Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Maitreyee Banerjee

Drama

4.5  

Maitreyee Banerjee

Drama

একটা বেজন্মা পঙ্কোজ

একটা বেজন্মা পঙ্কোজ

5 mins
81.7K


হাওড়া থেকে বর্ধমান মেন লাইনের ট্রেন ছিল আমার আর আমার বরের(তখন বয় ফ্রেন্ড) কলেজ পালিয়ে টাইম কাটানোর অন্যতম প্রিয় জায়গা।দুপুরের দিকে কলেজ থেকে ক্লাস পালিয়ে বেড়িয়ে একটা বর্ধমান লোকালে উঠে পড়া আর তারপর ট্রেনের তালে চলতে থাকা।শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব ঋতুতেই নতুন আনন্দে আমাদের এই ট্রেন ভ্রমণ চলতে থাকতো।আপ লাইনে দুপুরের দিকে ট্রেনে খুবই কম লোক থাকতো।বেশীরভাগ দিনই খুব সহজেই আমরা জানালার ধারের সীট পেয়ে যেতাম।তারপর হাজার গল্প, খুনসুটির সাথে সাথে জানলা দিয়ে কত রকমের দৃশ্য দেখতে দেখতে কল্পনা আর বাস্তবের মিলমিশে গড়া এক মায়াবী জগতে চলে যেত আমাদের মন।যারা বর্ধমান লাইনে গেছেন তারা জানবেন যে কয়েক বছর আগেও(এখন জানিনা) মেমারীর পর থেকে বর্ধমানমুখী স্টেশনগুলো একপ্রকার সহজ সরল গ্রাম্য স্টেশনই ছিল।ট্রেন থেকে কখনও বা স্টেশনের পাশের হলুদ সমারোহ সরষে ক্ষেত, কখনও বা সারি সারি কাশফুল দেখে অজানা স্টেশনে নেমে পড়তাম আমরা।তারপর কিছুক্ষণ স্টেশনের কাছাকাছি মাটির রাস্তা ধরে ঘুরে, অচেনা লোকের সর্ষে ক্ষেতে DDLG র pose দিয়ে ফটো তুলে, বা ঝিলের ধারে গাছের সুনিবিড় ছায়াতলে মাছ ধরতে বসা কাকুর সাথে আগডুম বাগডুম গল্প করে, সারি সারি গাছের স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া খেয়ে,বৃষ্টিভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ শুঁকে আবার ফেরার ডাউন বর্ধমান লোকাল ধরতাম।কখনও বা মধ্য গগনের সূয্যিমামার দীপ্ত ছোঁয়ার ভয়ে ট্রেন থেকে নামতাম না।ঝালমুড়ি,ছোলা সেদ্ধ,বাদাম,সোন্ পাপড়ি, দিলখুশ,কাঁচা আম,কুলফি যা যা উঠতো সব খেতে থাকতাম।তা সে যাই হোক আজকের গল্পের বিষয় অন্য কিছু।এবার তার কথায় আসা যাক।

এরকমই একদিন গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে সম্ভবত বৈঁচী স্টেশন থেকে একটা ৯-১০ বছরের ছেলে মা র সাথে ওঠে।খালি গা, হাফ প্যান্ট পরা, মাথায় রুক্ষ চুল, কষ্টি পাথরের মতো কালো গায়ের রঙ আর তাতে অসম্ভব মিষ্টি মুখখানা আর টানা দুটো চোখ।একেবারে কৃষ্ণ ঠাকুর।মার হাতে বিশাল এক বস্তা।বস্তা নিয়ে মা বসলো দরজার ধারে।বাচ্চাটি আমাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের দুজনকে দেখতে লাগল আর মিচকি মিচকি হাসতে লাগলো।আমার ভীষণ কৌতূহল হল।

“এই ভাই শোন এদিকে।”

সে তো একলাফে হাজির।

“হাসছিস কেন রে আমাদের দেখে!?”

“মা বলে সবসময় বড়মানুষ হতে।বড় স্কুলে যেতে।তোমরা তো বড় কলেজে পড়।আর পড়ার সময় ঘুরে বেড়াচ্ছ।তাই তোমাদের দেখে হাসছি।”-সুস্পষ্ট সম্পূর্ণ উওর।বিন্দুমাত্র জড়তা আড়ষ্টতা নেই কথার মধ্যে।

ভীষণ চমকে গেলাম এইটুকু একটা পুটকের মুখে এত বড় বড় পাকা পাকা কথা শুনে।

“ভীষণ পাকা তো রে তুই।কী করে জানলি আমরা কলেজে পড়ি।পড়া না করে ঘুরে বেড়াচ্ছি?!”

“তোমাদের সাথে তো পড়ার ব্যাগ রয়েছে।আর স্কুলে পড়লে তোমরা আরও ছোট দেখতে হতে।আর এই সময় তো কলেজ ছুটি হয় না।তোমরা পালিয়েই এসেছো।”-আবার সেই মিচকে মিষ্টি হাসি।

“আমরা না হয় পালিয়ে এসেছি আর তুই?তুই তো স্কুলে যাস্ই না।পড়াশুনা না করে এখন থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছিস।বড়ো মানুষ হবি কী করে??”

“সব হবো দেখো না।আর আমি মোটেই স্কুল পালাইনি।আমি সেই ভোরবেলা স্কুল যাই।তারপর মাকে সাহায্য করার জন্য মার সাথে বেড়োই।মা সকাল থেকে কত কাজ করে।একা একা আর কত করবে।আমি এলে বেশী কাগজ কুড়ানো যায়।আমি তো চটপট করে কাজ করি।মা র অনেক “help” হয়।”

“বাব্বারে!!হেল্প!এই কথাটা কোথা থেকে শিখলি রে।আবার একদম perfect উচ্চারণ।আর কোন ক্লাসে পড়িস তুই?”

“আমি তো ইংরাজী জানি।ক্লাস ফাইভে পড়ি।স্কুলেও শেখায়।আর একটা কাকুর কাছে পড়তে যাই।১০০ টাকা নেয়।এখন দুপুরে মা আর খায় না।তাই তো মাইনে দেবার টাকা আসে।আমি অনেককিছু জানি ইংরাজীতে।ট্রেনে ওঠার আগে দেখলাম সূর্য মাথার ওপর থেকে সরে গেছে।তার মানে ১২টা বেজে গেছে।১২টা বেজে গেলে Good afternoon হয় আর ১২টার আগে Good morning. Good afternoon দিদি।Good afternoon দাদা।শুধু তুমি কি একটা বললে ইংরেজীতে ওটার মানে জানি না।ওটার মানে কি গো?আরএকবার বলো না।”

“Perfect. ওটার মানে একদম সঠিক।তুই সব একদম সঠিক বলছিস তাই তোর প্রশংসা করলাম।”

“দাঁড়াও খাতাটা আনি।একটু লিখে দাও না।”

দৌড়ে গিয়ে মার কাছে রাখা একটা শতছিন্ন পোঁটলা থেকে একটা ছোট খাতা আর একটা ডট পেন নিয়ে এল।আমি লিখে দিতে দিতে “আর কী জানিস রে তুই?”

“আমি কুড়ি পর্যন্ত নামতা জানি । চার অঙ্কের যোগ বিয়োগ গুণ সব জানি।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা ছড়া জানি। কদিন আগে ২৫শে বৈশাখ জন্মদিন গেলো গো যার।আর হিন্দীতে অ আ লিখতে জানি।”

মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম।“নিজের নামটা ইংরেজীতে লেখ তো আর এই দাদা একটা যোগ একটা বিয়োগ আর একটা গুণ দেবে।কর তো দেখি কেমন পারিস।পারলে প্রাইজ দেবো।”

আমাদের শতগুণ অবাক করে তিনটে অঙ্কই ঝটাপট করে ফেলল আর খাতায় বড় বড় করে লিখল “KUMUD BISWAS”.চমকে উঠে বললাম “এ নাম কে দিল রে তোকে ?মানে জানিস?”

“মা তো বলে ঠাকুমা দিয়েছে।আমার ঠাকুমার কথা মনে নেই।মানে কি গো?”

“পদ্ম।পদ্ম ফুল জানিস তো?”

“ও।আমার তো গোলাপ বেশী পছন্দ।আচ্ছা কী দেবে বললে।”

ওদের দুজনকে খাওয়াবার খুব ইচ্ছা করছিল।কিন্তু এমনই দুর্ভাগ্য সেদিন কিছুই ওঠেনি ট্রেনে।হয়তো বেশী পেছনের দিকের কামরায় ওঠা হয়ে গেছে।ব্যাগেও একটা বিস্কুটও নেই।পার্স থেকে একটা ১০০ টাকার নোট বার করে “এই নে তোর প্রাইজ।বড়ো মানুষ হতে গেলে তো আরও বেশী করে পড়তে হবে।এটা তোর সামনের মাসের মাইনে।কদিন কাগজ না কুড়িয়ে ওই সময় পড়বি।”

“না গো দিদি টাকা আমার চাই না।এতো অনেক টাকা।মা কতদিন ধরে জমালে তবে হয়।আর ৩টে অঙ্ক করার জন্য কেউ টাকা দেয় নাকি।১০ টা অঙ্ক করলে তবে আমি কম মার খাই।”

“আবার পাকা পাকা কথা।যা মাকে দিয়ে আয়।”

কথায় কথায় খেয়াল করিনি কখন ছেলেটার মা পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।

“না গো মেয়ে টাকা দিওনি।এত সহজে টাকা পেয়ে গেলে আর আমার ছেলেটা কষ্ট করতে শিখবেনি গো।তার লগে আশীর্বাদ করো তোমাদের মতো বড়ো মানুষ হোক।”

“আচ্ছা টাকা না হয় নাই নিলে।কিন্তু কিছু তো নিতেই হবে।এই ভাই বলতো তুই কি নিবি?”

“এইটা তোমার হাতে ফোন তাই না দিদি? এতে আমার আর মায়ের একটা ছবি তুলে দেবে?তুলে তোমার কাছে রেখে দাও।আমি বড়ো হলে তোমার কাছ থেকে গিয়ে নিয়ে আসবো।তোমার ফোন নাম্বারটা খাতায় লিখে দিও।ছবি তোলার পর আবার দিচ্ছি খাতাটা।আর দুটো লজেন্স দেবে?একটা মার একটা আমার।বাড়ীতে বোন আছে কিন্তু ওর তো এখনও দাঁতই বেড়োয়নি।ওকে আমি পরে কিনে দেব।আর কেউ নেই বাড়ীতে।”

অবাক হয়ে তিনটে ফটো তুলে দিলাম ওদের।সে যে কী খুশি ফটো দেখে।জগৎ কেনা যায় সেই খুশী দিয়ে।ব্যাগে একটা আধখাওয়া Fruits and Nut ছিল।আমি সেটা বার করতেই “কী দারুণ দেখতে গো।কত বড়।কিন্তু আমার শুধু দুটুকরোই চাই।না হলে নেব না কিন্তু।”

আমার চকোলেট ভাঙার মাঝে ছেলেটা হঠাৎ দুটো ছোট কাঁচা আম আমাদের হাতে ধরিয়ে বলে “কিছু নিলে কিছু দিতে হয় গো।এই নাও দুজনের দুটো।সকালে কুড়িয়েছিলাম পাঁচখানা।Thank you বলো।”

ট্রেনটা তখন কোন একটা স্টেশনে থেমেছিল।প্রায় ছাড়ার মুখে।হঠাৎ এক চেকার উঠে ওদের দিকে রে রে করে তেড়ে এল “এই তোরা আবার উঠেছিস!!!Ticket কাটার মুরোদ নেই এদিকে ট্রেনে চাপার শখ ষোলোআনা।যত বেজন্মার দল।আবার আম বিক্রী করছিস।”প্রায় ইলেকট্রিক শক লেগে রিঅ্যাকশানের মতো মা ছেলে ছিটকে বেড়িয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে পড়ল।আমরা পেছন পেছন দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে “যাস না।আমরা ভাড়া দিয়ে দেবো।চকোলেট টা নিয়ে যা।ফোন নাম্বার নিলি না তো।”ততক্ষণে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গতি নিয়ে নিয়েছে।নামার সাহস আমাদের নেই।পরের স্টেশনে নেমে নেক্সট্ ট্রেনে আবার ব্যাক করেছিলাম।না কুমুদের দেখা আর পাইনি।তারপরেও অনেকদিন ওই লাইনে গেছি কিন্তু কোনোদিনও পাইনি।

“বেজন্মাদের” কি আর দেখা পাবার টাইমের ঠিক থাকে।

আর এতবছরে হয়তো পঙ্কজ ফুটে গেছে পাঁকে!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama