Tangsu Karmakar

Drama Romance

3  

Tangsu Karmakar

Drama Romance

খুজে খুজে নারি

খুজে খুজে নারি

5 mins
2.4K


পুষ্পল দুপুরের লাঞ্চের পর অফিসে বসে কম্পিউটারের কীবোর্ডে খুটুরখাটুর করছিল। আজ তার কাজে মন নেই, তা ছাড়া মন দিয়ে কাজ করার মত যে খুব কাজ আছে তাও নয়। কলেজ শেষ করে আজ ছ’মাস হল সে একটা আড়কিটেকচারাল ফার্মে কাজ করছে। কতকটা জোর করেই সে স্থাপত্য বিদ্যায় গ্র্যাজুয়াশন করেছে, তাই অফিসে ও সে যে কাজ করে সেটাও খানিক টা জোড় করেই। তবুও সবটাই সে মানিয়ে নিতে পারতো যদি সহজে সে পুরনো প্রেম টা সে ভুলিয়ে উঠতে পারতো। প্রেম ঘুচেছে অনেক দিনই কিন্তু তার মন থেকে তা এখনো ঘুছে ওঠেনি। এরই মদ্ধ্যে অবশ্য সে বেশ কিছু নারীর সানিদ্ধ্যে এসেছে, কিন্তু মনে ধরেছে এক জন কেই। তার নাম রূপকথা। একটা ইয়োথ থিয়েটার ক্লাবে সে অভিনয় করে। পুষ্পলের বরাবরই থিয়াটার প্রেমি লোক। এক কালে প্রচুর থিয়েটার সে দেখেছে, থিয়েটার এ কাজ করারও ইচ্ছে ছিল, কিন্তু বাবা মা নিমরাজি হয়া তে সেটা আর হয়ে ওঠেনি।


পুষ্পল কটক শহরে পাঁচ বছর কাটিয়েছে, স্নাতকোত্তর করার জন্যে। সেখানে খনিকা বলে একটি মেয়ের প্রেমে পরে। পুষ্পল এমনিতে শান্ত স্বভাবের ছেলে। চট করে সে অসংগত কিছু করে বসার ছেলে কোন দিনই ছিল না। কিন্তু তবুও মানুষ কখন যে কী করে বসে, সেটা মানুষও বুঝে উঠতে পারেনি। কটক থেকে পুরী মাত্র আড়াই ঘন্টার রাস্তা, ট্রেনে করে গেলে আরেকটু কম সময় লাগে। তখন পুষ্পল সেকন্ড ইয়ারে উঠেছে, একটা ছোট্ট ছুটি ও ছুত পেয়ে পুষ্পল তার কিছু বন্ধু বান্ধবের সাথে বেড়াতে যায় পুরী। সেই দলে ছিল, তার নতুন স্বতেজ প্রেমিকা খনিকা। খনিকা কিন্তু তখনো দোনামনায়, যে সে আদউ পুষ্পল কে ভালবাসে কিনা। সেকন্ড ইয়ার মানে বয়স টা তখনো কাঁচা, আর এই যুগে জুবক যুবতী এক জায়গায় হলে জেটা অবোধারিত, সেটা হল নাচ গান মদ গাঁজা ইত্যাদি এবং এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। অঘটন টা ঘোটতোই কিনা কারো জানা ছিল না, কিন্তু ঘটেছিল। তবে এর জন্য কে দায়ী ধমনিতে ধাবমান হরমোনরা না কি সদ্য রক্তে মেসা ঈথাইল আল্কোহল। পার্টী তখন শেষের দিকে, সবাই এদিক ওদিক ছোড়িয়ে। খনিকা ও জথেষ্ঠ বেসামাল হয়ে আছে। পুষ্পল ভাবল তাকে ঘরে নিয়ে যাওয়া টাই শ্রেও। পুষ্পল ও মোটামুটি চোলতে গেলে বেসালাম হয়ে পড়ছে।


খনিকার একটা প্রেমিক ছিল, কিন্তু স্বজাতী হওয়াতে বাড়ি থেকে তাদের সম্পর্কটা মেনে নেয় নি, তো সেই হতভাগ্য সম্পর্কে ইতি টানবার জন্যই পুষ্পলের প্রস্তাব সে গ্রহন করে নেয়। কিন্তু কোথায় খনিকার মনে সেই প্রেমের বীজ রয়ে গিয়েছিল আর সেটাই হল সেই রাত্রে কাল। খনিকা মদ্যপ অবস্থায় বার বার তার প্রাতন প্রেমিকের কথা বলছিল, তা পুষল অনেক কষ্টে তাকে ধোরে নিয়ে গেল হোটেলের একটা ঘরে। তাকে শুইয়ে শান্ত করার চেষ্টা করল। কিন্তু খনিকা কিছু তেই কোন কথা শুনছিল না। কিন্তু তাকে ওই অবস্থায় ছেড়েও সে যেতে পারছিল না, কারন বেশ কিছুবার সে বমি করে ক্লান্ত। তখন পুষ্পল খানিক টা জোড় করেই খনিকার ঠোটে তার ঠোট টা জুড়ে দিল। কিন্তু খনিকার ভালো লাগল না ব্যাপারটা। সে এক ধাক্কায় সরিয়ে দেয় পুষ্পল কে। এতে ভাড়ি রাগ হয়ে পুষ্পলের এবং খানিকটা জোর করেই সে খনিকা কে নিজের করতে চায়। পরের দিন এই নিয়ে হুলুস্থুল পরে যায় কারন খনিকা বলে গা জোয়ারি ভাবে পুষ্পল তার সাথে ফিজিকাল হওয়ার চেষ্টা করে। তার পরেও ওরা যদিও আবার ফিরে আসে সম্পর্কে। পুষ্পলের কাছে এই সম্পর্ক টা ঠিক প্রকৃতি র মতনই ছিল। যে ক’বছর ওরা এক সাথে ছিল মোটামটি ফী বছর দু থেকে তিন বার ব্রেক আপ অবধারিত ছিল। তাতে কাউকেই দোষ দেবার নেই, কাঁচা বয়সের প্রেম টা খানিক টা ওরমই হয়।


পুরনো কথা গুলো ভাবতে ভাবতে, খুব দম বন্ধ লাগছিল পুষ্পলের, বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। একটু সিগারেট হলে মন্দ হয় না। ব্যাক ডোর দিয়ে বেড়িয়ে সিড়ির ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে সিগারেট টা ধরাল। সিগারাটে একটা টান মারতেই পকেটে মোবাইল টা বেজে উঠলো। টেলিকম কোম্পানির মেসেজ ঢুকেছে, মেসেজ টাকে বন্ধ করে ইন্সটাগ্রাম টা খুলে, ইন্সটাগ্রাম স্টোরি টা দেখতেই চোখে পোড়ল, রূপকথার ছবি টা।

রূপকথার সাথে প্রথম দেখা ওদের নাটক দেখতে গিয়ে। পুষ্পলের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু, দ্বীপঙ্করের নাটকের দলের রক্তকরবী নিয়ে একটা প্রোডাকশন। সেখানে নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছিল রূপকথা। প্রোডাকশন টা খুব একটা ভালো না হলেও, রূপকথার অভিনয়, পুষ্পলের মন কেড়েছিল। রূপকথা ভারি মিষ্টী দেখতে একটা মেয়ে, বস্নতের হাওয়ার মতো পাতলা চুল, ঈষৎ ব্রাউনিশ(রঙ করা নয়), আর চাহুনি তে ছিল অদ্ভুত একটা আরাম। পুষ্পলের প্রথম দেখা তেই বেশ ভালো লেগেছিল। কিন্তু কোথাও গিয়ে একটা ভয় হয়েছিল, একেও যদি হাড়াতে হয়। যদিও তার বন্ধু রা বলে, আরে তুই ছেলে না পোষালে লেঙ্গী মেরে বেড়িয়া আসবি। কিন্তু সেরম কি হয়, সম্পর্ক তো কোন বোঝা পড়ার মতো নয়, চুক্তি বদ্ধ ছিলাম, চুখতি বা শর্ত ভাঙা হল বলে যে যার পথে বেড়িয়ে গেল। তাই খনিকার পড়ে পুষ্পল আর রিলেশনশিপ নিয়ে ভাবে নি। ইদানীং তার মাথায় ভূত চেপেছে, সে সিনেমা বানাবে, স্থপতী হিশেবে স্ট্রাকচার আর ইন্টিরিয়ার দিজাইনের বিদ্যে টা তো আছেই, তাতে ভর করে আর্ট ডিরেকশন টা দেওয়া কঠিন হবে না। দ্বীপঙ্কর কে বলাই ছিল, ডাক পোড়লেই জানাতে। ড্বীপঙ্ক্রের একটি বন্ধু বানাচ্ছিল একটা ছোট ছবি, সেখানে প্রয়োজন ছিল একজন আর্ট ডিরেচটারের, ব্যস জুটে গেল কাজ। সেখানে গিয়ে দ্বিতীয় বার দেখা রূপকথার সাথে। রূপকথা সেখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টারের ভূমিকায় ছিল। ভাগ্যে অভিনয় করছিল না। সেই ক’টা দিন ঠিক যেন একেকটা স্বপ্ন। অনেক টা পরিচিতি বাড়লো রূপকথার সাথে। নামটা স্বার্থক, যে বাঁ যারা দিয়েছিল। তাছাড়া গজ দাত ব্যাপারটা মেয়েদের সৌন্দর্যটা কিছু গুন বাড়িয়ে দেয়। তারপর একসাথে সিনেমা দেখতে যাওয়া, বালীগঞ্জ এর অলিগলি ঘুরে একসাথে লুকিয়ে গাঁজা খাওয়া সবই হয়েছে, তারপর বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যে বেলায় চায়ের গুমটির তলায় আশ্রয় নিয়ে গরম চা।

প্রেম স্থিরতা আনে। রুপকথাকে দেখে এটাই মনে হয়েছিল পুষ্পলের। কিন্তু কিছুতেই মনের কথা টা সে বলতে পারেনা, কওথায় যেন একটা ভয় কাজ করে ওর মনে। আর তাছাড়া প্রেমের নিবেদন তখনই হয়ে যখন অপর দিক থেকেও একটা সারা পাওয়া যায়। রূপকথা তাকে ছেনেই বাঁ কতটা? পুষ্পলই বাঁ তাকে কতটা চেনে। কিন্তু দেখা হলে সেই অম্লান হাসি, স্নেহ আর আদোর মাখানো চাহুনি, আর দেখা হলেই তার সেই জোড়িয়ে ধরা, এগুল এখন পুষ্পলের ভালো লাগার জিনিস। কিন্তু রুপকথা কে আবোদ্ধ সে করতে চায় না, রুপকথা যেন সেই বনের পাখী যে হাতছানি দেয় পুষ্পল কে। কিন্তু পুষ্পল খুব ভাল করে জানে এঁকে নিজের করতে চাওয়া তেই আছে সেই অন্তর্নিহিত পাপ, যেটা এই ফুল টাকে ম্লান করতে পারে। সেটা সে হতে দিতে পারেনা।

সিগারেট খাওয়া শেষ করে অনেকক্ষণ সে ফিরেছে তার কেবিনে। কিন্তু কাজ এ তার মন নেই, কারন রূপকথা আজ চলে গেল বাঙ্গালোর এ, এয়ার হোস্টেস এর চাকরী নিয়ে। এত প্রাণ যার মদ্ধ্যে সেও এত দিন আবদ্ধ হয়ে ছিল একটা খাচায়। পুষ্পল কেই সে প্রথম জানায় চাকরী টা পাওয়ার পরে। খুশী হয়ে খাওয়া তেও নিয়ে গিয়েছিল পুষ্পল, সেদিন ভুবার সে ভেবেছে, কথা টা সে বলে দেবে, চেপে রাখাটা দিন দিন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। কিন্তু সেদিন রূপকথার চোখে মুখে স্বাধীনতার আনন্দ, সে বরাবরই চেয়েছে একটা স্বাধীন জীবন যাপন করতে, সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার সে কে? তাই নীরবেই মনের সব কথা কে এক গভীর সিন্দুকে তা বদ্ধ করে রাখে পুষ্পল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama