sumana ghosh মনফড়িং

Inspirational Children

3  

sumana ghosh মনফড়িং

Inspirational Children

প্রতিশ্রুতি

প্রতিশ্রুতি

8 mins
272


           

"না না, পরশু নয় কাল ,কালই যাবো । কাল কালই যাবো।” কথাটা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম মনে নেই আমার। ভোর ৪ টা হবে, হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, একটা স্পর্শে। স্পর্শটা আমার বড্ড চেনা যে! অস্ফুটে বেরিয়ে এলো ঠাম্মি! পাশ ফিরে দেখি, এ যে সত্যি ঠাম্মি! বিছানার ওপাশে সরে গেলাম, বললাম, “ঠাম্মি বসো, বসো না ঠাম্মি।” ঠাম্মি বসল, মাথায় হাত বুলাতে লাগল। এমনিতেই, ঘুমটা আমার একটু ভেঙেই এসেছিল, কিন্তু ঠাম্মি মাথায় হাত বুলানোতেই আবার হালকা ঘুম ঘুম পেতে লাগলো, যেন চোখটা বুজে আসতে চাইছে। তবু, যতটা সম্ভব চোখ দুটো খোলা রেখে ঠাম্মির সঙ্গে কথা বলতে লাগলাম। বললাম ঠাম্মি ,"আমি পরশু নয় কালই যাব।" মৃদু হেসে ঠাম্মি বলল ,"কাল কি আর তোমার যাওয়া হবে দিদিভাই, তুমি বরং পরশুই যেও, যেও কিন্তু!” কেন ঠাম্মি! কাল কেন নয়? উত্তর এল না। তার বদলে, কি একটা যেন আমার বালিশের পাশে রাখল, ঠাম্মি। অবাক হয়ে দেখলাম তার চোখে জল । কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ঠাম্মি আমার কপালে একটা চুমু দিল, বলল “আসি দিদিভাই।” হাঁটতে হাঁটতে দরজা দিকে চলে গেল ঠাম্মি। আর চোখ চাইতে পারলাম না, ঠাম্মি যে আমায় ঘুম পারিয়ে দিয়ে গেল। শুধু শুনতে পেলাম ঢং ঢং ঢং ঢং।


পরদিন সকালে আকস্মিক কান্নার আওয়াজে ঘুমটা কেমন ভেঙে গেল আমার। ভোর রাতে ঘুমানোয় মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করেছিল। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলাম, কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করে পৌঁছালাম ঠাম্মির ঘরে।

  চোখ রগড়াতে রগড়াতে জিজ্ঞেস করলাম "কাঁদছো কেন মা?" উত্তর এল, "তোর ঠাম্মি আর নেই।"


কিন্তু! কাল যে... বলতে গিয়েও একবার তাকালাম ঠাম্মির দিকে। দেখলাম প্রাণহীন দেহ পড়ে রয়েছে নড়াচড়া নেই, একটা অস্বাভাবিক ঘুম। বুকের ভিতরটা কেমন ধড়াস করে উঠল। মন মানলোই না, খানিকটা বিরক্ত হয়েই বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে । সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে হিসাবটা মেলাবার চেষ্টা করলাম, কিছু মিলছেনা কেন? কি করে সম্ভব? মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলাম। কাল যে ঠাম্মি বেশ সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। উঠে এল সিঁড়ি বেয়ে, আমার ঘরের দরজা পর্যন্ত এল , খাটে বসলো। খাটে বসলো! কিন্তু আমি তো দরজা খুলিনি! দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। ছিটকিনি বন্ধ দরজার ভিতরে ঠাম্মি ঢুকলো কেমন করে? বুকের ভিতরটা আরো একবার ধড়াস করে উঠল। মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেল, বসে পড়লাম সিঁড়িতে।


   কাকিমনি মুখে জলের ছিটে দিলে, দেখি আমি আমার ঘরের বিছানায়। বাবা সবাইকে বললো ঘরটা ফাঁকা করে দিতে, নিচে অনেক কাজ আছে সকলে যেন সেখানে যায়, আমার বিশ্রাম প্রয়োজন। বাবাও চলে গেল। আমিও বাধা দিলাম না, আমাকেও তো অনেক হিসাব মেলাতে হবে। উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। চোখ বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে প্রথম থেকে ভাবতে শুরু করলাম, তখনও ঘোর কাটেনি আমার। শুরু করলাম ঠাম্মির স্পর্শ, পাশে বসলো, হাত বুলালো, ওটা রাখল বালিশের পাশে। কি রাখলো ওটা! চোখের বন্ধ পাতাটা একবার খুলেই আবার বন্ধ করে মনে করতে লাগলাম , অনেক চেষ্টা করেও তবু মনে পড়ল না; ওটা যে কি রাখলো! মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো আর কিছু ভাবতে ভাল লাগছিলো না। উঠে বসে হাত বাড়ালাম খাটের পাশে রাখা টেবিলের উপরের জলের বোতলের দিকে। চোখে পড়লো একটা পুরনো বাঁধানো মোটা খাতা। খাতাটা হাতে তুলতেই মনে পড়ল ঠাম্মি তো এখানেই রেখেছিল ওটা। ওটাই তবে এটা! মলাট টা তুলতেই ভিতরে দেখি নামটা; সনোকা লাহিড়ী। খাতাটা হাতেই আছে আবার ভাবতে লাগলাম। তবে ঠাম্মি সত্যিই এসেছিল! এটাই তো তার আসার প্রমাণ। কিন্তু বন্ধ ঘরের রহস্যটা? ঘরে আসলেই বা কি করে, কি করেই বা চলে গেলে? আমি তো দরজার ছিটকিনি খুলেই সকালে বাইরে গেছি। রাতে উঠেছিলাম বলেও তো মনে নেই!... কিন্তু তার যাওয়াটা তখন স্পষ্ট মনে পড়ছিল না আমার । আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম, আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে যাচ্ছে ঠাম্মি , দরজা খোলার শব্দ নেই। অন্ধকারে যেন মিলিয়ে গেল ঠাম্মি! হঠাৎ একটা শীতল প্রবাহ নেমে যায় ঘাড় বেয়ে।


তখন লৌকিক অলৌকিক সব যে গুলিয়ে ফেলেছি আমি! ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগলো। যখন ধাতস্থ হলাম দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। ওদিকে নিচে সব জোগাড় যন্ত্র হয়ে গেছে, আত্মীয়রা সব এসে গেছে । আমিও নিচে নামলাম। শববাহী গাড়িটা ঠাম্মিকে নিয়ে চলে গেল। শেষকৃত্য সম্পন্ন করে সকলের ফিরে আসতে ৪টে বেজে যায়। ততক্ষণ আমি মা আর কাকিমনির সঙ্গেই ছিলাম। বহু চেষ্টা করেও ব্যপারটা কিছুতেই বলে উঠতে পারলাম না।


  বিষন্ন দিনটা এভাবেই কেটে যায়.... দুপুর থেকে মেঘলা, সন্ধ্যেও নামে তাড়াতাড়ি। আকাশের অবস্থা ভালো না, মনে হচ্ছিল তখনই বৃষ্টি নামবে।

সন্ধ্যেবেলা বসি ঠাম্মির খাতাটা নিয়ে। হঠাৎ লোডশেডিং! শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি । একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়তে শুরু করি ঠাম্মির খাতাটা। অত মোটা খাতা একদিনে পড়ে শেষ করা সম্ভব নয় তাই বেশ কয়েকটা পাতা পড়ার পর দেখলাম নটা বেজে গিয়েছে, মা নিচ থেকে খেতে ডাকছে। খাতাটা বন্ধ করে নিচে চলে গেলাম । বাইরে তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, মোমবাতিটা ততক্ষণে নিভু নিভু । খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আরো একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলাম ঘরে, এসে দরজাটা বন্ধ করে খাটে বসলাম। ওই খাতাটা নিয়ে এলোমেলো ভাবে পাতাগুলো উল্টাতে পাল্টাতে হঠাৎ দুটো ব্রাউন খাম পড়ল আমার কোলে। প্রথম খামটিতে একটি এবং দ্বিতীয়টিতে ভাঁজ করা দুটি কাগজ।

  ঘড়িতে তখন দশটা বেজে গেছে। আমি খাম দুটো সযত্নে খাতার মধ্যে রেখে, ভোর চারটের এলার্ম লাগিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। কাল ভোর ভোর উঠতে হবে অনেক দূরের পথ।


রেডি হয়ে নিচে নামতে ৫টা বেজে গেল। অত সকালে বাড়ির কেউ ঘুম থেকে উঠে না । নিচে নেমে মা-বাবার ঘরের দরজা নক করলাম।

মা দরজা খুলে আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলো, প্রশ্ন ছিলো “আজকের দিনে ,এত সকালে কোথায় যাচ্ছিস ?” বললাম, “কলকাতা। তাড়া আছে এসে বলবো কোথায় যাচ্ছি কেন যাচ্ছি। ফোন করো না সাইলেন্ট করে রাখবো।” মা হতভম্বের মতন দাঁড়িয়ে রইল। আমার এরূপ আচরণে তারা পরিচিত নয়। ততক্ষণে আমি সদর পেরিয়ে গেছি। এরপর বাড়িতে কি হয়েছিল তা আমার জানা নেই, তবে অনুমান করতে পারি।


বাস স্ট্যান্ড পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৬টা বেজে যায়। ৬:২৫ মিনিটের বাসে চড়ে বসলাম, সৌভাগ্যক্রমে সিটটা ছিল ধারের।

গতরাতের বৃষ্টির জন্য সকালটা বেশ স্নিগ্ধ। ফুরফুরে হাওয়ায় মনটা কেমন শান্ত হয়ে যায় । পুরনো স্মৃতিগুলো ভিড় করে আসে, মনে জমে থাকা মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে দুচোখ বেয়ে।


    বাস কলকাতা পৌঁছাতে ৯টা বেজে যায়। সেখান থেকে আবার একটা বাস ,গন্তব্যে পৌঁছাতে ১১টা।

   স্কুলটা ছোট। গেটম্যান বেশ বয়স্ক। আমি তাকে বললাম, “স্কুলে হেডমিস্ট্রেস আছেন।"

উনি বললেন "আছে"।


বললাম "ওনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই ।"

উনি বললেন, "আমি আপনার কথা ওনাকে গিয়ে জানাচ্ছি।"

ফিরে এসো উনি বলেন,"আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে, বড়দি ব্যস্ত আছে। সাড়ে এগারোটায় দেখা করবে।"


ঘড়িতে তখন 11:07 am বারবার দিকে তাকাচ্ছিলাম হাতঘড়িটার দিকে। 11:30 am হলে গেটম্যান আমাকে হেডমিস্ট্রেসের রুমে পৌঁছে দেন। হাতে সেই দুটি ব্রাউন খাম।


    অনুমতি নিয়ে ভিতরে গিয়ে হেডমিস্ট্রেসের বিপরীতের একটি চেয়ারে বসি। টেবিলে নেমপ্লেটে লেখা, মিসেস মঞ্জুশ্রী বসু। উনি গম্ভীর কণ্ঠে জানতে চান আমার আগমনের কারণ। ওনাকে জানাই- আমি অনুভূতি লাহিড়ী। বর্ধমান থেকে আসছি। আমার ঠাম্মি এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী সনোকা লাহিড়ী। তার শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য আমি এখানে এসেছি। উনি সামান্য অবাক চোখে তাকান আমার দিকে।


আমি খাম দুটো ওনার হাতে দিই। ওনার হাতের প্রথম খামটা খুলতে বেরোয় একটা দু লাখ টাকার চেক। আমি বললাম ঠাম্মি স্কুলের উন্নতির জন্য এইটুকু পাঠিয়েছেন। উনি দ্বিতীয় খামটি খুললে বের হয় একটা A4 সাদা পাতা; যার এক পিঠে লেখা একটা কবিতা। ও হ্যাঁ! আর একটা যে কাগজ ছিল, তাতে এখানকারই ঠিকানা ছিল ওটা আমি বের করে নিয়েছি আগেই।


Oh! school was what a part of my life.

Oh! When I was a little girl.

           What a pretty day was that!

   Everyday, with my mom,

             I would go to school very fast.

    Now I live in lonely life,

             But, tell you those noisy days; very nice.......

    Fairy tales, warning bells and icecream.....

        *         *          *           *         *         *

    Oh! How long,

            I haven't heard warning bells...

     As possible as five tens.

               Oh! How sweet,

                       my school and school gate!


উনি আবার তাকান আমার দিকে। “কবিতাটি ঠাম্মি লিখেছেন। এই স্কুলে পড়াকালীন বার্ষিক পত্রিকায় প্রতিবছর কবিতা লিখতেন, ওনার শেষ ইচ্ছা ওনার লেখা এই কবিতাটি এই স্কুলের বার্ষিক পত্রিকায় যেন ছাপা হয়।”


হেডমিস্ট্রেস বলেন "মিসেস লাহিড়ী কে স্কুলের পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ। স্কুলের জন্য উনি যে এতটা ভেবেছেন এর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ খুবই কৃতজ্ঞ। আর ওনার লেখা কবিতাটি অবশ্যই থাকবে এ বছরের বার্ষিক পত্রিকা।"


নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, দুচোখ বেয়ে নেমে এলো জল। বললাম,"অসংখ্য ধন্যবাদ ।আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব"। এতক্ষণ আমাদের মধ্যে যে কথোপকথন হচ্ছিল তা পুরোটাই ছিল ফরমাল। এবার, উনি নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে এলেন। স্নেহ সুলভ কন্ঠে বললেন,"কাঁদছো কেন তুমি? চোখের জল মোছো, মোছো বলছি।”


একটা জল ভর্তি গ্লাস আমার হাতে দিয়ে বললেন “আগে এটা শেষ করো।” আমিও জলটা পুরো শেষ করে গ্লাসটা টেবিলে রাখলাম। হুশ ফিরল আমার। ইশ্ এভাবে কাঁদলাম! ব্যক্তিগত সমস্যা আমি কখনো করো সঙ্গে শেয়ার করি না, কি সুখ কি দুঃখ। ঠাম্মিরই গুন পেয়েছি এটা। কিন্তু, এত বড়ো আবেগে কি জীবনের সব এথিক্স মানা সম্ভব?


মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে ওঠার আগেই উনি বললেন, “এবার বলো।” কিঞ্চিৎ ইতস্তত হলাম, কিন্তু ওই স্নেহ বাৎসল্যপূর্ণ জিজ্ঞাসা উপেক্ষা করতে মন চাইল না। বললাম, “ঠাম্মি বেশ কয়েক বছর অসুস্থ ছিলেন। গতকাল ভোর ৪টেয় গত হয়েছেন। মারা যাওয়ার আগের রাতে; সোমবার, আমায় তাঁর শেষ ইচ্ছাপূরণের কথা জানান । আমি তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আজ, মানে বুধবার এখানে আসব। কিন্তু তার আগেই উনি চলে যান। ওঁনার শেষ ইচ্ছাপূরণের জন্য আমার এখানে আসা।


নিজ সত্তা ব্যতীত অপর সত্তার ইচ্ছে পূরণে যে এতখানি আনন্দ আগে বুঝিনি। তাই আর আবেগটা ধরে রাখতে পারিনি।” কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিস্তব্ধ বয়ে যায় গোটা রুমে। আবেগগুলো গুছিয়ে নিয়ে উঠে পড়ি। "অসংখ্য ধন্যবাদ, ম্যাডাম। অনেকখানি পথ যেতে হবে, এখন তবে আসি।"


"ঠাম্মির প্রানের প্রিয় স্কুলটাকে একবার ঘুরে দেখবে না, অনুভূতি!"


না বলার কোন অবকাশই ছিল না। বললাম, "এ যে আর এক পরম পাওয়া।"


স্কুলে তখন সেকেন্ড পিরিয়ড। গোটা স্কুল গমগম করছিল সেই চেনা গুঞ্জনে; দুতলার একটা করিডোর দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ চোখ আটকে যায় রুম নাম্বার ফাইভে; সেই চেয়ার-টেবিল -ব্ল্যাকবোর্ড-চক-ডাস্টার, হাই বেঞ্চ-লো বেঞ্চ; দৃশ্য গুলোও সেই একইরকম, ফার্স্ট বেঞ্চের মেয়েটার মন দিয়ে পড়া শুনছে, লাস্ট বেঞ্চের গুলো গল্পে মশগুল। আর মাঝামাঝি একটা বেঞ্চে ঘুমিয়ে পড়েছে, একটা মেয়েটা ওকে দেখে আমার ক্লাসমেট অনন্যা কথা মনে পড়ে যায়। ও খালি ঘুমিয়ে পড়তো অমৃতা ম্যামের ক্লাসে। আর ওর পাশে বসে থাকা মেয়েটা! ওকি ওতো আমি! তাকিয়ে আছি খোলা জানালার বাইরে। হঠাৎ বেল পড়ে যায়। সেকেন্ড পিরিয়ড শেষ। এবার আমার ফেরার পালা। 


ম্যাডাম বললেন, "ঠাম্মির একটি ছবি চাই, আছে?" বললাম, "প্রিন্টেড নেই, তবে ফোনে আছে।" উনি বললেন, “ নাও এটা রাখো। আমার কন্টাক্ট নং, এখানে ছবি আর বাড়ির ঠিকানা পাঠিয়ে দিও। ১০ দিনের মধ্যেই স্কুল পত্রিকা বের করে ফেলবে। ১লা বৈশাখ আমরা মিসেস লাহিড়ীর ঠিকানায় পৌঁছে দেব। বাসে যেতে যেতে ছবি আর ঠিকানা সেন্ড করে দিলাম


     বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেজে গেল 7:30pm বাড়ি বাড়ি ঢুকতে না ঢুকতেই প্রথম চোখে পরলো মায়ের। দেখলাম তেমন কিছু বলল না, শুধু বলল," এখন অনেক বড় হয়ে গেছিস না! বড় স্বাধীনচেতা হয়েছিস। বাড়ির মানুষগুলোকে প্রয়োজন নেই তোর।" এমনিতে আমি বেশ মুখরা, কিন্তু প্রত্যুত্তরে ইচ্ছা হল না। মনে মনে ভাবলাম ভুল তো আমারই, হয়তো জানিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। তার উপর সারাদিন অনেক ধকল গেছে, ক্লান্ত লাগছে, ঘরে যাওয়াটাই বেটার।


 রাতে কোনমতে দুটো নাকে মুখে গুঁজে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন থেকে সেই শোকময় পরিবেশ। দুদিন ব্যস্ততায় কেটে গিয়েছে । বুঝতে পারিনি ঠাম্মি নেই, সকাল থেকে বাড়িটা ভারী ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটেছে দিনগুলো।

  ঠাম্মির শ্রাদ্ধ শান্তির দিন ইতিমধ্যে এসে উপস্থিত। ১লা বৈশাখ। বাড়িতে দারুন তোড়জোড় । সকাল থেকেই নিচে গিয়ে বসে ছিলাম। মুকুলিকার প্রতীক্ষা করছিলাম। একটা ক্যুরিয়ার এল, নিয়ে ঘরে চলে গেলাম। দেখলাম একটা স্কুল ম্যাগাজিন, তার উপর বড়ো করে লেখা ‘মুকুলিকা’। সূচিপত্র খুলতেই দেখি প্রথম কবিতা ঠাম্মির । খুশিতে দুচোখ ঝাপসা হয়ে গেল। 'মুকুলিকা'কে রেখে দিলাম ঠাম্মির ছবিটার নিচে। আমি জানি ঠাম্মি আবার আসবে।


                         



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational