মালিকানা
মালিকানা


লো-কাট জিন্স আর শর্ট টপ পরে বেরোচ্ছে অঞ্জনা। জিন্স ও টপের মাঝে খোলা অংশে হাত রেখে আমি –
-ইউ আর লুকিং সো অ্যাট্রাক্টিভ অঞ্জু
ব্লাশ করলে অঞ্জু আরো অ্যাট্রাক্টিভ। হাইহিলে পা ঢোকাতে ঢোকাতে অঞ্জু -
-আজ অফিসের পর ফ্ল্যাটে ফিরছি না বিট্স
-যাচ্ছটা কোথায়?
-আজকের সন্ধেটা অমিত ধার চেয়েছে
-শালা! ধার চাইছে! রোজ গার্লফ্রেন্ড ভেগে যায়, ধার শুধবে কী দিয়ে?
-হাউ সিলি!
আমি কোনো শরীরের মালিকানা রাখিনি কোনোদিন। অঞ্জনা যেদিন অমিতের সঙ্গে সন্ধে কাটায় আমি খানিকটা রিলিফ পাই। ঠিক রিলিফ বলা যায় কিনা বুঝতে পারিনা। তবে ফ্ল্যাটে ফিরে সারাটা সন্ধে ওর অফিসের বস আর কলিগের গপ্প শুনতে হবে না ভাবতেই মনটা কেমন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। কিংফিসারের সঙ্গে সোফাতে গা এলিয়ে দিতে আরাম লাগে। রিমোট নিয়ে একটার পর একটা টিভি চ্যানেল চেঞ্জ করতে থাকি। সন্ধেটা বেশ কেটে যায়। কখনো কখনো পুরো রাতটাই সোফাতে। তবে কি দুবছরের লিভিং টুগেদারেই বোর হয়ে যাচ্ছি? অঞ্জনা কি আর কোনো রহস্য বোনে না?
সকালে একটু আর্লিই অফিসের জন্য তৈরি। অঞ্জনা বাথরুম থেকে বেরিয়ে আমার ঠোঁটে একটা ল-ম্-বা কিস –
-হাই বিট্স, আজ এত সকালে অফিস যাচ্ছ যে? আর ইউ গোয়িং সামহোয়ার আউটস্টেশান?
-নো, নট এট অল। আজ ভোরের মুখ দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে
-হাউ সিলি!
আমি আসলে বিট্স নই, বিতান। অঞ্জু কবে থেকে যেন বর্গ টর্গ সব চেঞ্জ করে নিল নিজের মত। প্রথম প্রথম একটু কানে লাগত। মনে পড়ত ছেলেবেলা। আমার কোনো বন্ধু যদি বিতানের একটুও বর্ণবিপর্যয় করত মা ক্ষেপে যেত। তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দশবার সঠিক উচ্চারণ করাতো। ভাগ্যিস অঞ্জুর বিট্স শোনার আগেই মায়ের অগস্তযাত্রা! আচ্ছা, মা কি কোনোদিন ভাবতে পেরেছিল এই ফ্ল্যাটের কথা? ছেলে তার গোছানো সংসারে নতুন বৌ নিয়ে নতুন ঘরকন্না না পেতে ফ্ল্যাট পাতবে! যেখানে অঞ্জনার সাথে জাস্ট লিভিং টুগেদার!
সংসার ব্যাপারটাই মাথায় নিতে পারে না অঞ্জু। ছোট থেকেই ডিভোর্সী মায়ের এক
মাত্র মেয়ে। একলা মায়ের আদরে। যদিও মায়ের প্রেমিককে কখনও মেনে নিতে পারেনি, তবু তা নিয়ে কখনো কোনো গোলও করেনি। হয়তো নিরাপত্তা বোধ নিয়ে বিব্রত।
নিরাপত্তাবোধের অভাব কেমন? জানা হয়নি। বাবার অগাধ প্রশয় আর মায়ের আদরে বড় হতে হতে যেদিন বাবাকেও মাথায় ছাড়িয়ে গেলাম, সেদিন অফিসফেরত বাবা হঠাৎ বুকে হাত দিয়ে শুয়ে পড়লেন। মা একা হয়ে গেলেন। সেদিন থেকেই বেড়ি পড়ল আমার পায়ে।
তখন প্রথম যৌবনের হুল্লোড়। কলেজবন্ধুদের সঙ্গে ব্লু লেগুন। মায়ের ফোন যথারীতি
– কত দেরি হবে রে ফিরতে? একটু তাড়াতাড়ি ফিরিস বাবা
সুতরাং সিনেমার পর কফিহাউসের আড্ডা বাদ।
বন্ধুদের সঙ্গে দীঘা। দুদিনের ট্রিপ। দুএকজন বান্ধবীও। সমুদ্রস্নান আর বালিতে শুয়ে শুয়ে বিকিনিদের জলকেলি দেখা। সরল পুঁটি ভাজা। সঙ্গে হুইস্কি। সবে মাত্র প্রথম চুমুক, মায়ের ফোন-
-বাবাই, জলে সাবধানে নাবিস। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে বেশি বেশি ড্রিঙ্ক করে ফেলিস না প্লিজ। জানিস তো প্রতিবছর ওই জন্যই দীঘাতে কত এক্সিডেন্ট হয়!
মায়ের বক্তৃতা বন্ধ হতেই হুইস্কির গ্লাসটা আবার ভরে নিই। একেবারে নিট এবার। মা কেন ভাবতে পারে না আমি নিজে থেকেই মদ খাই? আসলে মেনে নিতে পারেনা। তাই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ভেবে নিয়ে শান্তি পায়। মায়ের শান্তি বিধান করাটা এমনই কি জরুরি? আমি আরো একটা হুইস্কির বোতল চেয়ে নিয়ে গলায় ঢালি।
শরীরটা এবার লম্বা হতে চাইছে। কখন যে বালিতেই গা এলিয়ে। ঠান্ডা ঘুমের মধ্যে। এক পা এক পা। একটা অচেনা মেয়ে আমার আঙুল নিয়ে খেলায় মেতেছে। জল তুলছে জল ফেলছে জলের দাগ কাটছে আমার নাভির চারপাশে। আমার চোখের ওপর একটা ছায়া দুলছে। একবার মেয়েটার মুখ স্পষ্ট, পরক্ষণেই ফেড হতে হতে অন্ধকার। জলীয় শরীরটা উঠে আসছে আমার শরীর বেয়ে। বুকের কাছ অবধি উঠে এসে চুপ চেয়ে আছে আমার ঈষৎ ফোলা স্তনবৃন্তে। লম্বা সরু নেলপলিশড নখে আলতো আঁচড়। আমি আন্দোলিত। মেয়েটা টের পায় না। ছেলেদের স্তনবোধ জানে না বোধহয়। আসলে সমস্ত বোধই তো মস্তিষ্ক নির্ভর। আমি যদি আলোড়ন চাই তবে যেকোনো স্পর্শেই তা সম্ভব। আমি দুহাতে ওর মুখ নামিয়ে এনে চুমু খাই। নোনতা স্বাদ। জিভের ভেতর বালি বালি গন্ধ। বালির ভেতর স্থায়িত্বের অভাব। জন্মই হয়েছে ঝরে পড়ার জন্য। ওই জিভের মধ্যেও বালিঝরা দাগ দেখি। মেয়েটা খেলা করে ঠোঁট আর জিভের সমন্বয়ে। অন্বয়ের ভেতর নীতি বা নিয়মের হদিস করিনি কোনোদিন। আমি কোনো শরীরের মালিকানা রাখিনি কোনোদিন।
সকালে কফিমাগ্ দুটো নিয়ে অঞ্জুর চোখে মর্নিং কিস। অঞ্জু দুহাতে আমার গলা জড়িয়ে ঠোঁট দুটো তুলে ধরে। ওর বাসি ঠোঁটে কোনো স্বাদ পাইনা। গা থেকে চাদর সরিয়ে উঠে বসে অঞ্জু। নাইটি ওপরে উঠে নিটোল ঊরু। কফিতে চুমুকের সঙ্গে ঊরুতে আঙুলের আঁক কাটি। আঙুলে কোনো শিহরন জাগে না। অঞ্জুর কফিও উদাস।
ঘড়িটা ৮ টার ঘন্টা বাজিয়ে দিতেই অঞ্জু উঠে পড়ে। অফিস যাওয়ার তাড়া। ব্রেকফাস্ট এখনো আসেনি। কেরিয়ারওয়ালা আজ লেট করছে বেশ। রান্নাঘর বলে একটা ঘরের অবস্থান যদিও আছে এই ফ্ল্যাটে, কিন্তু সেখানে রাঁধুনির অবস্থান নেই। কালেভদ্রে বন্ধুবান্ধব এলে চড়ুইভাতি। হাঁড়ি খুন্তিরা গতর নাড়ে। ফ্ল্যাটের মধ্যে একটা বাড়ি বাড়ি গন্ধ ঘুরে বেড়ায় সেদিন। হয়ত খিচুড়ি আর অমলেট, তবু কোথা থেকে যেন গন্ধটা উপচে ওঠে। হয়ত আমার রক্তস্রোতে গোপনে দানা বেঁধে আছে মায়ের সাজানো সংসার। একেবারে আমার নিজস্ব একটা ঘর, যেখানে আমার ডালপালারা শেকড় ছড়াবে।
রাতে ড্রেসিং টেবিলে অঞ্জু। নাইটক্রিম ঘসছে গোলাপি গালে। ওর খোলা কাঁধে মুখ রাখি –
-ভাবছি বিয়েটা এবার সেরেই ফেলি
-বিয়ে! কেন? কোথায়? কাকে?
প্রশ্নের তোড়ে অঞ্জুর হাত থেকে খসে পড়ে পন্ড্স কোল্ডক্রিমের কৌটোটা। অবাক চোখদুটো সোজা আমার দিকে। আমি তাকাতে পারিনা। নিচু হয়ে কৌটোটা তুলতে যাই-
-এতগুলো প্রশ্ন একসঙ্গে করলে তো মুশকিল। তবে “কাকে”র উত্তরটা মজুত আছে
-সেটাই শুনি
-আমাদের সেই নদীর নামটি অঞ্জনা
আমি সোজা অঞ্জুর চোখে। ওর ঠোঁটের কোণটা একটু একটু করে মুচড়ে উঠছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে। ধীরে ধীরে সরে এল চোখ। নিচে মাটির দিকে। একভাবে। একসময় কাঁধটা কাঁপতে শুরু করল। আস্তে আস্তে। তারপর দুহাতে মুখ ঢেকে অঝোর অঞ্জনা।
কয়েকটা মুহূর্ত যেতে দিই। ওকে তো এভাবে কখনো কাঁদতে দেখিনি। চোখের জল কি কিছু গলিয়ে দিচ্ছে আমার ভেতর? দুহাতে ওর মুখটা তুলে ধরি। চোখে চোখ। টলটলে নৈঃশব্দ্য। হাতের পাতায় গড়িয়ে যায় নোনতা জল। ওর গালগড়ানো জলে ঠোঁট রাখি। আরো অশান্ত হয়ে ওঠে অঞ্জু। আমি টেনে নিই বুকের মধ্যে। অনেকক্ষণ। আলো নিভিয়ে বারান্দায় এসে বসি। মুখর অঞ্জুর কথারাও আজ ছুটি নিয়েছে। আমার আঙুল নিয়ে খেলা করে। শুনশান রাত আরো গভীরে -
-বিট্স, আমাকে বিয়ে করে তুমি সুখী হবে তো?
-সুখী হবার জন্য তো বিয়ে করছি না
-তবে?
-সংসার করার জন্য
-সেখানে কি সুখটা গৌণ?
-একেবারে গৌণ না হলেও একমাত্র তো নয়ই
-কিন্তু তুমি তো জানো আমার কাছে সংসারের তেমন কোনো মূল্য নেই
-মূল্য বুঝবে যেদিন আমার ঘরনি হবে
ভেজা চোখে একটা ফাজিল হাসির ঢেউ -
-ঘরনি মানে ওই সেই রান্নাঘর, ঠাকুরঘর, আঁতুরঘর...
-লিস্টটা টেনেটুনে বাড়ানোই যায়। তবে কিনা আমার ঘরনি হবে এই দেহশীতপাখির বানানো বাসার কুটুম্ব
-কুটুম্ব! তাহলে তো মাঝে সাঝে অন্যবাড়ির আতিথ্যও নেওয়া যায়, কি বলো?
-অনায়াসে। আমি শুধু মনঘরের বাসা চিনি। আমি কোনো শরীরের মালিকানা রাখিনি কোনোদিন।
রেজিস্ট্রেশান অফিসে সই করার আগে অঞ্জু আমার চোখের দিকে। খুব অদ্ভুত অচেনা দৃষ্টি। ভাষা পড়তে গিয়ে আমিও থমকে। বন্ধুদের তর সয় না। অঞ্জুর একমাত্র সাক্ষী অমিত গোড়ে মালাটা অঞ্জুর হাতে ধরিয়ে দেয়। ঝর্ণাদি আমাকে আর একটা গোড়ে মালা হাতে ধরিয়ে তাড়া দেয় –
-দুবছর ধরে তো অনেক ভাবলি বিতান, এবার মালাবদলটা সেরে নে ভাই
লজ্জার শিহরনে অঞ্জুকে দেখিনি কোনোদিন। রেজিস্ট্রেশান অফিসের টিমটিমে আলোটা দুলছে। দুলতে দুলতে ওর ফর্সা মুখটায় আলোছায়া তৈরি করছে। সেই ছায়াটাই ফুলসাজানো বিছানায় আরো লম্বা হতে দেখি। লম্বা হতে হতে দেয়াল বাইছে। আমি চোখ ফিরিয়ে নিই ছায়া থেকে। অঞ্জুর মুখে আলো খুঁজি। রেজিস্ট্রেশানের আগে সেই উজ্জ্বল হাসিটা কখন স্তিমিত হয়ে এল? টের পাইনি তো! হুইস্কি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মাতামাতি। অনেকক্ষণ। গা ভাসানো সময়টাই কি অঞ্জুর হাসিটার সদব্যবহার করল?
সকালে ঘুম ভাঙল কাপ আর চামচের ঠুনঠুন আওয়াজে। চোখ খুলেই সামনে অঞ্জু। মৃদু সাবানের গন্ধ। চোখের পাতাগুলো তখনও ভিজে-
- আজ এত সকালেই স্নান করলে যে!
- আজকের দিনটা অন্যরকম বিট্স
ওর আঙুলগুলো হাতের পাতায় নিয়ে উলটে পালটে –
-একটা আবদার আছে, রাখবে প্লিজ?
-কী?
-তোমার মুখে বিতান শুনতে খুব ইচ্ছে করছে অঞ্জু
-ধুর! আমি কি ওইনামে তোমাকে ডেকেছি কোনোদিন? ও আমার মুখ দিয়ে বেরোবে টেরোবে না
-ঠিক বেরোবে, একটু চেষ্টা করো প্লিজ
-বিতান নিজের কানে শুনলে যে অন্য মানুষ মনে হচ্ছে। ধুস! ও হবে টবে না আমার দ্বারা
-শুধু একবার... একবার... প্লিজ
চায়ের কাপ নামিয়ে জানলার কাছে উঠে গেল অঞ্জু। বাইরে তাকিয়ে খুব আস্তে আস্তে ডাকল-
-বিতান...বিতান...বিতান...
আমি বিছানা থেকে একলাফে জানলার কাছে। দুহাতে অঞ্জুকে তুলে নিয়ে বিছানায়। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে লন্ডভন্ড হয়ে গেল ফুলরাতের বাসি বিছানা। সদ্যস্নাত বুকে মুখ নামিয়ে জীবনের গন্ধ নিই।
৯টা বাজতেই কেরিয়ারওয়ালা হাজির। টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে ছোট ছেলেটা একটু অবাক। সারা ফ্ল্যাটে এখনো মৃদু ফুলের সুগন্ধ। অঞ্জুর দিকে তাকিয়ে হাসতে গিয়ে হোঁচট খায় ছেলেটা। সদ্যস্নাত অঞ্জুর সিঁথিতে চওড়া সিঁদুরে আগুন।
সিঁদুরে জড়ানো কটা ছুটির দিন পেরিয়ে গেল গড়গড়িয়ে। আবার অফিস তাড়াহুড়ো ব্যাস্ততা। অঞ্জুকে ওর অফিসে ছেড়ে দিয়ে আমি অফিসমুখো। কলিগদের চোরা চাহুনি অগ্রাহ্য করে কাজে নামি। আর কাজ শুরু হলে বিট্স না বিতান কিছুই খেয়াল থাকে না। ম্যানেজিং কমিটির সাথে একটা মিটিং আছে লাঞ্চের পর। লাঞ্চ আওয়ারে ফ্রুট স্যালাড খেতে খেতে ভরদ্বাজ মিষ্টি হাসির মোড়কে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয়-
-কি ব্রাদার, ফ্যামিলি লাইফ কেমন এনঞ্জয় করছো?
আমি উত্তর দেবার আগেই শান্তি ম্যাডাম চলকে ওঠেন-
-সেটা কি তোমায় এক্সপ্লেন করতে হবে ভরদ্বাজ?
-না, ইয়ে মানে লিভিং টুগেদার ভারসাস ফ্যামিলি লাইফের তফাতটা ধরতে চাইছিলাম আর কি!
-তুমি তো ভাই এখনও কোনোটার স্বাদই নিলে না, তফাত বুঝবে কেমন করে? আমরা হলাম গিয়ে পুরুষানুক্রমে ফ্যামিলিম্যান। ও সব টুগেদার ফুগেদারে আরাম কোথা ভাই। কি বলো বিতান?
আমি কথা খুঁজে পাই না। অথচ আমি নাকি দারুণ স্মার্ট। কোনো বন্ধুই এখনও পর্যন্ত কথায় কব্জা করতে পারেনি। আজ কথা হাতড়াতে হচ্ছে। মিটিং এর অজুহাতে লাঞ্জরুম থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসি। ফাইলগুলোয় আর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে কনফারেন্স রুমে হাজির। তখনও বিশেষ কেউ আসেনি। ডক্টর শ্রীবাস্তব এলেন একটু পরেই। এসেই শেকহ্যান্ড করে কনগ্র্যাটস্ জানালেন।
টুগেদার লিভিং কে একটা সই দিয়ে পাকাপোক্ত করে নিলে বাঁকা চোখের চাহনিগুলো সোজা হয়ে কনগ্র্যাটসে বদলে যায়! এমনটা ভাবিনি বোধহয়। ভাবা না থাকলেও এই সব ছোটখাটো অ্যাক্সানগুলো আমার ভেতরে কিছু তির্যক রিঅ্যাক্সান তৈরি করছে। আমার টাইটা আরো স্মার্ট হয়ে উঠছে। আমি টানটান বসি চেয়ারে। সামনের প্রজেক্টারে চোখ রেখে বসে থাকলেও ম্যনেজিং ডাইরেক্টার কখন যে ইন্ট্রোডাকশান শুরু করেছেন খেয়াল করিনি। ওনার মুখে বিতান নামটা শুনেই টনক্ নড়ে –
-বিতান তাহলে সিঙ্গাপুরের ব্যাপারটা ট্যাকেল করুক। হানিমুন আর বিজ্নেস দুটোই একসঙ্গে সারতে পারে। কি বলো বিতান?
হানিমুনের কথায় মনটা নেচে উঠলেও এই মুহূর্তে নতুন সংসারের স্বাদ ফেলে যেতে ইচ্ছে করছে না। একটা সলিড অজুহাত খুঁজছি। অথচ মাথাটা কেমন ডাল্ লাগছে। ফ্যামিলির স্বাদে কি বুদ্ধিশুদ্ধিরাও ছুটি নিল?
সারাটা রাস্তা ভাবতে ভাবতে। ভাবছি সংসারের ত্রিকায় কীভাবে হানিমুনকে পেশ করা যায়। সাধারণত আমি সিঁড়ি দিয়েই উঠি। যতটা সম্ভব লিফট্ এভ্যয়েড করি শরীর ফিট রাখার তাগিদে। আজ আর সিঁড়ি ভাঙতে ইচ্ছে হল না। লিফট্ থেকে নামতেই দেখি ফ্ল্যাটের দরজাটা হাট খোলা। সেন্টার টেবিলের দুপাশে মুখোমুখি বসে অঞ্জু আর অমিত। কি যেন আলোচনায় দুজনেই আত্মহারা। আমার উপস্থিতি টের পেল না। কিন্তু আমার ফ্যামিলি বোধ মাথা চাড়া দিল। আমি গলা খাঁকারি দিয়ে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে বেডরুমে। অসহ্য গরম লাগছে কেন কে জানে। ফেব্রুয়ারির ফার্স্ট উইক। এখনো কিছুটা শীতের আমেজ। তবু আমি ঘেমে উঠছি ফ্যামিলির আঁচে।
অঞ্জু কিচেন থেকে গলা তোলে –
-চা না কফি, কি দেবো বিট্স?
সংসারী বিতানের শিভাল্রি মাথা চাড়া দেয় –
-অমিতের জন্য একটু সসেজ ভাজতে পারতে। ওয়াইনের পুরোনো বোতলটা আজ সেলিব্রেট করব ভাবছিলাম
-গ্র্যান্ড আইডিয়া!
একটু পরেই কিচেন থেকে বেরিয়ে আসে কাঁচুমাচু অঞ্জু –
-অ্যাই, সানফ্লাওয়ার যে ফুরিয়েছে। কি দিয়ে ভাজি বলোতো?
পরিত্রাতার ভূমিকায় অমিত-
-আরে ছাড়্ তো সসেজ টসেজ ভাজাভুজি। আরে হেলথ কনসাস হ এবার। বিয়ের জল পড়লেই মুটিয়ে না যাস!
অগত্যা, সল্টেড চিনেবাদাম সহযোগে ওয়াইন। চলল বেশ কিছুক্ষণ। হানিমুনের প্ল্যানট্যানগুলো ফিকে হয়ে এল। ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে অঞ্জু কি যেন কথা বলতে ঝুঁকে পড়ল অমিতের দিকে। ওর হাউসকোটের কাটা গলা উপচে স্তনের রেখা চলকে উঠল। অমিতের চোখ লক্ষ্য করে আমার ভেতরটা কেমন ওলোট পালোট হচ্ছে। ওয়াইনের স্বাদ কটু তিক্ত লাগছে জিভে। আমি একবার উঠে টয়লেটে ঘুরে আসি -
-অনেক রাত হল অঞ্জু। তুমি কি ডিনার সাজাবে এবার?
অমিত উঠে দাঁড়ায় -
-ওকে বস্, আমিও এবার কাটি
অঞ্জুর মাথায় হাত রেখে অমিতের আশীর্বাদী ভঙ্গি –
-ঘর বর সন্তান সন্ততি নিয়ে সুখে শান্তিতে থাক্ ভাই
অঞ্জু মারের ভঙ্গিতে হাত ওঠায়।
রাতের বিছানায় অঞ্জুর ওপর নির্দয় হয়ে উঠি। কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই ওকে শরীরে নিচে স্থাপন করে দিই। অঞ্জু ছটফট করে ওঠে। বরাবরই ও সময় নিতে অভ্যস্ত। আজ আমার তাড়া দেখে অবাক হয়। ওর চোখ এড়িয়ে অন্ধকারের দিকে চোখ রেখে আমি খালাস করে দিই মালিকানানির্ভর শুকনো খটখটে জমিতে।