"ক্যালেন্ডার"
"ক্যালেন্ডার"


দুলছে, সে শুধু দুলছে,দুলেই চলেছে
জানালার পাশে বাঁধা একটি ক্যালেন্ডার।।
দুলছে,সে শুধু দুলছে, দুলেই চলেছে..
জানুয়ারীর 1 থেকে ডিসেম্বরের 31 পর্যন্ত..
Happy new year থেকে শুভ নববর্ষ পর্যন্ত..
কারো জন্মদিন থেকে মৃত্যুদিন পর্যন্ত..
কারো বিবাহ থেকে বৈধব্য পর্যন্ত..
পূজা পার্বণ, প্রতিবাদ, দুঃখ, আনন্দ নিয়ে
লাল থেকে কালো সিঁড়ির ধাপ্ বেয়ে..
দুলছে সে, শুধু দুলছে, দুলেই চলেছে..
হয়তো তার গায়ে অসহ্য ব্যাথা রয়েছে..
হয়তো একের পর এক আঘাতে তার মূল বাঁধন ছিঁড়ছে..
তবুও..
সে দুলছে, দুলেই চলেছে..
কখনো আসল কখনো নকল বাতাসে
সে দুলছে, দুলেই চলেছে।।
ভাবছে..
"যদি আমি না দুলে আমার ফুলের বাগান দুলতো !
যদি আমি না ফুলে আমার ঝিলের জলরাশি ফুলত !
যদি আমার আকাশের মেঘেরা হাঁসত
যদি আমার জলের নৌকারা ভাসত
যদি.. যদি.. যদি.."
কি সুন্দর এই গগন
কি সুন্দর এই ধরা।
কি মধুর এই বাতাস
মধুর সুগন্ধে ভরা।।
কিন্তু সে আসল নয়, নকল
অন্যের হাতে গড়া।।
তাই সে দুলছে,শুধু দুলছে, দুলেই চলেছে..
সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, রাত পার করে
সে দুলছে..
কেন? কেন? কেন? কারনটা কি?
কারন "আত্মরক্ষা"
নিজেকে বাঁচানোর নাম আত্মরক্ষা ।
প্রতিবন্ধককে হারানোর নাম আত্মরক্ষা ।।
না দুললে হয়তো দমকা বাতাসের ধাক্কায়
সে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ।।
টুকরো টুকরো হয়ে যাবে তার শরীর
হয়তো মস্তক ছিন্ন শরীর লুটাবে ধুলায় ।
হয়তো তার লাল কালো সংখ্যাগুলি
সমস্ত সুখ দুঃখের সাক্ষী হয়ে ঝরে যাবে ।
তার আর্ত চিৎকার পৌঁছবে না কারো কানে..
ছিন্ন শরীরো পড়ে থাকবে না কোনখানে..
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সে।
বার মাসের তের পার্বণ অদৃশ্য হয়ে যাবে
ধরিত্রীর বিভিন্ন দিকে।
বাঙালি হারিয়ে ফেলবে দর্শক হয়ে
তার ধরনীর তরনীকে !!
তাই সে দুলছে, শুধু দুলছে, দুলেই চলেছে..
নিজের জন্য, পরের জন্য, সবার জন্য
দুলছে দুলেই চলেছে..
বছরের শুরুতে বাচ্চাটি তাকে বেঁধেছিল এই জানালার পাশে,
যে জানালা দেখায়..
নিষ্ঠুর এই পৃথিবীকে ।
সেই থেকে, সেই তখন থেকে সে দুলছে!
সে জানে, তার পরমায়ূ মাত্র এক বছর !
তবু..
সে দুলছে, শুধু দুলছে, দুলেই চলেছে..