sumana ghosh মনফড়িং

Children Stories Others

3.2  

sumana ghosh মনফড়িং

Children Stories Others

ফিরে দেখা বৃষ্টিদিনে

ফিরে দেখা বৃষ্টিদিনে

8 mins
312



 " বৌদি! ও বৌদি পেপারটা রইল।"

    পেপারটা রাস্তা থেকে বারান্দায় ছুঁড়ে দিয়ে দু চাকার রাজধানী মেলটা নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলল পাড়ার রতন। পরের স্টেশন মিত্র বাড়ি ।

         

 রান্নাঘর থেকে ডাক ছাড়ে মালবিকা

  ------ নীরু, ওরে ওঠ মা সকাল নয়টা বাজে। 

        কিগো মেয়েটাকে ডেকে দাও না।   

          দিলে ডেকে?

----কী জ্বালা!

    সকালের চা'টাও একটু শান্তিতে খেতেও দেবে না দেখছি। উফফফ্।

     ভীষণ বিরক্ত হয়ে হাতের পেপারটা ভাঁজ করতে করতে বলে ওঠে প্রশান্ত।

------কি হল গেলে?

   উঠল, উঠল সে মেয়ে? আধ বেলায় ?

   না সারাবেলা ঘুমাবে?

    আবার চিৎকারে ছাড়ে মালবিকা।  

    

         এবাড়িতে কাকপক্ষীও তিষ্ঠনো দায় । সঙ্গে প্রশান্তরও।


---- নীর!...ও নীর!

   মা, আমার ওঠ! ওঠ না। বলে ভারী নরম সুরে

    ডাকতে থাকে প্রশান্ত।

--- উফফফ্। বাবা তুমি যাও তো।

       আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে নীরা।

       

----কি হল নীরা? কথা কানে যাচ্ছে না?

--- না! ঘুম চোখে বলে নীরা।

     প্রশান্ত এবার চিৎকার দিয়ে ওঠে "এত বাড়াবাড়ি ভালো লাগে না নীরা। মালবিকা যা করে ঠিকই করে"।

--- ধুৎ! রোজ সকালবেলা!

     নেহাত তোমায় ভালোবাসি বাবা। নইলে না ....

  "মালবিকা যা করে ঠিকই করে " বউয়ের উপর বেশি দরদ হয়েছে । বেশি বেশি!

---ধুর্ বাবা !

   ভাল লাগেনা!      

  এই যে মালবিকা দেবী আমি চানে যাচ্ছি। বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে ওঠে নীরা।

  ইশ্! কত দেরি হয়ে গেল! বাস টা নির্ঘাত মিস হবে।

      ( মনে মনে বলতে বলতে চলে যায় কলঘরে।)


( মিনিট কুড়ি পর)

— মানা! ভাত বেড়েছি।

— যাচ্ছি।

( আবার দু মিনিট পরে ডাক পরে )

— ভাত এবার চাল হয়ে যাবে!

চিল-চিৎকারে প্রত্যুত্তর আসে, —যাক্। যাচ্ছি।


‌‌  (স্কুলের জন্য তৈরি নীরা, হাজির হয় রান্নাঘরে)

—মা! দেরি হয়ে গেছে খাইয়ে দাও।

—আধ বেলায় উঠে, এখন খাইয়ে দাও!

— দাওনা! দাও!...দেবে কি না বলো?

   

—চলে আয়। আয় খাইয়ে দিচ্ছি!

      লক্ষীমেয়ের মত খেয়ে নেয় নীরা। আর ওর মায়ের কথা কি বলব, সে যে সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা। কখনও সখনও দজ্জাল মেয়ের মাকে চন্ডী হতেই হয়।

    

কিছু পরে..

      প্রশান্তকে খেতে দিয়ে আবার রান্নায় হাত লাগায় মালবিকা। এদিকে কলঘর থেকে মুখ হাত ধুয়ে ফিরেছে নীরা। মাকে চমকে দিয়ে, পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুম। ব্যস্! ওমনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে মালবিকা।

—সময় অসময় নেই, কোন মেয়ে এরকম করে সবসময়। ...অসহ্য! চুমু খেলে সব ভুলে যাবো!

— খায়! খায়! সবাই খায়! 

প্রিয়া, মানি সবাই খায়! ওদের মা'ও...ওদের খায়। বেশি বেশি!

— খাবে! ওরা ভালো। মায়ের মুখে চোপড়া করে না। তাই ওদের মা ভালোবাসে।.... তুমি তো আর তেমন মেয়ে নও!

....যাও একটা মা খুঁজে নাও।

—   আমি নেব কেন, তুমি একটা ভালো মেয়ে খুঁজে নাও...!

— দেখেছো! এখনও কেমন চোপড়া।

—  ভালো। আমি তো বাজে মেয়ে। বেশি বেশি!...

....বাবা তুমি তো জানো বলো...ভাই যখন মাকে চুমু খায় মা কিছু বলে? আমার বেলা বেশি বেশি!

— ও তোমার মতো না। মুখে মুখে চোপড়া করে না। 

—ভালো। আমি ভালো না তো ভালো!


         "এবার থাম!" বলে হাসতে হাসতে কলঘরে চলে যায় প্রশান্ত। এতক্ষণ খেতে খেতে বেশ মজা নিচ্ছিল।

    নীরার সব আবদারে সে। নীরার করা বুড়ো, টেকো, কেলো সব সম্বোধনে সে মজা পায়। আর যদি নীরা ওর মা হয়ে শাসন করে; ভালোবাসে গালটা টিপে দিয়ে বলে, আমার সোনা ছেলে তাহলে তো কথাই নেই। মা নেই কিনা! মারা গেছে তিনবছরের ছেলেকে রেখে! প্রায়শই এমনটা চলে।

 তবে এত আদর আবদারের মাঝে একটা আবদার আছে যাতে সত্যিই রেগে যায় প্রশান্ত। হ্যাঁ, মালবিকার মতো অত রাগে না, তবু রাগে।

     নানা, তা বাবার সাধ্যে পড়ে না এমন কিছু নয়। বাবার অসাধ্য এমন কিছু চাইতেই পারে না নীরা।

  আজ নীরা ভারী চটেছে। একটি মিনিটও এখানে

    আর নয়। চলে যায় সে।

       বেশ কিছুক্ষণে নিস্তব্ধতা বয়ে যায় বাড়ি জুড়ে।

হঠাৎ....

     একটা কাচ ভাঙার শব্দ । ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে নীরা.....

                      

                                  

       সে জানে কাঁচ টা কোথায় ভেঙ্গেছে। ছুটে যায় কলঘরে।

   ইশ্ বড়ো ভুল হয়েছে, ওটা যে শুধু ঘরেই আনেনি তা নয় , চানের পর কলঘরের জানালা টাও ......খুলে দিয়ে এসছে ।

    নিজের উপর ভারী রাগ হয় । তাড়াহুড়ো করে তুলতে থাকে ভিজে মেঝে পড়ে থাকা কাঁচের টুকরোগুলো ।কাচ খুব পাতলা। একেবারে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কুচিতে ভেঙ্গেছে। মা যদি তাড়াহুড়োয় খালি পায় আসে, পা কাটবে। ইশ্!

এতক্ষণে প্রশান্তও বেরিয়ে এসেছে নিজের ঘর ছেড়ে। দাঁড়িয়ে আছে কলঘরের মুখে।

বেশ বিরক্ত। নীরাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,

— এটাও ভেঙ্গেছো? বেশ! ভালো! ...সবেমাত্র সাতটা না! তবে জেনে রাখো আর একটাও না!

নীরা একটি কথা বলে না। সে জানে অন্তত এব্যপারে মুখ না খোলাই ভালো।

   মালবিকার আসার প্রয়োজন নেই। মেয়ের মতো সেও জানে কী ভেঙ্গেছে। তাই রান্নাঘর থেকেই ব্যঙ্গ করে বলে, 

—ভেঙ্গেছে! ভালো!

      দুদিন ও হয়নি এনেছে! জানতাম এর আয়ুও বেশি দিন না।  

 আরও, কত কী ... সে সব বোধহয় কানে যায়নি নীরার।

    

   বেশ পুরোনো আমলের কড়িবরগা ছাদ ওয়ালা একতলা দালান বাড়ি। পেল্লাই মাপের দুটো ঘর, একটা হলবারান্দা,সিঁড়িটা় তিনধাপী আর একটা মরা কলঘরটা।

   এমন মরা কলঘর , একটা আয়না নেই তাতে! বাবাকে কত করে বলেছে, বাবা! আর কিছু না হোক কলঘরটা তো আধুনিক করাই যায়। অন্ততঃপক্ষে একটি আয়না থাকা বাঞ্ছনীয় নয় কী? সে কথায় আমল দেয়নি বাবা।

     বন্ধুদের সকলেরই একালের আধুনিক ঘরবাড়ি , তাদের মতো সেকেলের নয়! এখান থেকে সেখান থেকে পলেস্তারা ঝরে পড়ে বাঘ, সিংহ, মশা , টিকটিকি নানান প্রজাতির জীবজন্তুতে ভরে গেছে দেয়ালগুলো। আর এছাড়াও যেসব বিচিত্র প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে তা তাদের ভাইবোনের শিল্পশৈলীর ছোট খাটো নিদর্শন মাত্র। তবে, বাড়িটা নয়, কলঘরে আয়না না থাকাটা তার অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু।

       অবশ্য, সে সমস্যারও সমাধান হয়েছে। বাবুই একটা খাসা উপায় বাতলেছে তাকে।

“আচ্ছা , আমদের তো ড্রেসিংটেবিল আছে। ছোট আয়না টা কোনো কাজের না। ওটা কলঘরে লাগলে কেমন হয়।” কথাটা নেহাত মন্দ নয়। দেখতে গেলে আধুনিক বাথরুমের আয়না গুলো তাদের ছোট আয়নার থেকে সামান্য একটু বড়ো , মানুষের মাথা থেকে গলা অব্দি দেখা যায়। তাদের ছোট আয়নায় না হয় শুধু মুখ দেখা যাবে। যা কারুকার্য সে তো সব মুখেরই। মুখটুকু দেখা গেলেই চলবে আর বাবাকেও খরচ করতে হয় না।

 তারপর থেকে বাড়িতে যত ছোট আয়নার আগমন হয়েছে সকালেরই স্থান হয়েছে বাথরুমের দেয়ালের ব্রাকেটে। এবং এরপর থেকে যে কী হয়ে আসছে এবাড়িতে তার আর বর্ণনার প্রয়োজন নেই বোধহয়।

  শুধু এটুকুই বলার, বাবুইয়ের সেই সমাধান, প্রশান্তবাবুর এককালীন খরচা কমালেও এখন তা মাসিক খরচায় নিযুক্ত হয়েছে।

  এতে অবশ্য নীরার কিছুই করার থাকে না।

 

  অনেক দেরি হয়ে গেছে। এরপর বেরোলে স্কুলের গেটের বাইরে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আর বিলম্ব করা যায় না। টেবিলের উপর রাখা গুছানো ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নীরা। বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে ওঠে,

 — মা আসছি।

   

এখন আর রেগে থাকা চলেনা। মেয়েটা বেরোচ্ছে... 

— দাঁড়া যাচ্ছি!

— তাড়াতাড়ি এসো। বাসটা ধরতে পারবো না তো।

ওদের বাড়ি বাস রাস্তা থেকে অনেক দূরে। পাড়ার রাস্তা পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই নীরাকে এগিয়ে দেয় মালবিকা। আর যেতে যেতে মেয়ের কানে ঢুকিয়ে দেয় বীজমন্ত্র,

— সাবধানে যাবি।...তাড়াতাড়ি বাড়ি আসবি। একা আসবি না, সবার সঙ্গে একসঙ্গে আসবি। বাস ভিড় হলে পরের বাসে আসবি।

— ঠিক আছে। ঠিক আছে।

— মেঘ করেছে, ছাতা নিয়েছিস? হাঁটতে হাঁটতে বৃষ্টি এলে একটু দাঁড়িয়ে যাবি। 

— ঠিক আছে , ঠিক আছে।

     (ওদের কথোপকথনের মাঝে পাড়ার মোড় এসে পড়ে।)

— ও মা আসছি!

— সাবধানে যাবি।

     বাস রাস্তা পৌঁছাতে এখনও সাত-আট মিনিট। যেতে ফিরে ফিরে তাকায় নীরা....

   



   মায়ের পাশে ঘুমাচ্ছে বছর নয়েকের বাবুই। আজ তার স্কুল ছুটি।

   দিদি এক্ষুনি আসবে। স্কুল থেকে সে আনবে বনকুলের আচার। তার স্কুলে ওসব পাওয়া যায় না। আর যদিও'বা যেতো, মা ওসব তাকে কিনতে দিতে না। দিদি অবাধ্য, মায়ের কথা শোনেনা! তাই সে কেনে। আজও আনবে।

       বনকুলের আচারের কথা ভাবতে ভাবতে আর উমড়ো-ঝুমড়োর গল্প শুনতে শুনতে একসময় সেও ঘুমিয়ে পড়ে .....

এদিকে....

   আকাশের কোণে আবার , ঘন কালো মেঘের আনাগোনা। ঘন্টা চারেক আগেই মুষলধারে বরষেছে বেশ কয়েক পশলা। যা ভাব দেখছি , সন্ধ্যের আগেই সন্ধ্যে নামবে। সাড়ে চারটে বেজে গেছে। এখনও পর্যন্ত সে মেয়ে ঘরে ফেরেনি! মালবিকার মনেও দুঃশ্চিন্তার কালো মেঘ।

 আজ শনিবার, হাফ ডে। যদি দু-একটা বাস ছাড়তেও হয়, তবু নীরার এতো দেরি হয় না। চারটের আগেই ফেরে। হিসেব কষে চলে মায়ের মন। প্রশান্তও বেরিয়েছে, সন্ধ্যের পর ফিরবে! ভেবে পায়না কী করবে, কোথায় যাবে?...... পাড়ার মোড় না মিত্রবাড়ি! তাদের বাড়ির মেয়েরাও তো পড়ে একই স্কুলে........মানি, প্রিয়া তো নীরার বন্ধু। একইসঙ্গে ফেরে তিনজনে। "তারা কী ফিরেছে?" মনে প্রশ্ন নিয়ে মালবিকা উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটে, মিত্রবাড়ি।

  

     নাহ্! তাদের বাড়ির মেয়েরাও কেউ এখনো ফেরেনি। শুনে দুঃশ্চিন্তা একটু হলেও কমে মালবিকার। কারণ, মনে মনে সে জানে, নীরা একা নেই, সঙ্গে সাঙ্গপাঙ্গও আছে। সব বিপদ নিজেরাই কাটিয়ে উঠবে। এখন যা দিন একা থাকার বিপদটাই বড়ো বিপদ। বাকীটা ওই দজ্জাল মেয়ের কাছে তুচ্ছ। তবু, মাতৃহৃদয়ের দুঃশ্চিন্তা প্রশমন! নৈব নৈব চ।

  মিত্রবাড়ি থেকে ফিরেও মনে শান্তি নেই মালবিকার। গিয়ে দাঁড়ায় পাড়ার রাস্তায়; তারপর, পাড়ার রাস্তা থেকে বাস রাস্তায় দিকে। কিছুটা এগিয়ে যেতে মালবিকা দেখে, দূরে একদল নীল-সাদা মেয়ে। আরো একটু এগোতেই চোখে পড়ে নীরার মুখটা। বেশ ক্লান্ত। বিধ্বংসী সাইক্লোন তার সমস্ত শক্তি খুইয়ে ফিরেছে।

   বড়ো বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে......কোন যুদ্ধ যে জয় ‌করে ফিরছে, তা কে জানে! মনে মনে ভাবে মালবিকা।

যুদ্ধজয়ই বটে .....

‌সেকেন্ড পিরিয়ড তখনও শেষ হয়নি..... ক্লাসরুম জুড়ে হঠাৎ সন্ধ্যে। গোটা স্কুল জুড়ে ক্ষনিকের হৈ হট্টগোল, জ্বলে ওঠে আলো। এমনিতেই বেশ পুরোনো স্কুল। ঘুপচি, স্যাঁতসেঁতে ঘরগুলো অন্ধকার মেখে বসে আছে সর্বক্ষণ; তারই মধ্যে আবার মেঘলা দিন।

 স্কুলের বাইরের প্রকৃতি অবশ্য উন্মুক্ত, কিন্তু সেখানেও নেমেছে ঘন কালো অন্ধকার; মেঘেরা করেছে ঘনঘটা। যেন ইভনিং স্কুল ইভনিং স্কুল ফিল হয় নীরার। আর সেইসঙ্গে কানফাটানো বজ্রপাত , ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। অস্পষ্ট হয়েছে সবকিছু, অস্পষ্ট স্কুলের সামনের রাস্তাও। ভারী ভালো লাগে, গোটা ব্যাপারটাই কেমন অ্যাডভেঞ্চারাস না! ভিতর ভিতর বেশ রোমাঞ্চিত হয় নীরা।

     

        ছুটি হয়েছে স্কুল , এখন বৃষ্টি ঝিরিঝিরি ; ফেরার পালা। নীরা দেখে স্কুলের সামনের রাস্তা আর নেই ! তবে তার পরিবর্তে গজিয়ে উঠেছে ছোটখাটো নদী। ভারী বৃষ্টির পরে এ, এখানকার নিত্য দৃশ্য। বাদু এরিয়া মিউনিসিপ্যালিটির আন্ডারে হলেও এখানকার ড্রেনেজ সিস্টেম এতোটাই নগন্য যে প্রতিবছর অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল জমে। আর, আজ! যে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে কিছু বলবার নেই। রাস্তার পাশের চওড়া অগভীর কাঁচা ড্রেনগুলোকেও আর বোঝবার উপায় নেই। ড্রেন আর রাস্তা মিলে এখন ‘আমাদের ছোটনদী’!

      স্কুল ছুটির পর, সেই ছোটনদীর ঘোলা জল সাঁতরে চলেছে শ'য় শ'য় নীল-সাদামাছ। বেশ না!

 কারো হাতে সাইকেল,কারো হাতে ছাত, কেউবা চলেছে দলবেঁধে, কেউবা একাই।

 সামনেরই দলটা তো নীরাদের পিছনে ছিল, ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে গেল। প্রায় দশ-বারোজনের দঙ্গল। ঠেলাঠেলি করতে করতে যাচ্ছে। এ ওকে ঠেলে দিচ্ছে ,ও ওকে ঠেলে দিচ্ছে। ঠেলাঠেলি মাঝে একটি তো গিয়েছে পড়ে, রাস্তার পাশের কাঁচা ড্রেনে। এখন অবশ্য ছোটনদী! নীচে রাস্তা-ড্রেন সমান! ভেসে গেছে তার জুতো, সে হাতড়াচ্ছে ..........তাদের পিছনে রেখে সকলেই এগিয়ে যায় বাসস্টপের দিকে।

       এমনিতেই, পাঁচ মিনিটের স্থলযাত্রার বদলে দশ মিনিটের জলযাত্রায় দুর্ভোগে পর এলো বাসস্টপ! তার উপর হল আর এক বিপত্তি!

          এ রুটে দুপুর থেকে বাস চলাচল বন্ধ। বাদু বাজার সংলগ্ন এলাকায় বেশ জল জমেছে। তাই বাদু রোড বন্ধ। আর তাছাড়া এমত দুর্যোগের দিনে রুট বাস ছাড়া অন্য কোন পরিবহন মাধ্যম! আকাশকুসুম কল্পনা। তবে এ সমস্যা নীরাদের একলার নয়। স্কুলের প্রায় জনা পঞ্চাশেক মেয়েও যাবে ওপথে। ঠিক হলো সকলে একসাথে ফিরবে।

        সকলে হেঁটে চলে বাস রাস্তা ধরে। বৃষ্টি একটু বিরাম নিয়েছে। রাস্তার পাশের পাকা ড্রেনের জল এখন থিতিয়েছে, জলের তোড়ে ধুয়ে গেছে সব; জল এখন স্বচ্ছ। তাতে খেলছে অসংখ্য ছোট ছোট গাপ্পি, খলসে। এক একটা এক এক রঙের ; যেতে যেতে ঝুঁকে ঝুঁকে দেখে নীরা। প্রকৃতিতে এখন নতুন রং ধরেছে। নরম সবুজের এ এক অন্য প্রকৃতি।

    হাঁটতে হাঁটতে এক একটা স্টপেজ পার করছে দলটা। আর কমে আসছে নীল-সাদার ভিড়। এভাবেই পার হয়ে যায় সাড়ে তিন মাইল। কী মজাটাই না হয়েছে! 

    বলতে বলতে চলে নীরা। আর মা শুনতে থাকে।

    

      তারা বাড়ি ফিরলেই ঝুপ করে সন্ধ্যে নামে। কিছু পরে নামে বৃষ্টিও। বর্ষার প্রথম বৃষ্টি আজ। বাড়ির সামনে, বড়পুকুরের সোনা ব্যাঙগুলোও... আজ বেজায় খুশি; ঠিক নীরার মতোই। তাদের অনবরত ঘেঙরঘ্যাং ঘেঙরঘ্যাং, বৃষ্টির ঝমঝম আর লোডশেডিংয়ের ঘন মিশকালো আঁধারে; এক অভূতপূর্ব সন্ধ্যে.....!


   


     

      

    



Rate this content
Log in