Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

priyonkon chatterjee

Romance

5.0  

priyonkon chatterjee

Romance

বন্ধু

বন্ধু

9 mins
1.9K


(১)


" সে হাসি ছুটে যেতো গোধুলি মিছিলে

সবার অলক্ষ্যেতে তুমিও কি ছিলে?.."

অফ পিরিয়ডে বাসুদার ক্যান্টিনে বসে গিটার নিয়ে টুংটাং করতে করতে সুর তুলছিলো আদি ওরফে আদিত্য রায়। চারপাশের বেঞ্চে বসন্তের রোদের মতো ছেঁড়া ছেঁড়া ভিড়। আজ এইসময়ে মুখার্জী স্যারের ক্লাস থাকে। তাই সাধারণত কেউ সেটা মিস করেনা। কিন্তু আজকাল ডানলপ মোড়ের কাছে ব্রিজের সমস্যার জন্য এতো বেশী জ্যাম হচ্ছে, যে ওর এই ২০ মিনিটের রাস্তা আসতে পাক্কা ৫৫মিনিট সময় লাগলো। অগত্যা যা হওয়ার তাই হয়েছে। আর লেট করে কারুর ক্লাসে ঢোকাটা আদির না পসন্দ। ওর মনে হয়, এতে ক্লাসে পড়াশোনার ফ্লো-টা নষ্ট হয়ে যায়। যদিও ওর সাথেই ক্লাসে আসা রূপম আর সায়নের এসব নিয়ে বিশেষ পরোয়া নেই, কিন্তু আদি ক্লাসে গেলো না বলে, ওরা তিনজনেই একতলার ক্যান্টিনে এসে বসেছে। বাসুদা ক্যান্টিনের চেয়ারে বসে কাগজ পড়তে পড়তে ওদের গান শুনছে। যদিও এই ল্যাদ খাওয়ার সুযোগ বেশীক্ষণ পাবেনা; মুখার্জীস্যারের ক্লাস শেষ হলেই সব ছুটে আসবে বাসুদার কাছে লেবু চা নেওয়ার জন্য। সামনেই ফ্রেশার্স প্রোগ্রাম। তার জন্য ইউনিয়ন থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সেকেন্ড সেমের রেজাল্ট আশানুরূপ না হওয়ায় আদি বেশ মুষড়ে ছিলো। তাই এবারে প্রোগ্রাম করবেনা বলেছিলো। ইউনিয়নের বাকী সবাই, রূপম, সায়ন সবাই বলছিলো প্রোগ্রাম করতে, ইউনিভে লাস্ট ইয়ার, শেষ বার স্টুডেন্ট হিসাবে পারফর্ম - এইসব নানাবিধ সেন্টু মেরেও আদিকে পটানো যাচ্ছিলোনা। লাস্টে হাল ধরলো, কালচারাল সেক্রেটারি নিশা। ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স স্পেশালাইজেশনের এই মেয়েটা, বিগত কয়েক সেমেস্টার ধরে, ক্যাম্পাসের বেশ কিছু হৃদয়ে রক্তক্ষরণের মূল কারণ হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৫ ফুট লম্বা, হাল্কা চাপা রঙের ছিপছিপে চেহারা, ক্যারাটেতে ইউনিভার্সিটি লেভেলের চ্যাম্পিয়ান নিশা ভট্টাচার্যের ফ্যান ফলোয়ারস প্রচুর। মেয়ে এমনিতে বেশ হাসিখুশি। গানের গলাও অসাধারণ। কোনওদিন কোথাও গান না শিখেও যে কীভাবে কেউ এতো সুন্দর গায়, সেটা একটা বড়ো শক্ত কোশ্চেন। সে নিজে এসে গত সপ্তাহে আদিকে ধরে। "এই তুই নাকি পারফর্ম করবিনা ফ্রেশার্সে?"

আদি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, "হ্যাঁ, মানে আসলে এবারে রেজাল্টটা... বাড়িতে চাপে আছি বুঝছিসই তো!"

-"আরে বস! চাপে আছিস বলেই তো গান গাইবি। মুড ফ্রেশ হবে। আর বাড়িতে রিহার্সাল করবিনা। ক্যাম্পাসে করবো। হেড ডিপ কে বলে রুম অ্যারেঞ্জ করে নিচ্ছি।" সলিউশন দেওয়ার চেষ্টা করে কালচারাল সেক্রেটারি।

- "নাহ মানে.."

- "এই শোন, বেশী ভ্যানতাড়া একদম পোষায়না। তুই গিটার বাজাবি আর আমি গাইবো। তুই চাস আমি না গেয়ে থাকি? আর আমি না গাইলে আমার এতোজন ফ্যান ফলোয়ারস তোকে খিস্তোবে! ভালো লাগবে?" আদিকে মাঝপথে থামিয়ে বলে উঠলো নিশা।

ওর বলার ধরনে ওরা দুজনেই হেসে ফেললো। 

"আচ্ছা মাতাজি। ওম শান্তি ওম। কাল থেকে গিটার আনবো!"

-" দ্যাটস লাইক আ গুডি গুডি বয়! চলি ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।" বলে হেসে আদির মাথার চুল গুলো ঘেঁটে দিয়ে ক্লাসরুমের করিডোরের দিকে এগিয়ে গেলো নিশা। 

ওরা দুজনে সেই কলেজ থেকে বন্ধু। টিউশনেও একই ব্যাচে পড়েছে। তাই ওদের বন্ডিংটা বেশ স্ট্রং। অনেকে এটা অন্য ভাবে ভাবলেও ওরা দুজনেই জানে যে আসলে ওরা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু। তবে আদির, নিশাকে বহুদিন ধরেই ভালো লাগলেও, নিশা আবার 'আই হেট লাভ স্টোরিজ'- এর ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর! তাই আদির ইচ্ছা মনেই থেকে যায়। 

আজ অবধি যতজন কেত মেরে প্রোপোজ করেছে নিশাকে, সবাইকে যাচ্ছেতাই ভাবে অপদস্থ করেছে ও। কলেজের সিনিয়ার সবুজদা ওকে বেশ কিছুদিন ধরে বিরক্ত করছিলো বলে, ওকে একদিন এমন একটা থাপ্পর ঝেড়েছিলো যে তাকে আর কোনোদিন নিশার চারপাশে দেখা যায়নি। তাই আদিও কিছু বলে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়না।

ক্যান্টিনে গিটার নিয়ে টুংটাং করার মাঝেই রূপম হঠাৎ বলে উঠলো," বুঝলি আদি, নিশার উপর আমার একটা ফিলিংস আছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। তুই প্লিজ একটু আমার লাভগাড়িতে পেট্রোল ঢেলে দিবি?"

আদি কিছু বলার আগেই, সায়ন বললো," শালা পেট্রোলের দাম জানিস? এমনি এমনি ঢালবে? নিজের পেট্রোল নিজে জোগাড় করো।"

-"ধুর গা-ধা! তোকে বলেছি আমি? তুই ভাটাচ্ছিস কেন? এই ভাই আদি একটু দেখ না!" 

আদি একটু অবাক হয়ে তাকায়। রূপম ওর খুবই ক্লোজ বন্ধু। সেকেন্ড সেমেস্টারে ইকোনমেট্রিক্স এক্সামে রূপম ওকে ওই কড়া গার্ডের মাঝেও যেভাবে খাতা খুলে অ্যানসার দেখিয়ে পাশ করিয়েছে, তাতে আদি ওর কাছে এমনিই কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেই কৃতজ্ঞতার প্রতিদানে এভাবে, নিজের বুকে ছুরি মারতে হবে? আদি একটু ভেবে বলে, "তুই তো জানিস ও কেমন! আমি ট্রাই করবো!"

-"হ্যাঁ ভাই তাতেই হবে!" গলায় আনন্দ ঝরে পড়লো রূপমের। 

আদি কিছুক্ষণ ক্যান্টিনের জানালা দিয়ে ঝুমকোলতা গাছের দিকে চেয়ে থাকে। ভাবে ওর ফিলিংসের কথা তো রূপম বা সায়ন কেউই জানেনা। ও কাউকেই বলেনি। তো এখন আর বলাটাও উচিত না। রূপম অন্যভাবে নেবে। ওর খারাপ লাগবে। বন্ধুত্বটা নষ্ট হবে। সেটা কিছুতেই হয়না। 


(২)


"আহা, তুই C মাইনরের কর্ড টা ঠিক করে লাগা। তালটা কাটছে তো। এতো অন্যমনস্ক লাগছে কেন রে আদি? কি হয়েছে?"- নিশা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। 

ওরা ইউনিয়ন রুমে ফাঁকা পেয়ে সেখানেই গানের প্র‍্যাকটিস করছিলো। সেখানে আজ আদি বারবার কর্ড মিস করায় নিশার চোখ এড়ায়না। কিন্তু আদি কিভাবে সব বলবে, বুঝে উঠতে পারছেনা। এমনসময় নিশাই বলে, "জানিস তো,আমার না একজনকে ভালো লেগেছে খুব! কিন্তু বলতে পারছিনা। কেমন একটা সংকোচ হচ্ছে!"

আদি অবাক হয়ে তাকায়! এসব কি বলছে! "এতো ভূতের মুখে রামনাম রে! এদিকে আমি তোকে অন্য একটা খবর দেবো ভাবছিলাম!অন্য একজনের তোকে পছন্দ!" আদি বলে।

-"আমাকে? কে? আবার কার শখ হলো?" নিশা হেসে ওঠে।

আদি নিশার চোখে চোখ রেখে বলে, "রূপ মানে রূপম, আমার বন্ধু!"

নিশা কিছুক্ষণ ওর দিকে চেয়ে থাকে, তারপরে বলে," ভগবান আছে বুঝলি। পাঁড় কমিউনিস্ট হয়েই বলছি, ভগবান আছে! আমিও ওর কথাই বলছিলাম!"

আদির চোখের সামনে ইউনিয়ন রুমটা যেন দুলে উঠলো। ভূমিকম্প হলো নাকি? হুম তাই হয়েছে, তবে এর এপিসেন্টার আদিত্য রায়ের মনের মাঝে! আদির কোথাও একটা আস্থা ছিলো, নিশা একেও কাঁচি করবে। কিন্তু সব ঘেঁটে গেলো। ও কষ্ট করে হলেও ঠোঁটের কোলে হাসি আনলো। ছোট থেকে শেখা নাটকটা এভাবে প্র‍্যাকটিকাল লাইফেও কাজে এসে গেলো। ও বললো," বেশ তাহলে আজ ক্লাস শেষে তোরা আমাকে ট্রিট দিবি। এখন ক্লাসে যাই।"- বলে আদি ইউনিয়ন রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ক্লাসে যাওয়ার জন্য নয়। নিজের চোখের জল আড়াল করতে। তখন নিশা পকেট থেকে ফোন বার করে হোয়াটস্যাপ করতে ব্যস্ত।


(৩)


এভাবে কেটে গেলো, সপ্তাহ দুয়েক। এসে গেলো পুজো। পুজোয় এবারে আদিরা সিমলা ঘুরতে গেছে। অবশ্য শাপে বর হয়েছে। আগের দু-তিনবছরের পুজো ওরা সব একসাথে পুজোয় ঘুরতো। কলেজে পড়াকালীন নিশার সাথে কলেজের বন্ধুদের গ্রুপ আর গত বছরে রূপম, সায়ন, তৃষা, ত্রিধা, নিশা আর ও বেরিয়েছিলো। তখনও ও জানতো যে নিশা হয়তো একদিন বুঝবে। কিন্তু এবারে সব ঘেঁটে গেলো। হোয়াটস্যাপে দেখলো রূপম অষ্টমী ছবি আপলোড করেছে নিশা আর ওর বোন হিয়ার সাথে। হিয়া ইংলিশ অনার্স ফাইনাল ইয়ার লেডি ব্রেবোর্নে পড়ে। ওদের সাথে ক্রিস্টমাসে একসাথে বেরিয়েছিলো। জুনেও ওরা যে গ্রুপে মিলে শান্তিনিকেতন ঘুরতে গেলো, তখনও গিয়েছিলো। ছবিগুলো দেখে ওর কান্না পেতে লাগলো। কিন্তু বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার কষ্ট, ভালোবাসা হারানোর কষ্টের থেকেও বেশী- এই ভেবে ও নিজেকে শান্ত রাখলো। 


পুজো শেষ হলো। লক্ষ্মীপুজোও পার হলো। আদিও ঘুরে ফিরেছে। ইউনিভার্সিটি খুলছে আবার। আবার সেই যুদ্ধ শুরু। ক্লাসে একসাথে দেখা যাচ্ছে রূপম আর নিশাকে। আদির কষ্টে বুক ফেটে গেলেও, মুখে কিচ্ছু বললোনা। ওদের রিহার্সাল ও চলতে থাকলো। দেখতে দেখতে চলে এলো ফ্রেশার্স। এই ক্যাম্পাসে, ফ্রেশার্স অনুষ্ঠানের একটা স্পেশালিটি আছে, কাপল এন্ট্রি সিস্টেম হয় আর সাথে গেম ইভেন্ট গুলোও সেরকমই হয়। গতবারে নিশাই ছিলো আদির পার্টনার। এবারে স্বাভাবিকভাবেই সেই জায়গাটা নিচ্ছে রূপম। ভেবেছিলো আজ আদি আসবেই না। কিন্তু ও গিটারে আছে। তাই এলো। অডিটোরিয়ামে ঢোকার মুখে, ও ভাবছে কি করবে। রূপম ওর পাশেই দাঁড়িয়ে জুনিয়রদের সাথে সেলফি তুলছে। এমন সময় ত্রিধা, সায়ন, রূপমকে আসতে দেখলো। ওরা পাঁচজন মিলে আসলে একটা গানের গ্রুপ হয়ে পারফর্ম করবে। ও আর ত্রিধা গিটারে। রূপম সিন্থেসাইজার। সায়ন ড্রামসে। নিশা গাইবে আর আদি গলা মেলাবে। এছাড়াও নিশা আর আদির একটা আলাদা স্লট আছে( অন পাবলিক ডিম্যান্ড- নিশার গানের)

! অডিটোরিয়ামে ঢোকার সময়ে নিশা এসে ওর হাতটা ধরলো। তারপরে দেখলো, ওরা সবাই একে অপরের হাত ধরে ৫ জন মিলে একসাথে অডিটোরিয়ামে ঢুকলো। নিশার দিকে আদি অবাক হয়ে তাকাতে, ও বললো," লাস্ট ইয়ার আমরা নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি ছিলাম। এবারে আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলি। একটা টিম আমরা। প্রে কর, এই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে এরকম বন্ড যেন আর না ভাঙে!"

আদির চোখে জল চলে এলো আনন্দে। সত্যিই, এই কমিটমেন্টটাই তো, এই বন্ধুত্বটাই তো দামী। ওরা একসাথে গিয়ে একটা লম্বা বেঞ্চে বসলো। তারপর ওদের স্লটে ওরা ফাটিয়ে পারফর্ম করলো। নিশা যখন গান ধরলো, 

"আমার ক্লান্ত মন, ঘর খুঁজেছে যখন

আমি চাইতাম, পেতে চাইতাম শুধু তোমার টেলিফোন!"

গোটা হল উচ্ছাসে ফেটে পড়লো। এমন সময়ে আদিও গলা মেলালো। হাততালির বন্যা বয়ে গেলো। সেই সময়টাই শ্রেষ্ঠ সময় মনে হচ্ছিলো। কিন্তু ভালো সময় খুব দ্রুত শেষ হয়। প্রোগ্রাম শেষে সবাই একসাথে বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরলো। 

আর দুইদিন পরেই কালীপুজো। আবার ইউনিভারসিটি ছুটি থাকবে। ভাইফোঁটার পরে খুলবে। এমন সময় বোমাটা পড়লো শহরের বুকে। নিশা বললো, "এই সায়ন, আদি শোননা, এবারে ভাইফোঁটায় আমার বাড়ি চলে আয় তোরা। আমরা সোদপুরে যে নতুন ফ্ল্যাট নিয়েছি, সেখানেই পার্টি হোক। সকাল সকাল চলে আয় সব। সারাদিন হুল্লোড় হবে। এই ত্রিধা তুইও চলে আয়!" তারপর রূপমের দিকে তাকিয়ে বললো, "আপনিও চলে আসুন স্যার! ভয় নেই, ফোঁটা দেবোনা!'

সবাই হেসে উঠলো। আর হইহই করে উঠলো। সবাই রাজি। কিন্তু আদি অনুভব করলো, ওর মনে আবার ভূমিকম্প শুরু হয়েছে।


(৪) 


কালীপুজো কেটে গেছে। রাত পোহালেই ভাইফোঁটা। আদি অনেক ভেবেছে। কিন্তু নাহ, ওর পক্ষে সম্ভব না। ও কিছুতেই যাবেনা নিশার বাড়ি। কিছু একটা অজুহাত দিয়ে আটকে যেতে হবে। ও রাতে হোয়াটস্যাপের গ্রুপে লিখলো, ওর খুব জ্বর হয়েছে। যেতে পারবেনা! সবাই হইহই করে উঠলো। শুধু নিশা কিছু লিখলোনা। ও তখন ফোনকলে রূপমের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। 


পরদিন সকাল হতেই পুরো গল্প পালটে গেলো। সকাল ন'টা নাগাদ ডোরবেল বাজতে ও ঘুমচোখে গিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে গেলো। দরজার বাইরে সায়ন আর রূপম দাঁড়িয়ে। দরজা খুলতেই ওরাংওটাং এর মতো লাফ মেরে ঘরে ঢুকে পড়লো সায়ন। "কই কত জ্বর তোর দেখি! ওমা এতো ঠান্ডা গা একেবারে!" ততক্ষণে আদির মা বেরিয়ে এসেছে। রূপম বললো, "কাকীমা আদির জ্বর বলে দেখতে এলাম!"

আর কেসটা খেলো আদি। ওর মা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে বললো, "জ্বর? কই আদি কিছু বলেনি তো! কিরে বাবাই তোর জ্বর নাকি?" বলেই গায়ে হাত দিয়ে দেখে গা পুরো ঠান্ডা। আবার বলতে থাকে," কই না তো!"

আদি পুরো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সায়ন বলে, কাকিমা দেখছো তো, "ও যাবেনা বলে এরকম করছে! আজ আমাদের ভাইফোঁটার নেমন্তন্ন নিশার বাড়িতে।"

ওর মা আবার বলে," বাহ বেশ তো। যাবেনা মানে? ও যাবে। যা বাবাই রেডি হয়ে নে। খালি বাড়িতে শুয়ে থাকার প্ল্যান। কুঁড়ের হদ্দ একেবারে!"

আদি বোঝে আর কিছু করার নেই। পরমাণু বোমা পড়ে গেছে শহরে, যার ক্ষমতা লিটল বয়ের চেয়েও বেশী। ও ব্যাজার মুখে রেডি হয়ে বেরোয়। সায়ন ওর বাড়ির গাড়ি নিয়ে এসেছে। নিশাদের বাড়ি যাওয়ার আগে ওরা সব গিফট কিনে নেয়। আদিও বই কিনে নেয় দুটো। তারপর গাড়ি এসে থামে নিশাদের ফ্ল্যাটের নীচে।


(৫)


ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখে সবাই এসে গেছে। নিশা ওদের দেখে এগিয়ে আসে। এমন সময় ও বোঝে, যা করার এখনই করতে হবে। ও নিশাকে আলাদা করে পাশের রুমে ডাকে। নিশা আসায় ও বলে,"দেখ এটা সম্ভব নয়। আমি তোকে সেই কলেজ থেকে ভালোবাসি। কিন্তু বলিনি। আজও বলতাম না। কিন্তু আমি তোর থেকে ভাইফোঁটা নিতে পারবোনা। বাট প্লিজ এর জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট করিসনা।"

নিশা হা-হা করে হেসে উঠে গলা তুলে বাকীদের ডাকে," ওরে মহারাজ অবশেষে স্বীকার করেছেন!"

সবাই হাসিমুখে ঘরে ঢোকে। আদির গলা শুকিয়ে যায়, হাতের চেটো ঘামতে শুরু করে। এবারে কি নিশা বাকীদের মতো ওকেও অপমান করবে!

হিয়া প্রথমে মুখ খোলে," উফফ, ফাইনালি আদিদা।তুমি সত্যিই পারো। একটা কেস নিয়ে রগড়াতে পারো বটে। নিজে ভালোবাসো আর তুলে দিলে বন্ধুর হাতে! আমার একটা মাত্র বয়ফ্রেন্ড, আরেকটু হলে হাতছাড়া হয়ে যেতো!"

-"মোটেই না, নিশা আমার বোনের মতো!" প্রতিবাদ করে রূপম। 

এসব কি শুনছে ও! অবাক হয়ে আদি সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। 

হিয়াই সব বলে "আরে দিদি ও তোমাকে অনেকদিন ধরে ভালোবাসে কিন্তু তোমার সামনে স্বীকার করবেনা। এদিকে রূপের সাথে আমি শান্তিনিকেতনে যাওয়ার পর কমিটেড হই। আমি রূপকে বলেছিলাম, দিদি আর তোমার কেসটা ম্যানেজ করে দিতে। তাই আমরা প্ল্যান করি যে, রূপ তোমাকে বলবে যে ও দিদিকে ভালোবাসে। তাতে তুমি যদি কনফেস করো। কিন্তু তুমি তো দাতা কর্ণ। ভালোবাসাকে বন্ধুর হাতে তুলে দাও। এদিকে আমার দিদিটাও ছটফট করছে।

লাস্টে এই ভাইফোঁটার প্ল্যান ছকলাম। জানতাম এটায় তুমি কেস খাবেই! নাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো। তোমাকে আমি ফোঁটা দেবো। হাজার হোক জামাইবাবু হও!"

ঘরে হাসির রোল উঠলো। আদি হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। সবাই ঘর ছেড়ে বেরোলো। ঘরে শুধু ও আর নিশা। ও নিশার দিকে তাকিয়ে বললো,"এটা কি ছিলো?" ওর সামনে এসে নিশা বললো, "তুই কি ভেবেছিলি তোকে ভাইফোঁটা দেবো?"

-"আমি তো আরেকটু হলে ভয়ে.."

কথাটা শেষ হলোনা। ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটে স্পর্শ পেলো নিশার ঠোঁটের। আদি শান্তিতে চোখ বন্ধ করলো। পাশের ঘরে ত্রিধারা তখন গান চালিয়েছে, 

"আমি তোমার চোখের কালো চাই, 

তাই তোমার দিকে তাকাই..."


( ক্যাম্পাসের ঝুমকোলতা গাছ আর কৈশোরের বন্ধুত্ব মাখানো ভালোবাসা বাদে বাকী সব কাল্পনিক)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance