STORYMIRROR

Juy Mondal

Children Stories Fantasy Others

3  

Juy Mondal

Children Stories Fantasy Others

বেস্ট ফ্রেন্ড

বেস্ট ফ্রেন্ড

3 mins
276


"ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল...... 

ইপ্সিতা... খাতাটা নিয়ে এদিকে এসো তো দেখি কি লিখলে ?" ----লেখানো থামিয়ে ক্লাসের ভূগোল ম্যাম বললেন।


এই কেস খেয়েছে..! ! যা! ম্যাম বুঝলেন কী করে.... কি হবে এবার....

এরকম কিছু প্রশ্ন মনের মধ্যে জট পাকিয়ে নিয়ে আর পাশে সহপাঠির দিকে একটা কুদৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে খাতাটা নিয়ে ইপ্সিতা আস্তে আস্তে উঠে গেল আন্টির দিকে।


"কই ....লেখা কই..!! এতক্ষন ধরে যে আমি লেখাচ্ছি সেটা কোথায় ..? ক্লাসে বসে শুধু ফাজলামি মারা...! লেখার প্রয়োজন বোধ করিস না..??!! " রেগে গিয়ে অতসী আন্টি বললেন।


কি করবে এখন ইপ্সিতা সে তো আর ইচ্ছে করে বসে ছিল না.. নেহাতই আজকে পেন্সিল ব্যাগটা আনতে ভুলে গিয়েছিল না হলে....... আর ওই মেয়েটাই বা কেমন... একটা পেন চাইলাম লেখার জন্য দিল না..!

নাহলে আজ ওর এই দশা হত না। 

কি করবেন ম্যাম এবার ...গার্জেন কল করবেন না তো আবার..?! না না এইটুকুর জন্য আবার গার্জেন কল করে নাকি কেউ..!!


"কি হলো..? চুপচাপ বোকার মতো দাঁড়িয়ে কেন?" ---

ম্যামের কথায় সম্বিত ফিরল ইপ্সিতার।



"না ...মানে ...ম্যাম ....আসলে ....আমি...."--


"কি আমতা-আমতা করছিস?

 ঠিক আছে ,ভুল যখন করেছিস শাস্তি তাকে পেতেই হবে। কাল আমার ক্লাসে আজকে যা লিখিয়েছি সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে পড়া দেবে।"


চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে নিজের জায়গায় চলে এলো ইপ্সিতা। কে জানতো ক্লাস টেনে উঠে প্রথম দিন স্কুলে এসেই এইসব হবে। সব হয়েছে ওই মেয়েটার জন্য, একটা পেন দিলে কি ক্ষতিটা হতো..!


ব্যাস..! ম্যাম চলে যাওয়ার পর সেই সহপাঠীর সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দিলো ইপ্সিতা। অনুপ্রিয়া ও ছাড়বার পাত্রী নয় সেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝগড়া শুরু করলো।


--কেনরে একটা পেন দিলে কি হত..?

--তোকে পেন দিলে আমি কি দিয়ে লিখতাম..!?

--তো কি একটা পেন নিয়ে স্কুলে আসিস না কি.?

--হ্যাঁ। তাতে তোর কি?


তবে এই ঝগড়া বেশিক্ষণ চলল না, পাশের ক্লাসের ম্যাম এসে বকুনি দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন দুজনকে।


এই হলো আমাদের ইপ্সিতা আর অনুপ্রিয়া। ওদের ফ্রেন্ডশিপের গল্পটা খানিকটা এইভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু তখনও কেউ এটা ভাবেনি যে কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো স্কুল ওদের এক ডাকে চিনবে ।


স্কুলের বিভিন্ন activity তে একসাথে কাজ করা ,সব রকম programme এ একসাথে participate করা, একসাথে টিফিন খাওয়া থেকে শুরু করে টয়লেট যাওয়ার নাম করে পুরো স্কুলের একটা চত্বর কেটে আসা, ক্লাসে একজন পড়া না দিতে পারলে আরেকজনের ইচ্ছা করে পড়া না দেওয়া , boaring class এ বকবক করা সব মিলিয়ে স্কুল লাইফটা ভালোই কাটছিল দুজনের। কিন্তু সব কিছুরই একটা ইতি থাকে, ওদেরও ছিল।

এভাবে বছরটা কেটে গেল, কেটে গেল মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল লাইফ এবার শেষ। দুজনের বিষয় আর লাইফের এইম আলাদা হওয়ার একই কলেজে ভর্তির কোন প্রশ্নই ওঠে না। তবে কি এবার ওদের ফ্রেন্ডশিপের ইতি..?



"তারপর ...তারপর কি হলো.?" উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিমি বললো।

"উফফ..!তুই একটু চুপ কর না ,শুনতে দে " -- বিরক্ত হয়ে পুটু বলে ওঠে।


ইশা চুপচাপ ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। পিছন থেকে অনু বলে --


"আহা..! ইসা এত সাসপেন্স রাখছিস কেন বলেই দেনা।"


"কি আবার হবে কলেজে যাওয়ার পরও কলেজ আলাদা হলেও ওদের ফ্রেন্ডশিপ আলাদা হয়নি। কলেজের সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ এর কোন সম্পর্ক আছে নাকি যারা সত্যি কারের বন্ধু তাদের আলাদা করার সাধ্য কার"


ইপ্সিতার এই উত্তরে সবাই একটু স্বস্তি বোধ করে। টুকাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে --

 "ওফ! বাঁচা গেছে আমি তো ভাবলাম হয়ত ফ্রেন্ডশিপ শেষ"


"হ্যাঁ। ঠিক বলেছিস। "পিকু সায় দেয়।


আজ সাত বছর পর নিজের গল্পটা বাচ্চাদের শোনাতে গিয়ে স্কুল লাইফের সেই ঘটনাগুলো মনের কিনারায় একবার উঁকি দিয়ে গেল ইপ্সিতার। এখন ও মাস্টার্স করার সাথে সাথে এই নার্সারী স্কুলে পার্ট টাইম জব করে। অনুপ্রিয়াও নিজের কাজের ফাঁকে আজ সময় বের করে এসেছে ইপ্সিতার নার্সারি স্কুলে‌।


গল্পটা শেষ করে ডান হাতের ঘড়ির দিকে এক পলক দিয়ে অনুর উদ্দেশ্যে বলল--


"সাড়ে চারটে.. এখনো অনেক সময় আছে। চল যাবি নাকি লেকের ধারে?"


 "হুমম। চল যাওয়াই যায়‌। এমনিতেও কাল আমার অফিস ছুটি।"


"ওকে.. তাহলে বাচ্চারা আজকের মত ছুটি পরেরদিন আবার দেখা হবে.. টাটা।" বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে ইপ্সিতা বলল।


"টাটা ইসাদি..। টাটা অনুদি।"

 


"ওই অনু, তোর স্কুটির চাবিটা দে না".. বাইরে বেরিয়ে কিছুটা আবদারের সুরেই ইসা বলল।


"কেন? কি করবি?"


"কি আবার করব drive করব...!"


"আগেরবারের কথাটা মনে নেই ? আমাকে তো প্রায় ফেলেই দিয়েছিলি।"


"আরে ....মানে ... ইয়ে ....ওটা just একটা accident ছিলো"


"Ok...but this is the last time".. বলেই স্কুটির চাবিটা ছুড়ে দিল ইপ্সিতার দিকে ।


" হি হি .. এই না হলে আমার বন্ধু " -- চাবিটা ক্যাচ ধরে ইসা বলে উঠলো।


"ঢং ..!কে তোর বন্ধু..!.."





অনুপ্রিয়ার স্কুটিতে স্টার্ট দিয়ে লেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো দুজনে। শীতের বিকেলে অস্তগামী সূর্যের রক্তাভ আলোয় মনিপুর লেনের রাস্তা দিয়ে স্কুটিটা যাওয়ার সময় ক্রমশ ছোট হতে হতে বিন্দুর মতো মিলিয়ে গেল।













Rate this content
Log in