STORYMIRROR

Juy Mondal

Romance Tragedy

3  

Juy Mondal

Romance Tragedy

ক্রাশ

ক্রাশ

3 mins
259

পাড়ার তিন মাথার মোড়ের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বড় শিরিষ গাছের পিছন থেকে মিষ্টু আজও উঁকি মারলো রাস্তার দিকে। তার দুচোখ কিছু একটা যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে। পড়ন্ত সূর্যের আলোয় হঠাৎ তার চোখে পরল নীল রঙের সেই চেনা সাইকেলটা। বুকের ভিতরটা হঠাৎ কেমন যেন নেচে উঠল তার। কোন যেন এক অজানা স্বপ্নে ডুবে গেল সে।

"কিরে মিষ্টু, এখানে দাঁড়িয়ে কেন? যাবি না পড়তে?"---একটু অবাক হয়েই আর্য জিজ্ঞাসা করল।

হ্যাঁ পড়তে যাবে বটে মিষ্টু, তবে সে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে? আর্য কে তো আর বলতে পারে না যে তোর জন্যই দাঁড়িয়ে আছি এতক্ষন। "হ্যাঁ যাব তো। এ বাবা! দেখছিস কত দেরি হয়ে গেছে। চল.. চল.. তাড়াতাড়ি যাই।"--- কিছুটা থতমত খেয়ে আর একটু নাটক করেই বললো মিষ্টু।

 বলেই সাইকেলের পিছনে ধুপ করে বসে পড়ল।

মনে মনে ভাবল, আর্য জানল কি করে যে ও এখানে দাঁড়িয়ে আছে..?

"আচ্ছা.. তুই বুুঝলি কি করে যে আমি এখানে আছি?"

"সে আর বলতে ...!!তোর ব্যাগটা যে রোদে জ্বলজ্বল করছিল যে কেউ থাকলেই বুঝতে পারত।"--- সাইকেলে প্যডেল করতে করতে আর্য উত্তর দিল।

  মিষ্টুুর এই নতুন কাঁচা হলুদ রঙের ব্যাগ রোদে একটুু বেশিই জ্বলজ্বল করবে। কথাটা খুব সহজেই বিশ্বাস করে নিল মিষ্টু।

মিষ্টুর এবারে ক্লাস এইট হল, আর আর্যর ক্লাস টেন। ছোটবেলায় নাকি একসাথে খুব খেলাধুলা করত। তাই ওকে আর কখনো 'আর্য দা' বলে ডাকা হয়নি। সেই ছোট থেকেই এই ভাবেই ডেকে এসেছে ও। এত দিনের অভ্যাস এত সহজে কি বদলানো সম্ভব।

রাস্তাঘাটে দেখা হলে ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মুচকি হাসি হেসে দিত আর্য। আর পরিবর্তে মিষ্টু ও একটা অদ্ভুত হাসি হেসে দিত আর্যর দিকে।

 আর্যর ওই মুচকি হাসির কি যে মানে বার করেছিল সে তো মিষ্টুই জানে।

দুজনে একজায়গায় টিউশনি পড়ে সময় টাও একই আর শিক্ষিকাও। পড়তে যাওয়ার সময় রোজ আর্যর জন্য খিরিশ গাছের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা, পড়ার ফাঁকে আর্যর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা, বাড়ি ফেরার পথে তিন মাথার মোড় থেকে 'বাই' বলে চলে আসার সময় আর একবার পিছনে তাকিয়ে ওকে দেখে নেওয়া---- এই ছিল মিষ্টুর রোজকার রুটিন।

    গতকালের ঘটনাটা না ঘটলে হয়তো এইরকমই চলত সবকিছু। কিন্তু গতকাল যা ঘটল তারপর মিষ্টুর মনের অবস্থা যে ঠিক কি রকম সেটা ওর থেকে ভালো আর কেউ হয়তো বুঝবেও না।


     গতকাল সকালে মিষ্টু তখন স্কুল ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে স্কুলের জন্য রহনা হল, মা বললেন -- "সাবধানে যাবি আর মাথা ঠান্ডা করে লিখবি"।

"হ্যাঁ মা আসছি"-- বলে মিষ্টু বেরিয়ে গেল।

তাড়াতাড়ি স্কুলে গিয়ে আরেকবার 'বনভোজনের ব্যাপার' এর লাস্ট পার্টটা চোখ বোলাতে হবে।

এসব কিছুুু ভাবতে ভাবতে যখন মিষ্টু সেই পাড়ার তিন মাথার মোড়ের কাছে এসে পৌঁছালো, হঠাৎ কি যেন দেখে ওর পা দুটো মাটিতে আটকে গেল, চলার ক্ষমতা যেন সে 

হারিয়ে ফেলল কিছু মুহূর্তের জন্য। 

  আর্য একটা মেয়ের হাত ধরে গল্প করতে করতে আর হাসতে হাসতে তারই দিকে আসছে।

মিষ্টুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আজও আর্য সেই একইভাবে মুচকি হাসিটা ছুড়ে দিল ওর দিকে। তবে আজ সেই মুচকি হাসির আসল রহস্য উদ্ধার করতে পারল মিষ্টু। কিন্তুুু পরীক্ষায় কি লিখল কে জানে ! বাড়ি এসে স্কুলের ব্যাগ খাটে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আগে নিজের ডাইরিটা খুলল। সেখান থেকে সে বেশিরভাগ পৃষ্ঠাগুলো 

ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলতে লাগল। কান্নায়, অভিমানে আর কষ্টে ফেটে পরলো মিষ্টু। এতদিন ও তার সব স্বপ্ন এই পৃষ্ঠাগুলোতেই লিখে রেখেছিল। সব পৃষ্ঠাতেই 'আর্য' নামটা কমন। আজ তার সমস্ত স্বপ্ন নিজের হাতে ছিঁড়ে কুচি কুচি করে দিল। সেদিন সারারাত খুব কেঁদেছিল , ভাতও খাইনি রাতে। অবশেষে ঘুমিয়ে পড়ে তার বুক ভরা অভিমান আর ডায়রীর ছেঁড়াপাতার মতো ইচ্ছেগুলো নিয়ে।


.... কিগো..! মিষ্টুুুুমি দি, কি হয়েছে? শরীর খারাপ করছে ? একটু জল খাবে?

-- পাশের ডেস্ক থেকে চন্দ্রিমা উঠে এসে বলল। 

জুনিয়র হলেও ওর বেশ খেয়াল রাখে চন্দ্রিমা।

আজ 'সুন্দরবন ফ্লাড রিলিফ' প্রজেক্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন। তাই অফিসের সবাই আজ অন্যদিনের থেকে একটু বেশি ব্যস্ত। তবু এই ব্যস্ততার মাঝে কিভাবে যে মিষ্টুমি সেই তেরো বছর আগে ফিরে গেলো কে জানে !....!

"না.. না... ঠিক আছে। আসলে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। এই আর কি"--- নিজেকে সামলে উত্তর দিল মিষ্টুমি।



অফিসের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় পড়ন্ত সূর্যের আলোয় সেই তিন মাথার মোড়ের খিরিশ গাছটা আজও তার চোখে পরল। এখন সেটা অনেক বড় হয়ে গেছে, শাখা ছড়িয়েছে আরো বেশি। গাছটা দেখতে দেখতে হঠাৎ ওর চোখের কোনটা ভিজে গেল। তার তেরো বছরের ক্রাশ আজও ক্রাশ হয়েই রয়ে গেল....।




   


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance