আমার ঠাকুমা
আমার ঠাকুমা


ঠাকুমা মানেই পূর্ববঙ্গের ফেলে আসা ধুধু প্রান্তর আর বানভাসি পদ্মা র গল্প-
ঠাকুমা মানেই শীতের দুপুরে টক টক কুলের আচার
ঠাকুমা মানেই বাহাত্তর সালের অত্যাচারী পুলিশ অফিসারের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো মা!
ঠাকুমা মানেই শুয়োরানি,দুয়োরানি আর পক্ষিরাজের ঘোড়া ছোটানো;
ঠাকুমা মানেই মাথায় বিলি কেটে দেওয়া বাউল দুপুর-
ঠাকুমা মানেই হ্যারিকেন এর আলোয় সুর করে রামায়ন
ঠাকুমা মানেই কাকভোরে শিউলি র ঘ্রাণ ও ঢাকের উল্লাস
ঠাকুমা মানেই সন্ধ্যেবেলার শাঁখ আর পুজোর বাতাসা:
ঠাকুমা মানেই সব ভাইবোন মিলে লেপের তলায় হাত পা ছোঁড়া আর ভুতের গল্প-
ঠাকুমা মানেই তেতে ওঠা দুপুরে কুঁজোর ঠান্ডা জল আর হাতপাখা র শীতল বাতাস;
ঠাকুমা মানেই মায়ের হাতে মার খেয়ে আশ্রয় নেওয়া এক নরম কোল-
ঠাকুমা মানেই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে কপালে দই এর ফোঁটা আর মাথায় হাত -
ঠাকুমা মানেই সমস্ত অন্যায় আবদারের গাছে জল;
ঠাকুমা মানেই এক অনন্ত প্রশ্রয় আর অফুরান ভালবাসা।
ঠাকুমা আজ আর নেই-
আমাদের সেই একতলা টালির বাড়িটা আজ মার্বেল দেওয়া দোতলা হয়ে গেছে-
হারিয়ে গেছে সেই ভাঙা খাট, শৈশবের লেপটাও!
ভাইবোন রা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে এদিক ওদিক-
ডবলডোর ফ্রিজের জল সেই কুঁজোর জলের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা-
আমার ঘরে এখন এসি-সুইচ অন করলেই ঘর ভরে যায় কৃত্রিম ঠান্ডা হাওয়ায়-
তবু বুভুক্ষুর মত হাপিত্যেশ করে থাকি
ঠাকুমার শরীরের গন্ধ মাখা সেই হাতপাখার বাতাস আর কুঁজোর জলের জন্য॥
#positiveindia