আশ্রম - যার মূল লক্ষ্য শান্তি
প্যারিস ধর্মমহাসভায় বক্তৃতাপ্রদান করেন তিনি লিঙ্গপুজা ও ভগবদগীতার যথার্থতা প্রসঙ্গে
তার বক্তব্যের মাধ্যমে হিন্দুধর্মের মাহাত্ম্য প্রবেশ করে সমগ্র পাশ্চাত্যের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে
অবশেষে জগতের বুকে ক্রমশ ঘনিয়ে আসতে থাকে তার অন্তিম লগ্ন
এজমা,ডায়াবেটিস ও দীর্ঘস্থায়ী নিদ্রাহীনতায় তিনি হয়ে পড়েন রুগ্ন
বেলুড়মঠের পুণ্যভূমিতে নিজঘরে ধ্যানরত অবস্থায় ঘটে তার দেহাবসান
গঙ্গাতীরে চন্দনকাষ্ঠে সুচারুরূপে করা হয় তার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সমাপন
তৎকালীন সংকীর্ণ,জড়বুদ্ধিসম্পন্ন বাঙালিজাতির মধ্যে তিনি সঞ্চার করেছিলেন নবউদ্যম
আজ বহুকাল পরেও বিশ্বমঞ্চে তার অবদান স্মরণ করে জগতবাসী জানায় তাকে সস্রদ্ধ প্রণাম।।