Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Lipika Bhadra

Drama Tragedy

3  

Lipika Bhadra

Drama Tragedy

চাঁপার কণ্ঠ

চাঁপার কণ্ঠ

3 mins
9.8K


সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র

মেয়েটিকে সেই ছোট বেলা থেকে চিনি।

ওর নাম ছিল চাঁপাকলি, তখন ওর বয়স মাত্র তিন ।

ওর অসহায় মা টা ওকে দত্ত্বক রেখেছিল তার বোনের কাছে তাকে বাঁচানোর জন্য।

সেই থেকে আমাদের চাঁপাকলি

তার ছোট মাসির কাছে মানুষ ।


চাঁপার শরীরের রঙ চাঁপা ফুলের মতোই ।

কুচবরণ কন্যার যেমন মেঘবরণ চুল !

ছোটমাসির বাড়ি এসে সে বদলে গেলো ।

সে হোল এক অন্য চাঁপা, অন্য তার রূপ ।

শৈশবে, তিন বছর থেকে পরান্যে প্রতিপালিত সেই শিশুটির জীবন থেকে

হারিয়ে গেলো মাতৃস্নেহ। কিন্তু প্রকৃতি তাকে মলিন হতে দেয়নি এতটুকু ।


নূতন প্রকাশিত কুসুম কিশোরী চাঁপা- ভোরের সূর্যের প্রভায় বিভান্বিত হলো।

মায়ের আঁচলের কবোষ্ণ ওম পাওয়া

চাঁপার কাজ হোলো ছোটমাসির বাচ্চাদের পরিচর্যা করা ।

তার ছোট্ট দুটি হাতে দিয়ে চলতে থাকে ভাইবোনেদের খাওয়া নাওয়া ঘুম ।

ছোট্ট দুটি হাতে স্কুলে আনা নেওয়া করা

সেই চাঁপা হলো শেষ পর্যন্ত পরিচারিকা !

ছোট মাসি বলেন - ,ওরে চাঁপা, গরীবের ঘরের মেয়ে গরীবের ঘরেই যাবি,

বুঝলি ? জীবনটা সে ভাবেই গড়ে তোল ।


সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র

চাঁপার তখন ষোল,রূপে হীরকের দ্যুতি । গাঁয়ের সবাই ভালবাসে চাঁপাকে ।

বাড়ির কাজ সেরে কাজল নয়না চাঁপা

কাজ করে দেয় হাতে হাতে সবার ঘরে ।

ভারী মিষ্টি তার কণ্ঠস্বর ,যেন বুলবুলি পাখি ।

কেউ বলত, চাঁপা রাস্তার কল থেকে জল এনে দে না মা ।

সুজলা দিদা বলেন, চাঁপাকলিরে, পুজোর জন্য দুটো ফুল তুলে দে না লক্ষীটি ।

ঠাকুমার জন্য একটু চা করে দিবি চাঁপা ?

বেনু কাকা ওর নরম গালটা টিপে বলতেন

গরুটাকে নিয়ে একটু গোয়ালে বেঁধে দিবি চাঁপা ?


চাঁপা স্কুলে যাচ্ছিলো ভাইবোনকে সাথে নিয়ে।

বড় দিদিমনি সেদিন চাঁপার সুন্দর মুখখানা দুহাতে তুলে ধরে বললেন -

নাম কি রে তোর মেয়ে ?

চাঁপার গোলাপী মুখটায় বিন্দু বিন্দু ঘাম,

হঠাৎ নিজস্ব সত্বা জেগে উঠলো তার মনে

বললো, বড়দিমনি গো তুমি আমায় চেন ?

আমি চাঁপা, মা নেইকো আমার, থাকি মাসির বাড়ি । তোমার ইস্কুলে পড়াবে গো ?

বড়দি তখন কি ভেবে বললেন কে জানে

'বার্থ সার্টিফিকেটটা নিয়ে আসিস তবে

তারপর দেখি কি করতে পারি তোর জন্য ।'


চাঁপা এর কোনো মানেই বোঝেনি সেদিন।

বুঝেছিল তার ছোটমাসী আর বলেছিলো- সরল,বোকা,অনাথা মেয়েটাকে,

"দিদিমনিকে বলিস তুই এক অচিন পাখি

জন্মের কোনো প্রমাণ নেই, নেই সাক্ষী

বাবার কোনো নাম নেই,নেই কোনো পদবী।

হতাশ চাঁপার স্বপ্ন চোখ সেদিন বুঝি কেঁদে উঠেছিলো, রাতে ভিজে উঠেছিলো তার ঘুমহীন বালিশ খানা ।

তারপরও থামেনি মেয়েটির স্বপ্ন দেখা,

থামেনি তার পথ চলা । চাঁপার হৃদয়ের গহীনে গাঁথা হোত রূপকথার মালা ।


সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র ।

চাঁপার দর্শনে মুগ্ধ কানাই একদিন হঠাৎ প্রেম চোখের ইশারায় ডেকেছিল তাকে।

হ্যাঁ, সাইকেলের দোকানের মেকানিক কানাই তাকে বলেছিলো -

" চাঁপা তোর কষ্ট বুঝি,বুঝি তোর জ্বালা।

অনেক খুঁজে পেতে পেয়েছি একটা ডেরা ।

তারা তোকে ইস্কুলে পড়াবে, খাওয়াবে ,

শেখাবে তোকে অনেক কিছুই ।

যাবি আমার সাথে ?


অন্তহীন বিশ্বাস নিয়ে আমাদের চাঁপাকলি

একদিন চলেগেল কানাইএর হাত ধরে।


চাঁপা এলো অন্য এক নতুন পৃথিবীতে -

যেখানে কারাগারের নিষ্ক্রিয় অবরোধে

চাঁপারা নষ্ট মেয়ে হয়ে যায় একদিন..

যেখানে চাঁপারা শরীর বেচে বেবুশ্যে হয়..

যেখানে কৈশোর আর যৌবন বেচে নিঃস্ব চাঁপাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়..।

তারপর...


তারপর একদিন চাঁপারা বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর কারাগার থেকে অন্ধকারের হাত ধরে।

মাটির সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়

ধীরে ধীরে ফসিল হয়ে যায় চাঁপাদের অবহেলিত দেহাবশেষ ।


Rate this content
Log in

More bengali poem from Lipika Bhadra

Similar bengali poem from Drama