মধুমিতা দেবনাথ

Drama Romance Inspirational

3.9  

মধুমিতা দেবনাথ

Drama Romance Inspirational

কথোপকথন

কথোপকথন

5 mins
240


- দমু এই দমু..কি রে ওঠ ,কতো বেলা হয়ে গেলো। সোমা,পিয়ালী ওরা তো ফোন করছে কলেজ যাবি না? দমু ..কি রে...

- উফ্ মা , না আজ আর কলেজ যাবো না..

- কেনো রে কি হলো,শরীর খারাপ !দেখি দেখি কপাল টা ধরে...

- আর এ না মা , ভাবছি আজ একটু অমলেশ কাকুর বাড়ি থেকে ঘুরে আসবো ,পাগলা টাকে একটু দেখে আসি...

- এসব কি কথা রে "পাগলা" ,ছেলেটার এমনিতেই মন খারাপ,তারওপর আবার তুই এত জ্বালাস...

- পাগল কে পাগল বলতে ক্ষতি কি ?

- হুম হয়েছে ,বলছি শোন না..যাওয়ার আগে নারকেলের নাড়ু কটা নিয়ে যাস আমি গুছিয়ে রাখছি...

- আচ্ছা...বলে নীল কুর্তি টা আলনা থেকে টেনে বাথরুমে ঢুকে গেলো দমু ওরফে দময়ন্তী..


কাকিমা,ও কাকিমা .. কোথায় গেলে..?

- কে রে দময়ন্তী এলি , দাড়া আসছি..আমি ছাদে..

- কাকিমা এই নাড়ু গুলো মা পাঠালো ধরো... কাকু বাড়িতে নেই?

- না এই সবে বেরোলো ...

- ওহ্ আচ্ছা ,আর আবির কোথায়?

- ও ওপরে আছে,সারাদিন ছাদের ওই কোনার ঘরটায় পড়ে থাকে..কি যে হবে ছেলেটার,বলতে বলতে চোখটা ছলছল করে উঠলো সুপ্রিয়া দেবীর...

কাকিমার হাত দুটো ধরে সান্তনা দিলাম..কিছু চিন্তা কোরো না ,সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি যাই একটু কথা বলে আসি ওর সাথে ।

সিঁড়ির ষোলটা ধাপ পেরিয়ে ছাদের বাদিক টায় ওই একটাই ছোট ঘর ..পুরোনো জিনিসপত্র রাখার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল...এখন এটাই আবিরের সারাদিনের নিঃসঙ্গতার ঘাঁটি, ঘরটার দুয়ারে এসে ভিতরের চারিদিক টা যখন নজরে আসলো ,চোখের কোনটা যেনো আপনা আপনিই ছলছল করে ওঠে।বইপত্র চারিদিকে ছড়ানো..কিছু কিছু অর্ধদগ্ধ অবস্থায়, গীটারটা ছেড়া তার সমেত মাটিতে ঘুম দিচ্ছে, ঘরের একটা কোনে ছোট্ট একটা বিছানা মতো ..কোনরকম এ একজন শরীর টা রাখতে পারে,তার চাঁদর টা টেনে নিচের দিকে নামানো।দুয়ারে আমার পায়ের সামনে পড়ে কোনো এক সময়ের খাওয়া চায়ের কাপ..শুকনো চায়ের দাগ সহ উল্টে পড়ে আছে। আর মেঝের মাঝামাঝি চিৎ হয়ে ডান হাতটা দিয়ে কপাল ঢেকে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আবির..। নিজেকে যথা সম্ভব সামলে খুব ধীরে ডাক দিলাম ওকে ... আবির...

- কে ? দমু আয় ...বলে আবার একই অবস্থায় পড়ে রইলো...

তারপর আবার নীরবতা..কি বলবো ,কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না ,তবুও জানি এই নীরবতা আমাকেই ভাঙতে হবে..

- এসব কি আবির? কি অবস্থা করেছিস নিজের?

- কি বলতো ! ( একটা তাচ্ছিল্য ঠোঁটের কোণে)

- কেনো এরকম করছিস বলতো ? সময় কি চলে গেছে?

- না রে ,সময় চলে যায় নি , শুধু স্বপ্ন গুলো ভেঙে গেছে।

- নিজের স্বপ্ন গুলোকে এতটাই ঠুনকো ভাবিস আবির,যে যখন তখন একটু কিছুতেই ভেঙে যায়।

কথাটা বলার সাথে সাথে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ ফিরিয়ে ঘরের ওই ছোট্ট জানলা দিয়ে এক চিলতে আকাশে দৃষ্টি স্থির করলো...। এতক্ষণ আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম এখন ওর পাশে বসে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম...

দেখ আবির ,জীবন ভীষণ কঠিন,তার থেকে বেশি কঠিন হলো সময় ,নিজেকে একটা বটবৃক্ষের মতো তৈরি করতে হবে, যাতে কোনো ঝড় বৃষ্টি ক্ষতি করতে না পারে..।কথাটা বলার সাথে সাথে ব্যঙ্গার্ত সুরে হো হো করে হেসে উঠলো আবির...

আসলে কি জানিস দমু....

   " বটবৃক্ষ হবো?এমনটা কখনো ভাবিনি..

      চারাগাছ পর্যন্ত আয়ত্ত আমার..

     আমি সেটুকু হতেও পারিনি"

কি বলবো কিছুক্ষণ বুঝে উঠতে পারলাম না ,কিন্তু চুপ করে থাকলেও তো হবে না..তাই আমিই আবার শুরু করলাম..

আচ্ছা,আবির এই ঘরে একা একা থাকতে ভালো লাগে তোর? চল না আজ একটু ঘুরে আসি।

- না আমি যাবো না, তোর তো বন্ধু বান্ধবীর অভাব নেই,সবাই তো মুখিয়ে থাকে তোর সাথে কথা বলার জন্য..তাদের কাউকে বল দেখবি এক পায়ে রাজি।

আমার একটু হাসিই পেয়ে গেলো কথাটা শুনে,কিন্তু যথা সম্ভব হাসি চেপে বললাম.. আরে,

 " যাহা চাই,তাহা যদি এমনিতেই পাই..

  ইচ্ছে পূরণের সেখানে কোনো মূল্য নাই"

- রাখ তো তোর কবিত্ব,যেনো রবীন্দ্রনাথের নাতনি।

-দেখ আবির,তুই কি জানিস এই মানুষটা সব জানে,এমন কোনো অনুভূতি নেই, যার ব্যাখ্যা কবিগুরু দেয়নি।সকল প্রশ্নের উত্তর তার কাছে আছে। 

-হ্যাঁ সেই আর কি,তোদের জন্মদিনের দশ দিনের ডিফারেন্স কি না.. কবিগুরুর ২৫শে আর তোর ১৫ই বৈশাখ...,তাই তোর ওপর কবিগুরুর কিছুটা এফেক্ট পড়ে গেছে।

কথাটা বলে হাসিতে ফেটে পড়লো আবির আর আমিও যোগ না হয়ে পারলাম না..।

- আবির একটা কথা বলবো?

ও সেই ভাবেই হাসতে হাসতে বললো

- হুম বল..

কাকু যে কারখানার কাজটার কথা বলেছে সেটা করছিস না কেনো?কথাটা বলার মুহূর্তের মধ্যেই হাসি উবে গিয়ে ওর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।যতটা সম্ভব জড়তা কাটিয়ে ওকে ডাকলাম...আবির...

আচ্ছা দমু একটা কথা বলতো,এই যে ছোটো থেকে এতো কড়া শাসনে পড়াশুনা করা,তারপর উচ্চ মাধ্যমিক এ স্টার মার্কস নিয়ে পাস করা.. সবটাই কি ওই কারখানার যন্ত্রপাতির নীচে ঢাকা দেওয়ার জন্য? এমন করে কেনো বলছিস আবির,আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের,আমাদের স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে সময় লাগে,অনেক টা লড়াই করতে হয় বাস্তবতার সাথে ,মনের জোর ও ধৈর্য্য রাখতে হয়।এই যে দেখ আমি যদি ক্লাস নাইন থেকে টিউশনি না ধরতাম তাহলে কি আজ কলেজে অ্যাডমিশন নিতে পড়তাম বল,এই যে সারাদিন টিউশন,কলেজ,নিজের পড়া এসব করেই কিভাবে সময় চলে যায় বুঝতেও পারি না, রাতটুকুও ভাবতে হয় কাল কতোটা সময় কিভাবে কোন জায়গায় দিলে একটু অন্য দিকের সময় টা মেকাপ হবে,এতে কি আমার কষ্ট হয় না ভাবিস।

আসলে কি জানিস আবির...দুঃখ,কষ্ট সবার থাকে,শুধু দূর থেকে দেখে বোঝা যায় একটা মানুষ ভেতর থেকে কতোটা মর্মাহত, আর আমরা নিজের জীবন টাকেই দোষ দিতে থাকি।

- দমু কি করে বুঝিস তুই সবাইকে?

ঠোঁটের কোণে একটা স্ফীত হাসি নিয়ে বললাম...ওই যে দেখতে পারছিস ওই গাছটা ? আমি না ওদের কে বোঝার ভীষণ চেষ্টা করি। দেখ ওদেরও জন্ম আছে ,ছোটো থেকে বড় হওয়া আছে, ওদেরও বয়স হয় ,মৃত্যু হয় কিন্তু শুধু বলার বা চলার ক্ষমতা নেই বলে ওদের সাথে সবটা করা যায়...। ওরা শুধু দিয়েই যায় ... ছায়া,গরমে ঠাণ্ডা হাওয়া,ফুল ,ফল সব ,সবথেকে বড় কথা দেখ মৃত্যুর পরও ওদের দেহাবশেষ টা আমাদের কাজে লাগিয়ে যায়। কিন্তু তবুও দেখ ওদের কোনো দুঃখ নেই,কষ্ট নেই ,অভিমান নেই,শুধু জানান দেয় আমরা আছি তোমাদের জন্য।

- দমু...

- হুম ছাড় এসব কথা, অনেক দেরি হয়ে গেল আজ আসি রে কেমন...দয়া করে কলটা রিসিভ করিস বা মেসেজের রিপ্লাই দিস ,বলে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য পা বাড়ালাম...

- দমু...

- থামতে হলো আমাকে, ডাকটার মধ্যে কেমন যেন একটা অসহায়তা মেশানো আছে,যার জন্য আমাকে আবার পিছন ফিরে তাকাতে হলো .. কি রে কিছু বলবি...?

- হ্যাঁ , বলছি কাল থেকে সন্ধ্যের আগে আমাকে তেমন পাবিনা ,কখনো বাইরে বেরোতে ইচ্ছে হলে বলিস.. সন্ধ্যের পর বেরোব ,ঠিক আছে...

- কেনো রে আবির, কি করবি সারাদিন?

- হুম করবো অনেক কাজ ,পরের বছর কলেজে তোকে সিনিয়র যে বানাতে হবে ...।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama