Null Null

Drama

2.5  

Null Null

Drama

সায়াহ্নে সূর্যোদয়

সায়াহ্নে সূর্যোদয়

9 mins
9.4K


কৌশিক আর পাবলু-টুয়ার আগেই খাওয়া হয়ে গেছে । পছন্দের কার্টুন চ্যানেল দেখার জন্য দুই ভাইবোনে রিমোর্ট নিয়ে লড়াই করছে । কৌশিকের হালকা বকুনিতে কোন কাজ হচ্ছে না দেখে , মণীষা খেতে খেতেই একটা জোর ধমক লাগায় ছেলেমেয়েকে । ওদের হাত থেকে টিভির রিমোর্টটা নিয়ে টিভির কানেকশনটা খুলতে বলে কৌশিককে ।

ওয়াশিং মেসিন , হোম থিয়েটার , ফ্রিজ সবকিছুর কানেকশন খোলা হয়ে গেছে । বেশিরভাগ জিনিস-ই প্যাকিং হয়ে গেছে । দুটো আলমারির সব জিনিসপত্রও বের করে ফাঁকা করা হয়ে গেছে । আজ সকালেই কাঠের মিস্ত্রি এসে বক্স-খাটটার সেটিং খুলে আলাদা করে দিয়ে গেছে । ড্রেসিংটেবিলের কাচটায় এখন ভাঙাচোরা সংসারের প্রতিবিম্ব ।

'মা আরেকটু ডাল দাও তো । অনেকদিন পর তোমার হাতের বিউলির ডাল আর ঝিঙে পোস্ত খাচ্ছি ।' মেয়ের ডাকে ভাবনাটা ছিঁড়ে যায় আশাদেবীর । খেতে খেতে একদম অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন । বাঁহাতে করে ডালের বাটি থেকে হাতায় করে দুহাতা ডাল তুলে দেন মেয়ের পাতে । 

'ডালটায় যদি হিং ফোড়ন দিতে না মা আরো সুন্দর লাগতো ।' তৃপ্তি করে মেয়ের খাওয়াটা লক্ষ্য করেন । আরো একহাতা ঝিঙেপোস্ত তুলে দেন মেয়েকে ।

মেয়ে খেতে চাইল বলেই আজ বিউলির ডাল , ঝিঙেপোস্ত আর কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে ট্যাংরা মাছের ঝাল রান্না করতে হলো । 

এই রান্নাগুলো মানুষটা যে ভীষণ ভালোবাসতো খেতে । 

বৌদি আপনার হাতের হিং ফোড়ন দেওয়া বিউলির ডাল আর ঝিঙে পোস্ত আচ্ছা-আচ্ছা ফাইভস্টার হোটেলের রান্নাকেও হার মানায় ।

ও মা ভাত কটা নিয়ে তখন থেকে মেখেই যাচ্ছো , মুখে তো তুলছো না একবারো !!!! তোমার শরীর ঠিক আছে তো ? সকাল থেকে কি দরকার ছিল বলো তো অতক্ষণ রান্নাঘরে থাকার ! তোমাকে কতবার বললাম , আমি করে নিচ্ছি , তখন শুনলে না আমার কথা ।

না রে শরীর ঠিক আছে , বোধহয় একটু চাপা অ্যাসিড হয়েছে । আর এই তো শেষ রান্না হয়ে গেল এই রান্নাঘরে । একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাতের থালা ছেড়ে উঠে পড়েন আশাদেবী । এই বিউলির ডাল আর ঝিঙেপোস্ত আজ কিছুতেই গলা দিয়ে নামবে না আশাদেবীর ।

মণীষার ও মনটা খারাপ হয়ে যায় , কতোবছর এই বাড়িটাতে রয়েছে । কাল সকালেই সব ছেড়ে ওরা মা'কে আসানসোলে নিজের কাছে নিয়ে যাবে । মায়ের মনখারাপ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক ।

রাতে আর বাড়িতে রান্নার ঝামেলা রাখতে বারণ করেছে কৌশিক , দোকান থেকে খাবার কিনে আনবে । কাল অনেক ভোরে ট্রেন,রান্নার বাসনপত্র ওতো সকালে গোছানো যাবে না। রান্নাঘরে গিয়ে এঁটো বাসনপত্রগুলো সব সিঙ্কে জমা করতে থাকেন আশাদেবী । সবসময়ে থাকা রান্নার মেয়েটা কালকেই মাইনেপত্তর নিয়ে গ্রামে ফিরে গেছে । ঠিকে কাজের মেয়েটা আজ কাজ করে মাইনে নিয়ে যাবে । ওকে একটা পুরনো গায়ের চাদর দেবেন বলেছেন , সেটা সামনে বের করে রাখতে হবে নাহলে হয়তো ভুলে যাবেন । আজ ভুলে গেলে আর তো কখনো দিতেই পারবেন না ওকে সামান্য জিনিসটাও ।

খাবার টেবিলের এঁটোবাসনগুলো গুছিয়ে নিয়ে উঠে পড়ে মণীষা । বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো একটা বাটিতে করে অভ্যাস মতো কলতলার দিকে যান আশাদেবী । সাদা মেনি বিড়ালটা অপেক্ষা করে বসে থাকে এই পাতের ফেলা খাবারটুকুর জন্য । কাল থেকে বেচারী অপেক্ষা করেই থাকবে , জানতেও পারবে না এবাড়ি থেকে আর কেউ কোনদিন ওকে খাবার দেবে না ।

    মণীষা পাবলু-টুয়াকে ছোটঘরের চৌকির বিছানাটাতে শুইয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে । কৌশিক একটু বেরিয়েছে,আশাদেবীর ব্যাঙ্কের কাগজপত্র সংক্রান্ত কাজ বাকি আছে সেইকটা সারতে৷ পশ্চিমদিকের বারান্দাটায় এইসময় একটু রোদ আসে , রোজকার মতো প্লাস্টিকের টুলটা নিয়ে গিয়ে বারান্দায় বসেন আশাদেবী । সেই কতদিন আগে ভাড়া এসেছিল এই বাড়িটায় , মণীষা তখন সবে মাত্র ক্লাস ফোর । সেদিন অনেক চেষ্টা করেও মনসিজের সাথে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারেননি আশাদেবী । মনসিজ তখন যে কোন কিছুর বিনিময়ে মুক্তি চাইছিল ওদের মা-মেয়ের কাছ থেকে । মনসিজকে ভালোবাসাহীন বন্ধন থেকে আইনি মুক্তি দিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন আশাদেবী । ছটা মাস চোখকান বুজে কোনরকমে ভাইএর সংসারে ছিলেন মেয়েকে নিয়ে । তারপর মেয়ের হাত ধরে সোজা এই বাড়িতে । ততদিনে স্কুলের চাকরিটা পেয়ে গেছেন কপালজোরে । আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে , মেয়ে সহ ডিভোর্সী এক মহিলাকে কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছিল না । তখন এক কলিগের সহায়তায় এই বাড়িতে আসা । বাড়িওয়ালা অবনী সরকার এককথায় রাজি হয়েছিলেন ভাড়া দিতে । দুটো ঘর , ডাইনিং, কিচেন , টয়লেট আর একফালি ছোট বারান্দার পুরো একতলাটা ফ্ল্যাট সিস্টেমে ভাড়া , তখন ভাড়া ছিল পাঁচশ টাকা । সেই ভাড়া বাড়তে বাড়তে এখন আড়াই হাজার হয়েছে । 

  অবনীবাবুর স্ত্রী মৈত্রেয়ী আর ছেলে অমিতকে নিয়ে ছোট সংসার । দুটো পরিবারের মধ্যে ভাড়াটে - বাড়িওয়ালার সম্পর্ক ছিল না কোনদিন , মিলেমিশে ঠিক যেন একটা পরিবার ছিল । আশাদেবী স্কুল নিয়ে ব্যস্ত থাকলে মৈত্রেয়ী মণীষাকে নিজের কাছে রাখতেন । মেয়ের খাওয়া পড়াশুনো নিয়ে আর ভাবনা থাকতো না । মণীষাকে মাধ্যমিক অবধি অঙ্ক করিয়েছেন অবনীবাবু , কখনো অঙ্কের টিউটর রাখতে হয়নি । ছুটির দিনে অনেক রকম রান্না করতেন আশাদেবী , অমিত-মণীষা দুজনেই সেদিন একসাথে খেতো । আর অবনীবাবু আর মৈত্রেয়ীর জন্য সব তরকারী সাজিয়ে উপরে দিয়ে আসতেন আশাদেবী । 

কোথা দিয়ে যে দিনগুলো কেটে গেল , কোন হিসাব-ই যেন নেই । অমিত মণীষা দুজনেই বড় হয়ে গেল দেখতে দেখতে । অমিত এম.বি.এ. পড়তে ব্যাঙ্গালোর চলে গেল , তারপর ওখানেই চাকরীতে জয়েন করলো । মণীষার বিয়ে হলো , অবনীবাবু আর মৈত্রেয়ী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ের সবটুকু সামলেছিলেন । মণীষা শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার একাকিত্বটুকু আশাদেবীকে একটু বুঝতে দিতে চায়নি মৈত্রেয়ী , ছোট বোনের মতো সবসময় সাথে সাথে থেকেছে । কিন্তু ছ-মাসের মধ্যে যে সেই মানুষটা তার সাজানো সংসারটা ফেলে চলে যাবে কেউ ধারণাও করতে পারেনি । দুদিনের জ্বরে চলে গেল মৈত্রেয়ী । অমিত এসেছিল মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে । মণীষা আসতে পারেনি , পাবলু-টুয়া তখন ওর পেটে । ডাক্তারবাবু ট্রাভেল করতে নিষেধ করেছিলেন । সে মেয়ে তো ফোনেই কেঁদেকেটে সারা । মায়ের কাজ মিটে গেলে অমিত ফিরে গিয়েছিল ব্যাঙ্গালোর।বলেছিলে কলকাতায় বদলির ব্যবস্থা করবে৷ তাহলে অন্তত চুঁচুড়া থেকে রোজ যাতায়াত করতে পারবে ।

অবনীবাবুর মতো চনমনে মানুষটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে । মৈত্রেয়ীর চলে যাওয়ার দুঃখটা মন থেকে মেনে নিতে পারছিলেন না কিছুতেই । মৈত্রেয়ী চিরকাল নিজের হাতে রেঁধেবেড়ে খাইয়েছেন মানুষটাকে , রাঁধুনির রান্নায় নিজেকে অভ্যস্ত করতে একটু সময় তো লাগবেই । আশাদেবীর রান্নার মেয়ে ললিতা সবসময় এবাড়িতেই থাকতো । ছুটির দিনে এটাসেটা রেঁধে মেয়েটাকে দিয়ে দোতলায় পাঠিয়ে দিতেন । সব যন্ত্রণার গায়ে যেমন সময়ের প্রলেপ পড়ে , তেমনি পড়েছিল অবনীবাবুর যন্ত্রণায় । ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল মানুষটা । 

অমিত এক আবাঙালি মেয়েকে বিয়ে করে ব্যাঙ্গালোরেই , বাবাকে বিয়ের খবরটুকু অবধি দেয়নি । একদিন হঠাৎ বৌ নিয়ে হাজির । আশাদেবী তখনো রিটায়ার করেননি , স্কুল থেকে ফিরে সব দেখেশুনে তো অবাক । কিন্তু অবনীবাবু সবটুকু মেনে নিয়েছিলেন হাসিমুখে । অমিত আর বৌমা যে-কদিন ছিল , একেবারে হৈহৈ করে কাটালো । আশাদেবীকে অবধি সেই কটাদিন ছুটি নিতে বাধ্য করেছিল । একদিন তো চারজনে মিলে গাড়ি করে কলকাতা ঘুরেও এসেছিল । 

তারপর গত একবছরে অমিত কাজের ব্যস্ততা কাটিয়ে আর আসতে পারেনি চুঁচুড়া । তবে নিয়ম করে ফোনে বাবার খোঁজ নিত , আশাদেবীকেও ফোন করতো , বাবাকে একটু খেয়াল রাখতে বলতো বারবার করে ।

রিটায়ার করার পর সময় যেন থমকে গিয়েছিল আশাদেবীর কাছে । জীবনের বেশিরভাগ পথটা পেরিয়ে আসা দুটো মানুষের একই ছাদের নীচে দুটো আলাদা সংসার । হয়তো সারাদিনে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় গুটিকয় কথা । মৈত্রেয়ী চলে যাওয়ার পর নিজে বড় একটা দোতলায় যেতেন না , খোঁজখবর যা নেওয়ার ললিতাকে দিয়েই নিতেন । 

অবনীবাবুর রাঁধুনি মেয়েটা আসতে একটু বেলা করতো বলে সকালের চা-বিস্কুটটা নিচে থেকেই যেত । সেদিন ও ললিতা চা নিয়ে উপরে দিতে গিয়েছিল । আশাদেবী তখনো বাথরুমে , ওনার চা টা ডাইনিং টেবিলে রাখা রয়েছে । ললিতা কাঁদতে কাঁদতে নেমে এসেছিল , দেখবে চলো মাসিমা জ্যাঠামশাই সাড়া দিচ্ছে না । একা থাকতেন বলে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করতেন না অবনীবাবু । ললিতার কথায় ছুটে গিয়েছিল দোতলায় । মানুষটা পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন ।পাড়ার শশধর ডাক্তারকে ফোন করার প্রায় সাথে সাথে চলে আসেন উনি । নাড়ী স্তব্ধ , কাল রাতেই ঘুমের মধ্যে চলে গেছেন সবাইকে ছেড়ে । আগের দিন বিকালেও চা খেতে খেতে ললিতাকে বলেছিলেন , তোর মাসিমাকে বলিস তো একদিন শুক্তো রাঁধতে । ঘটনার আকস্মিকতাটা কাটিয়ে অমিতকে ফোন করেছিল । অমিতের স্ত্রী আসতে পারেনি , অমিত একাই এসেছে । দাহকার্য সেরে ফিরে এসেই কথাটা জানায় আশাদেবীকে । চুঁচুড়ার বাড়ি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিক্রি করে দেবে , ও আর এখানে ফিরবে না কোনদিন ।

মণীষাও ছেলেমেয়েকে নিয়ে এসেছে কাকুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে , জামাই কৌশিক ও এসেছে সঙ্গে । ওরা কেউ আর আশাদেবীকে একা এখানে থাকতে দিতে রাজি নয় । ওদের সাথে করেই নিয়ে যাবে আসানসোল । রিটায়ার করার পরেই মা-কে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিল মণীষা , কিন্তু আশাদেবী রাজি হননি । উনি চলে গেলে যে মানুষটা ভীষণভাবে একা হয়ে যেতেন। অথচ মানুষটা একবারটি ওনার কথা ভাবলো না , দিব্যি চলে গেলেন! !

ঘরে ঢুকে একান্ত আপন ছোট ট্রাঙ্কটা নিয়ে বসেন আশাদেবী । তালা খুলতে ঢাকনা খুলতেই একরাশ স্মৃতিমাখা গন্ধ । বিয়ের বেনারসী , মণীষার প্রথম স্কুলড্রেস , কলেজ জীবনে লেখা কিছু ডায়েরি , কিছু বই , এলোমেলো কিছু পুরনো কাগজ , খাম । সবের মধ্যে থেকে খুঁজে আকাশি নীল খামখানা তুলে নিলেন সযত্নে । ভিতরের কাগজটা বের করতে গিয়েও থেমে গেলেন । যদিও মণীষা-পাবলু-টুয়া ঘুমাচ্ছে , তবুও ঘরের দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিলেন আস্তে করে । খামের ভিতর থেকে বের করলেন কাগজটা ,

" পড়ন্ত বিকালের আলোটুকুও মুছে গেছে ,

জীবন ঘড়িতে এখন রাত্রির পদধ্বনি ;

শূণ্যতাকে আজকাল ভীষণ ভয় করে 

আর শূণ্যতা চাই না ।

নীরবতার ও কিছু নিজস্ব ভাষা থাকে ,

সব ভাষা তো কথায় মুক্তি পায়না ,

তবু আজ এটুকুই আমার বেঁচে থাকার ' আশা ' !!! "

কয়েকমাস আগে পোস্টঅফিস থেকে পিওন এসে দিয়ে গিয়েছিল খামটা । লেখাটা পড়ে যতটা অবাক হওয়ার কথা ছিল তার কিছুমাত্র হননি আশাদেবী । তবে পরপর কটা রাত চোখে পাতায় এক করতে পারেননি । এই হাতের লেখাটা তাঁর যে ভীষণ চেনা , মণীষার অঙ্কখাতায় কত কারেকশনে দেখেছেন এই লেখা ।

'মা - ও মা , দরজা বন্ধ করে কি করছো তুমি ?'

মণীষার ডাকে চমকে ওঠেন আশাদেবী । অসাবধানে একফোঁটা জল গাল থেকে গড়িয়ে পড়ে কাগজটার ওপর । তাড়াতাড়ি কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুছে দেন জলটুকু , যেন ঐ লেখার একটা অক্ষর ও না অস্পষ্ট হয়ে যায় ! কাগজটা খামের মধ্যে ভরে , খামটা ট্রাঙ্কের অন্য জিনিসের ফাঁকে ঢুকিয়ে দেন ।

দরজা খুলে দিতেই মণীষা ঘরে ঢোকে , মায়ের চোখে তখনো জল ।

'মা তুমি আবার মনখারাপ করছো ? এমন করলে তো তোমার শরীর খারাপ করবে ।'

নাহ আর কোন মনখারাপ বা কষ্ট নেই আশাদেবীর মধ্যে । উনি মনে মনে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে ফেলেছেন । ট্রাঙ্কটা বন্ধ করতে করতে মেয়েকে বলেন , ''কৌশিককে একটা ফোন কর্ তো মা । ওকে বল্ ব্যাঙ্কের কাগজপত্র ট্যান্সফার করতে হবে না । এই বাড়িটা আমিই কিনে নেব। যা টাকা জমানো আছে কুড়িয়ে বাড়িয়ে মনে হয় হয়ে যাবে৷ আর যদি তাতে নাহয় গয়নাগুলো তো শুধুশুধু পড়েই আছে , সেকটাই নাহয় বেচে দেবো ।''

সব গোছানোর পর মায়ের এই সিদ্ধান্তে মণীষা তো অবাক । 'কিন্তু তুমি এখানে একা থাকবে কি করে ?'

''একা থাকবো কেন রে ? ললিতাকে আজকে ফোন করলে কালকেই চলে আসবে । আর তাছাড়া এতো বছরের স্মৃতিগুলো তো সবসময় আমার সাথেই থাকবে।''মায়ের শেষের দিকের কথাগুলো কেমন যেন খাপছাড়া লাগে মণীষার । হয়তো আরো কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিল মাকে । কিন্তু আশাদেবীর চোখদুটো তখন যেন তাঁর এলোমেলো হওয়া সংসারটাকে আবার নতুন করে সাজানোর স্বপ্নে বিভোর!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama