পর্দার আড়ালে পরিচয় পর্ব ১
পর্দার আড়ালে পরিচয় পর্ব ১
পর্দার আড়ালে
তৃতীয় পর্ব
লেখনী : ©রিমিতা (আরনি)
©কপিরাইট প্রটেক্টেড
(আঁচলে হাত মুছতে মুছতে )“এই শুরু হলো সারাদিন শুধু দৌড়ে বেড়াও। আর ভালো লাগে না বাপু, একটু শান্তি নেই"।
এই যে যাকে দেখলেন হাত মুছতে মুছতে বক বক করছে, ইনি হলেন সুন্দরী দি, যাকে ছাড়া এই বাড়ির মানুষ গুলো একদম অচল; সকালে চোখ খুলে রাতে চোখ বোজা পর্যন্ত এনার নাম সর্বক্ষণ জপতে থাকে সকলে মিলে। বাড়ির কাজের মেয়ে হলেও কেউ তাকে কাজের মেয়ে বলে ভাবে না বরঞ্চ এই বাড়িরতে মেয়ের মতোই থাকে সুন্দরী দি।
“ও সুন্দরী, যা দেখি তোর কর্তা বাবুকে এই চা খানা দিয়ে আয়তো; অনেক বেলা হলো আমি যাই দেখি স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে”
ওই যে সুন্দরী দির আবার ডাক পরে গেছে; ইনি হচ্ছেন এই বাড়ির গৃহকর্তী সরমাবালা।
সুন্দরী: এই যে কর্তা বাবা আপনার চা, গিন্নি মা পাঠালেন।
কর্তা বাবা: তা তোর গিন্নি মা কোথায় গেছে? সকাল থেকে তো তার দেখা নেই। বাড়ির সবাই উঠলো?
সুন্দরী: হ্যাঁ সবাই উঠেছে মোটামুটি, আর গিন্নি মা স্নানে গেছে; তারপর পূজো সারবে। যাই আমার অনেক দেরি হল।
**ইনি হলেন এই বাড়ির গৃহকর্তা সুধাংশু বাবু, সদ্য retired DSP. প্রচন্ড দাপুটে অফিসার ছিলেন সেইরকম তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও ছিলেন বটে**
"ও সুন্দরী তোমার চা দেওয়া হল? একটু তাহলে নিচে এসে আমাকে জলখাবার করতে সাহায্য করবে? অনেক দেরি হলো তো"...
কি বলেছিলাম না, সুন্দরীদির সকাল থেকে এই অবস্থা হয়, এইমাত্র যাকে দেখলেন সুন্দরী দিকে ডাকলো ইনি হলেন এই বাড়ির বড় বউ সৃজা।
সরমা দেবী: বড় বৌমা হলো সকালের জলখাবার? তাহলে দাও আমি সুন্দরীর হাতে হাতে দিয়ে দি।
সৃজা( বড়বউ ): হ্যাঁ মা হয়ে গেছে।
"কিগো হল খাবার তাড়াতাড়ি খেতে দাও আমার তো অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে"।
ইনি হলেন বাড়ির বড় ছেলে রোহিত। একটি নামকরা প্রাইভেট কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পোস্টে কর্মরত।
সরমা দেবী: হ্যাঁ টেবিলে বস দেখি, তোমার খাবার বেরে দি।
সৃজা: এই শ্রী; জিনিয়া এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি? ওকে ডাকলে?
শ্রী: হ্যাঁ বৌদি ভাই ওকে ডেকেছি তুমি তো জানো জিনিয়া এত সহজে ঘুম থেকে ওঠে না।
সৃজা: সত্যি এই মেয়ে টাকে নিয়ে যে কি হবে কে জানে। যা না শ্রী ওকে গিয়ে তুলে দে আজ ওর নার্সিংহোমের প্রথম দিন তো। তারপর লেট হয়ে গেছি বলে না খেয়েই চলে যাবে।
**এতক্ষন যাকে নিয়ে কথা হচ্ছিলো সে হলো এই বাড়ির খুব আদরের ছোট মেয়ে আর আমাদের গল্পের নায়িকা জিনিয়া, এই বছর মেডিকেল ইনর্নশীপ শেষ করে কলকাতার একটি বড়ো নার্সিংহোম পিস অফ লাইফ যেটি নিউরো স্পেশালিস্ট নার্সিংহোম হিসেবে যথেষ্ট নাম করা সেখানে চান্স পেয়েছে as জুনিয়র নিউরোলোজিস্ট, কিন্তু সেই নার্সিংহোমের রুলস অনুযায়ী জিনিকে 2 মাসের ট্রেনিং নিতে হবে যেহুত জিনির এটা as ডক্টর প্রথম জব তারপর জিনি পার্মানেন্ট হবে...আজ তারই প্রথম দিন**।
*ও আমার পরিচয়ে টাই তো দেওয়া হলো না, আমি হলাম শ্রেষ্ঠা মানে শ্রী, আমি এই বাড়ির বড়ো মেয়ে, আমিও পিস অফ লাইফ নার্সিংহোমের একজন গ্যানোকলোজিস্ট তবে খুব বেশি দিন হয়নি ওখানে জয়েন করেছি,জিনিও আজ থেকে ওই নার্সিংহোমে যাবে। আর জিনি? (হেসে) ও হলো আমার ছোট বোন। আর আমরা দুজন দা ভাই আর বৌদি ভাই এর ভীষণ আদরের*।
যাই জিনি কে ডেকে আনি..
শ্রী: জিনি এই জিনি ওঠ বলছি অনেক লেট হয়ে গেলো তো...
জানালা দিয়ে এক ফালি রোদের ছটা বিছানাতে আরাম করে এলোমেলো চুল ছড়িয়ে শুয়ে থাকা জিনির মুখে এসে পড়েছে, যেন সূর্যের কিরণ আলতো করে আরো গভীর ঘুমের দেশে পারি দেওয়ার কোথায় জিনি কে শোনাচ্ছে।
শ্রী: কি রে শুনবি না কথা উঠে যা না লক্ষীটি।
জিনি: (ঘুম ঘুম গলায় কোনো রকম বলে উঠল) প্লিজ দিদিয়া, আরেকটু ঘুমোতে দে না রে। সবে তো ভোর হয়েছে। কত বছর ঘুমাই না।
শ্রী: আচ্ছা সবে ভোর হয়েছে না? তুই কত বছর ঘুমোস না? রোজ রোজ এরকম পরে পরে কে ঘুমায়ে রে তবে? আর এখন নয়টা বাজে, এখনো যদি না উঠিস তাহলে আজ সারাদিন ঘুমা আর নার্সিংহোমে যেতে হবে না। আমি চলে গেলাম।
জিনি: (লাফ মেরে উঠে বসে, বড়ো বড়ো চোখ করে) এই তুই আগে বলবি না? আমাকে ডাকবি না? ইসস রে নয়টা বেজে গেলো, এখন আমি কি করি,কি ভাবে রেডি হই,প্রথম দিনই লেট। ধুৎ আমার ওই মরার ঘুম জীবনে যাবে না ( কান্না করার ভাব নিয়ে)।
শ্রী: সেই কুম্ভকর্ণ এর মাসি হলে কি আর হাজার ডাকলেও লোকে শুনতে পায়ে। যা অনেক নাটক হয়েছে, জলদি রেডি হয়ে নিচে আয়ে আমি অপেক্ষা করছি, আর এই যে মহারানী এখন 8:30 বাজে, আপনার নাটক টা বন্ধ করুন। (বলে হাসতে হাসতে নিচে চলে গেলো)
জিনি: কি বলে গেলো 8:30 টা বাজে। এই শ্রী এর বাচ্ছা টা কে না মাঝে মাঝে মনে হয়ে মেরে ফেলি, ও আমার দিদিয়া না শত্রু(রেগে গজ গজ করতে করতে বাথরুম গেলো)
ওয়েলকাম টু রায় চৌধুরী ভিলা। হ্যাঁ এটা হচ্ছে রায় চৌধুরী ভিলা, আমাদের গল্পের নায়িকা জিনিয়া র বাড়ি।
আর আমাদের নায়ক হচ্ছে না থাক এটা পরের পর্বের জন্য তোলা থাক।
(চলবে...)

