জাগো কন্যা
জাগো কন্যা
ভ্রুণ থেকে যখন জন্ম হল তোর, আসলি মায়ের কোলে;
হেসে খেলে বেশ বড় হচ্ছিলি, খুশির জোয়ার এনে।
মেয়ে যখন হয়ে আসলি তুই, অনেকেই বলেছিল মেয়ে হয়েছে কিন্তু কালো;
ঠিকমত মা সন্তানের যত্ন নিও, নাহলে ও বর পাবে না ভালো।
তখন নাইবা ছিল তোর সাজ আলাপ, নাইবা থাকল তোর
চমকপ্রদ পোশাক-আসাক;
ছিলিস তো তুই একটা ছোট্ট শিশু, কিন্তু তাতেও কুনজর পড়ে গিয়েছিল অনেক পশুর।
হায়রে কন্যা! তোদের মধ্যে কেউ একজন ছিলিস ফুলের কুড়ি;
তৈরি তখন হচ্ছিল সবে তোর ভেসে চলার তরী,
হঠাৎ একদিন সেই হিংস্র পশুটা আসলো তোর দিকে ধেয়ে,
ভেবেছিলিস হয়তো তুই সেদিন, জঙ্গল থেকে কেউ বেরিয়ে এল মানুষরূপী হিংস্র জন্তু হয়ে।
তোর তো চোখে আঁকা ছিল তখন রঙ বেরঙিন পঞ্চতন্ত্রের গল্প,
বুঝতিস না তুই হিংস্র মানুষের কথা একটুও অল্প স্বল্প;
জীবনটাই শেষ করে দিয়েছিল সেদিন একেবারে,
নীল আকাশের অন্ধকারে।
হায়রে দস্যুরূপী মানুষ! কেন এত তোর ভোগের তৃষ্ণা?
ফুলের কুড়িগুলোকেও ছাড়িস না, এমনই তোর লালসা?
মেয়ে যখন হয়ে এসেছিল ও,
যারা বলেছিল মেয়ে তো কালো,
একবার তো বলতে পারতে, ও যেন করতে পারে দশের ভালো।
দোষ তো তোমাদেরও আছে যারা বলছ ও তো মেয়ে,
লেখাপড়া করিয়ে কি হবে?
দুদিন পরে দিতে তো হবে বিয়ে।
কি করে বলতে পারো, তোমাদের মধ্যেও তো কেও মেয়ে,
মেয়ে হয়ে মেয়েদের অসম্মান করো কোন দৃষ্টিকোণ দিয়ে?
জানি তোমাদেরও ভয় হয়, কারণ হয়েছে তো সে মেয়েই;
আবার যদি কোনো পশুর দৃষ্টি পড়ে লোভের প্রকল্প নিয়ে!
বলবে তো সমাজ মেয়ের সম্মানটাই গেল ফাজিল।
এবার সমাজে সে তো বাতিল।
ছোট পোশাক পরলে বলো দোষটা হল মেয়ের,
তাহলে বলতে পারো, ফুলের মত ছোট্ট শিশু কেন পালাচ্ছে ভয়ে
ধেয়ে?
দোষ নয়কো পথের ঐ ছোট্ট শিশুর বা লেখাপড়া করতে চাওয়া মেয়েটির,
কাঠগোড়ায় তো দাঁড়ানো উচিত ঐ জল্লাদরূপী মানুষটির।
শিশুকন্যা থেকে প্রৌঢ়া, তিলোত্তমা ছাড়ছে না কোনো নারীকেই ওরা,
কারণ সমাজের কাছে নারী তো এখনো বোঝা।
যারা যারা বলছ তাদের, 'জন্ম হল তোর মেয়ে রূপে,
বিয়েটাও এবার দিতে হবে ভালো বর দেখে',
বলছি একবারও কি ভাবছ তুমি, শ্বশুরবাড়ির রকমাটা তো ভালো,
মেয়েটি কি আধোও সুখী হল? যদিও সে কালো।
জোর করে তাকে ভুল করলে না তো? তাকে তুলে দিলে না তো কোনো প্রতারকের হাতে?
এর থেকে ভালো নিজের পায়ে দাঁড় করাতে, সমাজের তকমা না হয় নিতেই মাথা পেতে।
হয়ে গেল না তো সে কারোর হাতের খেলনা?
হায়রে মেয়ে! এবার একবার রুখে দাঁড়িয়ে তোর কান্না মুছে ফেলনা।
মেয়ে হয়েছ তো কি হয়েছে? গর্ব কর এতে।
কারণ তুমি তো দুর্গারূপী, কারো ঘরে মেয়ে, কারো মা, কারো স্ত্রী হও সবার ঘর আলো তাতে।
বলছি এবার সব পশুর দল, আর কত তোদের লালসা দেখাস দেখি!
কতজনকে মারতে পারিস হয়ে জল্লাদরূপী;
এক আসিফাকে মারিস যদি তোর বিষাক্ত ছোবলে,
হাজার হাজার আসিফা হয়ে লড়বো আমরা নিজেদের সবলে।
হে সমাজ বেশ্যারূপী নারীকে ঘৃণা করোনা।
হয়তো তারা ছিল বলেই, সমাজে বেঁচে গেল কিছু ধর্ষন রচনা।
ঘৃণ্য দৃষ্টিতে তাকিও নাকো সেই মেয়েটির দিকে,
দোষ তো ঐ ধর্ষনকারীর,যার পুরুষত্বের অহংকারটাই ফিকে
জীবন ধূলিসাৎ'র পর রাজনৈতিক দল এতে নাক গলাও কি কারণ?
সবাই জানে সেটা, যে লঙ্কায় যায় সেই রাবণ।
ওপরবালা বলে আছে কেউ বিচার হবে তাতে,
হয়তো সে চন্ডী রূপে পাঠাবে কোনো মাকে;
ওরে নারী এক হ এবার, নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার সৌজন্যে;
ডানা মেলে এবার ওর তো দেখি, কারণ তোরা যে রাজকন্যে।।