রাত জাগার কবিতা
রাত জাগার কবিতা


শুয়ে রাতে
বিছানাতে
ঘাম হয়
ঘুম নয়
কিম্ভুতকিমাকার
স্বপ্নেতে ছারখার
পাশ বদলাতে থাকি
মেলতে পারি না আঁখি
হয় নাতো তবু ঘুম
জাগি রাতটা নিঝুম
সময়টা তো বাজে
ছোটখাট আওয়াজে
ঘুমখানি ভেঙে যায়
মন বড় ভয় খায়
ঝিঁঝিঁ পোকা
ঝাঁকে ঝাঁকে
ডেকে চলে
ফাঁকে ফাঁকে
আরশোলা হামাগুড়ি
দল বেঁধে দিয়ে যায়
পিঁপড়ের সুরসুরি
ঘুম ঘোরে লোকে খায়
পাথরের জঙ্গলে
রাতটা যে জন জাগে
সেই জানে
বিনিদ্র থাকতে কেমন লাগে
ঘড়ি বোমা
টিক-টিক
হেঁসে চলে
ফিক-ফিক
কালো মেঘে
ফেলে ঢেকে
আকাশের এক দিক
ভয় হয়
এই বুঝি
গলা কেউ টিপে দেবে
নিশ্চয়
মোরে খুঁজি
প্রান বায়ু শুষে নেবে
ফিসফাস শুনি ডাক
কুকুরেরা পাড়ে হাঁক
আসে নেমে মিশকালো
আঁধারের এক ঝাঁক
ভোর হলে
চোখ খোলে
বিহঙ্গ কলরবে,
ছলছলে
চোখ জ্বলে
রোজ ভাবি ঘুম হবে,
কিন্তু ভূতের দল
কোলাহল কোলাহল
গায় অনর্গল,
শহর জগদ্দল
যখন ঘুমিয়ে যায়
জেগে থাকি অসহায়।
বিদ্যুৎ লুকোচুরি
মেঘেদের আড়ালেতে
খেলা করে,
ভূত ও পরী
নেমে আসে ধান ক্ষেতে,
কোথাও বোমাটা ফাটে
কোথাও বা গুলি চলে,
চোর ও খুনিরা হাটে
কোথাও আগুন জ্বলে,
নিষিদ্ধ পল্লীতে
টিমটিমে আলো বাতি
রাত জাগে, বেশ্যারা
সব নিশাচরী জাতি
ঘাম ফেলে
কাজ করে,
মা ও ছেলে
একা ঘরে
শুয়ে থাকে, পাখি ডাকে
তাহারাও রাত জাগে।
হলদেটে নীল সাদা
পথেঘাটে গাদা গাদা
আলো বাতি হাত নেড়ে
ঘুম যত নেয় কেড়ে
রাস্তার লোকেদের,
গৃহহারা সবেদের
নিদ্রা দুর্বিপাকে
তাহারাও রাত জাগে।
পথ জুড়ে কুত্তা
ও মানুষেরা পঁচা গলা,
রোজকার জেগে থাকা
প্রাণভয়ে পথ চলা,
ছেলে ধরা, টাকা চোরা
সব রাতে যায় জেগে
পেটের তাগিদে
ঘুম ভাব সব যায় ভেগে,
লাশঘরে কনকনে
ঠান্ডা বরফ জুড়ে
লাশেরাও রাত জাগে
ঠান্ডা চাদর মুড়ে,
মাটি খুঁড়ে কঙ্কাল
গুটিশুটি মেরে শোয়,
ঠান্ডায়
হাঁড় গায়ে
শিশির জল বেরোয়,
বাদুড়েরা ঝুলে থেকে
পাখনা জড়িয়ে নেয়,
হিম বায়ু নরদেহে
জ্বালাপোড়া কেটে দেয়,
আর জাগে রাতে
সব মোমবাতি হাতে
যত বিদ্রোহী আছে
বিপ্লব তরে বাঁচে,
খুন রেপ হয়ে বাঁচে
যারা, তবু বেঁচে আছে
নতুন ভোরের ডাকে,
তাহারাও রাত জাগে।